সিলেটের হয়ে খেলছেন বলেই কী অমিত নেই আলোচনায়?
৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল
প্রকাশ : 2 দিন আগেআপডেট: 1 সেকেন্ড আগেসিলেটের হয়ে খেলছেন বলেই কী অমিত নেই আলোচনায়?
সিলেটের হয়ে খেলছেন বলেই কী অমিত নেই আলোচনায়?
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই অমিত হাসানের ব্যাটে ছুটছে রানের ফোয়ারা। সিলেটের হয়ে অভিষেকে জাতীয় ক্রিকেট লিগে সেঞ্চুরি, এরপর করেছেন আরো ছয় সেঞ্চুরি। সাথে আজ নামের পাসে যোগ করেছেন একটি ডাবল সেঞ্চুরি। এছাড়া তার নামের পাশে আছে ৮টি হাফসেঞ্চুরি। আর গড়টা পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই (৪৯.৪৯)। সেঞ্চুরি-হাফসেঞ্চুরি আর গড় যাই বল না কেন সবই অমিতের পক্ষে কথা বললেও যাদের আলোচনায় অমিত থাকার কথা সেই বিসিবির দৃষ্টির অগোচরেই রয়ে গেছেন এই তরুণ উইকেটরক্ষক ব্যাটার!
নিজেকে আলোচনায় আনতে এবার কক্সবাজারে খুলনার বিপক্ষে অমিত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের নিজের অষ্টম সেঞ্চুরিকে রুপ দিয়েছেন দ্বিশতকে। ৪৫৫ বলে ১৮ চার এবং ১ ছক্কায় ২১৩ রানের ইনিংসটি দিয়ে ২০২১ সালে ডাবল মিসের আক্ষেপ গোছানোর পাশাপাশি অমিত হয়তো নিজেকে আলোচনার তুঙ্গে নিয়ে আসলেন এবার।
পারফর্ম করার পরও আলোচনা বাইরে থাকাটা অমিতের কাছে নতুন নয়। সেই যুব বিশ্বকাপ জয়ী দলের কথাই ভাবুন, সেই দলেরও অংশ হওয়ার কথা ছিল তার৷ কিন্তু সব যোগ্যতা থাকার পরও দলের কম্বিনেশনের কারণে মূল দলে জায়গা হয়নি অমিতের। ছিলেন স্ট্যান্ডবাই তালিকায়।
যুব দলে সুযোগ না পাওয়াতে হারিয়ে যাননি অমিত, অপেক্ষায় ছিলেন একটা সুযোগের। যেখানে নিজের সেরাটা দিয়ে নিজের প্রতিভার জানান দিবেন, সেই সুযোগটা অমিতের কাছে ধরা দেয় ২০১৯ সালে।
জাতীয় দায়িত্ব পালনে তখন সিলেটের দুই তরুণ তুর্কী জাকির হাসান ও জাকের আলী অনিক বিসিবি এইচপি ও ‘এ’ দলে। জাকির-জাকেরের ঘাটতি পূরণে সিলেটের কোচ রাজিন সালেহ তখন স্মরনাপন্ন হন বন্ধু হান্নান সরকারের। তৎকালীন যুব দলের নির্বাচক হান্নান তাকে দেন নারায়ণগঞ্জের অমিত হাসানকে।
সিলেট দলে অমিতকে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে একবার রাজিন সালেহ বলেছিেন, ‘আফিফ হোসাইন, জাকির হাসান এবং জাকের আলী অনিকরা যখন জাতীয় দল এইচপি খেলতে চলে যায়, তখন আমি হান্নান সরকারকে কল করি একটা ব্যাটসম্যান দেওয়ার জন্য যে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতে পারবে। সে আমাকে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে স্ট্যান্ড বাই থাকা অমিত হাসানের কথা বলে, তার কথাই আমি তাকে দলে নিয়েছিলাম। এবং অমিত তার অভিষেক ম্যাচেই সেঞ্চুরি করেছিল। আমি এক সময় ক্রিকেটার ছিলাম, তাই অনেককে দেখলেই বুঝতে পারি সে কী করতে চায়, সে কিভাবে খেলতে চায়। আমি শুধু সবাইকে তাঁদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছিলাম, তাঁরা নিজেদের মত করে খেলেছে।'
সেই অভিষেক ম্যাচ থেকেই জাতীয় ক্রিকেট লিগে সিলেটের ব্যাটিংয়ের মূল ভরসা হয়ে আছেন নারায়ণগঞ্জের ছেলে অমিত। সিলেটের হয়ে বাইশগজে ব্যাট হাতে রান করছেন নিয়মিত। সিলেটের হয়ে প্রায় ৪৮ গড়ে এক ডাবল, তিন সেঞ্চুরি এবং ৮ হাফসেঞ্চুরিতে অমিতের রান ১৬৬৭। যেখানে সর্বোচ্চ ইনিংসটি ২১৩ রানের, এছাড়াও ১৮৬ রানের ইনিংস রয়েছে আরেকটি। সেদিন আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তেই দ্বিশতক হয়নি তার।
