সিলেটের ব্যর্থতায় রংপুরের সাফল্য, চ্যাম্পিয়নশিপে আলোড়ন

৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল

প্রকাশ: 1 ঘন্টা আগে আপডেট: 1 সেকেন্ড আগে
সিলেটের ব্যর্থতায় রংপুরের সাফল্য, চ্যাম্পিয়নশিপে আলোড়ন

সিলেটের ব্যর্থতায় রংপুরের সাফল্য, চ্যাম্পিয়নশিপে আলোড়ন

সিলেটের ব্যর্থতায় রংপুরের সাফল্য, চ্যাম্পিয়নশিপে আলোড়ন

সিলেটের ছন্দপতনের শুরু গেল জাতীয় ক্রিকেট লিগ থেকে। সিলেট যে খুব খারাপ খেলেছে তা নয়; বরং এক ম্যাচ হাতে রেখেই তারা শিরোপা জিতেছিল সেবার। সে বছর তাই শেষ ম্যাচে সিলেট খেলতে নামে একাধিক পরিবর্তন নিয়ে, যেখানে ডাগআউটে থাকা তরুণদের খেলানো হয় একাদশে। নিয়মিত তারকা পেসারদের বিশ্রাম দিয়ে খেলানো হয় ডাগআউটে থাকা বোলারদের। বোলিংয়ে এক বছর পরে ফিরেন সফর আলী।


সিলেটের বরাবরের হতাশার জায়গা ছিল ব্যাটিংয়ে। একমাত্র অমিত হাসানের ব্যাটে ছিল রানের ছন্দ। সিলেটের ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ফরহাদ রেজার শেষ ম্যাচও রাজশাহী জয় দিয়ে রাঙায়।


এরপর ব্যর্থতার সুর প্রতিধ্বনিত হয় এনসিএলের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। দেশের সেরা বোলিং লাইনআপ নিয়েও সিলেট সেই মৌসুম শেষ করে সপ্তম স্থানে। ব্যাটে-বলে দল ছিল বিধ্বস্ত; সেরা বোলাররাও ছন্দহীন। জাতীয় দলের তারকা এবাদত হোসাইনের ঝুলিতে ৫ ম্যাচে ছিল মাত্র ১০ উইকেট, খালেদ আহমেদ সেই সংখ্যা পূরণ করতে পারেননি। ইকোনমিও সন্তোষজনক ছিল না।


সিলেটের ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা এবারের এনসিএল টি-টোয়েন্টিতেও বজায় থাকে। ব্যাটার এবং বোলার উভয়ই ছন্দহীন, ফলে সিলেটকে শেষের দিক থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করতে হয়। 


তবে চারদিনের জাতীয় ক্রিকেট লিগে সিলেট শুরু করে গেলবারের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে।


টানা চার ম্যাচে জয় না পাওয়ার পর, পঞ্চম রাউন্ডে আবু জায়েদ রাহির জোড়া পাঁচ উইকেট শিকারে সিলেট সহজেই হারিয়ে দেয় চট্টগ্রামকে। এই জয়ের ফলে সিলেটের আশার সঞ্চার হয়। এরপর ঘরের মাঠে রাজশাহীকে হারিয়ে ব্যাটে-বোলে জ্বলে উঠে সিলেট। অভিষেকের পর থেকে ব্যাটিং একাই টানছিল তরুণ ব্যাটার অমিত হাসান, যিনি হাঁকান নিজের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। আসাদুল্লাহ আল গালিবও অসাধারণ ১৮৫ রানের ইনিংস খেলেন। অমিত (২১৩) ও গালিব (১৮৫) একত্রে ৩৪২ রানের জুটি গড়ে সিলেটকে পাঁচশোরও বেশি রান তুলতে সাহায্য করে।


এরপর নাবিল সামাদ ও রাহির বোলিং সামলাতে না পেরে রাজশাহী হেরে যায় ১০ উইকেট ব্যবধানে। দুই ইনিংসে রাহি শিকার করেন ৬ উইকেট, অন্যদিকে নাবিল এক ইনিংসে ৪, আরেক ইনিংসে ৩ উইকেট নেন।


চট্রগ্রামের পর রাজশাহীর বিপক্ষে ১০ উইকেটের জয়ের ফলে সিলেট পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে যায়। দুইয়ে থাকা নবাগত ময়মনসিংহের সঙ্গে ব্যবধান মাত্র ২ পয়েন্ট। শেষ ম্যাচে সিলেটের জয়ের বিকল্প ছিল না।


