Image

অলক কাপালির বিদায় কেন মাঠ থেকে নয়?

৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল

প্রকাশ : 1 সপ্তাহ আগেআপডেট: 1 সেকেন্ড আগে
অলক কাপালির বিদায় কেন মাঠ থেকে নয়?

অলক কাপালির বিদায় কেন মাঠ থেকে নয়?

অলক কাপালির বিদায় কেন মাঠ থেকে নয়?

সিলেটের তরুণদের কথা ভেবেই অবসর, কিন্তু চাইলে এক ম্যাচ খেলে মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারতেন অলক কাপালি৷ সেই সুযোগ ছিল তাঁর সামনে, কিন্তু সেই পথেই বা হাঁটলেন না কেন সিলেটের কিংবদন্তি এই ক্রিকেটার? 

অলকেরও কী সেই ইচ্ছা ছিল না, নাকি মাঠ থেকেই অবসর নিতে চাননি তিনি? তিনি মাঠ থেকেই অবসরে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু ব্যাটে-বলে সেই সুযোগটা হয়ে ওঠেনি। যেমনটা খুলনা বিভাগ থেকে পেয়েছিলেন আব্দুর রাজ্জাক, তুষার ইমরান, এবং ইমরুল কায়েস। এবার রাজশাহী বিভাগ থেকে পেলেন ফরহাদ হোসেন। 

বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম হ্যাটট্রিক, ওয়ানডেতে প্রথম দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক। সিলেটের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ছয় হাজারের বেশি রান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যৌথভাবে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি মালিক সেই হিসেবে বিসিবি বলেন কিংবা সিলেট বিভাগ বলেন সব জায়গা থেকে বিদায় বেলায় যথেষ্ট সম্মান প্রাপ্য ছিল অলকের!

তবে শেষ বেলায় অলককে সেই প্রাপ্য সম্মান না দিয়েছিল দেশের ক্রিকেট বোর্ড, না সিলেট বিভাগ। অলকের কথায়ই সেই বিষয়টি উঠে এসেছে, ‘প্রথমত হচ্ছে, আমি আগের বছর বিভাগের চুক্তিতে ছিলাম। কিন্তু পরের বছর আমাকে চুক্তিতে রাখা হয়নি। লিজেন্ড লিগ খেলতে গিয়ে রাজের (আব্দুর রাজ্জাক) সাথে দেখা হয়। সে অবসরের কারণ জানতে চেয়েছিল, তখন আমি তাকে বলেছিলাম যে, ‘দেখ আমি যদি বিভাগের সেরা সাত/আট জনের মধ্যে না থাকি তাহলে আমার খেলার কোনো মানে হয় না।’ তোমরা (তুষার ভাই ও রাজ) যদি শেষ সময়ে খুলনা থেকে যে সম্মান পেয়েছো আমি যদি তা না পাই তাহলে তো বিশ বছর সিলেটের হয়ে খেলে কোনো কিছুই পেলাম না। বিশ বছরে বিভাগকে অনেক কিছু দিয়েছি, সে হিসেবে তো এই চুক্তিতে থাকার প্রত্যাশা করতে পারি। সিলেটের সেরা সাত-আটজনের মধ্যে আমি থাকার কথা। যখন আমাকে রাখা হল না, তখন আমি চিন্তা করলাম যে আমাকে নিয়ে তাদের আর কোনো পরিকল্পনা নেই। এখানে টাকাটা বড় বিষয় ছিল না, সম্মানটা বড় ছিল। আসলে যতটুকু সম্মানটা চেয়েছিলাম তা পাইনি।’

