Image

অলকের সেই তরুণদের হাত ধরে সিলেটি ব্যাটারদের বসন্ত আসবে?

৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল

প্রকাশ : 2 ঘন্টা আগেআপডেট: 1 সেকেন্ড আগে
অলকের সেই তরুণদের হাত ধরে সিলেটি ব্যাটারদের বসন্ত আসবে?

অলকের সেই তরুণদের হাত ধরে সিলেটি ব্যাটারদের বসন্ত আসবে?

অলকের সেই তরুণদের হাত ধরে সিলেটি ব্যাটারদের বসন্ত আসবে?

‘এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান’ এ কথাটা যেন আমলে নিলেন অলক কাপালি। সিলেটের উঠতি ক্রিকেটারদের জন্য জায়গা দিতে তিনি নিজেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন। নিজের অবসর ঘোষণার দিনে তিনি ফেইসবুকে লিখলেন, ‘আমি মনে করি, এখন তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য আরো বেশী প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। তরুণ ক্রিকেটারদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে আসার জন্য প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ সাথে যোগ করেছিলেন নিজের পরিবারকে বেশি সময় দেওয়ার কথা। 

অলকের অবসর পর কেটে গেছে তিন বছর, সিলেট এই সময়ে তৃতীয়বারের মতো খেলছে জাতীয় ক্রিকেট লিগে। সেখানে সিলেটের জার্সিতে মিলেছে নবীন ক্রিকেটারদের দেখা এবং সিলেটের স্থানীয় তরুণ ক্রিকেটারের পাশাপাশি সিলেট দলে বেড়েছে বাইরের ক্রিকেটারদের আধিক্য। 

অলকের অবসরের পর সিলেট প্রথম জাতীয় ক্রিকেট লিগ খেলে ২০২২ সালে। সে বছর নবীন-প্রবীনদের সম্মিলনে দল গড়ে সিলেট অভিষেক করায় নাঈম আহমেদ ও আবু বক্কর জুনিয়রকে। সে বছর নাঈমের কপালে জোটে মাত্র এক ম্যাচ, বক্কর খেলেন দুই ম্যাচ। অলক কাপালির ঘাটতি পূরণ আর সাথে সিলেটের ড্রেসিংরুমে অভিজ্ঞতা বাড়াতে এই দুজনের সঙ্গে দলে ভেড়ানো হয় আল আমিন জুনিয়রকে। 

এরপর নাঈম সিলেটের হয়ে খেললেও তরুণ বক্করের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেমে গেছে সেই দুই ম্যাচেই। এইচএসসি পাশ করে বক্কর চলে যান বিদেশে। সেখানেই স্থায়ী হবেন সিলেটের এই তরুণ। 

২০২৩ সালে অভিষেক হয় আরো দুই তরুণের, সে বছর দীর্ঘদিন সিলেট দলের সাথে থাকা মিজানুর রহমান সায়েম প্রথম মাঠে নামার সুযোগ পান। অভিষেকের পর সিলেটের হয়ে তিন ম্যাচ খেললেও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি সিলেটের এই তরুণ ওপেনার। ফলে এবার প্রথম তিন ম্যাচে সিলেট একাদশে তথা স্কোয়াডেও জায়গা হয়নি তার।

সে বছর সায়েমের সাথে অভিষেক হয় উইকেটরক্ষক ব্যাটার তাওহিদুল ইসলাম ফেরদৌসের। অভিষেকে শামসুর রহমান শুভর (১৬০) সাথে পঞ্চম উইকেটে ১৮০ রানের জুটি গড়ার পথে নিজে ২০৩ বল মোকাবেলায় খেলেছিলেন ৬৩ রানের ধৈর্য্যশীল এক ইনিংস। এবার প্রথম ম্যাচে একাদশে থাকলেও শেষ তিন ম্যাচে তার জায়গা হয়নি। ফেরদৌসের অভিষেক হলেও এখনও অভিষেক হয়নি আশরাফুল হাসান রিহাদের। 

