Image

দর্শন বদলেছে লিটন দাসের, উপভোগ করেন না ক্রাইসিস ম্যান তকমা

৯৭ প্রতিবেদক: গোলাম সারোয়ার

প্রকাশ : 1 মাস আগেআপডেট: 1 সেকেন্ড আগে
দর্শন বদলেছে লিটন দাসের, উপভোগ করেন না ক্রাইসিস ম্যান তকমা

দর্শন বদলেছে লিটন দাসের, উপভোগ করেন না ক্রাইসিস ম্যান তকমা

দর্শন বদলেছে লিটন দাসের, উপভোগ করেন না ক্রাইসিস ম্যান তকমা

৩০ ছুঁইছুঁই লিটন দাসের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ৯ বছরের বেশি সময়ের। অনেক সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে আসা লিটন দাস দেরিতে হলেও নিজের জাত চেনাচ্ছেন। পাকিস্তানে ইতিহাস গড়া সাফল্যের (টেস্ট সিরিজে ২-০ তে জয়) পেছনে অন্যতম নায়ক ছিলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। 

পাকিস্তান সিরিজ, আসন্ন ভারত সিরিজ সহ নানা বিষয়ে লিটন দাসের ভাবনা জেনেছেন গোলাম সারোয়ার। ক্রিকেট৯৭ পাঠকদের জন্য কথোপকথনের পুরোটা প্রকাশ করা হল-   

ক্রিকেট৯৭ঃ দুর্দান্ত একটা সিরিজ কেটেছে পাকিস্তানে, সেই স্মৃতিটা এই মুহূর্তে কেমন উপভোগ করছেন? 

লিটন দাসঃ পাকিস্তানে যেটা গিয়েছে খুবই ভালো, অনুভব তো করেছি খুবই ভালো। অনেকদিন পর রানও পেয়েছি, এটা একটা ইতিবাচক দিক। তবে পাকিস্তান সিরিজ এখন শেষ, সামনে অনেক বড় একটা সিরিজ আসতেছে (ভারতের বিপক্ষে ২ টেস্ট, ৩ টি-টোয়েন্টি), সেটা নিয়েই চিন্তিত।  

ক্রিকেট৯৭ঃ পাকিস্তানে পারফরম্যান্সের পর দর্শকদের ভালোবাসাও নিশ্চয়ই উপভোগ করছেন। দুই মাস আগেও দর্শকরা যেরকম প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছিলেন, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, এখন লিটন সবখানে ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন। পরিস্থিতি পুরোই বদলে গেছে পারফরম্যান্সে। 

লিটন দাসঃ ভালোবাসা (ভক্ত-সমর্থকদের) সবসময়ই ভালো লাগে। দেখে, যেটা হয় সেটা হল বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ চায় যেন আমি পারফর্ম করি। খেলোয়াড় হিসাবে আমার কাজও পারফর্ম করা। যখন করতে পারি না (পারফর্ম) তাঁরা হতাশ হয়, হতাশ হয়েই খারাপ কথা বলে। তবে তাঁরা মন থেকে কেউই আমাকে খারাপ ভাবে জানেনা, কেউই চায়না যে আমি খারাপ করি। দেশের জন্য আমি যখন ভালো কিছু করব তাঁরা আমাকে সমর্থন করবে, এটাই স্বাভাবিক। 

ক্রিকেট৯৭ঃ ভক্ত-সমর্থকরা তো বটেই, অনেক ক্রিকেট বোদ্ধা আপনার ব্যাটিংয়ের ভক্ত। ভারতে খেলতে যাচ্ছেন, সেখানকার জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে আপনার ব্যাটিংয়ের ভক্ত, তাঁর সাথে কখনো কথা হয়েছে কিনা। 

লিটন দাসঃ না, এরকম কোন স্মৃতি নেই। তাঁর সাথে এখন অব্দি আমার কোন আলাপ হয়নি মুখোমুখি। তবে সুযোগ আসলে অবশ্যই তাঁর সাথে কথা বলার চেষ্টা করব। 

ক্রিকেট৯৭ঃইয়ান বিশপ, হার্শা ভোগলেরা যখন আপনার ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করেন, এই ব্যাপারটা আপনাকে কেমন আনন্দ দেয়? 