২০২১ সালে ইনজুরির কারণে সিলেটের হয়ে বেশি ম্যাচ খেলতে পারেননি। নিজের অবসরে কথা আগে থেকেই বিভাগ এবং ক্রিকেট বোর্ডকে জানিয়ে রেখেছিলেন তিনি। ২০২২ সালে খেলে মাঠ থেকেই অবসর নিতে চেয়েছিলেন এই অলরাউন্ডার। বোর্ড এবং সিলেট বিভাগ থেকে মাঠ থেকে অবসরের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু সিলেট বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের চুক্তিতে নিজের নাম না দেখে হতাশই হয়েছিলেন এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।  এ প্রসঙ্গে অলক বলেন, ‘আমি বিভাগ এবং ক্রিকেট বোর্ডকে জানিয়েছিলাম, আমি তাদেরকে অনুরোধও করেছিলাম যে, এ বছর খেলে আমি অবসরে যাব। আমাকে যেন এই সুযোগটা দেওয়া হয়। আমি নাদেল (শফিউল আলম চৌধুরী) ভাইকেও বলেছিলাম, বিভাগ থেকেও আমাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তারাও বলেছিলেন যে ‘খুলনা যেমন রাজ-তুষারকে সুযোগ দিয়েছে আমারও তোমাকে সুযোগ দিব। তারা যতটুকু সম্মান পেয়েছে, আমরাও তোমাকে সেই সম্মান দিব।’ শেষে দেখা গেল চুক্তিতে আমার নাম নেই। এটা নিয়েও তখন একেকজন একেক কথা বলেছিলেন। বিভাগ থেকে বলা হল যে আমাকে যাতে চুক্তিতে রাখা হয়, বোর্ডকে তারা তা বলেছেন। বিসিবির নির্বাচকরা আবার বললেন, বিভাগ থেকে আমাকে চুক্তিতে না রাখতে বলা হয়েছে। আসলে আমি বুঝতে পারিনি কী হয়েছিল, আমি মাঝখানেই পড়েছিলাম, (হাসি)। পরে আমি চিন্তা করলাম, যেহেতু বিভাগ বা বোর্ড চাইছে না আমি খেলে অবসরে যাই। আমি তখন দোটানায় পড়ে যাই, আর যে বছর আমি শেষ ম্যাচ খেলি তখন দলে ছিল ফেরদৌস আর রিহাদ। আমার জন্য তাদের অভিষেক হচ্ছিল না, তাদের কথা ভেবেই অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যাতে তরুণরা সুযোগ পায়। কারণ আমি দলে থাকাতেই তো তারা খেলার সুযোগ পায়নি। চুক্তিতে থাকা না থাকা বা কারো প্রতি অভিমানে অবসর নেইনি।’

এবার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন রাজশাহী বিভাগের কিংবদন্তি ব্যাটার ফরহাদ হোসেন। খুলনার ইমরুল কায়েসও বিদায় জানিয়েছেন লাল বলের ক্রিকেটকে। তুষার-রাজের মতো দুজনেই পেয়েছেন রাজকীয় বিদায়, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগ দুজনকে পরিপূর্ণ প্রাপ্য সম্মান বুঝিয়ে দিয়েছে মাঠ থেকে বিদায়ের মাধ্যমে। সেখানে ক্রিকেট বোর্ড থেকেও সম্মান পেয়েছেন ফরহাদ-ইমরুল। এদিক থেকে বোর্ড না হোক সিলেট অন্তত একটি ফুলের তোড়াও তো পেতে পারতেন অলক। বোর্ড কিংবা বিভাগ কোনো জায়গা থেকে সম্মাননা না পাওয়ার আক্ষেপ এবং আফসোস থাকলেও অলক চান ভবিষ্যতে যেন কোনো ক্রিকেটারকেই এমন বিদায় না নিতে হয়। বিভাগের প্রতি অলকের অনুরোধ ক্রিকেটারদেরকে বিদায়বেলায় যেন প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয়৷ কম করেও হলে একটি ফুলে তোড়াও দিয়ে হলেও বিদায় জানানো হয়। 