২০২১ সালে সেই ম্যাচে বিকেএসপির চার নাম্বার মাঠে রংপুরের বিপক্ষে অমিত তখন ব্যাট করছেন, ইনিংসের ১৪০তম ওভারে রংপুরের অধিনায়ক বল তুলে দেন লেগ স্পিনার তানভীর হায়দারের হাতে। তানভীরের করা ওভারের প্রথম বলই তার কাঁধে লেগে যায় উইকেটকিপার ধীমান ঘোষের হাতে, ধীমান সেই বল গ্লাভসবন্দি করতেই আউট দেন আম্পায়ার। আম্পায়ারের এমন ভুল সিদ্ধান্তে তাকে ফিরতে হয় ডাবল সেঞ্চুরি থেকে ১৪ রান দূরে থাকতে। তিনি সাজঘরে ফিরেন ১৮৬ রানে। চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচে ঢাকার বিপক্ষে সঙ্গীর অভাবে ১৭০ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল তাকে, আর বিকেএসপিতে আম্পায়ারের ভুলেই প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন না সিলেটের এই তরুন ব্যাটসম্যান।
প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটের অন্য আসর বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগেও হাসছে অমিতের ব্যাট। এখানেও প্রায় ৫৪ গড়ে অমিত রান করেছেন ৭৫০। নামের পাশে রয়েছে ৪ সেঞ্চুরি, যেখানে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান ১৩১।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এমন ধারাবাহিক পারফর্ম করেও অমিত থেকে যাচ্ছেন আলোচনার বাইরে। তাকে নিয়ে মিডিয়া পাড়ায়ও উঠছে না আলোচনার ঝড়। তাই অমিত থাকছেন বিসিবির দৃষ্টির অগোচরে। বিসিবিও তার পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন করছে না। এখনও পর্যন্ত জাতীয় দলে ডাক পাননি এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। সর্বোচ্চ তাকে এইচপি এবং ‘এ’ দলে খেলিয়েছে বিসিবি। সেখানে অমিত রেখেছেন ধারাবাহিকতার ছাপ। শ্রীলঙ্কা ইমার্জিং দলের বিপক্ষে খেলেন ৬৫ রানের ইনিংস, পাকিস্তান এইচপি দলের বিপক্ষেও আছে ৭১ রানের ইনিংস।
জাকের আলী অনিকের ইনজুরিতে ডাক পেয়েছেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। লিটন দাসের অসুস্থতায় দক্ষিণ আফ্রিকা বিপক্ষে হয়েছে অভিষেক। উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবেই ডাক পেয়েছেন অঙ্কন, যেখানে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পারফরম্যান্সের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের দিক থেকে অমিতের চেয়ে পিছিয়ে অঙ্কন। যেখানে অমিতের গড় ৪৫ বেশি, সেখানে অঙ্কনের গড় ত্রিশের কিছু বেশি। অমিত ভাল ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি গ্লাভস হাতে উইকেটের পিছনটা সামলাতেও বেশ পারদর্শী।
টেস্ট দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকেই কতটা মূল্যায়ন করছে বিসিবি! প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪৫ গড়ে রান করেও অমিত এখন জাতীয় দলের ক্যাম্পেও ডাক পাননি। এদিক বিবেচনা করলে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট অতোটা মূল্যায়ন করছে না বিসিবি। অমিতের ধ্যান-জ্ঞান ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যতটা উজ্জ্বল অমিত সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও তাই। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটেও অমিতের গড় প্রায় ৪২।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ও ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ দুই জায়গাই অমিত খেলছেন দারুণ। সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও বেশ ধারাবাহিক এই ব্যাটার। কিন্তু জাতীয় দল নির্বাচনের বেলায় থেকে যাচ্ছেন আড়ালে, নির্বাচকরা তার দিকে তেমন তাকাচ্ছেনই না।