'দুই যুগ আগেও ক্রিকেটে আধুনিক ছিল সিলেট'
৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল
প্রকাশ : 2 সপ্তাহ আগেআপডেট: 1 সেকেন্ড আগে'দুই যুগ আগেও ক্রিকেটে আধুনিক ছিল সিলেট'
'দুই যুগ আগেও ক্রিকেটে আধুনিক ছিল সিলেট'
একটা সময় সিলেটে নিয়মিত ছিল স্কুল ক্রিকেট, ক্ষুদে ক্রিকেটার অন্বেষণও ছিল চালু। স্কুল ক্রিকেট থেকে ওঠে আসা ক্রিকেটারদের পরিচর্যার একটা চল ছিল সিলেটে। পাড়ায়-মহল্লায় ছোটোখাটো পরিসরে ছিল ক্রিকেট অনুশীলনের সুবিধা। সিলেটের অনেক জায়গায় ছিল সিমেন্টের উইকেট, সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের বাইরে ক্রিকেটাররা এসব উইকেটেই করতেন অনুশীলন।
তাপস-অলক-রাজিন-তান্নাদের সামনে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের বাইরে এসবই ছিল সম্বল। অপ্রতুল এই সুযোগ-সুবিধার মধ্যে বেড়ে ওঠা তাপস-,অলক-রাজিনরা দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের গন্ডি পেরিয়ে নিজেদের নিয়ে গেছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। সেখানে নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন দলের প্রয়োজনে।
সিলেট লিগও ছিল জমজমাট, দেশীয় তারকা ক্রিকেটারদের পাশাপাশি বিদেশি ক্রিকেটারদের ছিল আনাগোনা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তারকাদের সাথে স্থানীয় ক্রিকেটাররা সিলেটের গন্ডিয়ে পেরিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন জাতীয় পর্যায়ে। এই তালিকায় আছেন সিলেটের ভাইসাব খ্যাত পারভেজ আহমেদ, নাসিরুল আলম নাহিদরা।
কালের বিবর্তনে সিলেটে বেড়েছে অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা। সিলেট আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম পেয়েছে দুটি। তবে কাজের কাজ হচ্ছে না ঠিকঠাক। দক্ষ ব্যাটার গড়তে ব্যর্থ সিলেট।
আর এখন অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে অনেক সুযোগ-সুবিধা বাড়লেও গেল এক যুগে জাকির হাসান ও জাকের আলী অনিক ছাড়া জাতীয় দলে সিলেটের কোনো ব্যাটার নেই। শুধু জাতীয় দলে নয় সিলেট বিভাগীয় দলেও রয়েছে ভাল মানের ব্যাটারের অভাব। তাই জাকির-জাকেরের অনুপস্থিতিতে জাতীয় ক্রিকেট লিগে সিলেটকে খেলতে হয় ধার করা ব্যাটার নিয়ে।
বিসিবিও তৃণমূলে ক্রিকেটার অন্বেষণের মনোযোগী না। তৃণমূলে ক্রিকেটার তৈরির জন্য একটা সময় ক্রিকেট ডেভলপমেন্ট অফিসার নিয়োগ দিত দেশের ক্রিকেট বোর্ড। বিগত বছরগুলোতে অফিসারের পরিবর্তে বিভাগীয় কোচ নিয়োগ দিয়েছে বোর্ড। বয়সবিত্তিক দলগুলোর জন্য ক্রিকেটার বাছাইয়ে যার কার্যক্রম ছিল সীমাবদ্ধ।
দুই যুগ আগে সিলেটে স্কুল ক্রিকেট ছিল, ক্ষুদে ক্রিকেটার অন্বেষণের জন্য ক্যাম্পও হত। সিলেট লিগ ছিল নিয়মিত, মানেত দিক থেকে ছিল দেশের দ্বিতীয় সেরা লিগ। সব দিক বিবেচনায় আলি ওয়াসিকুজ্জামান অনির কাছে তাই দুই যুগ আগে ক্রিকেটে আধুনিক ছিল সিলেট। তাঁর মতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে যতটা ক্রিকেট সামনের দিকে আগানোর কথা ছিল তার চেয়ে বরং গেল ১০/১২ বছরে সিলেটের ক্রিকেট পিছিয়েছে বেশি। লিগের মান কমেছে, লিগ তার অতীত জৌলুশ হারিয়েছে। বিদেশি তারকা তো দূরে থাক, দেশি তারকারও দেখাও মিলেনি কালেভদ্রেও।
সিলেট লিগ, স্কুল ক্রিকেট এবং সিলেট ক্রিকেটের আরো নানা বিষয় নিয়ে আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরীর সাথে কথা বলেছেন মোহাম্মদ আফজল। সিলেট ক্রিকেটের নানাদিক উঠে এসেছে আলী ওয়াসিকুজ্জামানের এই বিশেষ সাক্ষাৎকারে।
প্রশ্ন: সিলেটের বোলিং বিভাগ যথেষ্ট শক্তিশালী, কিন্তু বিপরীত চিত্র দেখা যায় ব্যাটিংয়ে। গেল দুই মৌসুমে শিরোপা খুব কাছে গিয়েও ব্যাটারদের ব্যর্থতায় রানার্সআপে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। এমনটা হচ্ছে কেন?
আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী: আমাদের জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটার আছেন। তাদেরকে সব সময় পাওয়া যায় না। এটা কিন্তু একটা প্রভাব ফেলে। জাতীয় দলের খেলা না থাকলে খালেদ, জাকির, জাকের এবং তানজিম সাকিবকে সিলেটের হয়ে খেলার সুযোগ ছিল। এবাদত ইনজুরি কাটিয়ে ফেরার চেষ্টায় আছে। এখন কাকে পাব , কাকে পাব না এরকম একটা দোটানার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। খালেদ-জাকেরের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ থাকায় সবাইকে পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে জাকির-জাকের না থাকলে সিলেটের ব্যাটিংয়ে খারাপ প্রভাব পড়বে। সবাইকে একসাথে পাওয়া গেলে জাতীয় লিগে সিলেটের দারুণ একটা সম্ভাবনা ছিল। তবে বাস্তবতা মানতে হবে। এটা একটা নিয়মের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আর এটা মেনে নিয়েই খেলতে হবে। এই সুযোগে নতুনদের নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ থাকছে, তারাও একদিন জাতীয় দলে খেলবে।
প্রশ্ন: অলক-রাজিনদের অবসরের পর থেকেই ধার করা ব্যাটার নিয়েই খেলতে হচ্ছে। বিশেষ করে অলক কাপালি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে বিদায় বলার পর তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এবার অমিত হাসানের সাথে সিলেট দলে যোগ দিয়েছেন পিনাক ঘোষ ও মাইশুকুর রহমান রিয়েল। সিলেটে নতুন ব্যাটার বের হচ্ছে না কেন?
আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী: বিকল্প ব্যাটার তৈরি না হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে মাঠের অভাব। গত ১০/১২ বছরে সিলেটে পেসারদের বিল্পব হয়েছে। অনেক ভাল মানের পেসার বের হয়েছে। পেস বোলারের অনুশীলনের জন্য ভাল মানের উইকেটের তেমন একটা প্রয়োজন হয় না। স্পট বোলিং করছে, অনুশীলন করেছে, কঠোর পরিশ্রম করেছে। যখন খেলার সুযোগ পেয়েছে ভাল করেছে, এভাবেই পেস বোলার গড়ে ওঠেছে। কিন্তু ব্যাটার বের করতে হলে আপনাকে ভাল মানের উইকেট দিতে হবে৷ ভাল মানের উইকেটে অনুশীলন বা ম্যাচ না খেলালে ভাল ব্যাটার বের হবে না। সিলেটে ভাল মানের উইকেটের মাঠ খুব অপ্রতুল। পুরো সিলেট শহরে এখানে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আনসার ক্যাম্পের পাশে পাঁচটা উইকেট আছে, এটাই কিন্তু সম্বল। তাও বেশি দিন হয়নি। এটাও সবার জন্য না, এখানে তারাই অনুশীলন করার সুযোগ পায়। যারা ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ (ডিপিএল) এবং প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যারা খেলে তারা অনুশীলন করার সুযোগ পায়। এখন বাকীরা কোথায় যাবে? সিলেটে যে কয়টা মাঠ আছে বছরের বিভিন্ন সময় নানা কাজে ব্যস্ত থাকে। সিলেট সরকারি আলিয়া মাঠ, কালা পাথরের মাঠ। সিলেট জেলা স্টেডিয়াম বছরের নির্দিষ্ট একটা সময় ক্রিকেটের জন্য বরাদ্দ থাকে। সারা বছর ফুটবল ও অন্যান্য খেলায় ব্যস্ত থাকে। এখানে আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ হয়। কালা পাথরের মাঠ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ নিলেও কাঠামোগত উন্নয়নের কাজ করেনি। সেখানে শুধু একটা সাইনবোর্ড লাগানো আছে। এসব মাঠে ভাল মানের উইকেট না থাকলে ব্যাটার বের হবে না।
প্রশ্ন: সিলেটে এখন যতটা অবকাঠামোগত উন্নয়ন, এমনটা তো দের যুগ আগে ছিল না। এতো সব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তো অলক-রাজিন-তান্নারা বের হয়েছেন। এখন ঘাটতিটা কোথায়?
আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী:আগে যেটা বললাম, বর্তমানে সিলেটে ক্রিকেটের অবকাঠামো ঠিক আছে। কিন্তু এটা তো স্থানীয় ক্রিকেটাররা ব্যবহার করতে পারছে না। এখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়, ঘরোয়া ক্রিকেটেও ব্যস্ত থাকে। বিভাগীয় দলের বাইরের কোনো ক্রিকেটারই এখানে অনুশীলন করার সুযোগ পায় না। এটার জন্য শুধু যে স্টেডিয়াম দায়ী তা কিন্তু নয়। আমরা যখন ক্রিকেট খেলেছি তখন সিলেটের প্রত্যেকটা পাড়া-মহল্লায় সিমেন্টের উইকেট ছিল। আমরা সেখানে অনুশীলন করতাম, আর তা সব পাড়ায়েই ছিল। এরকম সিলেট শহরে প্রায় পঞ্চাশটা মতো জায়গায় অনুশীলনের সুযোগ ছিল। এখন স্টেডিয়াম কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। এই জিনিসটা যদি দূর না করা যায় তাহলে ব্যাটার বের হবে না। যেমন একজন মানুষ যদি মেট্রিক পরীক্ষা পাশ করতে চায় তাহলে তাকে স্কুলে যেতে হবে। সেখানে পড়াশোনার যে কলাকৌশল আছে সেটা যদি ঠিকঠাক ভাবে আয়ত্ত না করে তাহলে সে মেট্রিক পাশ করতে পারবে না। একই জিনিস ব্যাটারদের বেলায়ও, এখন ব্যাটারদের আমি উইকেট দিতে পারছি না। সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দিতে পারছি না। এতো সীমাবদ্ধতার মধ্য থেকে যে ব্যাটার বের হয়ে আসছে। আমি বলব যে তাদের অসামান্য ক্ষমতা ছিল বলেই তারা নিজেদের নিজেকে মেলে ধরতে পারছে। আসলে বিগত বছরগুলোতে সিলেটের ক্রীড়াঙ্গনের যারা দায়িত্ব ছিলাম, আমি নিজেও এটার অংশ ছিলাম। আমরা আসলে তাদের জন্য খুব একটা কিছু তা নায়! এখন আমি যেটা মনে করি যে এখন জেলা স্টেডিয়ামের পাশাপাশি সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামেও ক্রিকেটারদের অনুশীলনের সুযোগ করে দেওয়া হোক। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে একটা মাঠ তৈরির পরিকল্পনা হয়েছিল। যেখানে সামান্য একটা ফি'র মাধ্যমে ক্লাবগুলো অনুশীলনের সুবিধা পাবে। ফি অবশ্যই বড় কোনো বিষয় নয়, আসলে অনুশীলনের সুযোগ দিতে পারলে ভালো। শহরের বিভিন্ন জায়গায় যদি সিমেন্টের উইকেটও ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে উন্নতি করার সুযোগ থাকবে।
প্রশ্ন: একটা সময় সিলেট লিগের অবস্থান ছিল ঢাকা লিগের পরে। দেশ-বিদেশের অনেক তারকা ক্রিকেটাররাই মাতিয়েছেন সিলেটের ক্রিকেটাঙ্গন। শ্রীলঙ্কান বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক অর্জুন রানাতুঙ্গা খেলেছেন সিলেট লিগে। এখন লিগ হয় নামে মাত্র, যেখানে দেশীয় তারকা ক্রিকেটারদের দেখাও মিলে না কালেভদ্রেও। সিলেট ক্রিকেট লিগের জৌলুশ হারানো ব্যাটার ঘাটতি কারণ কিনা?
আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী:সিলেটে ব্যাটার তৈরি না হওয়ার মাঠের বাইরে সিলেট লিগের জৌলুশ হারানোই আরেকটা কারণ। সিলেট লিগের আগের যে মান ছিল তা বিগত বছরগুলোতে বিদ্যমান ছিল না। এটা নষ্ট হওয়ার মূল কারণ ক্লাবগুলোতে টাকা খরচ করার মতো মানুষ নাই। অনেকে মারা গেছেন, অনেকে বিদেশে চলে গেছেন। এখন যারা ক্লাব চালাচ্ছেন, দুই/চারটা ক্লাব বাদে বাকী কারো টাকা খরচ করার ক্ষমতা নাই বা ইচ্ছাও নাই। আমি জানি না। আমার মনে হয়েছে, আসলে নামকাওয়াস্তে লিগে একটা টিম নামে, বিষয়টা এরকম! ভোটের রাজনীতির কারণে অনেকে আবার অনেকগুলো ক্লাব কিনেছেন। একজনের অধীনে সাত/আটটা ক্লাব। একজনের অধীনে এতোগুলো ক্লাব থাকলে তখন আর মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। তারা তখন মানুষ দিয়ে ক্লাব পরিচালনা করেন। যিনি ক্লাব পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন তিনি তার মতো করে ক্লাব চালান। আগে ছিল পাড়া-মহল্লার ক্লাব ক্রিকেট, যার ফলে পাড়া-মহল্লার মানুষজন টাকা-পয়সা বিনিয়োগ করত। ভাল মানের দল গঠন করার পাড়ার মানুষজন চাঁদা দিত। তখন ক্রিকেটাররা একটা ভাল পরিমাণের টাকা পেত। এখন টাকা পরিমাণটা কমে গেছে। এখন সিলেট লিগের চেয়ে টেপ টেনিসের টুর্নামেন্টে ভাল টাকা পায়। সেখানে কম সময়ে, সহজে বেশি টাকা পাওয়া যায়। ফলে অনেক ক্রিকেটার টেপ টেনিসের দিকে জোকছে বেশি। এই জিনিসটা ক্রিকেটের বড় ক্ষতি করছে। ক্রিকেট বল আর টেনিস বল এক ধরনের খেলা হলেও তাদের মধ্যে টেকনিক্যালি অনেক পার্থক্য রয়েছে। অনেকে মেধাবী ক্রিকেটার আছে যারা এখন টেপ টেনিসে জোকে গেছে, সবারই টাকার প্রয়োজন আছে। টেপ টেনিসের একটা ম্যাচ খেলে দুই/তিন ঘন্টায় খুব সহজে পাঁচ/দশ হাজার টাকা পাচ্ছে। তখন তার মূল ফোকাসটা টেপ টেনিসে চলে যাচ্ছে। এসব কারণেই এই ঘাটতি হয়েছে। এখান থেকে বের হতে হলে লিগের মান বাড়ানোর পাশাপাশি ক্লাব গুলোকেও টাকা খরচ করার মনমানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি তো একটা সময় স্কুল ক্রিকেটের দায়িত্বে ছিলেন। রাজিন সালেহ ক্রিকেটের শুরুটা কিন্তু নির্মাণ স্কুল ক্রিকেট দিয়ে। একজন ক্রিকেটার তৈরির পিছনে স্কুল ক্রিকেটের গুরুত্ব কতটুকু?
আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী:ভাল মানের ক্রিকেটার তৈরি করতে হলে স্কুল লেভেল থেকেই ভাল মানের প্রশিক্ষণ দিয়ে তুলতে হবে। বিভিন্ন ক্যাম্পের আয়োজন করতে হবে। গত ১২/১৩ বছরে আসলে তেমন ক্যাম্প করা হয়নি। যেমন ঢাকা থেকে ভাল মানের কোচ এনে, আমি একটা ব্যাটিংয়ের একটা ক্যাম্প করি, অথবা বোলিংয়েরও একটা ক্যাম্প করি। এরকম ক্যাম্প আয়োজন করলে নতুন প্লেয়াররা উৎসাহ পায়। জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটার যদি এসে ক্যাম্প করায় তাহলে অনেক বাচ্চারা আসবে, তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। বিগত বছরগুলোতে এরকম কোনো কিছুই হয়নি। স্কুল ক্রিকেট থেকে যে বাছাই করে আমরা যে কিছু ক্রিকেটারকে প্রোমোট করতাম। এরকম কোনো কিছু হয়নি। এগুলো কিন্তু আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে করা হত। এদিক চিন্তা করলে, আমরা দুই যুগ আগে ক্রিকেটে আধুনিক ছিলাম। এখন আমরা পিছিয়ে গেছি। অবকাঠামোগত অনেক উন্নতি হয়েছে, অনেক সুযোগ সুবিধা বেড়েছে, অনেক ক্রিকেট অফিসিয়াল হয়েছেন। কিন্তু খেলার মাঠে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। একজন বিভাগীয় কোচ তিনি সিলেটের চারটা জেলার ক্রিকেট দেখভাল করেন। চার জেলায় আবার চারজন কোচ আছেন, তাদের কোচিং করানো লাগে আবার ম্যানেজমেন্টও পপরিচালনা করা লাগে। এদিক থেকে ক্রিকেটের বিকেন্দ্রীকরণ করা খুব জরুরি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের একটা আঞ্চলিক শাখা থাকা দরকার। যেখানে পূর্ণাঙ্গ একটা ম্যানেজমেন্ট থাকবে, যারা প্লেয়ার তৈরি করবে, বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে। বিভাগ বা জেলা পর্যায়ে যারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গনের দায়িত্বে আসেন। তারা শুধু ক্রিকেট নিয়ে পড়ে থাকেন না, হকি, ফুটবলসহ অন্যান্য খেলা নিয়েও কাজ করতে হয়। তাই ক্রিকেটের জন্য মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করার মানুষ নাই। যা ত্রিশ বছর আগে ছিল৷ ত্রিশ বছর আগে প্রতিটা বিভাগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ডেভেলপমেন্ট অফিসার ছিল। তার পরিবর্তে এখন বিভাগীয় কোচ দেওয়া হয়েছে। এদিক থেকে আমরা ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছি। তখন চিন্তাভাবনা এমন ছিল যে, তৃণমূল থেকে ক্রিকেটার তুলে আনতে হবে। তৃণমূলে ভাল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্লেয়ার তৈরি করে ঢাকায় নেওয়া হবে, তারা একদম প্রস্তুত হয়েই আসবে। এখন তৃণমূল থেকে সরাসরি যায়, যারা সেখানে গিয়ে ঠিকে তারা থাকে। আর যে ঠিকতে পারে না, সে হারিয়ে যায়। এখন মনিটরিংয়ের অভাব, একটা ছেলে অনূর্ধ্ব-১৪ দলে ভাল খেলে আসল৷ দুই বছর পর অনূর্ধ্ব-১৬ দলে তাকে আর দেখা যায় না। অথচ অনূর্ধ্ব-১৪ থেকে ৭০% ক্রিকেটার অনূর্ধ্ব-১৬ দলে যাওয়ার কথা ছিল। এদের যত্ন নেওয়া হয় না, ফলে তারা হারিয়ে যায়। যখন একটা ক্রিকেটার পারফর্ম করতে পারে না তখন তাকে মনিটর করা হয় না। ক্রমাগত একজন রান পাচ্ছে না তাকে তো গাইড করতে হবে। তাকে তো ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে হবে। ডাটা বেইজ মেইনটেইন করতে হবে, এটা আসলে করা হচ্ছে না। তাই পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে চিন্তা করতে হবে তাহলেই উন্নতি করা সম্ভব, আবেগ দিয়ে উন্নতি করা সম্ভব নয়৷
প্রশ্ন: জেলা কিংবা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা, একটা জেলা এবং বিভাগের সব খেলার দেখভাল করে থাকে৷ প্রতিটা জেলা এবং বিভাগে আলাদা করে ক্রিকেট কমিটি রয়েছে, এক্ষেত্রে ক্রিকেট কমিটিরও বা কাজ কী থাকে?
আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী: জেলা ক্রিকেট কমিটির অধীনে জেলার বয়সবিত্তিক দলগুলোর দেখভালের দায়িত্ব থাকে। তার পাশাপাশি প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ আয়োজনের দায়িত্ব থাকে। তাদের কাজগুলো এককেন্দ্রিক, ক্রিকেট উন্নয়ন নিয়ে তেমন একটা চিন্তা করার সুযোগ থাকে না। কারণ বেশিরভাগ সময় মাঠ থাকে না। আমি একসময় এসব কমিটিতে ছিলাম। স্কুল ক্রিকেট কমিটিতে ছিলাম। একটা পর্যায়ে বাদ দিয়েছিলাম। বাদ দেওয়ার পিছনে দুইটা কারণ ছিল। প্রথমত, স্কুল ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান হওয়া সত্ত্বেও সমাপনী দিনে মঞ্চে আমার জায়গা হয়নি। আমাকে বক্তব্য দিতে হয়েছিল স্টেইজের বাইরে থেকে। মঞ্চে এতো নেতা ছিলেন যে আমি চেয়ারম্যানেরও জায়গা হয়নি মূল মঞ্চে। দ্বিতীয়ত, খেলা আয়োজনের সময় মাঠ পাওয়া যেত না। যেমন নভেম্বর খেলা শুরু করার কথা থাকলেও, মাঠ নাই। মাঠের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। এভাবে খেলা পেছাতে পেছাতে স্কুলের বার্ষিকী পরীক্ষা চলে আসত, ক্রিকেট খেলার উপযুক্ত সময়টা চলে যেত। তখন তাড়াহুড়ো করে যাচ্ছেতাই মানের নামকাওয়াস্তে লিগ আয়োজন করতে হত। তাই আমি দায়িত্ব ছেড়ে দেই, আমি অনিয়মকে দূরে রাখতে চেয়েছি, কোনো রকম দুর্নীতিকে প্রশয় দেইনি। একবার আমরা জাল প্লেয়ার খেলানোর কারণে বারোটা স্কুলের মধ্যে এগারোটা স্কুলকে বহিষ্কার করেছিলাম। এগারো স্কুলেই জাল প্লেয়ার খেলিয়েছিল, প্লেয়াররা তাদের স্কুলের ছিল না। কলেজ পড়ুয়া ছেলেকে স্কুল দলে খেলিয়েছিল। আজকাল চেক করলেই পাওয়া যায়, বোর্ডে চেক করে আমরা এটা পেয়েছিলাম। এটা নিয়ে অনেক সমালোচনাও হয়েছিল, অনেকে আমাকে বলেছিলেন, ‘এটা ঠিক করছেন না’। আমার কাছে মনে হয়েছে কাজটা ঠিক হচ্ছে। কারণ স্কুল থেকে যদি দুর্নীতি শুরু হয়, তাহলে ক্রিকেটের উন্নতি হবে কীভাবে। এখন পরিস্থিতিতে যদি কমিটি গুলো কাজ করতে হয় তাহলে মাঠের প্রয়োজন হবে। দেখা যাবে খেলা আয়োজন করার সময়ে মাঠ পাওয়া যাবে না। সিলেটে অনেক দিন ধরে বয়সবিত্তিক লিগের ম্যাচ হচ্ছে না। আপনি পাঁচ সাত বছর পিছনে গেলে দেখবেন যে, আমরা আঞ্চলিক বয়সবিত্তিক দলের ম্যাচ সুনামগঞ্জ এবং মৌলভীবাজার গিয়ে খেলতে হচ্ছে। অথচ সিলেট হচ্ছে এই অঞ্চলের হেডকোয়ার্টার, এখানে আমরা ম্যাচ আয়োজনের সুযোগ পাই না। এখানে ভাল মানের উইকেট আছে, অবকাঠামোগত সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে। এই দুইটা মাঠ (সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম) ব্যস্ত থাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, জেলা মাঠ নির্দিষ্ট একটা সময় ক্রিকেটের জন্য বরাদ্দ থাকে। বছরের বাকী সময় ফুটবল বা অন্য খেলধুলায় ব্যস্ত থাকে। কালা পাথরের মাঠ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ নিলেও শুধু মাত্র একটি ফলকে বসিয়ে এর উন্নয়ন কাজ সীমাবদ্ধ রেখেছে। খেলাধুলা আয়োজন না করতে পারলে আসলে কমিটিগুলো থাকা না থাকা সমান। আসলে যখন যারা দায়িত্বে থাকেন, তারা জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে বিভাগীয় কমিশনার কিংবা জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রশ্ন: অনেক সময় দেখা যায় যে রাজনৈতিক ক্ষমতা বলে অনেকে কমিটিতে চলে আসেন, এতে ক্রীড়াঙ্গনে খারাপ কোনো প্রভাব পড়ে কিনা?
আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী:আসলে এসব কমিটিতে বিভিন্ন ক্লাবেরও প্রতিনিধিরাও আসেন। অনেক সময় রাজনৈতিক কারণে খেলার বাইরের মানুষও অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান। তাদের অনেকের আবার খেলা সম্পর্কে তেমন ধারণা নাই। অনেকে আবার জেলা কিংবা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞানও রাখেন না। গত কিছুদিন আগে প্রথম বিভাগ অথবা দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগ কমিটির সেক্রেটারি যিনি ছিলেন, তিনি কখনো ক্রিকেট খেলেননি। একটা সময় ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন, বিগত কয়েক বছর তিনিই ক্রিকেট চালিয়েছেন। এটা আসলে তার দোষ না, এর দায়টা তাদের, যারা থাকে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। যাকে দেওয়া হয়েছিল, তার একটা পদের দরকার ছিল। তিনি তার পদ পেয়ে তার মতো করে ক্রিকেট চালিয়েছেন। তিনি ক্রিকেট অতটা বুঝতেন না। কিন্তু যারা তাকে এখানে বসিয়েছিলেন তাদের যোগ্যতা নিয়েও তো প্রশ্ন উঠবে।
প্রশ্ন: গেল চার/পাঁচ মৌসুম থেকে জাতীয় লিগে সিলেটের বাইরে থেকে ব্যাটার এনে খেলতে হচ্ছে। এবার অমিত হাসান সাথে পিনাক ঘোষ ও মাইশুকুর রহমান রিয়েল আছেন সিলেট দলে। সিলেটের অনেক তরুণ ব্যাটার রয়েছেন যারা ইতিমধ্যে কয়েক ম্যাচ খেলেছেন, যেমন মিজানুর রহমান সায়েম আছেন, রিহাদ আছেন, একসময় শেনাজ আহমেদ ছিলেন। সায়েম আলম রিজভী পর্যাপ্ত সুযোগ না পেয়ে খেলাও ছেড়ে দিয়েছেন। এখন বাইরে থেকে ব্যাটার না এনে তাদেরকে সুযোগ দেওয়া যায় কিনা?
আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী: শেনাজ আসলে অনেক দিন থেকে নাই। সে হয়তো ক্রিকেট থেকে একটু দূরেই আছে। সায়েম আমাদের ক্যাম্পে আছে। দুর্ভাগ্যবশত এবার আমাদের একটা প্লেয়ার বাদ পড়ে গেছে, সাহানুর রহমান। সে ফিটনেস টেস্ট দেওয়ার পর থেকে বাদ পড়ে গেছে। তার সাথে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে একটা পর্যায়ে সে হোয়াইটসআপে ভয়েস পাঠিয়েছিল যে, তার পারিবারিক সমস্যা ছিল, তাই যোগাযোগ করতে পারে নাই। আসলে এটা হচ্ছে একটা বাস, সময় মতো বাসে না উঠলে আপনি সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন না। যারা একটা দলের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকেন তাদের অবশ্যই একটা লক্ষ্য থাকে। যে জায়গা গুলো ঘাটতি থাকে, সেই জায়গা গুলোতেই খেলোয়াড় নিতে হয়। একটা পছন্দ থাকে, টিম কম্বিনেশনের কথা মাথায় রেখেই দল সাজাতে হয়। ওপেনারের জায়গায় একজন ওপেনার নিতে হয়, মিডল অর্ডারের জায়গায় মিডল অর্ডার নিতে হয়। একজন কোচও এভাবে চিন্তা করেন। সিলেট থেকে নতুন প্লেয়াররা বের হচ্ছে, এমন না যে একেবারেই নাই। এবার ক্যাম্পে তরুণ কয়েকটা প্লেয়ার ছিল, তাদের ভাল সম্ভাবনা আছে। তাদেরকে গড়ে ওঠার সময় ও সুযোগ করে দিতে হবে। একটু সময় লাগবে। প্লেয়ারদেরও দায়িত্ব আছে, তারা হয়তো ভাবতে পারে যে আমি সুযোগ পাচ্ছি না। আমি এটাকে অন্যভাবে দেখি, আমি সুযোগ পাচ্ছি না হয়তো আমি যথেষ্ট ভাল খেলছি না। আত্মতুষ্টি একটা প্লেয়ারের সবচেয়ে বড় শত্রু। একটা প্লেয়ার যতটুকু ভাল করেছে, তার লক্ষ্য থাকতে হবে সে যেন আরো ভাল করে। তার মধ্যে সবসময় ভাল করার ক্ষুধা থাকতে হবে। অনেকে ঢাকা লিগে খেলছেন, সেখানে কেউ ভাল করছেন। কেউ আবার নামের সাথে সুবিচার করতে পারছেন না। আমরা কিন্তু খবরের