নিজেদের মেলে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছেন সিলেটের এই তরুণরা৷ এক দুই ম্যাচ খারাপ খেললে আবার একাদশে জায়গা হারাচ্ছেন অনায়াসে। অন্যদিকে জাকির হাসান ও জাকের আলী অনিকদের অনুপস্থিতিতে আবার বাইরের ব্যাটার ধার করতে হচ্ছে৷ গেল বছর বিসিবি দিয়েছিল শামসুর রহমান শুভকে, সিলেটের হয়ে চারশোর বেশি রান করা শুভকে অবশ্যই এবার পায়নি সিলেট। তার বদলে পিনাক ঘোষ ও মাইশুকুর রহমান রিয়েলকে এবার দিয়েছে বিসিবি। 

প্রথম তিন ম্যাচে পিনাকের ব্যাটে রানের দেখা মিললেও, রিয়েলের ব্যাটে ছিল চরম হতাশার সুর। তিন ম্যাচের ছয় ইনিংসে রান করেছেন মাত্র ৩৯। যেখানে দুইবার সাজঘরে ফিরেছেন কোনো রান না করেই। 

এসবের মাঝে এবারও জাতীয় ক্রিকেট লিগে সিলেটের জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন স্থানীয় আরো দুই ক্রিকেটার৷ তাদের একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার তোফায়েল আহমেদ, অন্যজন ব্যাটার মুবিন আহমেদ দিশান। অভিষেক থেকেই তোফায়েল বোলিংয়ে আলো ছড়ালেও ব্যাটিংয়ে এখনও নিজেকে তেমন মেলে ধরতে পারেননি। অন্যদিকে দিশান খেলেছেন মাত্র দুই ম্যাচ, অভিষেকে প্রথম ইনিংসে ১৭ রান করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ভাগ্যের কাছে হেরে দুর্দান্ত এক ক্যাচে ফিরেছেন কোনো রান না করেই। দ্বিতীয় ম্যাচে এক ওভারে ৩ বাউন্ডারি এবং এক ডাবলে ১৪ রানে সংগ্রহে দুর্দান্ত শুরু করলেও কাধের ইনিজুরিতে থাকে মাঠ ছাড়তে হয় দ্রুত। এরপর ফিরে এসে থামেন ব্যক্তিগত ২৫ রানে। পরের ম্যাচে দিশান খেলেছেন ৪৩ রানের এক ইনিংস। 

সিলেটের হয়ে অভিষেক, এক দুই ম্যাচ খারাপ খেললেই বাদ। আবার দলে বাইরের ক্রিকেটারদের আধিক্য রয়েছে। এসবের ভীড়ে তাই প্রশ্ন জাগে ‘অলকের সেই তরুণরা কি খেলছেন সিলেটের হয়ে?’

