ইংল্যান্ডে ভালো করা জাবেদের চোখ জাতীয় দলে
৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল
প্রকাশ : 2 সপ্তাহ আগেআপডেট: 1 সেকেন্ড আগেইংল্যান্ডে ভালো করা জাবেদের চোখ জাতীয় দলে
ইংল্যান্ডে ভালো করা জাবেদের চোখ জাতীয় দলে
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হয়ে খেলছেন সিলেটের অনেক ক্রিকেটার। শুরুর সেই শফিকুল হক হীরা থেকে হালের জাকির-জাকেরের পাশাপাশি খেলছেন নাসুম আহমেদ ও তানজিম সাকিবরা। একসময় জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন সিলেটের রাজিন সালেহ। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট হ্যাটট্রিকম্যান সিলেটের ছেলে অলক কাপালী। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের নায়ক এনামুল হক জুনিয়রও সিলেটের। সিলেটের ক্রিকেটারদের অবদান বাংলাদেশের ক্রিকেটে উজ্জ্বল। জাতীয় দলে খেলা এসব তারকাদের দেখেই বেড়ে ওঠেছেন সিলেট মহানগরীর বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা রাহাতুল ফেরদৌস জাবেদ। সিলেটের অলক কাপালিকে দেখে ক্রিকেটে আসা জাবেদ খেলেছেন বাংলাদেশের বয়সবিত্তিক সব দলের হয়ে। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ও ২৩ দলেও খেলেছেন। বিসিবি এইচপি দলের ক্যাম্পে ছিলেন একাধিকবার।
জাতীয় দলে খেলার অপেক্ষায় থাকা জাবেদ দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার পাশাপাশি দেশের বাইরে লিগ খেলতে পাড়িয়ে দিয়েছেন ইংল্যান্ডে। বিলেতে ব্যাটে-বলে ইয়র্কশায়ার প্রিমিয়ার লিগ মাতিয়ে দেশে ফিরেন জাবেদ। সেই ধারাবাহিকতায় জাবেদ এবার দল পেয়েছেন বিপিএলে, নিলাম থেকে এবার তাকে দলে নিয়েছে চট্রগ্রাম কিংস।
জাতীয় ক্রিকেট লিগ খেলতে খুলনা যাওয়ার আগে জাবেদ সিলেটে শুনিয়েছেন নিজের ক্রিকেটে আসার গল্প। সেই সাথে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার পাশাপাশি ইংল্যান্ড লিগে অভিজ্ঞতা করেছেন ভাগাভাগি। বিলেত ফেরত এই ক্রিকেটার গল্পে ওঠে এসেছে ক্রিকেট নিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও।
জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখা জাবেদের অনুপ্রেরণা বন্ধু নাসুম আহমেদ। অনূর্ধ্ব-১৩ থেকেই একসাথেই সিলেটের হয়ে খেলছেন তারা। ২০১২ সালে যুব বিশ্বকাপ খেলা নাসুমের জাতীয় দলে অভিষেক হয় ২০২১ সালে। আর জাবেদ আছেন জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার অপেক্ষায়।
ক্রিকেটে আসার গল্প
২০০৭ সালে ব্লু বার্ড স্কুলের হয়ে ক্রিকেটে পথচলা শুরু করেন জাবেদের। বাসায় কাউকে না জানিয়ে জাভেদ অনুশীলন করতেন লুকিয়ে লুকিয়ে। সেবার স্কুল ক্রিকেট প্রতিযোগিতার জন্য অনুশীলন করে ব্লু বার্ড স্কুল দলে সুযোগ পান জাভেদ। সেই খবর পরিবারের সদস্যদের যখন জানান, তখন তাঁরা এক শর্তে রাজি হন ‘এইবার খেলে আর খেলতে পারবা না।’
কিন্তু স্কুল ক্রিকেট খেলতে গিয়ে নিজের অভিষেক ম্যাচে জাবেদ সিলেট জেলা দলের সাবেক কোচ মারুফ হাসানের নজরে পড়েন। সেই ম্যাচে আম্পায়ারে দায়িত্ব পালন করছিলেন মারুফ হাসান। প্রচলিত আছে যে, ‘ক্রিকেটারদের সবচেয়ে বেশি কাছ থেকে দেখেন আম্পায়াররা, তাঁরা বলতে পারবেন কোন ক্রিকেটার কেমন পারফর্ম করবে।’ তাই হয়তো সেদিন তিনি জাবেদকে চিনতে ভুল করেন নি, তাঁর মাঝে হয়তো প্রতিভার ঝলক দেখেছিলেন তিনি। তাই তো ম্যাচ শেষে ডেকে নিয়ে বললেন, 'অনূর্ধ্ব-১৪ জেলা দলের ক্যাম্প হবে, তুমি এসো ক্যাম্পে।’
জাবেদ স্কুল ক্রিকেট খেলেতে গিয়েছিলেন ‘এইবার খেলে আর খেলতে পারবেন না', পরিবারের এই অনুমতি নিয়ে। কিন্তু সেই স্কুল ক্রিকেটই তাঁকে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পথ দেখিয়ে দিল। সেখান থেকেই শুরু জাবেদের পুরোদস্তুর ক্রিকেটার হওয়া আর এগিয়ে যাওয়ার গল্প।