শেষ রাউন্ডে রাজশাহীতে বরিশালের বিপক্ষে মুখোমুখি হয় সিলেট। প্রথম দিনে বোলাররা বরিশালকে চেপে ধরলেও ব্যাটাররা লিড নিতে ব্যর্থ হয়। বরিশালের ৩১২ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে সিলেট ৪ উইকেট হারায় মাত্র ৪৭ রানে। অধিনায়ক জাকির হাসান দলকে টেনে নেন, টানা পাঁচ ফিফটির পর হাঁকান সেঞ্চুরি। পঞ্চম উইকেটে আশরাফুল ইসলাম রিহাদের সঙ্গে ১০৬ রানের জুটি গড়ে দলকে বিপর্যয় থেকে উদ্ধার করেন। তৃতীয় দিনের শুরুতে জাকির ফিরে গেলে সিলেটের ইনিংস বেশি দূর এগোয়নি; তিনি ১৩০ রানে আউট হন।


সিলেটের ব্যাটিংয়ে শেষ ভরসা ছিলেন তরুণ পেস অলরাউন্ডার তোফায়েল আহমেদ। শেষ ব্যাটার হিসেবে ৪১ রানের ইনিংস খেলেন এবং সাহানুর রহমানের সঙ্গে ৬৭ রানের অষ্টম উইকেট জুটি গড়ে দলকে ২৮৭ রানের সংগ্রহে পৌঁছে দেন।


বরিশাল দ্বিতীয় ইনিংসে ইফতেখার হোসাইন ইফতির অপরাজিত ১২৮ রানে ২৯৪ রান যোগ করে। সিলেটের পক্ষে তোফায়েল ৩ উইকেট নেন। আবু জায়েদ রাহি ২ উইকেট, সাহানুর, নাসুম আহমেদ ও মহিউদ্দিন তারেক ১টি করে উইকেট নেন।


রান তাড়া করতে নেমে সিলেট ২০ ওভারে ৬৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে পড়ে। এরপর আর ম্যাচ জেতার চেষ্টা হয়নি। পঞ্চম উইকেটে মুশফিকুর রহিম ও আসাদুল্লাহ গালিব মিলে ৮৫ রানের জুটি গড়লেও রান তাড়ায় তারা অনেক বল খরচ করেন। শেষ পর্যন্ত সিলেট ৫৯ ওভারে ৫ উইকেটে ১৮৭ রান সংগ্রহ করতে পারে। বরিশালের পক্ষে তানভীর ইসলাম ও মঈন খান ২টি করে উইকেট নেন, তাওহীদুল ইসলাম রাসেল ১ উইকেট নেন।


শেষ রাউন্ডে সিলেটের লড়াই ছিল নবাগত ময়মনসিংহের সঙ্গে। সিলেট সপ্তম রাউন্ডে শীর্ষে থেকে শুরু করে। ময়মনসিংহের ব্যাটাররা ব্যর্থ থাকায়, রাজশাহী প্রথম ইনিংসে ২১৯ রানের জবাবে ময়মনসিংহকে ১৩৭ রানে গুটিয়ে দেয়। সানজামুল ইসলাম মাত্র ৫.১ ওভারে ৫ উইকেট শিকার করেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে শাকির হোসাইন (৯৪) ও মো. রাহিম আহমেদ (৫৭) জোড়া ফিফটিতে ৩৪৫ রান সংগ্রহ করেন। ময়মনসিংহের একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন আবু হায়দার রনি (১৪১*), যিনি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন। রাজশাহীর পক্ষে সানজামুল ৫ উইকেট, নিহাদ উ জ্জামান ৩ উইকেট, আব্দুর রহিম ও সাব্বির হাসান ১টি করে উইকেট নেন।


বরিশালের বিপক্ষে সিলেটের ড্র এবং ময়মনসিংহের বিপক্ষে রাজশাহীর জয় রংপুরকে চ্যাম্পিয়ন করার পথ তৈরি করে। ২০২১-২২ সালের পর শিরোপা রংপুর বিভাগের হাতে যায়।


মিরপুরে ঢাকা বিভাগ চট্টগ্রামকে ইনিংস ব্যবধানে হারায়। আনিসুল ইসলাম ইমন (১৮৬), মার্শাল আইয়ুব (১৬৫), আশিকুর রহমান শিবলী (১০০) তিনটি সেঞ্চুরি ম্যাচের মুখ্য দিক। মার্শাল আইয়ুব প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০,০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন।