সনাথ জয়াসুরিয়ার বিশেষ সাক্ষাৎকার ক্রিকেট৯৭-কে: "বাংলাদেশে খেলার স্মৃতি সবসময় হৃদয়ে থাকবে"

সনাথ জয়াসুরিয়ার বিশেষ সাক্ষাৎকার ক্রিকেট৯৭-কে: "বাংলাদেশে খেলার স্মৃতি সবসময় হৃদয়ে থাকবে"
সনাথ জয়াসুরিয়ার বিশেষ সাক্ষাৎকার ক্রিকেট৯৭-কে: "বাংলাদেশে খেলার স্মৃতি সবসময় হৃদয়ে থাকবে"
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজের শেষদিকে ক্রিকেট৯৭ এর মুখোমুখি হয়েছিলেন শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের কোচ সনাথ জয়াসুরিয়া। ১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ী লঙ্কান দলের সদস্য জয়াসুরিয়া লম্বা ক্যারিয়ারে বাংলাদেশে এসেছেন অনেকবার। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেকাল-একাল, বাংলাদেশ কানেকশন সহ নানা ইস্যুতে কথা বলেছেন শিহাব আহসান খানের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি ক্রিকেট৯৭ এর দর্শকদের জন্য তুলে ধরা হল।
ক্রিকেট৯৭ঃ আপনি অনেক বছর ক্রিকেট খেলেছেন এবং বাংলাদেশেও খেলেছেন। ঢাকা লিগ, বিপিএল—সব জায়গাতেই আপনার উপস্থিতি ছিল। নিশ্চয়ই অনেক স্মৃতি জমে আছে। কেমন লেগেছিল বাংলাদেশে খেলার অভিজ্ঞতা?
সনাথ জয়াসুরিয়াঃ হ্যাঁ, আমি যখন শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলেছি, তখন বাংলাদেশে এসেছি। বিপিএলেও খেলেছি, আবার ঢাকা লিগের ক্লাব ক্রিকেটেও অংশ নিয়েছি। আমার ক্রিকেট জীবনের একটি সুন্দর সময় কেটেছে বাংলাদেশে। এখানকার মানুষও অনেক ভালো।
যখন মোহামেডানের হয়ে খেলতাম, ক্লাব কর্তৃপক্ষ আমাকে খুব ভালোভাবে দেখভাল করেছিল। সবার সঙ্গে সময়টা দারুণ কেটেছে। বাংলাদেশে অনেক দারুণ স্মৃতি রয়েছে আমার। ঢাকায় ক্রিকেট খেলাটা ছিল সত্যিই স্মরণীয়।
ক্রিকেট৯৭ঃ কোনো নির্দিষ্ট স্মৃতি মনে পড়ে?
সনাথ জয়াসুরিয়াঃ হ্যাঁ, মোহামেডানের হয়ে ঢাকা লিগে খেলতে গিয়ে সবচেয়ে অবাক হয়েছিলাম এত দর্শক দেখে! মনে হচ্ছিল যেন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছি। শ্রীলঙ্কায় ক্লাব ম্যাচে এত দর্শক দেখি না। সেই ম্যাচগুলোতে অনেক মজা পেয়েছি। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট ছিল, হাই ইনটেনসিটি ছিল, অনেক উপভোগ করেছি।
ক্রিকেট৯৭ঃ নিশ্চয়ই অনেক বন্ধুও তৈরি হয়েছে, কারও নাম মনে আছে?
সনাথ জয়াসুরিয়াঃ অবশ্যই, মাহবুব (মাহবুব আনাম) আমার ভালো বন্ধু। অনেক বছর ধরেই তিনি শ্রীলঙ্কায় আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আর মির্জান আছেন, উনিও মাহবুবের বন্ধু, তিনিও আমার ঘনিষ্ঠ। ওনারা আমাকে খুব ভালোভাবে দেখাশোনা করেছেন।
এখনও বাংলাদেশে গেলে তাদের সঙ্গে দেখা হয়, আবার তারা শ্রীলঙ্কায় এলে আমিও দেখা করি। আমাদের বন্ধুত্বটা এখনও অটুট। ওনারা সত্যিই চমৎকার মানুষ।
ক্রিকেট৯৭ঃ আপনি তো অনেক বছর ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দেখছেন। এখনকার বাংলাদেশ দল সম্পর্কে কী বলবেন? শ্রীলঙ্কার মতো তারাও একটা ট্রানজিশন পিরিয়ডের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
সনাথ জয়াসুরিয়াঃ সব দলই এমন একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যায়। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা একসময় অবসর নেয়, তাদের জায়গা পূরণ করা সহজ নয়। নতুনদের সময় দিতে হয়। যখন তারা জাতীয় দলে সুযোগ পাবে, তখন তারা সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করবে। অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পারফরম্যান্সও উন্নত হবে।
ক্রিকেট৯৭ঃ পারভেজ ইমন, তানজিদ হাসান তামিম—দুজনেই আপনার মতো ওপেনার ও বাঁহাতি ব্যাটার। কেমন লেগেছে তাদের খেলা?
