সীমিত সুযোগ, বড় স্বপ্ন: নেপালের তৃণমূল ক্রিকেটে চান্দ্রগিরির নীরব বিপ্লব
৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল
প্রকাশ: 8 ঘন্টা আগেআপডেট: 22 মিনিট আগে
সীমিত সুযোগ, বড় স্বপ্ন: নেপালের তৃণমূল ক্রিকেটে চান্দ্রগিরির নীরব বিপ্লব
সীমিত সুযোগ, বড় স্বপ্ন: নেপালের তৃণমূল ক্রিকেটে চান্দ্রগিরির নীরব বিপ্লব
নেপালের ক্রিকেট যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ধীরে ধীরে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করছে, তখন দেশের অভ্যন্তরে বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে সেই অগ্রগতি এখনো নানা সীমাবদ্ধতার মুখে আটকে যাচ্ছে। সেই সীমিত সুযোগ আর অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতাকে পেছনে ফেলে কাঠমান্ডু থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত চান্দ্রগিরি পৌরসভা এলাকা এই বাস্তবতার মাঝেও তুলে ধরেছে এক ভিন্ন চিত্র, যেখানে ক্রিকেটের বিস্তার ঘটছে স্থানীয় উদ্যোগে, স্থানীয় সম্পদে, আর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার ভিত্তিতে।
চান্দ্রগিরি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন নেপাল (CCAN) নামের একটি সংগঠন মাত্র দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে গড়ে তুলেছে একটি সক্রিয় ও সুগঠিত তৃণমূল ক্রিকেট কাঠামো। সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য, ক্রিকেটকে স্থানীয় তরুণদের নাগালে আনা এবং জাতীয় পর্যায়ের সঙ্গে একটি বাস্তব সংযোগ গড়ে তোলা।
নেপালে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে তৃণমূল পর্যায়ে খেলোয়াড়দের জন্য পরিকাঠামো, প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার সুযোগ এখনও পর্যাপ্ত নয়। অনেক প্রতিভাবান তরুণ আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে নিয়মিত খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সেই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়েই CCAN নানা ধরনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
সংগঠনটি ২০২৪ সালে আয়োজন করেছে তিন মাসব্যাপী একটি বিনামূল্যের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। এতে অংশ নিয়েছে স্থানীয় বিভিন্ন স্কুল ও ক্লাবের তরুণ খেলোয়াড়েরা। এছাড়া আয়োজিত হয়েছে দুটি আউটডোর এবং তিনটি ইনডোর টুর্নামেন্ট। এই উদ্যোগগুলো তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এবং তরুণদের মধ্যে ক্রিকেট চর্চার আগ্রহকে নতুন করে উসকে দিয়েছে।
২০২৫ সালের জুলাই থেকে চালু হয়েছে মাসিক ভিত্তিতে কোচিং ক্লাস। এখানে স্বল্প ফিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তরুণ খেলোয়াড়রা। প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছেন একজন অভিজ্ঞ ও পেশাদার কোচ, যিনি শুধুমাত্র কারিগরি দক্ষতার দিকেই নজর দিচ্ছেন না, বরং শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্ব গঠনের বিষয়েও গুরুত্ব দিচ্ছেন।
চান্দ্রগিরি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের একজন প্রতিনিধি জানান, “নেপালে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ আছে, প্রতিভাও আছে। কিন্তু খেলার খরচ এবং সুযোগের অভাব অনেক তরুণকে পেছনে ফেলে দিচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি সেই ব্যবধানটা কমিয়ে আনার।”
শুধু নিজ এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, CCAN চাচ্ছে ক্রিকেটকে আরও ছড়িয়ে দিতে। ইতোমধ্যে চান্দ্রগিরির বাইরের ক্লাবগুলোকেও তারা টুর্নামেন্টে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় মাঠ ও সরঞ্জামও সরবরাহ করছে। এতে করে শুধু চান্দ্রগিরিতেই নয়, আশপাশের এলাকাতেও ক্রিকেট চর্চা ছড়িয়ে পড়ছে।
সংগঠনটির একজন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে চাই, যেখানে প্রতিভা হারিয়ে যাবে না, বরং বিকশিত হবে। প্রতিটি মিউনিসিপ্যালিটি যদি এমন উদ্যোগ নেয়, তাহলে জাতীয় দল গঠনের জন্য আরও বড় ভিত্তি তৈরি হবে।”
বর্তমানে নেপালের ক্রিকেট প্রশাসন, অর্থাৎ Cricket Association of Nepal (CAN), জাতীয় দল এবং আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট নিয়েই ব্যস্ত। অথচ মাঠের বাস্তবতা বলছে, প্রতিভা উঠে আসে তৃণমূল থেকেই। সেই জায়গাতেই কাজ করছে CCAN-এর মতো স্থানীয় সংগঠনগুলো।
যদিও এ ধরনের উদ্যোগ এখনো সংখ্যায় সীমিত, তবুও চান্দ্রগিরির অভিজ্ঞতা স্পষ্ট করে দেখাচ্ছে পরিকল্পনা, নিষ্ঠা এবং জনসম্পৃক্ততা থাকলে সীমিত সম্পদ দিয়েও বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। এটা কেবল একটি মডেল নয়, বরং দেশের অন্যান্য অঞ্চলের জন্যও একটি দিকনির্দেশনা।
চান্দ্রগিরি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান কার্যক্রম হয়তো এখনো জাতীয় শিরোনামে নেই, কিন্তু এর প্রভাব স্পষ্ট। কারণ একটি দেশের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ কেবল আন্তর্জাতিক ম্যাচ বা স্টেডিয়ামে তৈরি হয় না, তা তৈরি হয় মাটির মাঠে, স্থানীয় ক্লাবে, এবং সেই তরুণদের ঘামে, যাদের হাতে এখনো ব্যাট ধরা হয়নি কেবল সুযোগের অভাবে।
এই নীরব বিপ্লব যদি অব্যাহত থাকে, এবং অন্যান্য পৌরসভাগুলোও এমন উদ্যোগ নেয়, তাহলে হয়তো নেপালের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ আর কেবল সম্ভাবনার গল্প থাকবে না, তা হয়ে উঠবে অর্জনের ইতিহাস।