পরিবারকে না জানিয়ে জাবেদ যান সিলেট জেলা দলের ক্যাম্পে। ক্যাম্প শেষে ডাক পেলেন সিলেট অনূর্ধ্ব-১৪ দলে। প্রথম বছর খেলতে পারেন নি নিজের পরীক্ষা ছিল বলে। পরে খেলেন সিলেট ডিভিশন অনূর্ধ্ব-১৫ দলের হয়ে। সেখানে ভালো করার ফলে ২০০৯-২০১০ সালে ডাক পান বাংলাদেশ জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৫ দলে। সেখানেই নিজের প্রতিভার সম্ভবনার কথা জানান দেন জাবেদ এবং সে বছর ডাক আসে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলে। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে দুই বছর লাল সবুজের জার্সি গায়ে খেলেন রাহাতুল ফেরদৌস জাবেদ।
শুরুর দিকে পরিবার থেকে অনুমতি না পেলেও বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ দলে ডাক পাওয়ার পর একটু একটু করে ক্রিকেট খেলার পুরোপুরিভাবে অনুমতি পান জাবেদ। পাড়ার বড় ভাই এবং সিলেট ক্রিকেটাঙ্গনের অনেকে তাঁর বাসায় গিয়ে বুঝান পরিবারের সবাইকে, ফলে তাঁরা রাজি হন ছেলেকে ক্রিকেটার বানাতে।
জাবেদ নিজেও সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলেন, তিনি ক্রিকেটার হবেন কি না! অনূর্ধ্ব-১৫ দলে খেলার পরে বুঝতে পারেন, বাংলাদেশকে ক্রিকেটে অনেক কিছু দেওয়ার আছে তাঁর।
তিনি জানান, ‘ছোটবেলায় পেপসি কিনে স্টিকার সংগ্রহ করতাম। সেখানে শহীদ আফ্রিদি এবং শোয়েব মালিকের ছবি দেখে ক্রিকেটের প্রেমে পড়ি। দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি প্রিয় সাকিব আল হাসান; তিনিই আমার আইকন। দেশের বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকার ডেভিড মিলারের ব্যাটিং খুব পছন্দ, বোলিংয়ে ভারতের রবীন্দ্র জাদেজা। সিলেটের ক্রিকেটে তাঁর সব সময়ের প্রিয় তারকা অলক কাপালী।’
বাংলাদেশ যুব দল
অনূর্ধ্ব-১৭ দল থেকে ডাক পান বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। বাংলাদেশ জাতীয় দলের অনেক তারকা ক্রিকেটার উঠে আসেন, এই যুব দল থেকে। আজকের সাকিব, তামিম, মুশফিকরা সেই যুব দলের। ২০১৩-১৪ সালে জাবেদ বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব- ১৯ দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে সিরিজ খেলেন, সেই সিরিজে ৭ ম্যাচে ১১ উইকেট লাভ করেন তিনি। সেরা বোলিং ফিগার ছিল ৫৫ রানে ৫ উইকেট, সে সিরিজে জাবেদ বাংলাদেশীদের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট লাভ করেন। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের জাবেদ ম্যাচ খেলেছেন ১৬টি, যেখানে উইকেট পেয়েছেন ১৮টি। একসময় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব- ১৯ দলের সহ-অধিনায়ক ছিলেন জাবেদ।
ইমার্জিং এশিয়া কাপ ২০১৭
যুব দলের গন্ডি পেরিয়ে তিনি খেলেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব- ২৩ দলের হয়ে। ২০১৭ সালে ইমার্জিং এশিয়া কাপে বাংলাদেশের হয়ে দুই ম্যাচে নেন ৬ উইকেট। টিম কম্বিনেশনের কারনে পরের ম্যাচ গুলোতে সাইড বেঞ্চে কাটাতে হয় তাঁকে। নেপালের বিপক্ষে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে তিনি ৭ ওভার বল করে ৪৫ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট পান। আর হংকং এর বিপক্ষে ইমার্জিং এশিয়া কাপে কাপের প্রথম ম্যাচেও জাভেদ ছিলেন সফল। সে ম্যাচে জাভেদ ৮.১ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ২ উইকেট লাভ করেন।
ঘরোয়া ক্রিকেট
২০১৫ সালে সিলেট বিভাগের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় রাহাতুল ফেরদৌস জাবেদের। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনি ৩৬ ম্যাচে ৫৬ ইনিংসে ২৫.২২ গড়ে রান করেছেন ১১১০। পাঁচ ফিফটির পাশাপাশি আছে এক সেঞ্চুরিও। অপরাজিত সেই সেঞ্চুরির ইনিংসে তিনি রান করেছিলেন ১০৬*।