অলক নিজেই বা কী ভাবছেন এ নিয়ে? জানতে চাইলে, অলক বলেন, 'আমি যে বছর শেষ ম্যাচ খেললাম, সে বছর দলে ফেরদৌস আর রিহাদ ছিল। তখন আমার জন্য তাদের অভিষেক হচ্ছিল না। সে বছর লিগের শেষ ম্যাচে আমাকে ড্রপ দিয়ে তাদেরকে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ বছরের শেষ ম্যাচ হওয়াতে আবার অনেকে খেলানোর পক্ষে ছিলেন না। আমি এর পক্ষে ছিলাম না, আমি একটা নতুন প্লেয়ারকে বছরের শেষ ম্যাচে খেলানোর পক্ষে না। আমি যতদিন খেলেছি বা অধিনায়কত্ব করেছি আমার সব সময় পরিকল্পনা ছিল একটা নতুন প্লেয়ারকে অন্তত দুই ম্যাচ সুযোগ দেওয়ার। আমি তখন রাজিন ভাই ও নাজমুলকে (নাজমুল হোসেন) বলেছিলাম যে, এখন যদি ফেরদৌস আর রিহাদকে সুযোগ দেই তাহলে কোনো কারণে যদি খারাপ খেলে সেক্ষেত্রে সারাটা বছর তাদের খারাপ যাবে। তখন তারা সারা বছর এটা নিয়েই চিন্তা করবে। কারণ এক ম্যাচ খেলার পর আবার তাদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে আরো এক বছর অপেক্ষা করতে হবে৷ আর খারাপ করলে এখানে থেমে যেতে পারে তাদের ক্যারিয়ার। হঠাৎ করে চারদিনের ম্যাচ খেলা এতোটা সহজ না।  অন্যদিকে এই ম্যাচে ভাল করলে আমাদের প্রথম স্তরে ঠিকে থাকার একটা সম্ভাবনা ছিল। সেই ভাবনা থেকে তখন তাদেরকে অভিষেক না করিয়ে আমাকেই খেলানো হয়। রংপুরের বিপক্ষে সেই ম্যাচ ড্র করলেই সিলেট প্রথম স্তরে ঠিকে যাবে। ম্যাচটা যাতে কোনোভাবে হাতছাড়া না হয় সেজন্য সবাই চাইছিল যে পুরো শক্তির দল নিয়ে নামতে। তখন আমার মতামত জানতে চাইলে, আমি সিনিয়রদের কথাই বলি। তখন দলে শেনাজ(শেনাজ আহমেদ)-রিজভী (সায়েম আলম) ছিল, আমি তাদেরকে খেলানোর কথাই বলি। তাই সিনিয়রদের প্রাধান্য দিয়েই একাদশ সাজানো হয়েছিল। সে ম্যাচে আমরা ভাল করি, এক ইনিংসে পাঁচশো’'র বেশি রান করেছিলাম। ম্যাচটি ড্র হয়েছিল এবং প্রথম স্তরে থেকে যাই। তরুণদের সুযোগ করে দিতে এই ম্যাচের পরই আমি অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখি। কারণ তারা অনেকদিন ধরে দলের সাথে ছিল, আমি না থাকলে হয়তো তাদের অভিষেক হতে পারত। আমি পরের বছর জাতীয় ক্রিকেট লিগ শুরুর অনেক আগেই আমি অবসর ঘোষণা করি৷ যাতে টিম ম্যানেজমেন্ট তরুণদের নিয়ে পরিকল্পনা সাজাতে পারেন।’

অলক কী শুধু এই দুই তরুণের কথা ভেবেই অবসর নিলেন নাকি আরো অনেকে ছিলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘শুধু যে ফেরদৌস আর রিহাদ ছিল তা কিন্তু নয়, এখানে আরো অনেকে ছিল। প্রতি বছরই পারফর্মার বের হচ্ছে। যেমন, এ বছর দিশান (মুবিন আহমেদ) করে  একটা ছেলে আছে, সে বয়সে খুব তরুণ, তবে প্রতিভাবান। বহুদিন পরে তোফায়েলও এবার দলে আছে। তারা এবার খেলছে। এখন তরুণরা সুযোগ পাচ্ছে। আসলে তরুণদের খেলাতে হবে এমন না, পারফর্ম না করলে তো আর খেলিয়ে লাভ নাই। আমি এখনও সিলেট লিগে খেলছি কিন্তু এখানে এখনও বড় ম্যাচের কোনো প্লেয়ার দেখছি না। আমাদের সব দিক চিন্তা করতে হবে, আমি অবশ্যই সিলেট নিয়ে চিন্তা করি। সিলেট থেকে প্লেয়ার বের হতে হলে তো বড় ম্যাচে ভাল করতে হবে। আসলে সেইভাবে প্লেয়ার উঠে আসছে না। এখনও টেকনিক্যালি অনেকের অনেক সমস্যা আছে। আসলে তারা কে কীভাবে এসব নিয়ে কাজ করছে তা জানি না৷ আমার মনে হয় এসব নিয়েও আরো বেশি কাজ করা উচিত। আমি তো তরুণদের সুযোগ দেওয়ার জন্য জায়গা ছেড়ে দিলাম, এখন তরুণরা যদি এটা না বুঝে তাহলে তো সমস্যা। সিলেটের অনেক তরুণ ক্রিকেটার কিন্তু বাইরে চলে যাচ্ছে। যেমন বক্কর (আবু বক্কর) ছিল, তার মাঝে আমি সাকিব আল হাসানের ছায়া দেখতাম। সেও বিদেশ চলে গেছে, সে থাকলে সিলেট ভাল একটা অলরাউন্ডার পেত। শুধু সিলেট না বাংলাদেশও ভাল একটা অলরাউন্ডার পেত। সে দুর্দান্ত একজন লেফট আর্ম অর্থোডক্স বোলার ছিল, সাথে ব্যাটিংটাও ভাল পারত।’ 

