Image

এশিয়া কাপে বাংলাদেশ, শঙ্কা পেরিয়ে নতুন আশার আলো

৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল

প্রকাশ: 3 ঘন্টা আগেআপডেট: 2 মিনিট আগে
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ, শঙ্কা পেরিয়ে নতুন আশার আলো

এশিয়া কাপে বাংলাদেশ, শঙ্কা পেরিয়ে নতুন আশার আলো

এশিয়া কাপে বাংলাদেশ, শঙ্কা পেরিয়ে নতুন আশার আলো

এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে দুবাইয়ের বিমানে চড়েছিল বাংলাদেশ দল। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে হংকংয়ের বিপক্ষে দারুণ জয় দিয়ে শুভ সূচনা করে টাইগাররা। তবে পরের ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাটে-বলে বিবর্ণ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে ভেসে ওঠে বাস্তব চিত্র। ব্যাটিংয়ে মাত্র ৫৩ রানে ৫ উইকেট হারানো, মাত্র ১৩৯ রান করে সেটি রক্ষা করতে গিয়ে ছন্নছাড়া বোলিং—সব মিলিয়ে মাঠের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক।


বাংলাদেশের এমন পারফরম্যান্স দেখে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, আফগানিস্তানের বিপক্ষে হয়তো আর ফেরা হবে না লিটন দাসের দলের। কিন্তু আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে এক চমক দেখিয়ে জয় তুলে নেয় টাইগাররা।


এশিয়া কাপে একটি জয় ও একটি হার নিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামে বাংলাদেশ, ম্যাচটি ছিল কার্যত বাঁচা-মরার লড়াই। জিতলে সুপার ফোরে যাওয়ার সম্ভাবনা টিকে থাকবে, হারলেই বিদায়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর দলের মানসিক অবস্থাও ছিল চাপে। তবে এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে চারটি পরিবর্তন এনে মাঠে নামে বাংলাদেশ। এই একাদশে ছিল পঞ্চম মূল বোলারের অভাব, ব্যাটিং শক্তি বাড়াতে পার্টটাইম বোলারদের ওপর নির্ভর করে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় টিম ম্যানেজমেন্ট।


ফলাফলও মিলেছে চমৎকারভাবে। চার পরিবর্তনে বাজিমাত করে বাংলাদেশ, আফগানিস্তানকে চেপে ধরে ম্যাচের শেষদিকে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে ৮ রানের জয় তুলে নেয়। এই জয়ের মাধ্যমে যেমন টিকে আছে সুপার ফোরের স্বপ্ন, তেমনি প্রশংসা পেয়েছে দলীয় ট্যাকটিকস ও মনোভাব। শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাতারে প্রশংসা করেছেন স্বয়ং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।


আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর বিসিবি সভাপতি বলেন, "প্রথমত, আমি বলব যে, বাংলাদেশ চমৎকারভাবে বাউন্স ব্যাক করেছে। খুব শক্তিশালীভাবে তারা ফিরে এসেছে। প্রথম ম্যাচে হংকংয়ের বিপক্ষে জেতার পরে, ছোট একটা সেশনের পরে, যেটা আমরা বলি যে টি-টোয়েন্টিতে ৩০ মিনিটের পরে খেললে হেরে যায়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, এটা হয়েছিল আরকী। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ হেরে যায়। অন্যথায়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও কিন্তু আমরা খারাপ খেলিনি।"


একাদশে একাধিক উইকেটরক্ষক ব্যাটারের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বুলবুল বলেন, "এটা তো প্রকৃত অলরাউন্ডার, আমাদের অনেক অলরাউন্ডার আছে। জাকের আছে, লিটন তো উইকেটরক্ষক ব্যাটার, সোহানও উইকেটরক্ষক ব্যাটার, গতকাল সোহান তো দেখিয়ে দিল ফিল্ডিংয়েও খুব ভালো। এটাও ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার একটা বড় মুহূর্ত ছিল। সোহানের কাছ থেকে যদি আমরা এটা আশাও করি নাই, তবে সে কাল দেখিয়ে দিল কীভাবে ত্রিশ গজের ভেতরে ফিল্ডিং করতে হয়।"


বুলবুল এটিকে একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন, "আফগানিস্তানের বিপক্ষে যেটা হয়েছে, কিছু ট্যাকটিক্যাল পরিবর্তন আমরা দেখেছি। যদিও এটার সাথে আমরা যুক্ত নই। ট্যাকটিক্যাল অন্তর্ভুক্তি এমনভাবে কাজ করেছে, সব মিলিয়ে দল দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে।"


এই পরিবর্তনেই যেন বদলে গেছে বাংলাদেশের মাঠের চেহারা। বিসিবি সভাপতির ভাষ্য, "ট্যাকটিক্যাল পরিবর্তনের বিষয় যেটা বলছিলাম যে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে সবাই দুর্দান্ত ছিল। তানজিদ খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছে, নাসুম দুর্দান্ত বোলিং করেছে। তাসকিন সত্যিই খুবই কার্যকরী ভূমিকায় পালন করেছে। গত ম্যাচে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন যেটা ছিল, তা হচ্ছে রিশাদ। রিশাদের যে বোলিং ছিল, যা দেখেছি কীভাবে আস্তে বল করতে হয়, কীভাবে উইকেট টু উইকেট বল করতে হয়। সে দুই স্পেলে চার ওভার বোলিং করেছে, প্রতিবারই তাকে দেখে মনে হয়েছে যে, সে সম্পূর্ণ আলাদা, সে ভিন্ন ধাঁচে বোলিং করছে।"

