রেকর্ডে ভরা সিরিজে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ স্পিনের রাজত্ব
৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল
প্রকাশ: 5 ঘন্টা আগে আপডেট: 1 সেকেন্ড আগে-
1
টি-টোয়েন্টিতে ফিরলেন বাবর আজম, নতুন অধ্যায়ে পাকিস্তান দলে বড় পরিবর্তন
-
2
আটলান্টায় বদলে যাওয়া সাকিব, এখনো বিদায় নেয়ার স্বপ্ন দেখেন দেশের মাটিতেই
-
3
অ্যাডাম জাম্পা ও রশিদ খানকে পেছনে ফেলে রিশাদের বিশ্ব রেকর্ড
-
4
বিশ্বকাপের জন্য দুই তিন মাসের পরিকল্পনাই যথেষ্ট মনে করেন মিরাজ
-
5
সৌন্দর্য্যে বিশ্বচর্চায় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম
রেকর্ডে ভরা সিরিজে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ স্পিনের রাজত্ব
রেকর্ডে ভরা সিরিজে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ স্পিনের রাজত্ব
বাংলাদেশ এই সিরিজ জিতেছে ২-১ ব্যবধানে। মিরপুরের পিচ সবসময়ই স্পিনারদের জন্য চ্যালেঞ্জ ও সুযোগের মিশ্রণ, যা এই সিরিজে আবারও প্রমাণিত হলো। প্রত্যাশা ছিল এই সিরিজে স্পিন কৌশলকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ নতুন আক্রমণাত্মক পরিকল্পনা নিয়ে আসবে, কিন্তু সেই আশায় কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। যদিও বিসিবি পিচ ম্যানেজমেন্টে পরিবর্তন এনেছে। গামিনী ডি সিলভার জায়গায় টনি হেমিং দায়িত্ব নিয়েছেন এবং পিচের রঙ কালচে থেকে গাঢ় কালো করা হয়েছে। তবে স্পিনের আচরণে কোনো বদল ঘটেনি। প্রতিটি বল যেন আগের দিনের মতোই ঘূর্ণিতে আঘাত হানছে, এবং স্বাগতিক স্পিনাররা আবারও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়েছেন।
স্পিনে রেকর্ডের ঘূর্ণি
সিরিজের মূল চরিত্র ছিল স্পিন। তিন ম্যাচে দুই দলের স্পিনাররা মিলে মোট ৪৪টি উইকেট নিয়েছেন, যা ওয়ানডে ইতিহাসে তিন ম্যাচের সিরিজে নতুন বিশ্ব রেকর্ড। এর আগে ২০২৪ সালে শ্রীলঙ্কায় শ্রীলঙ্কা ও ভারতের মধ্যকার সিরিজে ৪৩ উইকেট ছিল সর্বোচ্চ। শুধু তাই নয়, স্পিনারদের করা বলের সংখ্যাতেও এসেছে নতুন উচ্চতা। এই সিরিজে স্পিনাররা বল করেছেন ১৩৬৩টি ডেলিভারি, যা তিন ম্যাচের সিরিজে সর্বাধিক। ১৯৯৮ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১২৪৪ বল ছিল আগের রেকর্ড।
স্পিনারদের এই আধিপত্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিল বাংলাদেশ। সিরিজে বাংলাদেশের স্পিনাররা একাই নিয়েছেন ২৬টি উইকেট, যা দেশের ওয়ানডে ইতিহাসে তিন ম্যাচের সিরিজে সর্বোচ্চ। ২০২২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ১৯ উইকেট ছিল তাদের আগের সেরা অর্জন। আন্তর্জাতিক পরিসরেও এই পারফরম্যান্স দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ২০২৪ সালে ভারতের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা নিয়েছিল ২৭ উইকেট, সেটিই এখন পর্যন্ত সর্বাধিক।
ওয়েস্ট ইন্ডিজও এবার স্পিনে ভরসা রেখেছিল। তাদের স্পিনাররা পুরো সিরিজে নিয়েছেন ১৮টি উইকেট, যা তিন ম্যাচের সিরিজে দলটির নতুন রেকর্ড। এর আগে ২০২৩ সালে শারজায় আমিরাতের বিপক্ষে তাদের সর্বোচ্চ ছিল ১৪ উইকেট।
রানের ব্যবধানে ঐতিহাসিক জয়
তৃতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ১৭৯ রানের জয় ছিল রানের ব্যবধানে দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালে সিলেটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮৩ রানের জয়ই কেবল এর চেয়ে বড়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়, আগের রেকর্ড ছিল ২০১২ সালে খুলনায় ১৬০ রানের ব্যবধান।
