Image

বিপিএলে যেমন খেলছেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাংলাদেশ স্কোয়াডের ১৫ তারকা

৯৭ প্রতিবেদক:

প্রকাশ : 3 ঘন্টা আগেআপডেট: 1 সেকেন্ড আগে
বিপিএলে যেমন খেলছেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাংলাদেশ স্কোয়াডের ১৫ তারকা

বিপিএলে যেমন খেলছেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাংলাদেশ স্কোয়াডের ১৫ তারকা

বিপিএলে যেমন খেলছেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাংলাদেশ স্কোয়াডের ১৫ তারকা

আইসিসি মেন’স চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরু হতে যাচ্ছে ১৯ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে, যেখানে উদ্বোধনী ম্যাচে করাচিতে স্বাগতিক পাকিস্তান মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ডের। ৮ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নয়া আসরে অংশ নিচ্ছে আটটি দল, এবং বাংলাদেশ রয়েছে ‘এ’ গ্রুপে ভারত, পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে। টাইগারদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি যাত্রা শুরু হবে ২০ ফেব্রুয়ারি, দুবাইতে ভারতের বিপক্ষে। এরপর ২৪ ফেব্রুয়ারি রাওয়ালপিন্ডিতে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি একই ভেন্যুতে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবে।

বিসিবি (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) বিপিএলের মাঝপথে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করেছিল। ফরম্যাট ভিন্ন হলেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে বিপিএল ক্রিকেটারদের প্রমাণের মঞ্চ ছিল। তবে দল ঘোষণার পর থেকে বিপিএলে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের পারফরম্যান্স আশানুরূপ হয়নি। দলের মূল ব্যাটার ও বোলারদের অনেকে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি বিপিএলের গ্রুপ পর্ব শেষে। তবে এখনো স্কোয়াডে পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে, কারণ আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দল পরিবর্তন করা সম্ভব। ফলে বিপিএলে ফর্মহীন থাকা কোনো ক্রিকেটারের বদলে নতুন কাউকে নেওয়া হবে কি না, সেটি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট।

বিপিএলে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি স্কোয়াডের টপ অর্ডার ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে আলো ছড়িয়েছেন তানজিদ হাসান তামিম। ১২ ম্যাচে ৪৮৫ রান সংগ্রহের পাশাপাশি তিনি এবারের বিপিএলে সর্বাধিক ছক্কা হাঁকানোর কীর্তি গড়েছেন। ৪৪.০৯ গড় ও ১৪১.৩৯ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করা তানজিদ ১টি শতক ও ৪টি অর্ধশতক করেছেন, যা তার দারুণ ফর্মে থাকার ইঙ্গিত দিচ্ছে। 

অপরদিকে, সৌম্য সরকার শুরুতে ইনজুরির কারণে খেলতে না পারলেও গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ৭৪ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে ফেরার বার্তা দিয়েছেন। পারভেজ হোসেন ইমনকে ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে নেওয়া হলেও ১০ ম্যাচে মাত্র ২২.০০ গড়ে ২২০ রান করেছেন, যেখানে কেবল একটিতেই ফিফটি এসেছে। তবে সবচেয়ে হতাশাজনক পারফরম্যান্স এসেছে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট থেকে। ৫ ম্যাচে মাত্র ৫৬ রান করা শান্ত একমাত্র ৪১ রানের ইনিংসটি ছাড়া বলার মতো কোনো পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি। দলের অধিনায়কের এমন ছন্দহীনতা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় মঞ্চের আগে দলের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফরচুন বরিশাল একাদশেই তো সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি।

এবারের বিপিএলে মিডল ও লোয়ার-মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স ছিল মিশ্র। মেহেদী হাসান মিরাজ ৩৫৩ রান করেছেন, যার মধ্যে ৭৪* রান ছিল তার সর্বোচ্চ। তিনি ৩২.০৯ গড়ে এবং ১৩৬.৮২ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন এবং বল হাতেও বেশ কার্যকরী ছিলেন। মিরাজ ১২ ম্যাচে ১০ উইকেটও নিয়েছেন, তার বোলিং গড় ৩৪.১০ এবং ইকোনমি রেট ৮.৩১। তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের দিকে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১৯৯ রান করেছেন ৩৯.৮০ গড়ে, তার দুটি অর্ধশতক ছিল, এবং ১৪৯.৬২ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, খুলনা এবং রাজশাহীর বিপক্ষে তার ৩টি দুর্দান্ত ইনিংস রয়েছে। 