সনাথ জয়াসুরিয়াঃ হ্যাঁ, তারা নিজেদের স্বাভাবিক খেলা খেলছে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তাদের কিছু ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দেখেছি। তারা ট্যালেন্টেড এবং নিজেদের নিয়ে কাজ করছে। তবে কঠোর পরিশ্রম জরুরি।
দলে সুযোগ পাওয়া কঠিন না, কিন্তু জায়গা ধরে রাখা খুব কঠিন। তার জন্য নিয়মিত কাজ করে যেতে হয়।
ক্রিকেট৯৭ঃ আপনি এখন কোচ। বাংলাদেশ দলের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি ইম্প্রেস করেছেন?
সনাথ জয়াসুরিয়াঃ নির্দিষ্ট করে কাউকে বলা কঠিন। ওপেনাররা (তামিম, ইমন) ভালো করছে। হৃদয় (তাওহীদ হৃদয়) দারুণ খেলছে। লিটন দাস খুব ভালো ক্রিকেটার।
আর যে খেলোয়াড় শেষ ম্যাচে (ডাম্বুলা, ২য় টি-টোয়েন্টি) ৪০ রান করেছিল—শামীম হোসেন পাটোয়ারী—উনি একজন ‘ব্যস্ত’ খেলোয়াড়, মানে অনেক অ্যাকটিভ। বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় ভালো খেলছে।
ক্রিকেট৯৭ঃ আপনার খেলার সময় বাংলাদেশের পেস অ্যাটাক খুব শক্তিশালী ছিল না। এখন তো টাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা—এদের মতো পেসার রয়েছে। কিছু বলবেন?
সনাথ জয়াসুরিয়াঃ হ্যাঁ, প্রতিটি দলে ফাস্ট বোলার থাকা দরকার। বাংলাদেশও নিশ্চয়ই সেই খোঁজে ছিল। হাই পারফরম্যান্স প্রোগ্রাম আর বিস্তৃত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তারা ভালো পেসার পেয়েছে। এটা খেলারই অংশ।
ক্রিকেট৯৭ঃ শেষবার কবে বাংলাদেশে এসেছিলেন?
সনাথ জয়াসুরিয়াঃ গত বছর টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজের সময় এসেছিলাম। তখন কোচ না, কনসালটেন্ট হিসেবে ছিলাম। সময়টা ভালোই কেটেছে।
ক্রিকেট৯৭ঃ কোনো প্রিয় বাংলাদেশি খাবার?
সনাথ জয়াসুরিয়াঃ একটু কঠিন প্রশ্ন। আমি খাবার উপভোগ করি, তবে মাংস খাই না। মাছ খেতে ভালোবাসি।
ক্রিকেট৯৭ঃ বাংলা ভাষা কিছু জানেন?
সনাথ জয়াসুরিয়াঃ না, বলা কঠিন। পারি না।
ক্রিকেট৯৭ঃ ট্রানজিশন পিরিয়ডে থাকা বাংলাদেশ দলকে আপনি কোচ হিসেবে কী পরামর্শ দেবেন?
সনাথ জয়াসুরিয়াঃ আমি মনে করি তারা ভালো করছে। তাদের ভালো কোচ রয়েছে—সিমন্স। তিনি অভিজ্ঞ এবং খেলোয়াড়দের নিয়ে কাজ করছেন। আমি নিশ্চিত তারা সেরা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
ক্রিকেট৯৭ঃ আপনার অনেক ফ্যান রয়েছে বাংলাদেশে, আমিও একজন। তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?
সনাথ জয়াসুরিয়াঃ আমি সবসময় বাংলাদেশে থাকতে পছন্দ করি। এখানকার মানুষ ক্রিকেট ভালোবাসে, সবসময় ক্রিকেটকে সমর্থন করে। আশা করি এটা ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে। ক্রিকেটকে ভালোবাসুন, সেটাই সবচেয়ে জরুরি।
ক্রিকেট৯৭ঃ বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা—যার সূচনা নিদাহাস ট্রফি থেকেই…
সনাথ জয়াসুরিয়াঃ আমি মনে করি দুই দলই ভালো খেলতে চায়। শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ—উভয়ের কাছেই ম্যাচগুলো গুরুত্বপূর্ণ। খেলোয়াড়েরা বুঝে ম্যাচের গুরুত্ব কতটা। তবে যতক্ষণ তারা খেলাটা উপভোগ করছে, সেটাই বড় কথা। এটাই সবচেয়ে ভালো ব্যাপার।