Image

উত্তাপ, অনীহা, অতঃপর পাকিস্তানের ৪১ রানের স্বস্তির জয়

৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল

প্রকাশ: 1 ঘন্টা আগেআপডেট: 2 মিনিট আগে
উত্তাপ, অনীহা, অতঃপর পাকিস্তানের ৪১ রানের স্বস্তির জয়

উত্তাপ, অনীহা, অতঃপর পাকিস্তানের ৪১ রানের স্বস্তির জয়

উত্তাপ, অনীহা, অতঃপর পাকিস্তানের ৪১ রানের স্বস্তির জয়

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা। সেই উত্তাপ যেমন মাঠের খেলায় থাকে, তেমনি ছড়িয়ে পড়ে দুই দেশের রাজনৈতিক বলয়ে। সর্বশেষ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পর এমনই এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্ম হয়, যেখানে ম্যাচ শেষে দুই দলের অধিনায়কের মধ্যে দেখা যায়নি প্রচলিত হ্যান্ডশেক। ঘটনাস্থল ছিল দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। সেই ঘটনার রেশ ছড়ায় পাকিস্তানের পরবর্তী ম্যাচেও—যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই ম্যাচে খেলতে নামা নিয়েও দেখা যায় নাটকীয়তা; পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দিনভর চলতে থাকে অনীহা ও টালবাহানা। অবশেষে নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর ম্যাচটি শুরু হয়।


সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামা নিয়ে নাটকীয়তা শেষে ব্যাটে-বলের লড়াইয়ে ফখর জামানের ৫০ ও শাহিন-হারিস-আবরারের যৌথ বোলিংয়ে আমিরাতকে ৪১ রানে হারিয়ে স্বস্তির জয় পায় সালমান আঘার দল।


তবে মাঠের খেলায় শুরুতে সে উত্তাপ ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় পাকিস্তান। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে তারা। দুই ওপেনার সাইম আইয়ুব ও সাহিবজাদা ফারহান দলীয় দশ রান পূরণের আগেই ফিরে যান যথাক্রমে শূন্য ও পাঁচ রানে। এরপর অধিনায়ক সালমান আঘা এবং ফখর জামান ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন। দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে ৬১ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি। কিন্তু এই জুটিও বেশি বড় হতে দেয়নি আমিরাতের বোলিং আক্রমণ। দলীয় ৭০ রানে ধ্রুব পরশরের শিকার হয়ে ২০ রানে ফিরেন পাকিস্তান অধিনায়ক।


ইনিংসের হাল ধরার চেষ্টা চালিয়ে যান ফখর জামান। দলের বিপর্যয়ের মধ্যে একপ্রান্ত আগলে রেখে তিনি খেলেন ৫০ রানের দারুণ একটি ইনিংস, যা আসে ৩৬ বলে। তার এই ইনিংসেই কিছুটা স্বস্তি পায় পাকিস্তান। তবে ফখরের ব্যাটে পাওয়া সেই ছন্দে বাকিরা সাড়া দিতে পারেননি। দলীয় ৮৬ রানে ফখরকে ফিরিয়ে দেন সিমরানজিত সিং। একই ওভারের চতুর্থ বলে তিনি হাসান নওয়াজকেও ফিরিয়ে দেন মাত্র তিন রানে। এরপর ইনিংসের ১৬তম ওভারে আবার আঘাত হানেন সিমরানজিত; এবার তার শিকার হন খুশদিল শাহ, যিনি ফিরেন মাত্র চার রানে। সাত বলের ব্যবধানে তিনটি উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান আরও বড় চাপে পড়ে যায়।


সিমরানজিতের পরে আঘাত হানেন জুনাইদ সিদ্দিকী। শুরুতেই দুই ওপেনারকে সাজঘরে ফেরানো এই ডানহাতি পেসার তার দ্বিতীয় স্পেলে আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠেন। মোহাম্মদ হারিস (১৮) ও মোহাম্মদ নওয়াজ (৪)। এই দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটারকে ফেরান তিনি। পাকিস্তানের ব্যাটিং ইনিংসে শেষ পর্যন্ত কিছুটা লড়াই করে যান শাহিন শাহ আফ্রিদি। মাত্র ১৪ বলে ২৯ রানের একটি ঝোড়ো ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি। নির্ধারিত ২০ ওভারে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৯ উইকেটে ১৪৬ রান।