বাংলাদেশের উন্নতির জায়গা নিয়ে বুলবুল বলেন,
"আপনারা জিজ্ঞেস করার আগেই বলি, সব সময় কিন্তু দলের একটা উন্নতির জায়গা থাকে। সব সময় সব প্লেয়াররা কিন্তু বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের মতো সব সময় খেলে না। আমাদের এখন একটু মনোযোগ দিতে হবে দুটো জায়গায়, এক সাত ওভার থেকে চৌদ্দ ওভার, আরেকটা চৌদ্দ থেকে আঠারো ওভার। এই জায়গাগুলোতে কাজ করলে মনে হয় আমাদের যে রানের ফ্লো আছে। গতকালকে অনায়াসে মনে হয় আমরা দুইশো বা একশো নব্বই করতে পারতাম।"

তিনি আরও যোগ করেন,"আমার ধারণা যে দল হয়তো বিষয়টা দেখছে। এই জায়গাগুলোতে কাজ করতে পারলে আমরা আরও ভালো করব।"


পঞ্চম বোলারের ঘাটতি নিয়ে বিসিবি সভাপতি বলেন,
"টিম কম্বিনেশন যেটা মনে হয়েছে, তারা সাইফ এবং শামীমকে দিয়ে বাকি চারটা ওভার বোলিং করাবে। বাইরে থেকে যেটা মনে হয়েছিল, এটা খুব রিস্কি ছিল। তবে যারা একাদশ সাজিয়েছিলেন, তাদের চিন্তা-ধারা কী ছিল তা আমি জানি না। তবে দিনশেষে কথা হচ্ছে, আমরা জিতেছি।"


বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—তিন বিভাগেই পারফরম্যান্স ছিল প্রশংসাযোগ্য। এর বাইরেও ছিল খেলোয়াড়দের পুরো মনোযোগ, আত্মত্যাগ আর প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা। বুলবুল এই দিকটিকে ব্যাখ্যা করেছেন 'হিডেন নাম্বার' হিসেবে। 


এ প্রসঙ্গে বুলবুল বলেন, "এটা হচ্ছে হিডেন নাম্বার বলে, একটা হচ্ছে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং, যেটিকে আমরা Core ক্রিকেট বলি। আরেকটা আউটার ক্রিকেট বলে, যেমন ধরেন, পাঁচটা রান যদি আমরা বেশি নিই রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে। ফিল্ডিংয়ে যদি আমরা বাউন্ডারি সেভ করতে পারি, রান আউট করতে পারি। গতকালকে যেটা হয়েছে, ফিল্ডিংয়ে রান আউট বলেন, ক্যাচিং বলেন, এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে মনোভাবের উপরে। ম্যাচে বাংলাদেশের মনোভাবটা ছিল এতটাই প্রতিযোগিতামূলক, যেটা তাদের ভেতরে ছিল, তারা তা বের করে নিয়ে এসেছে।"


পাওয়ার হিটিং সক্ষমতায় ইংলিশ কোচ জুলিয়ান উডের নজর কাড়েন জাকের আলী অনিক, তবে এশিয়া কাপে যেন ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক সংযোগ করতে পারছেন টাইগার এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। তবে সমালোচকদের মতো এতোটা নিরাশ অবশ্যই নন বুলবুল, বিসিবি সভাপতি অতীত মনে করিয়ে দিয়ে ভবিষ্যতে এই পজিশনে বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আলো ছড়াবেন বলে বিশ্বাস বুলবুলের। 

জাকের আলী অনিকের ব্যাটিং নিয়ে আলোচনা করে বুলবুল বলেন, "দেখেন, আমাদের প্রত্যেকটা প্লেয়ার গুরুত্বপূর্ণ, যে এগারো জন খেলে তাদের নিজেদের একটা একটা করে রোল রয়েছে। জাকেরও একটা রোল রয়েছে, তার রোল এতই মূল্যবান যে, আমি যদি পিছনে ফিরে যাই, একটা সময় নাসির হোসাইন ছিল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও ছিল। এখন জাকের কিন্তু এই জায়গায় খেলছে, এরকম একটা জায়গায় জাকের আলী অনিক উঠে আসছে। আমার বিশ্বাস, ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই সে এই জায়গায় ভালো করবে। প্রত্যেকদিন তো আর ভালো হয় না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, সে তার ভূমিকা ঠিকঠাকভাবে উপভোগ করছে। এই জায়গাটা যদি সে উপভোগ না করে তাহলে কিন্তু সামনে আগাবে না। তার প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ সাপোর্ট রয়েছে।"


সবশেষে দলীয় পারফরম্যান্স নিয়ে আশাবাদী মন্তব্য করে বুলবুল বলেন, "এখনও পর্যন্ত আমাদের ছেলেরা দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে, নিজেদের সেরাটা দিয়ে প্রথম রাউন্ডে তিন ম্যাচে দুটো জিতেছে। আমরা এখন অপেক্ষা করব অন্য দল কেমন ক্রিকেট খেলে তা দেখার জন্য। আমরা বিশ্বাস করি যে, আমরা সুপার ফোরে খেলব, ইনশাআল্লাহ।"


টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ভক্তদের আবেগপ্রবণ না হয়ে আশাবাদী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বুলবুল বলেন,
"টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আবেগপ্রবণ হওয়ার সুযোগ নেই। একটা সময় কিন্তু হংকং শ্রীলঙ্কাকে প্রায় হারিয়ে দিয়েছিল। একটা কথা বলতে পারি, আমরা পিছিয়ে নেই। যে টিমটা খেলছে, মাঠে যে পারফরম্যান্স তারা করছে, তাদের যে ধারাবাহিকতা রয়েছে, তাতে আমি খুব আশাবাদী।"
 

Details Bottom
Details ad One
Details Two
Details Three