বল হাতে বাঁ-হাতের স্পিন জাদুতে উইকেট নিয়েছেন ৮২টি। ৩৬ ম্যাচের ৫৯ ইনিংসে বল করে ইনিংসে পাঁচ এবং চার উইকেট পেয়েছেন যথাক্রমে ৩ এবং ২বার করে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর সেরা বোলিং ফিগার হচ্ছে ৪৮ রানে ৫ উইকেট। ফিল্ডিংয়ে তিনি ক্যাচ নিয়েছেন ৩০টি।
২০১৪ সালে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে অভিষেক হয় রাহাতুল ফেরদৌস জাভেদের। লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে তিনি ৭৪ ম্যাচের ৭১ ইনিংসে নিয়েছেন ৮৭টি, সেরা বোলিং ৩২ রানে ৪ উইকেট।
লিস্ট এ ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ে অবশ্যই তেমন একটা সুবিধা করে উঠতে পারছেন না এই তরুণ লেফট আর্ম অর্থোডক্স। লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে ৭৪ ম্যাচে ৫১ ইনিংসে ব্যাট করে রান করেছেন মাত্র ৬১৫। তবে ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ নিয়েছেন ৩৩টি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দুইবার খেলেছেন প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে। গেল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে।
ইংল্যান্ড লিগে খেলা
ক্রিকেটে ধ্যান-জ্ঞান সিলেটের এই ক্রিকেটার নিজেকে ক্রিকেটে মগ্ন রাখতে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে যখন কোনো টুর্নামেন্ট থাকে না তখন ক্রিকেট খেলতে পাড়ি জমান বিলেতে। সেখানে স্থানীয় লিগে নিজের ক্রিকেট শৈলী প্রদর্শন করে ক্রিকেটীয় দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিদেশি কন্ডিশনে মানিয়ে নেওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন তিনি।
ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ার প্রিমিয়ার লিগ ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত খেলেছেন জাবেদ। ফেয়ারবার্ন ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে ২০ ইনিংসে ১০০ কাছাকাছি স্ট্রাইক রেটে ব্যাট হাতে করেছেন ৬৭৪ রান। যার মূল অস্ত্র বোলিং, সেখানেও বেশ সফল এই অলরাউন্ডার। বা হাতের স্পিন জাদুতে নিয়েছেন ৪২ উইকেট।
নজর কাড়া এমন পারফরম্যান্সে ইয়র্কশায়ার প্রিমিয়ার লিগ মাতিয়ে সিলেটের এই অলরাউন্ডার দেশে ফিরে নিয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট লিগের প্রস্তুতি। সিলেট দলের হয়ে জাতীয় ক্রিকেট লিগে এতোটা ধারাবাহিক দেখা যায় না জাবেদকে, যেমনটা তিনি খেলে এসেছেন ইয়র্কশায়ার প্রিমিয়ার লিগ।
এর পিছনে মূল কারণ হয়তো একটানা বেশি ম্যাচ খেলতে না পারা। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে জাতীয় ক্রিকেট লিগ আর ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ মিলিয়ে এক মৌসুমে এতো ম্যাচ খেলার সুযোগই আগে কখনো পাননি তিনি। তাই হয়তো তাঁর পারফরম্যান্স এতোটা নজরে আসেনি আগে।
ইয়র্কশায়ার প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত পারফর্ম করার পিছনে একটানা বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগটাকেই মূল কারণ হিসেবে দেখছেন জাবেদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা তো অবশ্যই কাজ করেছে৷ আমি মনে করি যে, একজন অলরাউন্ডার হিসেবে আপনি যদি প্রধান ভূমিকায় খেলেন তাহলে দেখা যাবে আপনার পারফর্ম করার সুযোগটা বেশি থাকে। ইয়র্কশায়ার প্রিমিয়ার লিগে সেই সুযোগটা বেশি ছিল। আপনি যদি গত মৌসুমে ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে আমার পারফরম্যান্স দেখেন তাহলে দেখবেন যে আমাকে প্রধান ভূমিকায় খেলানো হয়েছিল বলে, সেখানেও দলের হয়ে অবদান রাখতে পেরেছি। এর আগের বছর পারফর্ম করতে পেরেছি। যখনই আমাকে মূল ভূমিকায় রাখা হয়েছিল পারফর্ম করেছি। ইয়র্কশায়ার প্রিমিয়ার লিগেও মূল ভূমিকায় ছিলাম তাই ধারাবাহিক ভাবে ভাল করতে পেরেছি।’
