Image

অভিষেকের পর এক বছরের অপেক্ষা, অত:পর ফাইফারে সফর আলীর মুগ্ধতা

৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল

প্রকাশ : 21 ঘন্টা আগেআপডেট: 1 সেকেন্ড আগে
অভিষেকের পর এক বছরের অপেক্ষা, অত:পর ফাইফারে সফর আলীর মুগ্ধতা

অভিষেকের পর এক বছরের অপেক্ষা, অত:পর ফাইফারে সফর আলীর মুগ্ধতা

অভিষেকের পর এক বছরের অপেক্ষা, অত:পর ফাইফারে সফর আলীর মুগ্ধতা

একপ্রান্তে এবাদত, অপরপ্রান্তে খালেদ! রাহির জায়গা দখলে লড়ছেন রাজা ও তানজিম সাকিব। সেখানে বেশ সফল রাজা, রাহিকে সরিয়ে নিজেই এখন সিলেটের পেস বোলিংয়ের প্রাণভোমরা। এই পাঁচ পেসারকে ঠেলে সিলেটের পেস বিভাগে নিজের জায়গা করা ইস্পাত কঠিন কাজ। বছর ঘুরে যদি একটা সুযোগ আসে, তখন এই সুযোগ দুহাত ভরে লুপে নিতে হবে। এমন সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে থাকবেন দলে, নতুবা হারিয়ে যেতে হবে আরেক সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে। তবে খালেদ-এবাদত-সাকিব-রাজাদের ভীড়ে হারিয়ে যাননি সিলেটের সফর আলী। 

তারকা পেসারদের ভীড়ে নিজেকে প্রস্তুত রেখেছেন দলের প্রয়োজনে। তাই বছরের শেষ ম্যাচে পাওয়া সুযোগ কোনোক্রমেই হাতছাড়া করতে চাননি সফর। রাজশাহী বিভাগের বিপক্ষে ৫ উইকেট শিকারে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন তিনি। 

সিলেটের তারকা সম্মৃদ্ধ পেস বিভাগে সফর আলীদের মতো পেসারদের বছরে এক বা দুই ম্যাচের বেশি খেলার সুযোগ ভাগ্যে জুটে না। সেখানে ভাল না করতে পারলে আবার একাদশ থেকে ছিটকে পড়ার ভয় থাকে। এমন সমীকরণের মারপ্যাঁচে তাই ভাল খেলার কোনো বিকল্প নেই। সেই সুযোগ যদি আসে আবার এক বছর পর তখন তা কাজে লাগাতে হয় স্বযত্নে। আর সেই কাজটাই করলেন সিলেটের তরুণ পেসার সফর আলী। সিলেটের হয়ে মাঠে নেমেই তুলে নিলেন ফাইফার। 

২০২৩ সালে জাতীয় ক্রিকেট লিগের শেষ ম্যাচে অভিষেক হয় সফরের, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচে খেলার সুযোগ সফর পেলেন আরেক বছরের শেষ ম্যাচে। এক বছর পর এক ম্যাচ, এভাবে সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে তাঁকে। যেহেতু শেষ ম্যাচ সুযোগ পেয়েছেন, তাই রাজশাহী বিভাগের পাঁচ ব্যাটারকে ফিরিয়ে নিজেকে বিশেষভাবে উপস্থাপন করলেন। 

সফরের পাঁচ উইকেটের শুরুটা তিনে নামা এস এম মেহরব হোসেনকে (৮) ফিরিয়ে। এরপর একে একে ফিরিয়েছেন সেঞ্চরিয়ান সাব্বির হোসন (১১৬), ফরহাদ (৭), ওয়াসি সিদ্দিকী (২) এবং নিহাদুজ্জামানকে (২) প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়ে প্রথম ফাইফার পেয়ে যান সফর। দ্বিতীয় ইনিংসেও আরো ৩ উইকেট নিয়েছেন সফর। 

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম ফাইফারে বেশ উৎফুল্ল সফর৷ এখানেই যেন ফিরে পেলেন সামনে ভাল খেলার অনুপ্রেরণা। সিলেটের এতো এতো পেস তারকাদের মাঝে নিজেকেই কীভাবে প্রস্তুত রেখেছেন সফর? এবং প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সিলেট বিভাগের হয়ে প্রথম ফাইফারের অনুভুতি জানতে চাইলে সফর বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ভাল লাগছে। অফসিজনে নিজেকে ফিট রাখার জন্য কাজ করেছি। ফলে লম্বা বিরতির পরও ম্যাচ খেলতে কোনো সমস্যা হয়নি।’

সিলেট দলে পেস বোলারদের ছড়াছড়ি, জাতীয় দলের পেসারদের ভীড়ে তাই সফরদের মতো তরুণদের সিলেট দলে জায়গা করার কাজ এতোটা সহজ নয়৷ এবাদত হোসেন, খালেদ আহমেদ এবং জাতীয় দলে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা রেজাউর রাহমান রাজাদের টপকে সিলেটের একাদশে সুযোগ পাওয়া খুব চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার বটে। সফরের এটা কতটা চ্যালেঞ্জিং?