লিটন দাসঃ জিনিসটা প্রশংসার না, আমার মনে হয় তাঁরা বিশ্ব ক্রিকেটটা অনেক কাছ থেকে দেখেন। বেশিরভাগ ম্যাচেই তাঁরা ধারাভাষ্য দেন, সুতরাং উনি যখন ধারাভাষ্য দিবেন গোটা মাঠেরই দৃশ্য দেখতে পারেন। আমার মনে হয় তাঁরা সবকিছু দেখে হয়তো তাঁদের কিছু একটা পছন্দ হয়। শুধু আমার ক্ষেত্রেই হয় এমন না, অনেক ক্রিকেটারকে নিয়েই গবেষণা করে। হয়তো তাঁরা ভেবেছে আমি ঐ কাতারের খেলোয়াড়। তারাও চিন্তা করে আমি কেনো পারফর্ম করি না। পারফরম্যান্সই আসলে সবকিছু, আপনি পারফর্ম করলেই নিজের সে স্কিল আছে তা প্রদর্শন করতে পারবেন। 

ক্রিকেট৯৭ঃ ১০ বছর আগে আপনি যেখানে যেতে চেয়েছিলেন, আপনি কি এখন সেখানে যেতে পেরেছেন? 

লিটন দাসঃ দেখেন, ১০ বছর আগের চিন্তাধারা একরকম ছিল, এখনকার চিন্তাধারা আরেক রকম। তবে মানুষের চাহিদার কোন শেষ নেই। ১০ বছর আগের যে চাহিদা ছিল হয়ত তা পূরণ হয়ে গেছে। এখন যেটা চাহিদা, সেটা অনেক দূর- আকাশচুম্বী। আমার মনে হয় বর্তমানে থাকাটা বড় জিনিস। অবশ্যই মানুষ চিন্তা করে ভবিষ্যতে কি করবে, একই সাথে বর্তমানে আমার কি কাজ সেটাতে মনযোগ দিলেই মনে করি সেটা ভালো। 

ক্রিকেট৯৭ঃ কিছুদিন আগেই আপনি বলছিলেন ১০ বছর কাটিয়ে ফেলেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, এই মুহূর্তে দায়িত্বটা নিতে চান, ব্যাটার লিটন কি এই মুহূর্তে ম্যাচিউর? 

লিটন দাসঃ দায়িত্ব নেওয়া বলতে আমি যেটা বুঝিয়েছি, বাংলাদেশের প্রত্যেকটা ক্রিকেটারেরই দায়িত্ব আছে, সেটা এক বছর খেলুক আর ১০ বছর খেলুক। তবে স্বাভাবিকভাবেই ১০ বছর ক্রিকেট খেলা ক্রিকেটারের অভিজ্ঞতা ১ বছর ক্রিকেট খেলা ক্রিকেটারের চেয়ে বেশি। আমি ঐ জায়গা থেকে বলেছি, বড় বড় দলে তাইই হয়। যারা অনেকদিন ধরে খেলে, তারাই ক্রুশাল সময়ে গিয়ে ব্যাটিং করে, তারাই ম্যাচকে ঘুরিয়ে দেয়। 

আপনি যদি দেখেন, আমার আর মিরাজের (মেহেদী হাসান মিরাজ) ক্যারিয়ার প্রায় ৯ বছরের। বাংলাদেশের মানুষ এটা আশা করতেই পারে যারা ৯ বছর ধরে খেলছে তাঁরা ভালো পারফরম্যান্স উপহার দিবে। এটা হওয়াটাই স্বাভাবিক, আমরা করতে পারিনা অনেক সময় সেটা আমাদের ব্যর্থতা। আপনি প্রথম ম্যাচে মুশফিক ভাইয়ের (মুশফিকুর রহিম) ইনিংসটা যদি দেখেন, এটা কিন্তু এমন না ১-২ বছর ক্রিকেট খেলা কেউ হুট করে গিয়ে এমন একটা ইনিংস খেলবে। মুশফিক ভাই অনেক বছর ধরে খেলছে বিধায় তিনি খেলাটা বেশ ভালো বুঝেন, সহজ অবশ্যই না, তবে ম্যাচিউরিটর ব্যাপার আছে। এটা যতই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবেন তত উন্নতি হবে। আমি এটাই বলেছিলাম যে সিনিয়র ক্রিকেটাররা সাহায্য করবে, দায়িত্ব নেবে। 

ক্রিকেট৯৭ঃ দায়িত্বের কথা যখন বলছিলেন, আপনার ৪ সেঞ্চুরির (টেস্ট) ৩ টিই এসেছে ক্রাইসিস মুহূর্তে। লিটন দাস কি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ক্রাইসিস ম্যান?