অলকের ভাষ্য, ‘সিলেট বিভাগ থেকে যা পাইনি, তা পেয়েছিলাম সিলেট ক্রিকেটার্স এসোসিয়েশনের কাছ থেকে। আমি অবসর নেওয়ার পর থেকে সিলেট বিভাগ থেকে কখনো এরকম কোনো কিছু পাইনি। আমার কাছে খারাপ লেগেছে যে, সিলেটের হয়ে খেললাম আর বিদায় বেলায় একটা ফুলের তোড়াও পেলাম না। সিলেটের জন্য তো আমি অনেক সময় অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। যখন আমার মেয়ে হয় তখন আমি কিন্তু বগুড়াতে ছিলাম। সিলেটের হয়ে খেলার জন্যই তো আমি তখন সেখানে ছিলাম। সিলেটের হয়ে বিশ বছর খেলার পরে যতটুকু সম্মান পাওয়ার কথা আসলে তা পাইনি। আসলে তখন যারা বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন, তারা তখন কী ভেবেছিলেন জানি না। আমি আর এখন এসব নিয়ে আফসোস করি না। কাউকে দোষারোপও করি না। ভবিষ্যতে তো আরো অনেকে অবসরে যাবে, আমার মনে তখন যারা বিভাগের দায়িত্বে থাকবেন তাদের উচিত হবে কমপক্ষে একটা ফুলের তোড়া দিয়ে যেন একজন খেলোয়াড়কে বিদায় জানানো হয়। ছোট একটা সুন্দর সম্মাননা দেওয়া হয়, তখন জিনিসটা সুন্দর এবং বড় দেখাবে। এটা যেন করা হয়, এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়, পাঁচ-দশ মিনিটের ব্যাপার। যেকোনো একটা ম্যাচের সময় ডেকে নিয়েও এটা করা যায়। এটা যেন তাৎক্ষনিকভাবে করা হয়। এখন কেউ যদি চায় যে, তিন চার বছর পরে সম্মাননা দিবে, এটা খুব খারাপ দেখায়। আমি যখন অবসর নিয়েছিলাম, তার দশ-বারোদিনের মধ্যে যদি বিভাগ থেকে এরকম কিছু একটা করা হতো তাহলে আমি খুশি হতাম। বাস্তবতা হচ্ছে, বিভাগ থেকে এরকম কিছুই পাইনি, এমনকি কোনো শুভেচ্ছা বার্তাও পাইনি।’

বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম হ্যাটট্রিকম্যান তিনি। ২০০৩ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে বোলিং করেছিলেন মাত্র ২.১ ওভার, সেখানে দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম এবং ষষ্ঠ বলে সাব্বির আহমেদ ও দানিশ কানেরিয়াকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সুযোগ করে সম্ভাবনা জাগিয়ে রাখেন লেগ স্পিনার। নিজের তৃতীয় ওভারে ওমর গুলকে ফিরিয়ে করেন হ্যাটট্রিক আর তাতেই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে নিজের নাম সোনালী হরফে লেখা হয়ে তাঁর নাম। হ্যাটট্রিকের প্রায় দেড় যুগ পর যখন তিনি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন সেই দিন তারিখ স্মরণ করিয়ে দেয় সেই ঐতিহাসিক মূহুর্তকে। 

এটা কী পূর্বপরিকল্পিত ছিল নাকি অবচেতনভাবেই মিলে গেল? অলকের সহজ সরল উত্তর, ‘আসলে এরকম পরিকল্পনা করে অবসর নেইনি। ফেইসবুকে পোস্ট করার পর জানতে পারি যে হ্যাটট্রিকের করার দিনের সাথে অবসর ঘোষণার তারিখের মিল রয়েছে। এটা আসলে এমনিতে মিলে গেছে, সেই দিনকে সামনে এনে অবসর ঘোষণার কোনো পরিকল্পনা ছিল না।’

সিলেটের এই কিংবদন্তি অলরাউন্ডার আগস্টে অবসর নিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে খেলতে গিয়েছিলেন রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজে। বাংলাদেশ লিজেন্ডসের হয়ে খেলতে গিয়ে সমালোচনায় পড়েন অলক। তখন তোড়জোড় করে আলোচনা হয়ে যে, লিজেন্ডসে খেলতেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন অলক। ঘটনা কী আসলে তাই ছিল, অলকও বা কী বলছেন এ ব্যাপারে? জানা যাক অলকেরই কথায়, 'আসলে এরকম কোনো কিছু ছিল না। এখানে কোনো শর্ত ছিল না যে, লিজেন্ডসে খেলতে হলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে বিদায় জানাতেই হবে। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট কিন্তু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের কাছাকাছি, আমি কিন্তু লিস্ট ‘এ’ খেলছি। জাতীয় দলের বর্তমান কোনো ক্রিকেটার  লিজেন্ডস খেলতে পারবে না, খেলতে হলে জাতীয় দল থেকে অবসর নিতে হবে। জাতীয় দল ছাড়া যেকোনো ক্রিকেট লিগ খেলতে কোনো ধরনের বাধা ছিল না। লিজেন্ডসের জন্য অবসর নিছি এরকম আলোচনা করাটা কিন্তু বোকামি।’

২০১১ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ওয়ানডে এবং টি২০ থেকে বাদ পড়েন অলক। টেস্ট দলের বিবেচনায় ছিলেন না সেই ২০০৬ সাল থেকেই। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর অলক নিয়মিত রান করেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। বিশেষ করে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে একটা সময়  দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন অলক। এনসিএল ও বিসিএলের এক মৌসুমে (২০১৪-১৫) দুই ডাবল সেঞ্চুরি করেও জাতীয় দল তো দূরে থাক ‘এ’ কিংবা এএইচপি দলেরও বিবেচনায় আসেননি কখনো!

