তানজিদ-ইমন: পুরনো বন্ধুত্বের ছায়ায় ছক্কার নতুন রেকর্ড
৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল
প্রকাশ: 8 ঘন্টা আগেআপডেট: 5 মিনিট আগে- 1
চলে যাচ্ছেন উড, ব্যাটিং দেখভালের দায়িত্বে সালাউদ্দিন
- 2
সাইফ হাসান: টেস্ট ওপেনার থেকে টি-টোয়েন্টি অলরাউন্ডার, ফিরে আসার গল্পে আছেন এক কোচ
- 3
নাসুম স্কোয়াডে থেকেও একাদশে না থাকাটা পরিকল্পনারই অংশ: সালাউদ্দিন
- 4
সাকিবের ঝলক, তবে জয়ের মঞ্চে সেইফার্টের দাপট
- 5
সিলেটে নাসুমের স্পিন ঘূর্ণিতে সিরিজ নিশ্চিত করল বাংলাদেশ

তানজিদ-ইমন: পুরনো বন্ধুত্বের ছায়ায় ছক্কার নতুন রেকর্ড
তানজিদ-ইমন: পুরনো বন্ধুত্বের ছায়ায় ছক্কার নতুন রেকর্ড
যুব দলের সেই বন্ধুত্ব, বিশ্বকাপ জয়ের স্মৃতি, সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে যেন নতুন দিনের গল্প লিখছেন তানজিদ হাসান তামিম ও পারভেজ হোসেন ইমন। বয়সভিত্তিক দলে একসঙ্গে পথচলা শুরু, ২০২০ সালের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ে উদ্বোধনী জুটিতে নেতৃত্ব দেওয়া। সব স্মৃতি পেছনে ফেলে এখন জাতীয় দলের জার্সিতে নতুন ছন্দে ফিরেছেন দুই ওপেনার।
সেই পুরনো বোঝাপড়া, এখন আরেক রূপে ফুটে উঠছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। সিলেটে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের জয়ে বড় অবদান ছিল তানজিদ-ইমন জুটির। ১০৪ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়ায় দুজন মিলে দলকে এনে দেন ৯ উইকেটের জয় এবং এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।
আর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এই ম্যাচে তানজিদ ও পারভেজ - এর ওপেনিং জুটিতেই গড়ে উঠল ছক্কার নতুন এক রেকর্ড। ৪০ রানের উদ্বোধনী জুটিতে ছিল না অতিরিক্ত ঝুঁকি, ছিল না আলাদা পরিকল্পনায় সাজানো ছক্কার খেলা। তবু দুজন মিলে গড়েছেন বাংলাদেশের ওপেনিং জুটিতে সবচেয়ে বেশি ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ড।
এই সিরিজে পারভেজ ও তানজিদ মিলে গড়েছেন নতুন রেকর্ড। ২০২৫ সালে বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওপেনিং জুটিতে দুজনে মিলে সর্বোচ্চ ৪৫ ছক্কা হাঁকানোর নতুন রেকর্ড গড়েছেন। ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ছক্কার মালিক তানজিদ হাসান তামিম। ১৩ ইনিংসে তার ছক্কার সংখ্যা ২৩টি, যা এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
তবে তার খুব কাছেই রয়েছেন আরেক ওপেনার পারভেজ ইমন। ১২ ইনিংসে তার ছক্কার সংখ্যা ২২টি। ফলে বছরজুড়ে এই দুই ওপেনারের মধ্যে ছক্কার রাজত্ব নিয়ে হতে পারে দারুণ প্রতিযোগিতা।