জাকের আলি ১২ ম্যাচে ২৪১ রান করেছেন, তার সর্বোচ্চ রান ছিল ৪৭*। ২৪.১০ গড়ে এবং ১২৭.৫১ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছেন তিনি। বিপিএলে সেরা ফর্মে না থাকলেও বাংলাদেশ স্লগ ওভারে তার ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে থাকবে দল। তবে মুশফিকুর রহিম ও তাওহীদ হৃদয়ের পারফরম্যান্স কিছুটা হতাশাজনক ছিল। মুশফিক গ্রুপ পর্বে ১২ ম্যাচে ২৮.০০ গড়ে ১৬৮ রান করেছেন, স্ট্রাইক রেট ১২৪.৪৪, সর্বোচ্চ স্কোর ৪২*। গ্রুপ পর্বে হৃদয় ১২ ম্যাচে ১৮.০০ গড়ে ১৯৮ রান সংগ্রহ করেছেন, স্ট্রাইক রেট ১২৬.৯২, সর্বোচ্চ স্কোর ৪৮। 

এবারের বিপিএলে স্পিনারদের পারফরম্যান্স খুব একটা আশা দেখাচ্ছে না। রিশাদ হোসেন ৯ ম্যাচে ৬ উইকেট নিলেও ৮.২২ ইকোনমি রেটে বেশ ব্যয়বহুল ছিলেন। নাসুম আহমেদ ১০ ম্যাচে ৮ উইকেট পেলেও ৮.০৩ ইকোনমি ও ২৭.১২ গড়ে তেমন কার্যকর ছিলেন না। এই দুই স্পিনারের ব্রেকথ্রু না দিতে পারা দলের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাড়াতে পারে।

এবারের বিপিএলে তাসকিন আহমেদ দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন, ১২ ম্যাচে ২৫ উইকেট নিয়ে গ্রুপ পর্বের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হন। তার ৬.৪৯ ইকোনমি রেট ও ১১.১ স্ট্রাইক রেটে তিনি নিয়মিত ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছেন। মুস্তাফিজুর রহমান ১৩ উইকেট পেলেও ৭.৩৫ ইকোনমি রেটে বোলিং করেছেন, ডেথ ওভারে তার কার্যকারিতা নিয়ে কিছু প্রশ্ন থাকলেও অভিজ্ঞতার কারণে এখনো দলের অন্যতম ভরসা। তানজিম হাসান সাকিব ৯ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়ে নজর কেড়েছেন, যদিও ৮.১৯ ইকোনমি নিয়ন্ত্রণে আনার জায়গা আছে। নাহিদ রানা প্রথম কয়েক ম্যাচে ভালো করলেও শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি, ৮.৪৩ ইকোনমিতে ১১ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছেন। সামগ্রিকভাবে পেস আক্রমণ প্রতিপক্ষের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে, তবে ডেথ ওভারে কার্যকারিতা নিয়ে আছে প্রশ্ন। এই পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারলে, বিশেষ করে তাসকিন ও তানজিম যদি ফর্ম ধরে রাখেন, তাহলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ পেস আক্রমণ থেকে বড় কিছু আশা করতেই পারে।

বিপিএলের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও দুর্বলতা স্পষ্ট। ওপেনিংয়ে তানজিদ হাসান তামিম ও সৌম্য সরকারকে নিয়ে আস্থা রাখা যেতে পারে, তবে তাদের বিপিএল এর ফর্ম জাতীয় দলেও ধরে রাখতে হবে। পেস আক্রমণে তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত ফর্ম আশার আলো জাগালেও ডেথ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে। ব্যাটিংয়ে মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স ও কিছু ব্যাটসম্যানের ভালো ইনিংস থাকলেও মিডল অর্ডারের ধারাবাহিকতা বড় প্রশ্নচিহ্ন। স্পিন বিভাগ উইকেট তুলে নিতে ব্যর্থ হয়েছে, যা বড় টুর্নামেন্টের জন্য উদ্বেগের বিষয়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে পেস আক্রমণই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি, তবে ব্যাটিংয়ে স্থিতিশীলতা ও স্পিন আক্রমণকে সামনে এগিয়ে আসতে হবে ভালো ফলের জন্য।

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য বাংলাদেশ দল

নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, সৌম্য সরকার, তাওহীদ হৃদয়, জাকের আলি, তানজিদ হাসান তামিম, তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা,  তানজিম হাসান সাকিব, মুস্তাফিজুর রহমান, রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ ও পারভেজ হোসেন ইমন।

লেখাঃ আতিক শামস। 
**কেবল গ্রুপ পর্বের পারফরম্যান্স বিবেচনা করা হয়েছে। 

Details Bottom
Details ad One
Details Two
Details Three