সিলেটের হয়ে যে হারে অভিষেক হচ্ছে, আবার এক দুই ম্যাচ খারাপ করলে বাদ দেওয়া হচ্ছে৷ এটা আবার প্রয়োগ হচ্ছে না বাইরের ক্রিকেটারদের বেলায়। যেমন মাইশুকুর রহমান রিয়েল প্রথম ম্যাচে এক ইনিংসে করেন ১, আরেক ইনিংসে মারেন ডাক। দ্বিতীয় ম্যাচেও প্রথম ইনিংসে ডাক, দ্বিতীয় ইনিংসে এক জীবন পেয়ে অপরাজিত ১৮ করেন। তৃতীয় ম্যাচে আবার দুই ইনিংসে যথাক্রমে করেছেন ১১ ও ৯ রান। 

সিলেটের তরুণরা একটু খারাপ করলেই বাদ আর বাইরের ক্রিকেটাররা খারাপ করলেও থেকে যাচ্ছেন একাদশে। বিসিবিও বা কেন স্থানীয় ক্রিকেটারদের অগ্রাধিকার না দিয়ে বাইরের প্লেয়ার পাঠাচ্ছে সিলেট দলে? এই প্রশ্নের উত্তরে অলক দায়টা দিচ্ছেন সিলেটের তরুণদেরকেই। সিলেটের তরুণরা পারফর্ম না করলে তো বাইরের প্লেয়াররা তাদের জায়গা দখল করবেই। সিলেটের স্থানীয় ক্রিকেটারদের পারফর্ম করেই নিজেদের জায়গা ধরে রাখতে হবে বলে মত অলকের। 

সিলেটের তরুণদের পারফরম্যান্স নিয়ে অলক বলেন, ‘গালিব (আসাদুল্লাহ আল গালিব) অনেকদিন ধরে খেলছে। এখন সিনিয়র বলা যায়। আমি তাকে যেরকম মনে করি, এখনও সে এরকম পারফর্ম করতে পারেনি। আমি চিন্তা করি যে, প্রতি মৌসুমে তার নামের পাশে দুই/তিনটা সেঞ্চুরি থাকবে। সে আমার আর রাজিন ভাইয়ের জায়গাটা সে খুব সুন্দর ভাবে দখল করবে। আমি মনে করি সে এই জায়গায় খুব ভাল একটা প্লেয়ার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বড় ইনিংস খেলতে পারেনি। বড় ইনিংস কেন হচ্ছে না, আমি দূর থেকে তা বুঝতে পারছি না। বড় ইনিংস খেলার জন্য যত বেশি চিন্তা করবে তত ভাল হবে। এটা নিয়ে আরো বেশি কাজ করা দরকার। তোফায়েল আছে, সে এভারেজ খেলছে। বোলিংয়ে ভাল করছে, ব্যাটিংয়ে তেমন কিছু করতে পারেনি। তার ব্যাটিংয়েও ভাল করতে হবে। গালিব আছে, তার সেঞ্চুরি করতে হবে। তারা যদি সেঞ্চুরি না করে তাহলে অন্যদের সুযোগ চলে আসবে। তারা যদি সেঞ্চুরি করে তখন অন্যদের খেলার সুযোগ কম থাকবে। গালিবের চেষ্টা করতে হবে যেন সিজন শেষে যাতে তার নামের পাশে একাধিক সেঞ্চুরি থাকে। জাবেদ-গালিবরা অনেক দিন ধরে খেলছে, তাদের অবশ্যই ভাল খেলতে হবে।'