লিটন দাসঃনা, এরকম কোন কিছু না (হাসি)। ক্রাইসিস মুহূর্ত বলতে, ব্যাটার হিসাবে আমার কাজ রান করা, সেটা আমি করেছি। কখনো যদি এমন হয় যে আমি ১৫০ ওভারের পর ব্যাটিংয়ে যাই, তখনও আমার কাজ হবে রান করা। আমি চেষ্টা করব সেটাও কাজে লাগানোর। জিনিসটা হচ্ছে সুযোগ, আমার কাছে মনে হয় প্রত্যেকটা ম্যাচেই সুযোগ থাকে। টেস্ট ক্রিকেটে ১০-১২ টা ইনিংস এমন আছে যেখানে আমি ৭০ এর ঘরে গিয়ে আউট হয়ে গিয়েছি। আমার মনে হয় ঐ ইনিংসগুলোকে যদি আমি শতকে রূপ দিতে পারতাম তাহলে এই কথা আসত না যে ক্রাইসিস ম্যান। তখন ক্যারিয়ারটাও ভালো বিল্ড আপ হত। ব্যাটারের কাজ হচ্ছে পারফর্ম করা, রান করা। এভাবে চিন্তা করার কিছু নেই যে ক্রাইসিস মোমেন্ট বা অন্যকিছু। যখনই ব্যাটিংয়ে নামব, আমার কাজ হচ্ছে রান করা। 

ক্রিকেট৯৭ঃ ভারতের বিপক্ষে সিরিজের আগে অনুশীলনে কিপিংয়ের ভিন্ন রকম অনুশীলন করতে দেখলাম, সেটা কি স্পিনের বিপক্ষে কিপিং করার জন্য প্রস্তুত হতে?

লিটন দাসঃ গত কয়েকদিন ধরেই ব্যাটিং অনুশীলন করেছি। কিপিং অনুশীলনটা একটু কম হচ্ছিল। স্বাভাবিক ব্যাপার, আমার রোলটা কিপিংও। ৪র্থ/৫ম দিনে গিয়ে উইকেট রাফ হয়ে যায়, তখন ব্যাটারের জন্যও কঠিন, কিপারের ক্ষেত্রেও কঠিন। তো ওটার জন্যই প্রস্তুত হচ্ছিলাম। 

ক্রিকেট৯৭ঃ ভারতের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ফাইনালে সেঞ্চুরি, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো একটা ইনিংস আছে, টেস্টে বড় কোন ইনিংস নেই। এবার বড় কোন টেস্ট ইনিংস দেখতে পারব কিনা?

লিটন দাসঃ একটা কথা আমি সবসময় বলি, ফরম্যাট যাই ই হোক আমার কাজ রান করা। হয়তো বা এক ফরম্যাটে হয়েছে, আরেক ফরম্যাটে হয়নি। সুযোগ যখনই আসবে আমার হাতে, আমি রান করার চেষ্টা করব। হ্যাঁ, কিছু কিছু সময় আপনি ব্যর্থ হবেন, সেটাও মেনে নিতে হবে। যেমনটা বললাম, আমি চেষ্টা করব, বাদবাকিটা দেখা যাক। 

ক্রিকেট৯৭ঃ ছোটবেলা থেকেই কোচ মন্টু দত্ত আপনার সাথে কাজ করেছেন। আপনি যখন কঠিন সময় পার করেন তখন তাঁর ভূমিকা কেমন থাকে। 

লিটন দাসঃ মন্টু স্যার আমাকে খুব ছোট থেকেই চিনে। একটা মানুষের কাছে যখন ছোট থেকে থাকবেন, তাঁর সাইকোলজি ধরা যায়। স্যার আমার বেসিক সম্পর্কেও অনেক ভালো জানে। এরকম কোন কঠিন সময় গেলেই স্যার আমাকে ফোন দেন, এবং উইক পয়েন্ট বোঝানোর চেষ্টা করেন। আমি ওগুলো নিয়ে কাজও করি।

ক্রিকেট৯৭ঃএটা আমরা সবাই জানি আপনি সেঞ্চুরি করলেই মন্টু দত্ত আপনাকে টাকা দেন, এখন পর্যন্ত কত টাকা জমা আছে? 

লিটন দাসঃ না, মনে হয়না খুব বেশি জমা আছে। অনেকদিন ধরে রানও করিনি। অবশ্যই স্যারের কাছ থেকে টাকা পেতে ভালো লাগে। পরিমাণটা হয়তো কম, তবে স্যার যখন এটা দেন, ছোট থেকেই এটার জন্য আগ্রহ জন্মাত যে সেঞ্চুরি করলেই স্যারের কাছে কিছু টাকা পাব। আমি চেষ্টা করব স্যারের পকেট যেনো খালি করতে পারি, তবে জানি না কতটুকু করতে পারব (হাসি)।  

Details Bottom