বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের চমক, পরিসংখ্যান বলছে পরিবর্তনের গল্প

৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল

প্রকাশ: 1 ঘন্টা আগে আপডেট: 3 মিনিট আগে
বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের চমক, পরিসংখ্যান বলছে পরিবর্তনের গল্প

বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের চমক, পরিসংখ্যান বলছে পরিবর্তনের গল্প

বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের চমক, পরিসংখ্যান বলছে পরিবর্তনের গল্প

বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সদ্য শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি সিরিজে নজরকাড়া পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। ধারাবাহিক রান ও গুরুত্বপূর্ণ উইকেটের মাধ্যমে তারা র‍্যাঙ্কিংয়ে বড় লাফ দিয়েছেন। পারভেজ হোসেন, তাওহিদ হৃদয় ও মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে দলীয় আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি পেয়েছে। আইসিসি র‍্যাঙ্কিংয়ে এই অগ্রগতি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান শক্তিরই প্রতিফলন।

প্রথমেই আসা যাক ব্যাটিং বিভাগে। দীর্ঘদিন ধরে নতুন ওপেনার খুঁজছে বাংলাদেশ দল। সেই জায়গায় পারভেজ হোসেন ইমনের উঠে আসা কেবল পরিসংখ্যানগত উন্নতি নয়, বরং ভবিষ্যতের সম্ভাবনার একটি ইতিবাচক নিদর্শন। তিন ইনিংসে ৭৭ রান সংখ্যায় খুব বড় না হলেও প্রেক্ষাপট অনুসারে গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত স্ট্রাইক রোটেশন, পাওয়ারপ্লেতে নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন এবং শেষ দিকে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং, যা তাঁকে র‍্যাঙ্কিংয়ে এক লাফে ২১ ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। ৩৮তম অবস্থান তাঁর আন্তর্জাতিক যাত্রায় প্রথম বড় মাইলফলক।

তাওহিদ হৃদয়ও বাংলাদেশের ব্যাটিং অস্থিতিশীলতার সময়ে ভরসার আরেক নাম হয়ে উঠছেন। মাত্র দুই ইনিংসে দলের সর্বোচ্চ ৮৯ রান তাঁর র‌্যাঙ্কিংয়ে ৫ ধাপ উন্নতির কারণ। তাঁর ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে খেলা। র‍্যাঙ্কিং উন্নতির পেছনে তাই কেবল রান নয়, রয়েছে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিপক্বতা।

বোলিং বিভাগে বাংলাদেশের পরিবর্তনটা আরও স্পষ্ট। মোস্তাফিজুর রহমানের র‍্যাঙ্কিং উন্নতি (১০ম থেকে ৮ম) যতটা ব্যক্তিগত পুনরুত্থানের গল্প, ততটাই দলের কৌশলগত সমর্থনের প্রতিফলন। ডেথ-ওভারে তাঁর কাটার এবং ভ্যারিয়েশন এখনো প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি, আর সেই ধারাবাহিকতা র‍্যাঙ্কিংয়েও জায়গা করে নিয়েছেন।

স্পিন বিভাগে বাংলাদেশের বড় শক্তি দীর্ঘদিন ধরেই স্পিনারদের বৈচিত্র্য। মেহেদী হাসানের ৩ ধাপ অগ্রগতি (১৪তম স্থান) তাঁর ইকোনমি রেট ও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নেওয়ার দক্ষতাকে তুলে ধরে। রিশাদ হোসেনের উন্নতি আরও তাৎপর্যপূর্ণ, রিশাদের ৫ ধাপ লাফিয়ে ১৯তম স্থানে উঠে আসা দেখায় যে লেগ স্পিনারের ঘাটতি কাটাতে বাংলাদেশ সঠিক দিকেই এগোচ্ছে। নাসুম আহমেদেরও ৫ ধাপ উন্নতি (২৫তম) প্রমাণ করছে যে স্পিন আক্রমণে এখন তিনটি ভিন্ন স্টাইলের বোলার দলের শক্তি।

এই র‍্যাঙ্কিং বিশ্লেষণ ক্রিকেটবিশ্লেষকদের কাছে একটি বড় প্রশ্নও ছুঁড়ে দেয় যে, টি–টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের ধারাবাহিকতার অভাব কি এখনো সমস্যা, নাকি নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটাররা সেই ব্যবধান ধীরে ধীরে কমিয়ে আনছেন? সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে—অগ্রগতি দৃশ্যমান, তবে ধরে রাখতে হলে সামনের সিরিজগুলোতে আরও স্থিতিশীল ধারাবাহিকতা প্রয়োজন।

বিশ্বের অন্যান্য দলের ক্রিকেটাররাও সাম্প্রতিক সিরিজে র‍্যাঙ্কিংয়ে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছেন। ভারতের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে দুর্দান্ত ইনিংস খেলার পর বিরাট কোহলি র‍্যাঙ্কিংয়ে এক ধাপ এগিয়ে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছেন। তার রেটিং পয়েন্ট ৭৫১, যা শীর্ষে থাকা রোহিত শর্মার চেয়ে মাত্র ৩২ পয়েন্ট কম। পাকিস্তানের ত্রিদেশীয় টি–টোয়েন্টি সিরিজে চমৎকার পারফরম্যান্স করে সাইম আয়ুব আবারও টি–টোয়েন্টি অলরাউন্ডারদের র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করেছেন। একইভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার মার্কো ইয়ানসেন ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে পাঁচ ধাপ লাফিয়ে টেস্ট বোলারদের তালিকায় পঞ্চম স্থানে পৌঁছেছেন, আর স্পিনার সাইমন হারমার ১৩ ধাপ উন্নতি করে ১১তম স্থানে উঠে এসেছেন। এই উন্নতি দেখাচ্ছে যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের প্রতিফলন র‍্যাঙ্কিংয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।

তবে এটুকু নিশ্চিত, বাংলাদেশ দলের টি–টোয়েন্টি র‍্যাঙ্কিং উন্নতি কেবল তালিকার সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয়; এটি পরিবর্তনের আভাস, আত্মবিশ্বাসের সঞ্চার এবং ভবিষ্যতে আরও বড় সাফল্যের সম্ভাবনার বার্তা।