তানজিদ ম্যাচশেষে জানালেন, “ছক্কা মারার কোনো আলাদা পরিকল্পনা ছিল না। আমরা শুধু সাধারণভাবে খেলেছি, উইকেট যেমন আচরণ করছিল সেভাবেই ব্যাট করেছি। দুজনের বোঝাপড়া অনেক ভালো, এই আত্মবিশ্বাস থেকেই বড় জুটি আসে।”
তানজিদের কথায় স্পষ্ট যে, ছক্কা হাঁকানোর জন্য তাদের মধ্যে কোনো আলাদা পরিকল্পনা থাকে না। বরং দুজনের বোঝাপড়াই মূল চালিকা শক্তি। বয়সভিত্তিক দল থেকে একসঙ্গে খেলা শুরু করেছিলেন তারা। সেই ধারাবাহিকতায় জাতীয় দলের হয়েও গড়ে তুলেছেন কার্যকরী জুটি।
“আমি আর ইমন সাধারণভাবেই স্বাভাবিক ব্যাটিং করি। উইকেট যেমন আচরণ করে, সেভাবেই খেলার চেষ্টা করি। দুজনের মধ্যে যোগাযোগ ও বুঝাপড়া ভালো, উদ্দেশ্য স্পষ্ট থাকে, এটাই ভালো ইনিংস গড়ার মূল বিষয়,” বলেন তানজিদ।
ব্যক্তিগতভাবে তানজিদ খেলেছেন ৪০ বলে ৫৪ রানের এক ঝকঝকে ইনিংস, যেখানে ছিল ৪টি চার ও ২টি ছক্কা। শুরুতে ইমনের সঙ্গে ৪০ রানের জুটি, এরপর অধিনায়ক লিটন দাসকে সঙ্গে নিয়ে গড়েন আরও ৬৪ রানের অবিচ্ছিন্ন পার্টনারশিপ। এই ইনিংস শুধু দলের জয়কেই নিশ্চিত করেনি, বরং তানজিদের ব্যাটিংয়ের পরিণতিতে মিলেছে ভবিষ্যতের আশা।
অতীত নিয়ে খুব একটা ভাবেন না, প্রতিটি ম্যাচ নতুন করে শুরু করেন তিনি। তানজিদ নিজের ব্যাটিং নিয়ে বলেন, মোমেন্টামের চেয়ে পরিস্থিতি বুঝে খেলার ওপরই তার ভরসা।
তানজিদ আরো বলেন, “প্রত্যেকটা ম্যাচ আমি নতুন করে শুরু করি। উইকেট কেমন আচরণ করছে সেটা বুঝে খেলি। আজ কিছুটা টার্ন ছিল, বাউন্সও ছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলেছি, সফল হয়েছি।”
সিরিজের আগে দীর্ঘ প্রস্তুতির সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ দল। তানজিদের ভাষায়, “সিলেটের কন্ডিশনে আমরা অনেক সময় কাটিয়েছি, ভালোভাবে প্র্যাকটিস করেছি। কে কখন পারফর্ম করবে, সেটা ভাবা নয়, উইকেট বুঝে খেলা এবং জয়ের কম্বিনেশন ধরে রাখাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
নিজেকে পাওয়ার হিটার না ভাবলেও, জুলিয়ান উডের সঙ্গে পাওয়ার হিটিংয়ে উন্নতির জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করছেন তানজিদ।
পাওয়ার হিটিং প্রসঙ্গে এই ওপেনার বলেন, “আমি যে ধরনের ব্যাটার, আমার জন্য হার্ড হিটিং একটু কঠিন। জুলিয়ান উডের সঙ্গে কথা হচ্ছে, কীভাবে ব্যালান্স রেখে ভালো শেপে শট খেলতে পারি, তা নিয়ে কাজ করছি।” তিনি আরও জানান, উডের কাজ থেকে দলের অনেক ব্যাটার ইতিবাচক ফল পাচ্ছেন।
তানজিদ-ইমন জুটি শুধু ভালো পারফরম্যান্সই নয়, বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ওপেনিংয়ে এক নতুন আশা জাগাচ্ছে। যেখানে রয়েছে মাঠের বাইরের বন্ধুত্ব, ভিতরের বোঝাপড়া, আর পরিণত মানসিকতা।
সেই পুরনো বন্ধুত্বেই তৈরি হচ্ছে নতুন দিনের রেকর্ড।