জাবেদ যোগ করেন, ‘অন্যান্য বছর হয়তো আমাকে মূল ভূমিকায় খেলানো হয়নি, আমাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। আমাকে মূল জায়গায় খেলানো হয়নি। এক দুই ম্যাচ খারাপ খেলার পর একাদশ থেকে বাদ পড়েছি৷ আপনাকে যদি সঠিক জায়গায় প্রাধান্য দিয়ে মূল ভূমিকায় খেলানো হয়, তাহলে আপনি হয়তো দুই-চার ম্যাচে ব্যর্থ হতে পারেন। কিন্তু নিয়মিতভাবে যদি আপনাকে একটা জায়গায় খেলানো হয় তাহলে ভাল পারফর্ম করার সুযোগ থাকে।’
গেল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে ১১ ম্যাচে ব্যাটিংয়ে ২৫৪ রান এবং বোলিংয়ে ১০ ইনিংসে ৪.৫ ইকোনমিতে ১৫ উইকেটে জাবেদের সেই কথারই প্রমাণ।
ইয়র্কশায়ার প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত পারফর্ম করার পিছনে একটানা বেশি ম্যাচ খেলাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন জাবেদের এক সময়ের সতীর্থ এনামুল হক জুনিয়র। ফায়ারবার্ন ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে জাবেদের খেলা খুব কাছ থেকে দেখেছেন এনামুল। সেই দেখা থেকে তিনি বলেন, ‘সেখানে টানা ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে, এটা তাকে ভাল করতে সাহায্য করেছে। একটানা ম্যাচ খেলেছে, ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করেছে। একটানা ম্যাচ খেলার সুযোগ থাকলে মাইন্ডসেটে পরিবর্তন আসে।’
সিলেট তথা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ইংল্যান্ড লিগ খেলার সুযোগকে জাবেদ দেখছেন ইতিবাচক হিসেবে। অফসিজনে ইংল্যান্ডে খেলে বৈরি আবহাওয়া আর কন্ডিশনে পেস ও বাউন্সি উইকেটে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখছেন তিনি।
ইয়র্কশায়ার প্রিমিয়ার লিগ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে জাভেদ বলেন, ‘খুব ভাল অভিজ্ঞতা হয়েছে। সাধারণত অফসিজনে দেশে খেলা হয় না, তাই ইংল্যান্ডে যাওয়া। যতটুকু ভাল অভিজ্ঞতা নেওয়ার যায়, নেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
সিলেট তথা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বিদেশে খেলার সুযোগ আসলে কাজে লাগানোর পরামর্শ জাবেদের, ‘বিদেশে আবহাওয়া বলেন আর উইকেট কন্ডিশন বলেন, সবই ভিন্ন থাকে। বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটার থাকে, তাদের সাথে খেললে, অবশ্যই আপনার স্কিল ডেভলপ হবে। মানের দিক থেকে উন্নত, যেখানে ইসিবি নিজেই এসব লিগের দেখভাল করে।’
আসন্ন জাতীয় ক্রিকেট লিগের কথা চিন্তা করেই জাবেদের ইয়র্কশায়ার প্রিমিয়ার লিগ খেলতে যাওয়া। নিজের সেরা প্রস্তুতি জন্যই সেখানে যাওয়া কারণ, দুই টুর্নামেন্টই খেলা হয় ডিউক বলে। ইংল্যান্ডের বৈরি কন্ডিশনে নিজের ব্যাটিং উন্নতির দারুণ সুযোগ হিসেবে দেখেন তিনি। সেখানে খেলার অভিজ্ঞতা থেকে জাবেদ বলেন, ‘ইংল্যান্ডে খেললে ব্যাটিংয়ে উন্নতি করার সুযোগটা বেশি থাকে। ইংলিশ কন্ডিশনে সব বল সুইং করে, গ্রাসি উইকেটে খেলা হয় ফলে বলে মাটিও লাগার সুযোগ থাকে না। বলের সুইং প্রথম ওভারে যেমন থাকে পয়তাল্লিশ ওভারেও তেমন থাকে। বলে দুই পাশেই স্টিকার থাকে। তাই বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে উন্নতি করার সুযোগ থাকে। প্রথমবার আমি ডারহাম লিগে খেলেছিলাম, তখন ছয়টা ফিফটি প্লাস ইনিংস ছিল।’