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের পারফরম্যান্স বিবেচনায় অমিত জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা প্রাপ্য। টেস্ট দল নির্বাচনের বেলায় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের পারফরম্যান্সকে মূল্যায়ন করা উচিত বলে মনে করেন রাজিন। বিসিবির এইচপি দলের ব্যাটিং কোচের মতে, ‘টেস্ট দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের পারফরম্যান্স অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এখানে দেখতে হবে যে, যে প্লেয়ারটা পারফর্ম করছে, সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুত কিনা। দেখে যদি মনে হয় সে প্রস্তুত তাহলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যারা ভাল করে, বিশেষ করে ব্যাটার যারা আছে তারা তো টেস্ট ক্রিকেটের মেজাজেই এখানে খেলে। এখানে ভাল করলে তাকে ডাকা উচিত। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে রান করে যাচ্ছে। এদিক বিবেচনায় অমিতের ডাক পাওয়াটা প্রাপ্য।’
টেস্ট দল নির্বাচনে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে প্রধান্য দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের নায়ক এনামুল হক জুনিয়র। জুনিয়রের মতে, ‘অনেক দেশের টেস্ট বিশেষজ্ঞ ব্যাটার তাকে, যেমন ভারতের চেতেশ্বর পুজারা৷ আমাদের দেশে মমিনুল হককে শুধু টেস্টে বিবেচনা করা হয়, যদিও থাকে ওয়ানডে খেলানো যায়। এখানে দল নির্বাচনের বেলায় বিপিএল ও ডিপিএলকে প্রধান দেওয়া হয়। যেমন বিপিএল কেউ ভাল করলে তাকে নিয়ে হইচই পড়ে যায়। তাকে ওয়ানডে দলে খেলানো হয়, আবার ওয়ানডেতে ভাল করলে টি২০তে খেলানো হচ্ছে। এরকম প্রায়ই হচ্ছে। টেস্ট দল নির্বাচনে অবশ্যই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের পারফরম্যান্স বিবেচনা অমিত এখন জাতীয় দলে থাকার কথা। তাকে অন্তত দলের সাথে রাখলে আমরা আরো একটা ভাল মানের টেস্ট ব্যাটার পেতাম।’
অমিতকে আলোচনা কম হওয়ার পিছনে বিপিএলে না খেলা। পুরোদস্তুর টেস্ট মেজাজের এই ব্যাটার নিজেকে গড়ে তুলছেন ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণের কথা মাথায় রেখেই। ডিপিএলে ৪০ গড়ে রান করলেও স্ট্রাইকরেটটা নজর কাড়ার মতো নয়। ফলে দল পাচ্ছেন না বিপিএলে, আর দেশের সবার নজর তাকে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত সংস্করণে। এখানে চার-ছক্কার ঝড় তুলেন যারা, সব আলোর পাদপ্রদীপে থাকেন তারা। দল নির্বাচনেও বিসিবির থাকে এখানে অগ্রাধিকার।
বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট হ্যাট্রিকম্যান অলক কাপালিও বলছেন সে কথা। এ প্রসঙ্গে কাপালি বলেন, ‘আমাদের দেশে হয়েছে উল্টো, এখানে বিপিএলে যারা ভাল করে তাদের দিকে নজরটা বেশি থাকে। এরা যখন যেখানে খেলে সেখানে ফোকাসটা তাদের উপরে থাকে৷ এরা ঢাকা লিগে ভাল করলে আলোচনা হয়, কিন্তু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কেউ ভাল করলে তেমন আলোচনা হয় না। যেমনটা অমিতের বেলায় হয়েছে।’
টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতি করতে হলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যারা ভাল করছে তাদেরকে গুরুত্ব দিতে হবে বলে মত অলকের। প্রয়োজনে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যে ছয়-সাতজন ব্যাটার ভাল করছে, তাদের খেলা পরখ করার জন্য নির্বাচকদের সেখানে যাওয়ার পরামর্শ দেন সাবেক এই অলরাউন্ডার। তিনি বলেন, ‘প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের পারফরম্যান্স দেখে টেস্ট দল নির্বাচন করলে দলের জন্য ভাল হয়। তখন প্লেয়ারদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা আসবে। তখন তারা এনসিএল/বিসিএল ভাল করার চেষ্টা করবে। এখানে যদি চার/পাঁচটা বা ছয়টা প্লেয়ার ভাল করে, আমার পরামর্শ থাকবে তাদের খেলা যেখানেই হউক। নির্বাচকরা যেন তাদের খেলা দেখতে সেখানেই যান। তারা কীভাবে ব্যাটিং করছে! তাদেরকে দলে নিলে কী হবে না হবে। এভাবে যদি চিন্তাভাবনা করেন তাহলে টেস্ট দলের জন্য ভাল হবে, প্লেয়াররাও ভাল খেলার উৎসাহ পাবে।’