সিলেটের তরুণদের বড় ম্যাচে নিজেদের মেলে ধরার পরামর্শ অলকের, ‘সিলেট লিগে গত বছর আমরা প্লেয়াররা মিলে একটা টিম করেছিলাম, এই টিমে প্রায় সব সিনিয়রদের নিয়ে দল করেছিলাম। এবং আমরা চ্যাম্পিয়নও হয়েছিলাম। লিগে বড় ম্যাচের প্লেয়ার আমার চোখে পড়েনি। গালিব, জাবেদ (রাহাতুল ফেরদৌস), তু্‌ষার (তৌফিক খান) আছে। তুষার গত বছর সে সিলেট লিগে খেলেনি, তারপরও ভাল শেইপে আছে। বড় ম্যাচ গুলোতে ভাল করতে হবে, এখানে ভাল করার সুযোগ থাকে। এখানে ভাল না করলে, বড় ম্যাচ না জেতাতে পারলে জাতীয় লিগে গিয়ে ভাল করার কঠিন হবে। যেমন আমরা যখন খেলছি, তখন আমি খেলতাম স্টার ইউনাইটেডে। আরমান ভাই (আশরাফ আরমান) তারা টিম করেছিলেন, এই টিমে ছিলাম। আমি, রানা ভাই, পারভেজ ভাই ছিলাম। আমরা অনেক হারা ম্যাচ জিতিয়েছিলাম, অনেক বড় বড় ম্যাচ জিতিয়েছি। সব সময় চিন্তা থাকত বড় দলগুলোর বিপক্ষে ভাল খেলার। এই জিনিসটা এখন প্লেয়ারদের মাঝে কম দেখা যায়। বড় দলের বিপক্ষে খেলতে গেলেই তারা খেলার আগেই ভেঙে পড়ে। সিলেট লিগে একদল যদি করে ৩০০ রান, অন্যদল দেখা যায় করছে ৫২ রান। আবার ৫০/৬০ রানে অলআউট হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে প্লেয়ার বের হচ্ছে না। আমি মনে করি, প্রথমে প্লেয়ারদেরই দায় নিতে হবে। নিজেদের সমস্যা কোথায় সেটা খুঁজে বের করতে হবে। এটা নিয়ে কাজ করা দরকার, বিশেষ করে ব্যাটারদের নিয়ে।’ 

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকে সিলেটের ব্যাটিং একাই টানছেন অমিত। এবার তার সাথে সিলেট দলে যুক্ত হয়েছেন পিনাক ঘোষ এবং মাইশুকুর রহমান রিয়েল। যেখানে সিলেটের তরুণরা এক/দুই ম্যাচ খারাপ খেললেই একাদশে জায়গা পান না, সেখানে বাইরের ক্রিকেটারের আধিক্য কীভাবে দেখছেন অলক? সিলেটের সাবেক এই তারকা ব্যাটার বলেন, 'বোর্ড থেকে অনেক সময় সিনিয়র প্লেয়ারদের দেওয়া হয়, যারা দল পায় না তাদের অনেককে অন্য দলে দেওয়া হয়। শুধু আমাদের দলে না বরিশাল, চট্রগ্রাম দলের পাশাপাশি অন্যান্য দলেও দেওয়া হয়। আমাদের যদি প্লেয়ার থাকত তখন নেওয়া লাগত না। আমরা যখন ছিলাম তখন কিন্তু প্লেয়ার বাইরে থেকে নেওয়া লাগত না। অথবা খুব বেশি নিতে হয়নি। একটা সময় আমাদের উইকেটরক্ষকের অভাব ছিল, তখন আমাদেরকে মুশফিককে (মুশফিকুর রহিম) নিতে হয়েছিল। আমরা ভাল ভাল প্লেয়ার পেয়েছিলাম তখন। এখনও যে রিয়েলও যে খারাপ প্লেয়ার তা কিন্তু নয়। সেও কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে তার সেঞ্চুরি আছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও তার সেঞ্চুরি আছে। সিলেটের হয়ে সে আগেও খেলেছে। এবার হয়তো তার ভাগ্য খারাপ, সে ভাল করতে পারে নাই। সিলেটের বিপক্ষেও তার (১৫৭) সেঞ্চুরি আছে, বিসিএলেও তার সেঞ্চুরি আছে। তার বিষয়টা অন্যভাবে দেখা উচিত। আসলে আমাদের প্লেয়াররা যদি ভাল করত তাহলে সুযোগটা দেওয়া হত না। আমাদের প্লেয়ার যারা আছে, তারা যদি ভাল করত তাহলে রিয়েল সুযোগ পেত না। জাকির-জাকের দলে থাকলে হয়তো অন্য প্লেয়ার খেলানো লাগত না। যেহেতু তারা বাংলাদেশ দলের সাথে আছে তাই বাইরের প্লেয়ার নিতে হচ্ছে। হঠাৎ দেখা যাবে অমিতও জাতীয় দলে চলে গেছে তখন আমাদের  আরেকটা ব্যাটার নিতে হবে। এখন আমাদের স্থানীয় ব্যাটার নাই বললেই চলে। ব্যাটার বের করার জন্য আলাদা ভাবে কাজ না করলে ভাল মানের ব্যাটার বের হবে না। বোলার বা স্পিনার নিয়ে তেমন একটা কাজ না করলেও চলে।’

