Image

সিলেটে যিনি দুই লিগের তারকা: ক্রিকেটার বুলবুলের ফুটবল অধ্যায়

৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল

প্রকাশ: 3 ঘন্টা আগেআপডেট: 1 সেকেন্ড আগে
সিলেটে যিনি দুই লিগের তারকা: ক্রিকেটার বুলবুলের ফুটবল অধ্যায়

সিলেটে যিনি দুই লিগের তারকা: ক্রিকেটার বুলবুলের ফুটবল অধ্যায়

সিলেটে যিনি দুই লিগের তারকা: ক্রিকেটার বুলবুলের ফুটবল অধ্যায়

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে আমিনুল ইসলাম বুলবুল এক কিংবদন্তি নাম। দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান, ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক, আর ক্রিকেট দিয়েই যাঁর পরিচিতি গড়ে উঠেছে বিশ্বজুড়ে। তবে তার একদম শুরুটা কি কেবল ক্রিকেটেই? অনেকেই জানেন না, ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবলেও ছিলেন বুলবুল সমান পারদর্শী।


সিলেটের মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে বুলবুল খেলেছেন সিলেটের ক্রিকেট লিগ এবং পাশাপাশি সিলেট ফুটবল লিগেও। নব্বই দশকের শুরুর দিকে ১৯৯১, ১৯৯২ এবং ১৯৯৫ সালেও তিনি নিয়মিত ক্রিকেট খেলেছেন সিলেট জেলা দলের হয়ে। এমনকি ১৯৯৫ সালের এক ফাইনালে সেঞ্চুরি করে সিলেটকে শিরোপা এনে দেন। সেই স্মৃতি মনে করে সিলেট বিভাগীয় আম্পায়ারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আশরাফ হোসেন আরমান বলেন,“সে ফাইনালে বুলবুল ভাই সেঞ্চুরি না করলে সিলেট জিততে পারত না।”


তবে এই “ফুটবল খেলোয়াড় বুলবুল” কে খুব বেশি জানে না কেউ, এমনকি সিলেটের ফুটবল ইতিহাস নিয়ে লেখা বইয়ের লেখকও জানতেন না তাঁর ফুটবল-অধ্যায়।


স্মরণীয় এক মুহূর্ত ছিল যখন সিলেটের ফুটবল ইতিহাস নিয়ে লেখা বই ‘সিলেটের ফুটবল’ উপহার দিতে গিয়ে লেখক মান্না চৌধুরী বিস্ময়ে অভিভূত হন। বুলবুল বইটি হাতে নিয়ে সরল প্রশ্ন করেন, “এখানে আমার নাম আছে তো?”

বিস্ময়ে হতভম্ব মান্না চৌধুরী তখন বলেন, “আপনার নাম তো থাকবে সিলেটের ক্রিকেটে, ‘সিলেটের ফুটবল’ বইয়ে আসবে কেন?”

তখনই বিনয়ের সুরে বুলবুল জানিয়ে দেন তাঁর অব্যক্ত পরিচয়, “আমি সিলেটে ক্রিকেট লিগের পাশাপাশি ফুটবল লিগেও খেলেছি।”


এই ছোট কথোপকথনের ভেতর দিয়ে ফুটে ওঠে এক বিস্মৃত অধ্যায়! একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের স্থানীয় ফুটবল ভালোবাসা, যা হয়তো দলগতভাবে কখনও জাতীয় জার্সিতে রূপ নেয়নি, কিন্তু হৃদয়ে ছিল একই তীব্রতায়।


সিলেটে লিগে ক্রিকেট-ফুটবলের দুই মাঠে ঘরের ছেলে বনে যান বুলবুল, তখন আর লিগেই সীমাবদ্ধ থাকেনি বুলবুলের এই খেলোয়াড়ি পরিচয়। নিয়মিত লিগ খেলতে খেলতে হয়ে ওঠেন সিলেট জেলা দলের তারকা ক্রিকেটার। যেমনটা ফুটে ওঠে বুলবুলের কথায়, ‘'সিলেটে এত খেলেছি যে অনেকে মনে করত আমার বাড়ি বোধ হয় সিলেটে।” 


ফাইনালে সেঞ্চুরি করেও সিলেটকে জেতান শিরোপা। সিলেট জেলা দলের হয়ে বুলবুলের শিরোপা জয়ের গল্প শুনিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় ক্রিকেট আম্পায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আশরাফ হোসেন আরমান।


সিলেটের এই কিংবদন্তি আম্পায়ার জানান, “বুলবুল ভাই তো শুধু সিলেট লিগে ক্রিকেট আর ফুটবল খেলেননি, সিলেট জেলা দলের হয়েও খেলেছিলেন। একবার ফাইনালে সেঞ্চুরি করে সিলেটকে শিরোপা জিতিয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালের সেই ফাইনালে তিনি সেঞ্চুরি না করলে সিলেট জিততে পারত না।”


নব্বই দশকের শুরুতে ছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুলের খুব ঘনিষ্ঠ। শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও তাদের বন্ধন ছিল গভীর। সিলেটের এই কিংবদন্তি আম্পায়ার বলেন, “বুলবুল ভাই যখন সিলেটে খেলতে আসতেন, তখন আমি তাকে অনেক সময় দিতাম। বেশিরভাগ সময় কাটাতাম একসাথে, তিনিও খুব স্নেহ করতেন।”