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের পাশাপাশি সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও অমিত রান করছেন নিয়মিত। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৪০ গড়ে রান করাটাও তার প্রমাণ। নামের পাশে রয়েছে সমানসংখ্যক ৫ সেঞ্চুরি ও হাফসেঞ্চুরি। এটাকেও রাজিন দেখছেন ইতিবাচক হিসেবে। তিনি বলেন, ‘প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে রান করার পাশাপাশি ঢাকা লিগেও রান করাটাও জরুরি। ডিপিএলে প্রতিযোগিতা হয় অনেক বেশি, এখানে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াই বেশি থাকে। সুপার লিগে উঠার জন্য দলগুলো লড়াই করে। আবার অবনমন থেকেও বাঁচার চেষ্টা করে। এখানে বিদেশী অনেক ক্রিকেটার খেলে থাকে। তাই এখানে পারফর্ম করাটা কঠিন। আর এখানেও সে রান করছে নিয়মিত, এটা তার জন্য ইতিবাচক একটা দিক।’
সিলেট দলের হয়ে অভিষেক, এরপর সিলেটের হয়েই নিয়মিত খেলছেন অমিত। কোচ হিসেবে তাকে খুব কাছ থেকেই দেখছেন রাজিন। এইচপি দলের অমিত অস্ট্রেলিয়াও খেলে এসেছেন, এই দলের ব্যাটিং কোচ হিসেবে রাজিন তাকে পরখ করেছেন খুব কাছ থেকে। সেই দেখা থেকে রাজিন নিজের এই শিষ্যকে কবে দেখতে চান জাতীয় দলে। বিসিবিও বা তাকে দেখছে না কেন সুনজরে? এমন প্রশ্নের জবাবে এইচপি এই কোচ বলেন, ‘আসলে আমিও বিসিবির একজন, অমিতকে নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়। বোর্ডের অনেকের সাথে তাকে নিয়ে কথা হয়েছে। সে অস্ট্রেলিয়ায় ভাল খেলেছে। শুধু অমিত নয়, আইচ মোল্লাকে নিয়েও বিসিবির পরিকল্পনা আছে। টেস্টের ক্রিকেটের জন্য বিসিবির ভাবনায় এই দুজন আছে। তাদেরকে পুরোপুরি প্রস্তুত করেই জাতীয় দলে আনার পরিকল্পনা বিসিবির। যাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মানিয়ে নিতে যাতে স্ট্রাগল না করে। আমার কাছে মনে অমিতকে আরো এক বছর সময় দেওয়া উচিত। এই সময়ের ভিতরে এইচপি, ‘এ’ দল আর বাংলা টাইগার্স দলে নিয়মিত সুযোগ দিয়ে তাকে তৈরি করা হোক। আগামী বছর এইচপি দলে বয়সের কোনো সীমাবদ্ধতা থাকবে না। এক্ষেত্রে এইচপি কিংবা বাংলা টাইগার্স দলে রেখে তাদের নিয়ে কাজ করা হোক। এখানে যদি তারা ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করে তাহলে তাদেরকে অবশ্যই নেওয়া দরকার।’
জাকের আলী অনিকের ইনজুরিতে কপাল খুলে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের, ডাক পান দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট দলে। আর লিটন দাসের জ্বরে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকও হয়েছে অঙ্কনের। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেটকিপিংয়ের কারণেই মূলত অঙ্কনের দ্রুত জাতীয় দলে অভিষেক। কিন্তু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের পারফরম্যান্স বিবেচনায় অঙ্কনের আগেই জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার কথা ছিল অমিতের। ধারাবাহিক ভাবে রান করার পাশাপাশি উইকেটের পিছনটাও যে অমিত সামলাতে পারেন ভাল।
তবে ব্যাটিংয়ে যতটা সুযোগ পান অমিত, গ্লাভস হাতে তাকে অতটা ব্যবহার করে না সিলেট। আবার সিলেটের হয়ে খেলায় হয়তো নির্বাচকদের আলাদা ভাবে ফোকাস থাকছে না তার প্রতি। কারণ সিলেটিদের প্রতি নজর একটু কমই থাকে বিসিবির। এটাই নিয়ে রাজিনও বা কী ভাবছেন?