এই জয় কেবল বড় ব্যবধানের নয়, ছিল সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের বোলাররা প্রথম থেকেই চাপ সৃষ্টি করেছিলেন, স্পিনারদের ধারাবাহিক আক্রমণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং ভেঙে পড়ে। শেষ পর্যন্ত রেকর্ড ব্যবধানে জয় এনে দেয় সেই ঘূর্ণির শক্তিই।
রিশাদের উত্থান
পুরো সিরিজে সবচেয়ে আলোচনায় ছিলেন তরুণ লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন। তিন ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে তিনি গড়েছেন বাংলাদেশের নতুন রেকর্ড। দেশের কোনো স্পিনার আগে তিন ম্যাচের সিরিজে এত উইকেট পাননি। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আরাফাত সানির ১০ উইকেট ছিল আগের সেরা।
সব ধরনের বোলার মিলিয়েও এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তিন ম্যাচের পারফরম্যান্স। ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে মাশরাফি বিন মুর্তজা নিয়েছিলেন সমান ১২ উইকেট, আর শীর্ষে রয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান, যিনি ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে নিয়েছিলেন ১৩ উইকেট। ওয়ানডে সিরিজের সামগ্রিক পরিসংখ্যানে রিশাদ এখন আছেন তৃতীয় স্থানে। তাঁর ওপরে আছেন শুধু আবদুর রাজ্জাক, যিনি ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচে নিয়েছিলেন ১৫ উইকেট।
রিশাদের এই সাফল্য বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণে নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। দীর্ঘদিন পর একজন তরুণ লেগস্পিনার ধারাবাহিকভাবে প্রভাব ফেলতে পারছেন, যা দলের ভারসাম্যকেও আরও মজবুত করছে।
সৌম্য–সাইফের জুটি
ব্যাট হাতে উজ্জ্বল ছিলেন সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসান। তাদের ১৭৬ রানের উদ্বোধনী জুটি বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর চেয়ে বড় ওপেনিং পার্টনারশিপ এসেছে একবারই, ২০২০ সালে সিলেটে তামিম ইকবাল ও লিটন দাস করেছিলেন ২৯২ রান। মিরপুরে এটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটি এবং যেকোনো উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও এটি নতুন রেকর্ড, যেখানে আগের সেরা ছিল ২০১৯ সালে ডাবলিনে সৌম্য ও তামিমের ১৪৪ রান।
এই জুটিই তৃতীয় ওয়ানডের জয় নিশ্চিত করার ভিত্তি গড়ে দেয়। সাইফের ধৈর্য আর সৌম্যের স্বাভাবিক আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে শুরুটা হয়ে উঠেছিল নিখুঁত।
স্পিন কৌশলের সাফল্য
পুরো সিরিজে বাংলাদেশের পরিকল্পনা ছিল স্পষ্ট। ঘরের মাটির উপযোগী উইকেটে তারা আস্থা রেখেছে স্পিন আক্রমণে। মেহেদি হাসান মিরাজ ও নাসুম আহমেদ ছিলেন নিয়ন্ত্রিত, রিশাদ যোগ করেছেন আক্রমণাত্মক ভ্যারিয়েশন। ব্যাটিংয়ে উপরের সারির দৃঢ়তা আর বোলিংয়ে কৌশলগত ধারাবাহিকতা মিলিয়ে সিরিজটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম সফল অধ্যায়।
নতুন আত্মবিশ্বাস
এই জয় শুধু সংখ্যার সাফল্য নয়, এটি দলের মানসিক বিকাশের প্রতিফলন। রিশাদের উত্থান, সৌম্য ও সাইফের জুটি, আর স্পিনারদের ধারাবাহিক নিয়ন্ত্রণ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, ঘরের মাঠে তারা এখন অনেক বেশি পরিণত। মিরপুরের এই সিরিজ তাই কেবল জয়গাথা নয়, বরং নতুন করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার গল্পও বটে।