পাতায় নাম খুঁজি। এক্ষেত্রে সিলেটের ক্রিকেটারদের নাম খুব কম দেখি। তার মানে নতুন যারা আছে তারাও যথেষ্ট পরিশ্রম করছে না। হয়তো পরিশ্রম করছে কিন্তু সঠিক পদ্ধতিতে হচ্ছে না। এটা সত্য এখানেও আমাদের দুর্বলতা আছে, তবে তাদের দুর্বলতা তাদেরকেই কাটিয়ে উঠতে হবে। যখন একটা সুযোগ আসবে তখন তাদেরকে দুই হাত ভরেই নিতে হবে। বিভাগীয় দলে ডাকা মানে অনেক বড় ব্যাপার, আমি যখন অলকের বিকল্প হিসেবে কাউকে ডাকব তাকে অলক না হোক অলকের ধারেকাছে যায় এমন কিছু আমাকে দিতে হবে। তাই প্লেয়ারদের সামনে যখন সুযোগ আসবে তখন নিজের সেরাটা দেওয়ার মনমানসিকতা নিয়ে নামতে হবে। দিনশেষে খেলার স্কোরকার্ডই কথা বলে, আর এটাই বাস্তবতা। এসব জায়গায় একবারই সুযোগ পাওয়া যায়। আপনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখবেন একটা প্লেয়ার বাদ পড়ছে, তার জায়গায় যে আসে সে এমন ভাবে পারফর্ম করে যে সেই এই জায়গায় পাকাপোক্ত হয়ে যায়। তখন তাকে আর বাদ দেওয়ার কথা কেউ চিন্তা করে না। প্রতিযোগিতাটা আমাদের প্লেয়ারদের মধ্যে থাকা দরকার। এই জিনিসটা আমাদের বোলিংয়ে চলে আসছে, ব্যাটিংয়ে এখনও ঘাটতি রয়ে গেছে। আমি এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, আমরা কারো সাথে কোনো অন্যায় করব না। তবে প্রত্যেককে নিজেদের জায়গা থেকে যার যার দায়িত্ব পালন করতে হবে।
প্রশ্ন: জাতীয় দলে স্পিনার হিসেবে এনামুল হক জুনিয়রের পর নাসুম আহমেদ। এখানেও লম্বা একটা গ্যাপ ছিল। সিলেট থেকে এনামুল-নাসুম ছাড়া জাতীয় দলের পাইপলাইন আর কোনো স্পিনার নাই কেন?
আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী: আমাদের দেশে এটা ভিন্ন। এখন ক্রিকেটটা হয়ে গেছে টি২০ নির্ভর। ক্লাব ক্রিকেটটা কঠিন হয়ে গেছে। এখন ক্রিকেটটা হয়ে গেছে ব্যাটারদের খেলা। আমার টিভিতে যে খেলা দেখি এখানে সবাই চার-ছক্কা দেখতে চায়। ব্যাটাররাও চার-ছক্কার ঝড় তোলার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামে। ফলে স্পিনাররা উইকেটের চেয়ে রান আটকাতেই মনোযোগী হচ্ছে। এখন স্পিনাররা রান আটকানোর জন্য সোজা এবং আর্ম বল করে থাকে৷ কোচ স্পিনারকে বলে দিচ্ছে, ‘রান আটকানোর জন্য বোলিং করো।’ সে টার্নের দিকে মনোযোগী হয় না, তার লক্ষ্যই থাকে রান আটকানো। উইকেট না পেলেও সে রান আটকাতে পারছে ফলে সে আর টার্ন নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ পাচ্ছে না। এদিক থেকে আমরা নেতিবাচক ক্রিকেটই খেলছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভিন্ন একটা জায়গা, এখানে বোলিং ভেরিয়েশন থাকাটা জরুরি। এরজন্য আপনি দেখবেন বাংলাদেশে যখন ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া আসে, তারা তখন এক দুইটা স্পিনার নিয়েই চলে আসে। অস্ট্রেলিয়া আসলে নাথান লায়নকে নিয়ে আসবে। তখন দেখা যাবে যে, লায়ন একাই আমাদের হারিয়ে দিচ্ছে। কারণ সে প্রোপার স্পিনার, বোলিংয়ে ভেরিয়েশন আছে, টার্ন আছে। বৈরি কন্ডিশনে যা আমাদের স্পিনারদের মধ্যে দেখা যায় না। ফলে আমাদের ব্যাটাররাও এটা বুঝতে পারে না। কারণ আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটটা সঠিকভাবে খেলছি না। এখানে বোলিংয়ে বৈচিত্রতা আনার চেয়ে রান আটকানোতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যার ধরুন, সিলেট তথা বাংলাদেশেও গুণগত মান সম্পন্ন স্পিনার বের হচ্ছে না।
প্রশ্ন: সার্বিক অবস্থা মিলিয়ে দলের প্রস্তুতি কেমন?
আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী: জাতীয় ক্রিকেট লিগে খেলতে একটা নিয়মিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ক্রিকেটাররা অনেক দিন ধরে অঅনুশীলন করে আসছে। আমরা তো প্রায় মাস খানেক ধরে অনুশীলন করছি। পারিপার্শ্বিক অনেক কিছু মিলিয়ে ঘাটতি থেকে যায়। যেমন অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার এখন আর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলছে না। অলক (অলক কাপালি) অনেক দিন ধরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলছে না। ফিটনেস জনিত কারণে এবার তান্না (ইমতিয়াজ হোসেন) দলে নাই। অভিজ্ঞ প্লেয়ার দলের সাথে না থাকাটা অনেক বড় ঘাটতি। তবে তরুণ যেসব ক্রিকেটাররা আছে তারা অনেক প্রতিভাবান। ভাল খেলার মতো সামর্থ্য এই তরুণ ক্রিকেটারদের আছে। এবং নিজেদেরকে করার জন্য তাদের এটাই সুবর্ণ সুযোগ।
প্রশ্ন: তরুণ ক্রিকেটারদের কাছে প্রত্যাশা কতটুকু?
আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী:সিনিয়রদের অনুপস্থিতির পাশাপাশি জাতীয় দলে খেলা ক্রিকেটারদের জায়গায় তরুণদের নিজেকে প্রমাণ করার অনেক বড় সু্যোগ আছে। অনেক সময় জাকির-জাকের জাতীয় দলে খেলার কারণে আমরা পাই না। এই জায়গায় গালিব (আসাদুল্লাহ আল গালিব), তুষারদের (তৌফিক খান তুষার) ভাল সুযোগ পারফর্ম করার। তুষারের নাম এখন সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে সব জায়গায় খেলছে, এবং সুনামের সাথে খেলছে৷ তারা যদি ভাল পারফর্ম করে তাহলে সিলেটের ভাল করার সম্ভাবনা আছে। স্পিনে নাঈম ভাল করছে।
প্রশ্ন: গেল দুই মৌসুমে শিরোপার খুব কাছে গিয়েও ব্যাটিং ব্যর্থতায় শিরোপা হাতছাড়া হয়েছে সিলেটের, এবার জাকির-জাকেরকে পাওয়া যাবে না সব ম্যাচে। তাই সব মিলিয়ে এবার জাতীয় লিগে সিলেট দলের লক্ষ্য কী?
আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী:আসলে খেলায় ভবিষ্যৎ বানী করাটা কঠিন। যেমন ভারত বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০ ওভারের ম্যাচে প্রায় তিনশো করে ফেলবে কেউ কল্পনাও করেনি। তবে জাতীয় লিগে সিলেট ভাল খেলবে, এটা আমি আশা করি। গেল বছর অনেক ম্যাচ খুব ক্লোজ ছিল৷ সেই ম্যাচগুলোতে কিছু ভুলের কারণে ম্যাচ চলে গেছে। অনেক সময় লিড নিতে ব্যর্থ হয়েছে ফলে ম্যাচ হেরে গেছে। যখন একটা জয়ী কোনো কারণে ড্র হয়ে যায়, তখন আসলে কিছু করার থাকে না। আমি অবশ্যই প্রতিপক্ষ সব দলকেই সম্মান করি। তারাও ঠিকঠাক প্রস্তুতি নিয়েই খেলতে আসে, আমরা যেহেতু এক দেশেরই সেহেতু আমাদের খেলার মানই খুব কাছাকাছি। তবে ম্যাচের দিন যারা বেশি ভুল করবে তারাই ম্যাচ হারবে। আবার এসব ভুলের কারণে ম্যাচে পিছিয়েও পড়বে, ফলে পয়েন্ট হারাবে। এসব কারণে শেষের দিকে গিয়ে দেখা যায় যে শিরোপা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। শিরোপার দৌড়ে থাকতে হলে কোনোক্রমেই পয়েন্ট হারানো যাবে না। অনেক সময় বৈরি আবহাওয়ার কারণে বৃষ্টি হয়, ফলে ম্যাচ ড্র হয়ে যায়, এখানে কারো হাত থাকে না। সবকিছুর পরেও আমাদের চেষ্টা থাকবে ভাল করার। রাজিন কোচ হিসেবে ভাল, পেস বোলিংয়ে শিবলু আছে (রবিউল ইসলাম)। প্লেয়াররাও ভাল করতে মুখিয়ে আছে। মাঠে কোনো রকম চাপ ছাড়া যদি খেলতে পারে তাহলে শিরোপা জয় অসম্ভব নয়। আমাদের লক্ষ্য থাকবে শিরোপার জন্য খেলা।