সেই প্রশ্নের উত্তর জানা যাক অলকের বয়ানে, ‘প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি আছে শুধু আমার আর সৈকতের (মোসাদ্দেক হোসেন), সাথে লিটনও আছে। এখনও পর্যন্ত সেই রেকর্ড আমাদের দখলেই আছে। এটা এখনও কেউ ভাঙতে পারেনি। দুটি ডাবল সেঞ্চুরির পরও কিন্তু আমি বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে বলেছি যে, বাংলাদেশ দল এখন ভাল খেলছে, আমি দলে নিজের জায়গা দেখছি না। আমার কাজ হচ্ছে ভাল খেলে যাওয়া, আর ভাল খেলতে থাকলে একটা সময় সুযোগ আসবে। তবে আমার তখন খারাপ লেগেছিল, যখন নির্বাচকরা বললেন, আমি প্লান ‘বি’ তেও নাই। এনসিএলকে বলা হত পিকনিক লিগ, কিন্তু বিসিএলকে কী বলবেন? আমি তো বিসিএলেও ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলাম। বিসিএল তো সেরা লিগ, এখানে আমার ডাবল সেঞ্চুরি ছিল উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে। এটা তো খুব শক্তিশালী দল ছিল, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের খেলোয়াড় নিয়ে গড়া ছিল।’

এক মৌসুমে দুই ডাবল সেঞ্চুরি, বছর দুয়েক পর করলেন আরেক ডাবল সেঞ্চুরি। তিন ডাবল সেঞ্চুরি করার পর যেখানে বাহবা পাবেন, সেখানে অলককে শুনতে হল ফিটনেসের খোঁচা। ফিটনেস ইস্যুতে অলকের পারফরম্যান্স মূল্যায়নের বিষয়টা উড়িয়ে দেন বিসিবির তৎকালীন নির্বাচক প্যানেল। আসলেই কী অলক তখন আনফিট ছিলেন, অথবা ফিটনেস ছাড়া কীভাবে বা ডাবল সেঞ্চুরিই করলেন? 

নিজের ফিটনেস নিয়ে অলক বলেন, ‘ফিটনেস নিয়ে মানুষ কখন কথা বলে, যখন কেউ বড় ইনিংস খেলতে পারে না৷ ষাট/সত্তর রানের ইনিংস খেলতে যখন আউট হয়ে যাচ্ছে, নব্বইয়ের ঘরে আটকা পড়ছে! এক প্লেয়ার দুইটা ডাবল সেঞ্চুরি করবে তখন সে অবশ্যই তার ফিটনেস ভাল থাকবে। এটা তো টি২০ খেলা না, এটা চারদিনের ম্যাচ ছিল। এখানে ছয়-সাত ঘন্টা ব্যাটিং করা লাগত, কখনো আবার আট ঘন্টা ব্যাটিং করতে হতো। ফিটনেস না থাকলে তো ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারবে না। ফিটনেস না থাকলে তো আমি ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারতাম না। আমি তো একদিনে ডাবল সেঞ্চুরি করিনি, দেড় দুই দিন মাঠে খেলেই ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলাম। এখন আমি যদি দেড় দুইদিন ব্যাটিং করতে পারি তাহলে তো আমার ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন উঠার কথা নয়। এমন কথা যিনি বলেছিলেন, আমার কাছে মনে ফিটনেসের ব্যাপার তিনি কোনো ধারণাই রাখেন না। আপনি আমার খেলা না দেখলে তো বুঝবেন না আমার ফিটনেস আছে কি না! যতবার ফিটনেস পরীক্ষায় হয়েছে, সব বারই কিন্তু আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। শেষ একবার আমি ফিটনেসে ১২ স্কোর করেছিলাম, তখন প্রশ্ন উঠেছিল, ‘সে এটা কীভাবে দিল?’ আমার যেদিন ফিটনেস টেস্ট ছিল, সেদিন ট্রেনারকে বলেছিলাম যে, আমার ফিটনেস টেস্ট যেন ভিডিও করে রাখা হয়। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল যে আমাকে যে টার্গেট দেওয়া হবে, সেই টার্গেট আমি অতিক্রম করতে পারব। বোর্ড থেকে যখন ট্রেনারকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে ‘অলক কীভাবে এতো স্কোর করল, নিশ্চয় এখানে কোনো কাটসাট করেছো।’ তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমার কাছে ভিডিও আছে, প্রয়োজনে আপনারা তা দেখতে পারেন।’’ 