অলকের মতে ভাল মানের ব্যাটার পেতে হলে ভাল মানের উইকেটে ব্যাটারদের খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে সিলেটে যে কয়টা একাডেমি আছে, সেসব একাডেমি যেন ভাল মানের উইকেটে ক্রিকেটারদের খেলায় এটাই অলকের চাওয়া। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যাটার তৈরি করতে হলে ভাল মানের উইকেটে খেলাতেই হবে। এক্ষেত্রে সিলেটের সব একাডেমিকে এগিয়ে আসতে হবে। একাডেমির তরুণদের ভাল মানের উইকেটে খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। সেদিন আমি একটা টুর্নামেন্ট উদ্বোধনের জন্য এমসি কলেজের মাঠে গিয়েছিলাম, সেখানে দেখে ভাল লাগছিল যে একটা উইকেট বানানো হচ্ছে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের জন্য। সেখানে সিলেট সুরমা ক্রিকেট একাডেমি আছে, ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজনের তারা এই উইকেট বানাচ্ছে। সিলেটে শুধু একাডেমি থাকলেই হবে না, ব্যাটার বের করতে হলে আমাকে এরকম উইকেট দিতে হবে। তা না হলে আসল কাজ হবে না।’

২০১৯ সালে সিলেটের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় অমিত হাসানের৷ অভিষেকে সেঞ্চুরির পর ধারাবাহিক ভাবে পারফর্ম করছেন নারায়ণগঞ্জের এই ছেলে। এক ডাবল সেঞ্চুরির পাশাপাশি অমিতের দেড়শো প্লাস ইনিংস আছে দুটি। এদিক থেকে জাকির-জাকের ছাড়া সিলেটের তরুণদের ব্যাট থেকে তেমন একটা বড় ইনিংস দেখা যাচ্ছে না। আসাদুল্লাহ আল গালিব অভিষেকের পর ৩৪ ইনিংসে ছয় ফিফটি করলেও সেঞ্চুরি মাত্র একটি। অমিত-গালিব দুজনের অভিষেক এক সাথে হলেও অমিতের নামের পাশে এক ডাবল সাথে আছে আরো আট সেঞ্চুরি, আর গালিবের নামের পাশে কেবল এক সেঞ্চুরি। এদিক থেকে অমিতের কাছে থেকে সিলেটের তরুণদের কী কিছু শেখার আছে? বিশেষ করে, লম্বা ইনিংস কীভাবে খেলতে হয়? 