ইয়র্কশায়ার প্রিমিয়ার লিগে জাবেদের ব্যাটে-বলে অনবদ্য নৈপুন্য বিসিবির এইচপি দলের ব্যাটিং কোচ ও সিলেট বিভাগীয় দলের প্রধান কোচ রাজিন সালেহ দেখছেন ইতিবাচক হিসেবে। জাবেদের পারফরম্যান্সকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে রাজিন বলেন, ‘ইংল্যান্ডের এরকম লিগে একসময় আমিও খেলেছি। এটা অবশ্যই ভাল লিগ, এসব লিগে খেললে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা যায়। তবে বাংলাদেশের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ আর জাতীয় ক্রিকেট লিগের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। জাবেদ দুর্দান্ত খেলেছে, আমি তার পারফরম্যান্সকে সম্মান করি। আপনি যেই লিগে খেলেন না কেন পারফর্ম করতে পারলে আপনার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে ইতিবাচক হিসেবে কাজ করবে। ভাল করলে মনোবল বাড়ে ফলে সামনের যেকোনো টুর্নামেন্টে ভাল করার সাহস দিবে। তবে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেও পারফর্ম করতে হবে।'
জাবেদকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন ছিল রাজিন সালেহ তথা সিলেটের ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট অনেকের। জাবেদের এখন জাতীয় দলে থাকার কথা ছিল বলে মনে করেন রাজিন, ‘জাবেদকে নিয়ে আমাদের অনেক বড় স্বপ্ন ছিল, তার এখন জাতীয় দলে থাকার কথা ছিল। কিন্তু দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে তার ধারাবাহিক ভাল পারফরম্যান্স ছিল না, ফলে সে ব্যাকফুটে চলে গেছে।’
গেল ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ বাদ দিলে, দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে জাবেদও হতাশ। এনিয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে প্রত্যাশা অনুযায়ী ভাল খেলতে পারিনি। আমার আরো ভাল করা উচিত ছিল। নিজের খেলায় উন্নতি আনতেই অফসিজনে দেশের বাইরে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলার চেষ্টা করছি। এবার ইংল্যান্ডে খেলে আসছি, সেখানে ভাল করেছি। আশা করছি এর ধারাবাহিকতা দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেও ধরে রাখতে পারব।’
জাবেদকে ইংল্যান্ডে খেলার সুযোগ করে দিয়েছে দেশের পূর্নাঙ্গ ক্রীড়া ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ‘ক্রিকেট উইথ সামি’। এই প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানেই ইয়র্কশায়ার প্রিমিয়ার লিগ খেলেন এই অলরাউন্ডার। তাঁর চাওয়া কর্তৃপক্ষ যেন এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখে এবং দেশীয় ক্রিকেটারদের ইংল্যান্ডে খেলার সুযোগ তৈরি করে দেয়।
এ প্রসঙ্গে ‘ক্রিকেট উইথ সামি’র সাংবাদিক দুর্জয় দাশ গুপ্ত বলেন, ‘আমাদের এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। দেশের শীর্ষ স্থানীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করছে ‘ক্রিকেট উইথ সামি’। সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মমিনুল হকের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের আকবর আলীও আছেন আমাদের প্রতিষ্ঠানের সাথে। রাহাতুল ফেরদৌস জাবেদকে ইংল্যান্ডের খেলার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য ক্রিকেটারদের খেলার সুযোগ তৈরি করতে কাজ করছে ‘ক্রিকেট উইথ সামি’। আমাদের ব্যবস্থাপনায় সিলেটের আরো দুজন ক্রিকেটার, যেমন রুম্মান আহমেদ ও তৌফিক খান তুষারও এবার খেলেছেন ইংল্যান্ড লিগে। ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের সাথেও আমাদের একটা চুক্তি হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় আগামী বছর ইয়র্কশায়ার প্রিমিয়ার লিগে বাংলাদেশের তরুণ এবং অভিজ্ঞ অনেক ক্রিকেটারকে দেখা যাবে। এটা নিয়ে আলোচনা চলছে। আগামী বছর আরো অনেক নতুন মুখ যুক্ত হবে।’