এ বিষয়ে তিনি আরো যোগ করেন, ‘আমি যে তিনটা ডাবল সেঞ্চুরি করেছি, আমার মনে হয় না আমি কোনো লাইফ পেয়েছিলাম। আমি সেভাবেই ব্যাটিং করেছিলাম। এখন আপনি যদি আমার খেলা না দেখেন তাহলে বুঝবেন কীভাবে যে আমি ফিট না আনফিট। আপনাকে তো খেলা দেখতে হবে। এই যেমন অমিত কথাই ধরুন, সে তো ভাল করছে, এখন আপনি তার খেলা না দেখলে বুঝবেন কীভাবে সে জাতীয় দলের জন্য ফিট কিনা। তাকে কোথাও কাজে লাগানো যায় কিনা! তাকে কেন্দ্র করে কোনো পরিকল্পনা সাজানো যায় কিনা! আমি বিসিএলে যে ডাবল সেঞ্চুরি করলাম, সেদিন কিন্তু আমাকে দুদিক থেকেই ব্যাটিং করতে হয়েছিল। কারণ আমি যখন ১০৭ রানে ছিলাম তখন ৬/৭ উইকেট পড়ে যায়। তখন আমাকে কিন্তু বাউন্ডারিতে মনোযোগ দিতে হয়েছিল। এখন আপনি এনসিএলে ডাবল সেঞ্চুরি পিকনিক লিগ বলে উড়িয়ে দিতে পারেন। বিসিএলকে কী বলবেন! আমার কাছে মনে হয়েছে সেদিন কেউ মাঠে ছিলেন না। আপনি যখন দলে নিতে না চাইবেন তখন যতই রান করিনি না কেন কোনো লাভ হবে না। আমি কখন বলি নাই যে আমাকে নিতেই হবে, আমি সব সময় বলেছি, বর্তমান দল ভাল খেলছে, আমি সুযোগ পেলে চেষ্টা করব ভাল কিছু করার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিয়মিত রান করছিলাম, তাই আত্মবিশ্বাস ছিল ভাল করার। আমি শুধু একা ছিলাম না, নাঈম ইসলামও তখন রান করছিল। তখন আমাদেরকে এরকম সুযোগ দেওয়া হয়নি। আপনি যখন দলে নিতে চাইবেন না তখন অনেক খুত খুঁজে বের করবেন। এটাই স্বাভাবিক!’  

