রায়পুরে রানের ঝড় দক্ষিণ আফ্রিকার, রেকর্ড তাড়ায় ভারতের প্রভাবহীন বোলিং

৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল

প্রকাশ: 1 ঘন্টা আগে আপডেট: 29 মিনিট আগে
রায়পুরে রানের ঝড় দক্ষিণ আফ্রিকার, রেকর্ড তাড়ায় ভারতের প্রভাবহীন বোলিং

রায়পুরে রানের ঝড় দক্ষিণ আফ্রিকার, রেকর্ড তাড়ায় ভারতের প্রভাবহীন বোলিং

রায়পুরে রানের ঝড় দক্ষিণ আফ্রিকার, রেকর্ড তাড়ায় ভারতের প্রভাবহীন বোলিং

রায়পুরের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দুদলের সমান আগ্রাসনেই তৈরি হলো বিরল এক ক্রিকেট রোমাঞ্চ। ভারত প্রথমে ব্যাট করে ৩৫৯ রানের চমৎকার সংগ্রহ গড়লেও দক্ষিণ আফ্রিকা সেই পাহাড় ডিঙিয়ে ইতিহাসে নাম লেখাল। মোট ছয় শতাধিক রান উঠে এ ম্যাচে যেন ছিল ব্যাটিং শিল্পের বহুমুখী প্রদর্শনীর রূপ।

ভারতের ইনিংস শুরু হয় রোহিত শর্মা এবং ইয়শস্বী জয়সওয়ালকে নিয়ে। শুরুতে ব্যাটিং ছিল আগ্রাসী কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী নয়। রোহিত ৮ বলে ব্যক্তিগত ১৪ রানে ফিরেন নান্দ্রে বার্গারের শিকার হয়ে। জয়সওয়ালও থিতু হয়ে ইনিংস বড় করতে না পেরে ২২ রান করে মারকো ইয়ানসেনের বলে ফিরে যান। দ্রুত দুই উইকেট হারানো ভারতকে চাপমুক্ত করেন রুতুরাজ গায়কোয়াড় এবং বিরাট কোহলি। দুজনের ২০৫ রানের জুটি গড়ে তোলে ইনিংসের ভরকেন্দ্র।

গায়কোয়াড়ের ১০৫ রানের ইনিংস ছিল সৌন্দর্য এবং গতি দুইয়ের সমাহার। তিনি ৮৩ বলে এই সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন। অপরপ্রান্তে কোহলি ধীরস্থিরভাবে নিজের ছন্দ খুঁজে নিয়ে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৫৩তম ওয়ানডে শতরান। কেএল রাহুল এর পর সংযত ব্যাটিংয়ে ফিফটি তুলে নেন। শেষদিকে রবীন্দ্র জাদেজা প্রয়োজনীয় আগ্রাসনে ভারতের সংগ্রহ সাড়ে তিনশো পাইয়ে দেন। তবে ভারতের প্রত্যাশার তুলনায় শেষ পাঁচ ওভার ছিল কিছুটা কম উজ্জ্বল। তাইও গায়কোয়াড় এবং কোহলির ব্যাটিং ভারতকে চ্যালেঞ্জিং ৩৫৯ রানে পৌঁছে দেয়।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ছিল নড়বড়ে। কুইন্টন ডি কক মাত্র ২৬ রানের মাথায় আরশদীপ সিংহের শিকারে ফিরেন সাজঘরে। তবে এরপর টিকে যান অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা এবং আইডেন মার্করাম। দুজন মিলে ইনিংসকে সঠিক পথে ফেরান। বাভুমার ৪৬ রানের ইনিংস ছিল স্থির এবং নিয়ন্ত্রিত। যদিও মার্করামের সেঞ্চুরি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার রান তাড়ায় প্রধান ভিত্তি। জয়সওয়ালের হাতে ক্যাচ ছাড়ার সুযোগের পর তিনি ইনিংসের সুর পাল্টে দেন। ৮৯ বলে তিনি ১১০ রানের ইনিংস খেলে ভারতীয় বোলিংকে চাপে ফেলেন।

মার্করাম আউট হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ আর ছাড়েনি। ম্যাথু ব্রেটজকে পরিণত ব্যাটিংয়ে অর্ধশতক করেন এবং ডিউয়াল্ড ব্রেভিস ত্রিশোর্ধ্ব বয়সের অভিজ্ঞ ব্যাটারদের মতো আক্রমণাত্মক এবং আগ্রাসী। ব্রেভিস মাত্র ৩৪ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন যেখানে ছিল চারটি ছক্কা এবং পাঁচটি চার। তাঁর আক্রমণ ভারতীয় বোলারদের পরিকল্পনা পুরোপুরি ভেঙে দেয়। শেষদিকে ইয়ানসেন দ্রুত আউট হলেও করবিন বশ এবং কেশব মহারাজ প্রোটিয়াদের প্রয়োজনীয় রান এনে দলের জয় নিশ্চিত করেন।

এই রান তাড়াটি দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে তৃতীয় সফল তিনশো পঞ্চাশের বেশি রান তাড়া। ভারতের বিপক্ষে এটি যৌথ সর্বোচ্চ সফল লক্ষ্য তাড়া। আরও একটি মজার পরিসংখ্যান হলো এই ম্যাচে তিনটি শতরান দেখা গেছে। কোহলি, গায়কোয়াড় এবং মার্করাম। ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়ানডেতে এটি মাত্র তৃতীয়বার ঘটল। দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ে মাঠে সোজা ব্যাটে রান তোলার দক্ষতা বড় ভূমিকা রেখেছে। তাদের মোট রানের প্রায় ৪২ শতাংশ এসেছে এই অঞ্চল থেকে।

ভারতীয় বোলিং আবারও ডেথ ওভার এবং লেন্থ নির্বাচনে দুর্বলতার ছাপ রাখল। আরশদীপ এবং প্রসিদ্ধ ক্রিশ্ণারা শুরুতে ছন্দ পেলেও শেষভাগে ধার কমে যায়। স্পিনাররাও ডিউ এর কারণে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেননি। ফিল্ডিংয়ের ভুল ম্যাচে যে বড় প্রভাব ফেলতে পারে জয়সওয়ালের ক্যাচ মিস এই সত্যটি আবার মনে করিয়ে দিল।

সিরিজে এখন দুদলে সমানে সমান। রায়পুরে দক্ষিণ আফ্রিকা যেভাবে নিজেদের ব্যাটিং সক্ষমতা তুলে ধরেছে তা ভারতের জন্য পরবর্তী ম্যাচে কঠিন চ্যালেঞ্জের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশাখাপত্তনমে সিরিজ নির্ধারক লড়াই তাই দুই দলের মানসিক শক্তি এবং কৌশলগত ধারাবাহিকতার পরীক্ষা হয়ে উঠবে।