অলক বলেন, ‘এদিক থেকে আমাদের প্লেয়াররা ভাগ্যবান যে, তাদেরকে বাইরে গিয়ে খেলতে হচ্ছে না৷ বাইরে গিয়ে খেললে তারা বুঝতে পারত যে বাইরে গিয়ে খেলা কতটা কঠিন। নিজ বিভাগের বাইরে গিয়ে খেললে যে কতটুকু চাপ নিয়ে খেলতে হয় এটা আসলে তারা জানে না। আমাদের প্লেয়ারদের কপাল ভাল যে তারা খুব সহজেই জাতীয় ক্রিকেট লিগ খেলতে পারছে। কারণ অমিত কিন্তু নারায়ণগঞ্জের ছেলে। তাকে কিন্তু মাঝে ঢাকা দলে নেওয়া হয়েছিল, সে কিন্তু সিলেটের হয়ে খেলতে চায় বলেই আমাদের দলে রয়েছে। এবং সিলেটের হয়ে খেলে কিন্তু সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। সে এখন বুঝতে পারে আসলে চারদিনের ম্যাচ কী জিনিস! তার সাথে খেলার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, তার মধ্যে রান করার একটা ক্ষুধা আছে। সে সব সময় ভাবে যে, ‘আমি যে এখানে আসছি, আমাকে এখানে ভাল কিছু করতে হবে।’ এই বিষয়টা যখন একটা প্লেয়ারের মাথায় থাকবে তখন সে এমনিতেই ভাল খেলবে। আমরা হয়তো বা সহজেই সুযোগটা পেয়ে যাই, তাই হয়তো আমরা বিষয়টা বুঝি না আসলে আমাকে কী করতে হবে। কোচ হয়তো আমাকে একটা পরিকল্পনা দিবে, কিন্তু আমার লক্ষ্য থাকতে হবে যে আমি এতো রান করতে চাই। যেমন, আমি আর রাজিন ভাই যখন খেলতাম তখন আমাদের লক্ষ্য থাকত যে কীভাবে ইনিংস বড় করা যায়৷ আমরা দুজনে যখন একসাথে ব্যাটিং করতাম তখন আমাদের টার্গেট থাকত যে বড় জুটি গড়ার। আমাদের যখন সেঞ্চুরি হতো তখন আমরা এটাকে দেড়শোতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। এমনও অনেক সময় হয়েছে আমি ১৮৫ করেছি, রাজিন ভাই ১৭৯ করেছেন। আবার একদিন রাজিন ভাই ১৮৬, আমি ১৭৯/১৮০ করেছি। আমরা অনেক বড় ইনিংস খেলেছি, আমাদের অনেক বড় পার্টনারশিপ হয়েছে। যেকারণে আমরা কিন্তু রান করতে পেরেছি। আমার রান প্রায় সাড়ে নয় হাজার আর রাজিন ভাইয়ের রান আট হাজারের কাছাকাছি। তান্না (ইমতিয়াজ হোসেন) আছে, তার রানও সাত হাজারের মতো। আমাদের অনেক বড় জুটি আছে। এই তিনজনের পড়ে কিন্তু এরকম ব্যাটার বের হয়নি। জাকিরের পরে কিন্তু এরকম রান কেউ করতে পারেনি। সে টেস্ট দলে থাকায় এখন কম খেলছে, কিন্তু যখনই সে খেলে তখন তার রান করার একটা ক্ষুধা থাকে। তার সাথে কথা বললেই বুঝা যায় যে সে ভাল কিছু করতে চায়। সব সময় তার ইচ্ছা থাকে বড় ইনিংস খেলার। এটা একটা ভাল দিক। এখন অন্য যারা আছে তাদেরও এরকম চিন্তা করা উচিত। বিশেষ করে গালিব, সায়েম (মিজানুর রহমান), তোফায়েল, তুষার যারা আছে। এদেরও চিন্তা করতে হবে যে আমাদের ভাল কিছু করতে হবে। এবং বড় কিছু করতে হবে। প্রতি বছর আমি দলে আছি, খেলার জন্য খেললাম। এরকম ভাবলে কিন্তু হবে না। আমার চিন্তা করতে হবে যে আমাকে সেরা পাঁচে, সেরা তিনে থাকতে হবে। আমি, রাজিন ভাই, তান্না; আমরা তিনজনে কিন্তু সেরা পাঁচে থাকার চেষ্টা করতাম। আমরা যখন একটানা খেলেছি, আমরা কিন্তু প্রায় সেরা পাঁচেই থাকতাম। আমরা কিন্তু বড় বড় ইনিংসও খেলেছি। হিমেল (গোলাম রহমান) যখন ছিল, সেও কিন্তু একবার আটশোর (৮২৫) বেশি রান করেছিল। শিশিরও (গোলাম মাবুদ) সাতশোর (৭২১) মতো রান করেছিল। এখন এই জিনিসটা আমাদের দলে কম। তাই এখন আগের মতো আর তেমন বেশি রান হচ্ছে না।’

Details Bottom
Details ad One
Details Two
Details Three