তিনি আরও বলেন, সেই সময় মোবাইল ছিল না, তাই তারা চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ করতেন। এখনও তিনি বুলবুলের ঢাকার বাসার ঠিকানা কণ্ঠস্থ বলতে পারেন, “আগে তো তাঁর বাসায় নিয়মিত আমার চিঠি যেত, গেন্ডারিয়ার বাসায়। এখনো তার ঠিকানা মুখস্থ আছে: ৫৯, এস.এস. রোড, গেন্ডারিয়া, ঢাকা-১২০৪।”


সিলেট বুলবুলের কাছে যেন দ্বিতীয় বাড়ি। তাঁর সিলেটের স্মৃতি এতটাই গভীর যে, এখনো সুযোগ পেলেই ছুটে যান সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে। সম্প্রতি বিসিবির দায়িত্বে থাকার সুবাদে ছুটে যান সেই চিরচেনা জেলা স্টেডিয়ামে। স্টেডিয়ামে এসে নিজের খেলা সময়ের স্মৃতিবিজড়িত ইনডোর, জিমনেসিয়াম আর সবুজ মাঠ ঘুরে দেখেন তিনি। যেখানে একসময় ব্যাট হাতে মাতিয়ে রেখেছিলেন, আবার কখনও ফুটবল পায়ে পেলে কিংবা ম্যারাডোনার স্বপ্ন দেখেছিলেন।


স্টেডিয়াম পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমকে বুলবুল বলেন, ‘যদিও আজ অফিশিয়াল ভিজিটে এসেছি। কিন্তু এই মাঠের সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেক পুরনো। আমি এখানে অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ খেলেছি। প্রচুর ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছি।’’ 


সেই স্মৃতির সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের দাঁড়িয়ে আসন্ন বিসিবি নির্বাচনে নিজের প্রার্থিতার কথাও প্রথম জানান বুলবুল। সেইসঙ্গে আহ্বান জানান সিলেট লিগের জৌলুশ ফিরিয়ে আনতে। সিলেট লিগের প্রতিযোগিতা ও গুরুত্ব ফেরাতে তিনি বলেন, “ভালো খেলোয়াড় গড়তে হলে প্রতিযোগিতামূলক লিগ দরকার। সিলেটের সেই জমজমাট লিগ ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রতিযোগিতা মূলক লিগ আয়োজন করতে হবে।”


সেই স্মৃতির মাঠে দাঁড়িয়ে স্টেডিয়ামের আধুনিকায়নের ব্যাপারে বুলবুল বলেন, “যেহেতু স্টেডিয়ামটি মাল্টিপারপাসে ব্যবহার হয়, এখানে ফুটবল হচ্ছে, ক্রিকেট হচ্ছে। যেহেতু দুইটা খেলা হয়। তাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মতো অতো মসৃণ উইকেট আমরা আশাও করি না। তবে যখন ক্রিকেট খেলা হবে, তখন ক্রিকেটের মতো করে যতটা সম্ভব ক্রিকেট উপযোগী করা। বিশেষ করে, সেন্ট্রাল উইকেটগুলো, অনুশীলনের পিচগুলো এবং আউটফিল্ডগুলো যেন ক্রিকেটের মতো করে বানানো হয়।”


এই সমস্যা সমাধানে বুলবুল বলছেন, “বিশ্বের অনেক স্টেডিয়াম এখন মাল্টিপারপাসে ব্যবহৃত হয়, ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াতে তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাঠ প্রস্তুত রাখে। আমাদেরও সেই প্রযুক্তি ব্যবহারের চেষ্টা করতে হবে।”


সিলেট দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতপ্রবণ এলাকা। এতে ক্রিকেটের প্রস্তুতি বাধাগ্রস্ত হয়। সিলেট তথা সারাদেশের ক্রিকেটারদের স্কিল বাড়াতে বারোমাসই খেলা চালু রাখার ব্যাপারে বুলবুল বলেন, “ক্রিকেটারদের স্কিল বাড়াতে হলে বারোমাসই খেলা চালু রাখতে হবে। বিসিবিতে আমার বয়স মাত্র তিন মাস, কিন্তু এর মধ্যেই আমি বুঝেছি, এসব সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত সমাধানে যেতে হবে।”


আমিনুল ইসলাম বুলবুল শুধু একজন টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান নন, দুই খেলার এক পরিপূর্ণ ক্রীড়াবিদ। মাঠে ছিলেন দুই খেলার সৈনিক, আর আজ মাঠের বাইরে থেকেও খেলাটার উন্নয়নে সক্রিয়। তাঁর সেই অব্যক্ত ফুটবল পরিচয় যেমন আমাদের বিস্মিত করে, তেমনি অনুপ্রাণিতও করে। কীভাবে একজন ক্রীড়াবিদ সব সীমা পেরিয়ে খেলার প্রতি ভালোবাসাকে বয়ে বেড়ান আজীবন।
 

Details Bottom
Details ad One
Details Two
Details Three