‘ক্রিকেট উইথ সামি’র কাজের ব্যপ্তি সম্পর্কে দুর্জয় বলেন, ‘ইংল্যান্ড লিগে কাজ করার পাশাপাশি এবার আমরা জাতীয় ক্রিকেট লিগে সিলেট বিভাগীয় দলের পৃষ্ঠপোষকতায় আছি। আসন্ন বিপিএলেও আমরা চট্রগ্রাম দলের খেলোয়াড় সম্পৃক্ততা ও ব্র্যান্ড পার্টনারশিপসে কাজ করব।’
বিপিএল: সিলেট স্ট্রাইকার্স
ইয়র্কশায়ার প্রিমিয়ার লিগ মাতানো জাবেদ গেল বিপিএলে ছিলেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের সাথে। নিলামের বাইরে থেকে তাঁকে দলে নিলেও কোনো ম্যাচ খেলায়নি স্ট্রাইকার্স কর্তৃপক্ষ। ম্যানেজমেন্ট চাইলে তাঁকে খেলাতে পারত, ২০১৯ সালে এমনও হয়েছে নিলামে নাম না থাকা ক্রিকেটারদের খেলিয়েছিল রংপুর ও ঢাকার ফ্র্যাঞ্চাইজি।
খেলানো না খেলানোটা ছিল স্ট্রাইকার্স ম্যানেজমেন্টের হাতে, দলের সাথে যুক্ত করে জাবেদ যে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পেয়েছেন এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সিলেটের উদীয়মান এই অলরাউন্ডার। এটাকে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে নেন জাবেদ। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ম্যাচ খেলানোটা অবশ্যই ম্যানেজমেন্টের হাতে, না খেলানোর কারণটা তারা ভাল বলতে পারবেন। দলের সাথে থেকে আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে। স্ট্রাইকার্সে যুক্ত হয়ে এটা বুঝতে পেরেছি যে বিপিএল খেলতে হলে নিজের খেলার মান কোথায় নিয়ে যেতে হবে। কোন কোন প্রতিবন্ধকতা পার করে আসতে হবে। নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করতে হবে।’
সেই সুযোগে বিপিএলে দেশী-বিদেশি তারকা ক্রিকেটারদের কাছ থেকে ক্রিকেটীয় বিভিন্ন কলাকৌশল জানার সুযোগ ছিল জাবেদের সামনে। দেশী কোচদের নিয়ে সাজানো স্ট্রাইকার্স কোচিং প্যানেলে বিদেশি কোচদের সান্নিধ্যে যাওয়ার তেমন একটা সুযোগ না থাকলেও জাবেদ সদাসর্বদা ছিলেন স্পিন কোচ মুরাদ খানের সাথে। নিজের স্পিনকে শাণিত করতে জাবেদ মুরাদ খানের টোটকা নেওয়ার পাশাপাশি বোলিং কোচ ডলার মাহমুদ ও সৈয়দ রাসেলের কাছ থেকেও নিয়েছেন পরামর্শ।
বোলিং নিয়ে জাবেদ বলেন, 'আমি সব সময় মুরাদ ভাইয়ের সাথেই ছিলাম। আমার বোলিংয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। তিনি শেখ জামালের বর্তমান স্পিন বোলিং কোচও, একসময় আমার টিমমেট ছিলেন। এক্ষেত্রে কথা বলাটা সহজ ছিল। এছাড়া আমাদের বোলিং কোচ ডলার ভাই ও রাসেল ভাই যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে কখন কোথায় বোলিং করতে হবে। নতুন বল ও পুরনো বলে কীভাবে কার্যকর বোলিং করতে হয়ে। এসব বিষয়ে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। টেকনিক্যাল আরো অনেক বিষয় নিয়ে আলাপ করি৷’
এবার জাবেদকে বিপিএলের নিলাম থেকে দলে নিয়ে চট্টগ্রাম কিংস। নিলাম থেকে দল পাওয়ায় এবার কিংসের হয়ে মাঠ মাতানোর সুযোগ জাবেদের সামনে। ব্যাটে-বলে পারফর্ম করে সেই সুযোগকে স্মরণীয় করে রাখতে জাবেদও প্রস্তুত। কিংসের এই অলরাউন্ডার বলেন, ‘বিপিএলে দল পাওয়াটা আনন্দের, আমার জন্য খুশির খবরও। সুযোগ পেলে চট্রগ্রাম কিংসের আস্থার প্রতিদান দিতে চাই। একাদশে সুযোগ পেলে ভাল পারফর্ম করে বিপিএলটাকে স্মরণীয় করে রাখতে চাইব, ইনশাআল্লাহ।’
জাবেদ একসময়ের সতীর্থ এনামুল হক জুনিয়রকে পাচ্ছেন কিংসের সহকারী কোচ হিসেবে। সিলেট বিভাগীয় দলে একসাথে খেলার সুবাদে নিজেদের পারস্পরিক বুঝাপড়াটাও বেশ শক্ত। দল গোছাতে সেদিন এনামুল নিজেই ছিলেন নিলামের টেবিলে। সেদিক থেকে জাবেদকে দলে ভেড়ানোর কারণটা নিজেই ভাল বলতে পারবেন।