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে বিদায় জানালেও অলক এখনও খেলছেন লিস্ট ‘এ’ ও টি২০ ক্রিকেটে। এবার বিপিএলেও অলক পেয়েছেন দল। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগেও প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের সাথে চলছে আলোচনা। আর এদিকে এবার জাতীয় ক্রিকেট লিগে যুক্ত হয়েছে টি২০ ফরম্যাট। সেদিক থেকে চাইলে সিলেটের হয়ে টি২০ খেলতে পারেন অলক। তিনি নিজেই বা কী ভাবছেন এ নিয়ে? টি২০ খেলা না খেলা নিয়ে অলক বলেন, ‘রাজিন ভাই (রাজিন সালেহ) আমাকে টি২০ খেলার জন্য বলেছেন, আমি রাজিন ভাইকে না করেছি। আমি যেহেতু ২০২২ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছি, এখন সিলেটের হয়ে টি২০ খেলাটা কী রকম দেখাবে! শেষে তিনি বলেছেন, যে দুই এক ম্যাচ খেলে হলেও মাঠ থেকে বিদায় দেওয়ার একটা সুযোগ দিতে চাচ্ছেন। আমি না করেছি, যেহেতু খেলা ছাড়ার তিন/চার বছর হয়ে গেছে। তাই আমি আর খেলতে চাচ্ছি না। যেহেতু ওয়ানডে ও টি২০ খেলছি তাই রাজিন ভাইও চেয়েছিলেন এ বছর টি২০ দিয়ে যেন মাঠ থেকে বিদায় নেই। তিনি ফোনে কথা বলেছেন, আবার এ বিষয় নিয়ে দেখা করেও কথা বলেছেন। তারা চাচ্ছেন যে আমি টি২০ খেলে বিদায় নেই। আমি রাজিন ভাইকে অনুরোধ করেছি যেন এমনটা না করা হয়, কারণ আমি অবসর নিয়েছি ২০২২ সালে। এখন খেলতে গেলে, এটা নাটকের মতো হয়ে যাবে, তখন বলাবলি হবে, যে এখন সব কিছুতে একটা পরিবর্তন আসছে, তাই আবার আসছি খেলতে। এটা বিদঘুটে দেখাবে৷ তবে আমি যেকোনো সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। খেলোয়াড়দের আগে যেভাবে সহযোগিতা করেছি, এখনও করছি এবং করে যাব। খেলোয়াড়দের নিয়ে অনেক সময় কথাবার্তা হয়। অনি ভাই (আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী) ভাইয়ের সাথে কথা হয়। অনেক সময় অনেক ক্রিকেটারের নামও সাজেস্ট করি। যে এদেরকে সুযোগ দিলে ভাল হবে। অনেক সময় সব প্লেয়ারের নাম মনে থাকে না, একসাথে খেলার কারণে আমি তাদের নাম বলে দিতে পারি। আমি তো সরাসরি বলতে পারব না যে এদেরকে খেলিয়ে দাও, কিন্তু এটা বলতে পারব যে এদেরকে নিয়ে দেখতে পারো। তাদের মধ্যে রিহাদ ও সায়েমের কথা বলেছিলাম, যে এদেরকে দেখতে পারো। দল যেহেতু ভাল অবস্থানে আছে, আমি চাচ্ছি না যে দলের কম্বিনেশন ভাঙা হোক। আমি চাই দল যেন এবার চ্যাম্পিয়ন হয়।’

এবার ডিপিএলে খেলোয়াড় কাম কোচ হিসেবে দলে নিতে কথা বলছে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। কথা পাকাপাকি হলে খেলোয়াড়/কোচ হিসেবে প্রাইম ব্যাংকের জার্সিতে দেখা যাবে কাপালিকে৷ এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘প্রাইম ব্যাংকের সাথে কথা হচ্ছে। খেলোয়াড় কাম কোচ হিসেবে কথা চলছে। কথা চুড়ান্ত হয়নি এখনও, দেখা যাক কী হয়!’

প্রাইম ব্যাংকের সাথে কথা পাকাপাকি হলে ক্রিকেটার থেকে ক্রিকেট কোচিংয়ে নাম লেখাবেন অলক। তাহলে মাঠের ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে ক্রিকেট কোচিংয়ে মনোনিবেশ হবেন অলক নাকি অন্য কোনো পেশায় দেখা যাবে তাকে? 

অলকের পরিবারে আছে রাজনীতির ছাপ, বড় ভাই বিধান কাপালি একাধিকবারের কমিশনার। এদিক থেকে তিনিও চাইলে সিলেটের রাজনীতিতে নাম লেখাতে পারেন খুব সহজেই। ক্রিকেট কোচিং নাকি রাজনীতিবিদ, অবসরের পর অলকের কী হবে পরিচয়? সিলেটের এই অলরাউন্ডার এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘এলাকার বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে দাদা যান, আমি তেমন একটা যাই না। সবাই চায় আমি যেন যাই, গত সিটি নির্বাচনে অনেকে চেয়েছিলেন আমি যেন কাউন্সিলর পদে দাঁড়াই। দাদাও চেয়েছিলেন, আমি না করেছি। আসলে না দাঁড়ানোতেই ভাল হয়েছে (হাসি)। আসলে রাজনীতিতে আসার কোনো ইচ্ছা নাই। আমাদের এলাকায় যত আচার অনুষ্ঠান হয়, এবং যত ধরনের কমিটি হয়, এমনকি আমি পূজা কমিটিতেও থাকি না। দাদা থাকেন, পরিবার থেকে একজন থাকলে চলে। আমি দাদার কাছ থেকে সব তথ্য জেনে নিতে পারি। কারণ আমি এসব এতোটা বুঝি না। তবে সামনে যদি ভাল কোনো সুযোগ আসে, ইচ্ছা ক্রিকেটের জন্য ভাল কিছু করার৷ সেক্ষেত্রে ক্রিকেট বোর্ডে  নির্বাচনের কোনো সুযোগ থাকলে নির্বাচনে লড়ব।’

Details Bottom
Details ad One
Details Two
Details Three