এনিয়ে বিসিবির এই কোচ বলেন, ‘অমিতের কিপিংটা হয়তো অতোটা হাইলাইট হয় না৷ আসলে গত তিন বছর ধরে সিলেট দলে অতটা কিপিং করেনি। জাকির-জাকের দুজনেই উইকেটকিপার, সেক্ষেত্রে অমিতের কিপিং করার সুযোগ কম ছিল। অঙ্কনের নির্বাচনের ক্ষেত্রে হয়তো কিপিংটাই প্রাধান্য পেয়েছে। কারণ একটা ক্যাচ ছেড়ে দিলেই দলের সর্বনাশ হয়ে যায়৷ যা আমরা দেখেছি দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে, এক ক্যাচ ড্রপের মাশুল দিতে হয়েছে। এদিক থেকে নির্বাচকরা হয়তো কিপার/ব্যাটার খুঁজেছেন। অমিত ব্যাটার/কিপার তাই হয়তো বিবেচনায় আসেনি। তবে সে নির্বাচকদের বিবেচনায় আছে, আমার তাদের সাথে কথা হয়। অস্ট্রেলিয়াতে বিসিবির অনেকের সাথে তাকে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। সিলেটের হয়ে খেলায় হয়তো অতোটা ফোকাস পাচ্ছে না, ঢাকা বা খুলনার হয়ে খেলতে হয়তো আলোচনাটা বেশি হতো। তবে অমিত আরেকটু সময় লাগবে। টেকনিক্যালি নিজেকে আরো উন্নত করতে হবে।’
রাজিনের মতো এনামুল ও অলক মনে করেন অমিতের সামনে এখনও অনেক সময় পড়ে আছে। নিজেকে আরো ভালভাবে প্রস্তুত করা সুযোগ অমিতের সামনে। এনামুল বলেন, ‘অমিতের সামনে এখনও অনেক সময় পড়ে আছে, এখন নিজেকে আরো পরিপক্ব করে তোলার সময় তার সামনে। তার এখনও প্রচুর রান করার সুযোগ আছে। তার সাথের অনেকে জাতীয় দলে খেলছে, এখন সে যেন এটা মাথায় না নেয় যে সে পারছে না। তারা খেলছে খেলুক। মূল বিষয় হচ্ছে কারা নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করতে পারে। আমি আশা করব যে, সে যখন দলে সুযোগ পাবে তখন সে দলে নিজের জায়গা ধরে রাখবে।’
অলকের মতে, ‘নির্বাচকরা চাইলে নিতে পারতেন। তবে অমিতের সময় শেষ হয়ে যায়নি, তার সামনে এখনও অনেক সময় পড়ে আছে। সে যে হারে ধারাবাহিকভাবে রান করে যাচ্ছে। আমার মনে হয় সে খুব তাড়াতাড়ি দলে আসবে।’
উইকেটরক্ষক ব্যাটারের বাইরে অমিতের নেতৃত্ব গুনে মুগ্ধ এনামুল। জাতীয় ক্রিকেট লিগে জাকিরের অনুপস্থিতিতে সিলেটকে নেতৃত্বে দেখে বেশ উচ্ছ্বসিত এই বা হাতি স্পিনার। তিনি বলেন, ‘তার যোগাযোগের দক্ষতা খুব ভাল। প্রথম দিন থেকেই সতীর্থদের সাথে মিলেমিশে চলছে। সবাইকে নিয়ে চলার মনমানসিকতা আছে। এটাই হচ্ছে একজন নেতার গুন, একজন নেতা সবাকে নিয়ে চলবে। যা তার মাঝে আছে। সে চাইলে সিলেট ছেড়ে চলে যেত পারত, তার সেই সুযোগ ছিল। আমরা তাকে রাখার চেষ্টা করেছি, সেও সিলেট দলে থাকতে ইচ্ছুক ছিল। এদিক থেকে সিলেটের প্রতি যে তার আলাদা একটা টান রয়েছে, এটা একটা ইতিবাচক দিক। এখনও পর্যন্ত অধিনায়ক হিসেবে বেশ ভালই করছে। সামনেও আরো ভাল করবে আশা করছি।’