এ প্রসঙ্গে সফর বলেন, ‘সিলেটের সবাই জাতীয় দলের পেসার। তারা সবাই পরীক্ষিত, তারা থাকা অবস্থায় সুযোগ পাওয়াটা খুব কঠিন। তবে খেললে অবশ্যই ভাল করতেই হবে। তা না হলে ঠিকতে পারব না৷ তাই সুযোগ পেলে ভাল খেলতেই হবে, ইনশাআল্লাহ।’

২০১৭ সালে উদয়াচল ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে যাত্রা শুরু করেন সফর। নিজের প্রথম ম্যাচেই রূপগঞ্জ টাইগার্সের বিপক্ষে ৫ উইকেট শিকার করে ম্যাচ জেতান সফর। তাঁর সেদিনের পারফরম্যান্স বর্ণনা করতে গিয়ে বিসিবির কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবু ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘সিলেটের তরুন পেস বোলার সফর আলী অসাধারন বোলিং এ রূপগন্জ টাইগারের বিরুদ্ধে উদয়াচল ক্লাবের জয়। জীবনের প্রথম ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লীগে বোলিং করে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখালো সফর আলী।’

সে বছর আরো একবার পাঁচ উইকেটে পেয়েছিলেন সফর, লিগে চার ম্যাচ খেলে নিয়েছিলেন ১৩ উইকেট। এরপর থেকে ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে বরাবরই ভাল খেলেন সিলেটের এই পেসার, সিটি ক্লাবের হয়ে একবার শিরোপাও জিতেছিলেন। 

সেই ২০১৭ সাল থেকে জাতীয় ক্রিকেট লিগের ক্যাম্প করলেও সিলেটের জার্সি গায়ে জড়াতেও ছিল দীর্ঘ অপেক্ষা, ২০১৯ সালে সুযোগ থাকলেও সিটি ক্লাবের হয়ে খেলতে গিয়ে আঙুল ভেঙে পড়েন ইনজুরিতে। এরপর দীর্ঘ চার বছর পর অভিষেক হয় ২০২৩ সালে। মাশরাফি বিন মর্তুজাকে আইকন সফরের সুইংয়ে আদর্শ অবশ্যই আবু জায়েদ রাহি। আউট সুইংয়ে পারদর্শী সফর তাই ইনসুইংটাও রপ্ত করেছেন সুক্ষ্মভাবে। নিজের বোলিংয়ের শক্তির জায়গা নিয়ে সফর বলেন, ‘আমার আউটসুইং হয়, ইনসুইংটাও পারি। পুরনো বলে আমার একটা কাজ আছে, আমার ইনকাটার বল, এটাই মূলত শক্তি। এই পাঁচ উইকেটের এলবিডব্লিউ এ যে কয়টা উইকেট পেলাম, সেগুলো কিন্তু ইনকাটারে ছিল। শেষ উইকেটটা ছিল আউট সুইংয়ে।’

জাতীয় লিগে যেমন সিলেটের হয়ে অভিষেকের পর নিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে সফরকে অপেক্ষা করতে হয়েছে এক বছর। ঠিক একইভাবে ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগে দীর্ঘদিন ধরে ভাল খেলে দীর্ঘ অপেক্ষার পরও ডাক পাচ্ছেন না  ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে (ডিপিএল)। 

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের প্রথম পাঁচ উইকেট পাওয়া সফরের এখনও খেলা হয়নি ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে (ডিপিএল)। জাতীয় ক্রিকেট লিগে এমন পারফরম্যান্স হয়তো বড় নিয়ামক হতে পারে। জাতীয় ক্রিকেট লিগের ফাইফারে এবার ডিপিএলে দল পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী সফর। তিনি বলেন, ‘এখান থেকে ঢাকা লিগে ভাল কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।’

Details Bottom