বল হাতে আমিরাতের হয়ে সবচেয়ে সফল ছিলেন জুনাইদ সিদ্দিকী। ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান খরচায় তিনি নেন ৪টি উইকেট। সিমরানজিত সিং ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে নেন ৩টি উইকেট, আর ধ্রুব পরশর পান একটি উইকেট।


১৪৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে আমিরাতের শুরুটাও হয় টালমাটাল। ওপেনার আলিশান শারফু ১২ রান করে শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে আউট হন। অপর ওপেনার মোহাম্মদ ওয়াসিমকে ফেরান আবরার আহমেদ, যিনি করেন ১৪ রান। এরপর সাইম আইয়ুব সরাসরি বোল্ড করে ফেরান তিনে নামা মুহাম্মদ জুহাইবকে, যিনি ফেরেন মাত্র ৪ রানে।


এই বিপর্যয়ের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফেরান রাহুল চোপড়া ও ধ্রুব পরশর। তাদের চতুর্থ উইকেট জুটিতে আসে ৪৮ রান। কিন্তু এই জুটিও বেশিদূর এগোতে পারেনি। দলীয় ৮৫ রানে ধ্রুবকে ফিরিয়ে দেন হারিস রউফ। এরপর ধসে পড়ে আমিরাতের ব্যাটিং লাইনআপ। পাঁচে নামা আসিফ খান শূন্য রানে আউট হন আবরার আহমেদের বলে। এরপর থিতু হওয়া রাহুল চোপড়াকে ফেরান পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আঘা। রাহুলের ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ৩৫ রান।


এরপর উইকেটের মিছিল থামেনি। হারশিত কৌশিক শূন্য রানে শাহিনের বলে ফিরলে ইনিংস দ্রুত গুটিয়ে যাওয়ার আভাস মেলে। সিমরানজিত সিং রান আউটে কাটা পড়েন মাত্র ১ রানে। ইনিংসের ১৮তম ওভারের তৃতীয় বলে হায়দার আলিকে (৬) ফিরিয়ে দেন হারিস রউফ। চতুর্থ বলে রান আউট হন শেষ ব্যাটার মুহাম্মদ রহিদ। এতে করে ১৭.৪ ওভারে ১০৫ রানে থেমে যায় আমিরাতের ইনিংস। পাকিস্তান পায় ৪১ রানের এক স্বস্তিদায়ক জয়।

পাকিস্তানের হয়ে সমান দুইটি করে উইকেট শিকার করেন শাহিন শাহ আফ্রিদি, আবরার আহমেদ ও হারিস রউফ। সালমান আঘা ও সাইম আইয়ুব একটি করে উইকেট দখল করেন।


তবে এই ম্যাচের বাইরেও এক আলোচিত ঘটনা ছিল পাকিস্তানের মাঠে নামা নিয়ে নাটকীয়তা। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পর হ্যান্ডশেক ইস্যুতে পাকিস্তান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। তারা অভিযোগ করে, ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটই দুই দলের অধিনায়ককে হ্যান্ডশেক করতে নিষেধ করেছিলেন। এই ঘটনার রেশ পড়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচেও। কারণ, একই রেফারিকে আবারও দায়িত্বে রাখা হয়। ফলে পাকিস্তান আপত্তি জানায় এবং ম্যাচে খেলতে কিছুটা বিলম্ব করে।


পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) এক বিবৃতিতে জানায়, আইসিসির বিতর্কিত ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফট পাকিস্তান দলের ম্যানেজার ও অধিনায়কের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে দুই অধিনায়ককে হাত মেলাতে নিষেধ করেছিলেন পাইক্রফট। তার এই সিদ্ধান্তে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল পিসিবি। পরে পাইক্রফট ১৪ সেপ্টেম্বরের ঘটনাকে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হিসেবে উল্লেখ করে ক্ষমা চান এবং আইসিসি আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে।
 

Details Bottom
Details ad One
Details Two
Details Three