Image

বিসিবি নির্বাচন, ফিক্সিং ইঙ্গিত ও ক্রীড়া উপদেষ্টার ‘সীমিত হস্তক্ষেপ’: আড়ালের গল্প কী?

৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল

প্রকাশ: 13 ঘন্টা আগেআপডেট: 1 সেকেন্ড আগে
বিসিবি নির্বাচন, ফিক্সিং ইঙ্গিত ও ক্রীড়া উপদেষ্টার ‘সীমিত হস্তক্ষেপ’: আড়ালের গল্প কী?

বিসিবি নির্বাচন, ফিক্সিং ইঙ্গিত ও ক্রীড়া উপদেষ্টার ‘সীমিত হস্তক্ষেপ’: আড়ালের গল্প কী?

বিসিবি নির্বাচন, ফিক্সিং ইঙ্গিত ও ক্রীড়া উপদেষ্টার ‘সীমিত হস্তক্ষেপ’: আড়ালের গল্প কী?

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন, বিশেষ করে ক্রিকেট, আবারও নানামুখী আলোচনার কেন্দ্রে। সাম্প্রতিক এক সাংবাদিক সম্মেলনে ক্রীড়া উপদেষ্টার বক্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে জোরালো বিতর্ক, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ফিক্সিং, বিসিবি নির্বাচন, প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ এবং ক্ষমতা রদবদলের অপ্রকাশিত রাজনীতি।

"প্রিয়রা আজ লজ্জাজনক কাজে জড়িত", কাদের ইঙ্গিত করলেন উপদেষ্টা? “আমি তো একজন ফ্যান ছিলাম”, বক্তব্যের শুরুতেই আবেগের ছোঁয়া। কিন্তু তাতে চাপা ছিল গভীর হতাশা। ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, যাদের এক সময় উদযাপন করতেন, আজ তাদেরই দেখতে হচ্ছে নানা ‘লজ্জাজনক কাজে’ জড়িত অবস্থায়। সরাসরি নাম না নিলেও, স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, এটি ফিক্সিং, অবৈধ বুকি সংযোগ এবং প্রশাসনিক দুর্নীতির দিকেই ইঙ্গিত।

এমন বক্তব্য ক্রিকেট বোর্ডের উচ্চপদস্থ কেউ না বলে থাকলে হয়তো এটিকে জল্পনা বলেই উড়িয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু যিনি বর্তমানে ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি, তার মুখ থেকে এ কথা আসায় সেটি শুধু উদ্বেগ নয়, একটি অঘোষিত সংকেতও।

ফিক্সিংয়ের প্রসঙ্গেও আসিফ মাহমুদ সরাসরি ইঙ্গিত দেন, “খেলাধুলায় আন্তর্জাতিকভাবে ফিক্সিং থেকে শুরু করে বুকিংয়ের মতো বিষয়গুলো থাকে। বাংলাদেশেও এগুলো মোকাবিলায় বিসিবি ও আমরা কাজ করছি।”

বাংলাদেশে এসব ঠেকাতে বিসিবি ও সরকার কাজ করছে বলেও দাবি করেন তিনি। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, কারা জড়িত, কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, কবে ফল আসবে? এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “এখানে বুলবুল ভাই আছেন। উনাকে বিষয়গুলো দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”

এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, বিসিবির বর্তমান সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের উপরেই পুরো দায়িত্ব বর্তেছে, কিন্তু তাঁর ভূমিকাও তেমন প্রকাশ্যে আসেনি।

সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত আরেকটি বিষয় হলো, বিসিবি সভাপতির পদে ‘পছন্দের লোক’ বসানো নিয়ে সরকারের ভূমিকা। উপদেষ্টা নিজেই আগেই স্বীকার করেছেন যে, “ফারুক আহমেদকে সভাপতি করা আমার চাওয়াতেই হয়েছিল।”

এরপর আবার ফারুককে সরিয়ে আমিনুলকে বসানো এবং এখন আবার তাকে নির্বাচনে সহায়তা করার ইঙ্গিত, এই সবকিছু মিলে এটিই প্রমাণ করে যে, বিসিবির নেতৃত্ব ক্রীড়া উপদেষ্টার ছাতার নিচেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।

সরকারি হস্তক্ষেপ অস্বীকার করলেও, তিনি আবার বলেন, “ডিসিদের ফোন করে কাউন্সিলর বানাতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। এসব ঠেকাতেই সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার।”

এই বক্তব্যে একধরনের দ্বৈত বার্তা পাওয়া যায়। একদিকে হস্তক্ষেপ নয় বলছেন, আবার অন্যদিকে হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তাও ব্যাখ্যা করছেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল নিজেই। যদিও আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যায় বলা হয়, অন্য ফেডারেশন থেকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, কিন্তু উপস্থিত ছিলেন কেবল আমিনুল। এই উপস্থিতি বিসিবি নির্বাচনে সরকারের পছন্দ ও পূর্বপরিকল্পনার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে নানা প্রশ্ন ও গুঞ্জন ছড়িয়েছে।


ক্রীড়াঙ্গনের জন্য এক মাসের মধ্যে স্পন্সরদের নিয়ে সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। এতে অবশ্য দীর্ঘ মেয়াদে একটি পজিটিভ সিগন্যালও রয়েছে। তবে বড় প্রশ্ন থেকে যায়, যখন ভেতরের শুদ্ধি প্রক্রিয়াই স্পষ্ট নয়, তখন বাইরের সৌন্দর্য দিয়ে কী আদৌ আস্থা ফিরবে?

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে উপদেষ্টা বলেন, “আগামী এক মাসের মধ্যে ক্রীড়াঙ্গনের তহবিল বাড়াতে স্পন্সর নিয়ে সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে ক্রিকেটের ভেতরের শুদ্ধি প্রক্রিয়া না হওয়া পর্যন্ত বাইরের এই উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে, সেটা সময়ই দেখাবে।”


এই মুহূর্তে ক্রীড়াঙ্গনে যা চলছে, তা শুধু প্রশাসনিক ব্যাপার নয়, এটি একটি নৈতিক সংকটের সূচনাবিন্দু। ক্রীড়া উপদেষ্টা যেসব ইঙ্গিত দিলেন, তা যদি সত্যি হয়, তবে তা কেবল লজ্জার নয়, বরং গভীরভাবে তদন্তযোগ্য অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।

এখন দেখার বিষয়, এই ইঙ্গিতগুলো তদন্তে রূপ নেয় কিনা, নাকি রাজনৈতিক প্রভাব আর ক্ষমতার দোলাচলে ক্রীড়া জগতের ‘শুদ্ধি অভিযান’ আবারও কাগজে সীমাবদ্ধ থেকে যায়।
 

Details Bottom
Details ad One
Details Two
Details Three