সিলেটের এই তরুণকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে এনামুল বলেন, ‘আমাদের একটা বাম হাতি স্পিনার দরকার ছিল, যে সাকিবের সাথে স্পিন বিভাগ সামলাবে। সাথে ভাল ব্যাট করতে পারবে। এমন একজনকে আমরা খুঁজছিলাম, এই জায়গায় জাবেদকেই ফিট মনে হয়েছে।’
২০১৭ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আঘাত পান জাবেদ, যা তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ইনজুরি কাটিয়ে ফেরার পর বোলিংয়ে ফুল রিদম ফিরে পেতে একটা সময় লেগেছিল তার। বছর দুইয়েক যখন ইংল্যান্ডের ডারহাম লিগে খেলেন তখন এটা নিয়ে ভুগছিলেন তিনি। সেখান থেকে ফিরে মাস্কো সাকিবে ভর্তি হন জাবেদ, সেখানে মাস তিনেক কোচ সালাউদ্দিনের অধীনে নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে নামেন তিনি।
তার ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি আব্দুর রাজ্জাকের সাথে কথা বলতে দেখা যায় জাবেদকে। সে বছর বিসিবির নির্বাচক হিসেবে জাতীয় ক্রিকেট ক্রিকেট লিগ দেখতে প্রথম সিলেটে আসেন আব্দুর রাজ্জাক। দেশীয় ক্রিকেটারদের খেলা পরখ করতে আসা রাজের সাথে তখন নিজের বোলিং সমস্যা নিয়ে কথা বলেন জাবেদ। রাজের সাথে আলোচনা প্রসঙ্গে, ‘সেই সময়ে আমার বোলিং নিয়ে একটু স্ট্রাগল করেছিলাম। বোলিং একশনে পরিবর্তন চলে আসে। আমার ল্যান্ডিংয়ে সমস্যা ছিল। ভারসাম্য ছিল না। তা ঠিক করার জন্য অনেক স্পিন বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলি৷ সেই সূত্র ধরে রাজ ভাইয়ের সাথে কথা বলার বিষয়টি নাজমুল ভাইকে (নাজমুল হোসেন) বলি। নাজমুল ভাইও আমাকে নিয়ে যান। রাজ ভাইয়ের সাথে কথা বলে স্পিন বোলিংয়ের অনেক খুটিনাটি বিষয়ে জানি।’
স্পিন বোলিংয়ের পাশাপাশি জাবেদ দারুণ ব্যাটিংও করে থাকেন। লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করে অভ্যস্ত জাবেদ দলের প্রয়োজনে অনেক সময় উপরের দিকে ব্যাট করতে হয় তাঁকে। সিলেট বিভাগ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এক মৌসুমে তিন/চারেও খেলিয়েছে তাঁকে। তা অবশ্যই ভাল চেয়ে খারাপই বয়ে এনেছে। সেখানে বড় কোনো রানের দেখাও পাননি জাবেদ। উপরের দিকে খেললে বড় ইনিংস খেলার সুযোগ থাকে বেশি তবে জাবেদ পাঁচে খেলতে সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
সেটা তার কথায়ই ওঠে এসেছে, ‘আসলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটটা একটু কঠিন, কারণ আপনি যখন একটা দলের হয়ে একটা টুর্নামেন্ট খেলতে যাবেন তখন সেই দলের একটা লক্ষ্য থাকবে। দল চ্যাম্পিয়ন হতে চাইবে, ভাল খেলতে চাইবে। সেক্ষেত্রে দলের প্রয়োজনে কোচ এবং টিম ম্যানেজমেন্ট যেকোনো পজিশনে খেলাতে পারে। প্রতিপক্ষ দলকে নিয়ে একটা পরিকল্পনা থাকে, সেই পরিকল্পনা থেকেই তিন/চারে খেলানো হয়। এক্ষেত্রে আমি তিন খেলালেও আমি নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি এবং আমাকে ছয়/সাতে খেলালেও সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি।’
লম্বা ইনিংস খেলার ক্ষেত্রে উপরের দিকে খেলানোটাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন জাবেদ, ‘টপ অর্ডার কিংবা মিডল অর্ডারে খেললে বড় ইনিংস খেলার সুযোগ বেশি থাকে। ছয়/সাতে খেললে সুযোগটা কমে যায়। সাতে নামলে আমাকে দশ এবং এগারো নম্বর ব্যাটার নিয়ে খেলতে হয়। এক্ষেত্রে সেট হওয়ার পরেও ৬০/৭০ চেয়ে বড় ইনিংস খেলার সুযোগ কম থাকে। একদিন দুই দিন হয়তো বা বড় ইনিংস হতে পারে, তবে সুযোগটা কম। দলের প্রয়োজনে যেকোনো জায়গায় খেলতে প্রস্তুত। আমার পছন্দের ব্যাটিং পজিশন পাঁচ।’
ভবিষ্যৎ লক্ষ্য
বাংলাদেশ বয়সভিত্তিক দল এবং ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটার রাহাতুল ফেরদৌস জাবেদ স্বপ্ন দেখেন জাতীয় দলের হয়ে লাল সবুজের জার্সি গায়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার।
জাবেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ এবং অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে খেলেছি, এইচপি দলেও ছিলাম। এখন শুধু বাংলাদেশ 'এ' দল এবং জাতীয় দলের হয়ে খেলা বাকি। নিজেকে 'এ' দল আর জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুত করাই আমার লক্ষ্য। এজন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে জানি আমি।’
সিলেটের এই অলরাউন্ডার বয়স এখন ২৯। নিজের স্বপ্নের পেছনে ছুটার অনুপ্রেরণা অবশ্যই বন্ধু নাসুম আহমেদ। ২০১২ সালে বাংলাদেশের হয়ে যুব বিশ্বকাপ খেলা নাসুমের জাতীয় দলে অভিষেক হয় ২০২১ সালে। জাবেদ আর নাসুমের বেড়ে ওঠা একসাথেই, সিলেটের হয়ে তাদের ক্রিকেটে পথচলা সেই অনূর্ধ্ব-১৩ দল দিয়েই।
এরপর বয়সবিত্তিক দলে সিলেট জেলা এবং বিভাগীয় দলে দুজনে খেলেছেন একসাথে। দুজনেই আবার একই গুরুর শিষ্য, কোচ মারুফ হাসানের হাত ধরেই তাদের ক্রিকেটের হাতেখড়ি। ক্রিকেটের বাইরেও দুজনে ভাল বন্ধু। নাসুমও কঠিন সময় পার করে এসেছেন জাতীয় দলে, আর সেটা খুব কাছ থেকেই দেখেছেন জাবেদ। দুঃসময়ে মানসিক দিক কতটা শক্ত ছিলেন নাসুম সেটা জানা আছে জাবেদের। নাসুমও এখন দিচ্ছেন তাঁকে দিচ্ছেন উৎসাহ উদ্দীপনা।
এ নিয়ে জাবেদ বলেন, ‘নাসুম যেভাবে ফিরে এসেছে, এটা আসলে অনুপ্রেরণা দেয়। সে মানসিক দিক থেকে অনেক শক্ত ছিল। ক্রিকেটে চাইলে অনেক কিছু করা সম্ভব, নাসুম তার বাস্তব উদাহরণ। যেকোনো পরিস্থিতি থেকে যেকোনো সময় নিজে চাইলে ভাল কিছু করা যায়। এটা নাসুম করে দেখিয়েছে। আমরা ছোট বেলা থেকেই ভাল বন্ধু। অনূর্ধ্ব-১৩ দল থেকেই আমরা একসাথে সিলেটের হয়ে খেলছি। আমাদের যে দৃঢ় বন্ধন ছিল সেটা এখনও আছে। জাতীয় দলে খেলার আগে আমাদের যেমন যোগাযোগ ছিল এখনও সেই সেরকমই আছে। নাসুম নিজেও আমাকে ভাল খেলতে উৎসাহ দিচ্ছে৷ সেও অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে। জাতীয় দলে অভিষেকের আগে সে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে। কঠোর পরিশ্রম করে গেছে। এক্ষেত্রে সেও আমার অনুপ্রেরণা। সে নিজেও আমাকে উৎসাহ দিচ্ছে, জাতীয় দলে খেলার জন্য।’
তবে জাতীয় দলে খেলার বাস্তবতা অনেক কঠিন বলে মানছেন জাবেদ। বিশেষ করে যুব বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্যরা ঘরোয়া ক্রিকেটে আসার পর থেকে প্রতিযোগিতা বেড়েছে বলে মনে করেন এই অলরাউন্ডার। এই দলে প্রচুর প্রতিভাবান ক্রিকেটার রয়েছে যারা ইতিমধ্যে জাতীয় দলে খেলছে এবং অনেকে ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করে জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়ছে।
বিশ্বকাপ জয়ী তরুণদের সাথে লড়াই প্রসঙ্গে জাবেদ বলেন, ‘যুব বিশ্বকাপ জয়ী দলে অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার রয়েছে যারা ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলছে। তাদের অনেকে আবার জাতীয় দলেও খেলছে। এই ব্যাচটা যখন ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রবেশ করে তখন থেকেই ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। ব্যাটিংয়ে তানজিদ তামিম, শাহাদাত হোসেন দিপু, মাহমুদুল হাসান জয়রা আছে। স্পিনে রকিবুল হাসান আর তানভীর ইসলামরা আছে। তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে এখন খেলতে হচ্ছে সেক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ একটু বেশি। তবে জাতীয় দলে খেলা ক্রিকেটার আর ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে পার্থক্য তেমন একটা বেশি না। আমার কাছে উনিশ আর বিশ মনে হয়। তাই চ্যালেঞ্জ নিয়ে সামনে আগাতে হবে হাল ছাড়া যাবে না।’