যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে আবার জাতীয় দলের কোচিংয়ে সালাহউদ্দিন, বদলাবেন চিন্তার জগৎ
যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে আবার জাতীয় দলের কোচিংয়ে সালাহউদ্দিন, বদলাবেন চিন্তার জগৎ
যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে আবার জাতীয় দলের কোচিংয়ে সালাহউদ্দিন, বদলাবেন চিন্তার জগৎ
বিপিএল (বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ), ডিপিএল (ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ) এ অন্যতম সফল কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বাংলাদেশ দলের কোচিং স্টাফে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্ত হয়েছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনকে জাতীয় ক্রিকেট দলের সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে ১৫ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত নিয়োগ দিয়েছে।
এর আগে ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলের সহকারী কোচ এবং ফিল্ডিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। দুই দশকের বেশি সময় ধরে কোচিংয়ে যুক্ত থাকা সালাহউদ্দিন দ্বিতীয় মেয়াদে টাইগারদের সঙ্গে যুক্ত হবার জন্য উদবুদ্ধ হয়েছেন এক বিশেষ চ্যালেঞ্জ নিতে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দেশি কোচদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। বয়সভিত্তিক দল, এইচপি (হাই পারফরম্যান্স) ক্যাম্পে দেশি কোচ থাকলেও মূল দলে তেমন নেই। দেশি কোচদের প্রতি বিশ্বাস বাড়াতে, তাঁদের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজ করানোর পথ সুগম করার চ্যালেঞ্জ নিতেই নতুন করে আবার জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েছেন সালাহউদ্দিন।
বিসিবির অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, 'আমার এই নতুনভাবে আসার মূল কারণ হচ্ছে যেহেতু অনেকদিন ধরে শুনছি যে দেশি কোচদের একটা প্ল্যাটফর্ম বোর্ড করে দিবে। তো সেই পথটা আমি যদি তাঁদের দেখাতে পারি, সেটা যতদিনের জন্যই হোক। যে দেশি কোচরাও হয়ত এই জায়গায় ভালো করবে। তো পরবর্তীতে যেসব দেশি কোচ আসবে তাঁদের প্রতি বোর্ডের বিশ্বাস বাড়বে, মানুষের বিশ্বাস বাড়বে, সসেই সাথে কোচদের নিজেদেরও বিশ্বাস বাড়বে যে আমরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ভালো করতে পারি। আমি যদি এই বিশ্বাস আনতে পারি তাহলে পরবর্তী অনেকের পথ খোলা হয়ে যাবে। আমার কোচ সমাজের পথ দেখানোর বড় দায়িত্ব আমার ওপর পড়ে গেছে। সেটাকেই আমি চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছি যে আমি যদি ভালো করতে পারি তাহলে অনেকের পথ খুলে যাবে।'
বাংলাদেশ দলের কোচিং স্টাফে আবার যুক্ত হবার এটিই সঠিক সময় মনে করেছেন মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। তবে এই সিদ্ধান্ত নিতে তাঁকে উদবুদ্ধ করেছেন স্বয়ং বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ।
সালাহউদ্দিন বলেন, 'বেশ কিছুদিন ধরেই কথা হচ্ছিল। আমার মনে হয় আমার এই দায়িত্ব নেওয়ার পেছনে ফারুক ভাইয়ের অবদানটা বেশি। উনি আমাকে অনেকবার ডেকেছেন, বুঝিয়েছেন কেনো আমাদের লোকাল কোচ দরকার দলে। ফারুক ভাইয়েরই বড় অবদান, আমার যে ইচ্ছে ছিল না এমন না। অনেক কারণে আমি আসতে পারছিলাম না। তবে আমার মনে হয়েছে এখনই সেরা সময়, যখন আমি বাংলাদেশকে সার্ভিস দিতে পারব। আমার ইচ্ছা আছে এতদিনের যে কোচিং অভিজ্ঞতা তা বড় পরিসরে যেনো কাজে লাগাতে পারি। এতে যদি দেশের একটুও উপকার হয় তাহলে আমার কোচিং ক্যারিয়ারের শেষে খুব ভালো লাগবে। আগেও ৫ বছর আমি জাতীয় দলের সাথে ছিলাম। সেই সময় একটা জেনারেশনের সঙ্গে কাজ করেছি। সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ, মাশরাফির সাথে কাজ করেছি। পরবর্তী জেনারেশনকে যদি একটু হলেও আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে সাহায্য করতে পারি তাহলে ক্রিকেটার, দেশ সবার জন্যই লাভ হবে। মেন্টালি, টেকনিক্যালি, ট্যাকটিক্যালি যদি আমি সাহায্য করতে পারি তাহলে আমি খুশি হব।'
মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন মনে করেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের চিন্তার জগতে পরিবর্তন আনতে পারলে ভবিষ্যত ক্রিকেটাররা ছাড়িয়ে যাবে সাকিব, মুশফিক, তামিমদের গড়া লিগ্যাসিকে। আর তেমনটা হলেই কেবল বাংলাদেশ ক্রিকেট পরবর্তী পর্যায়ে যাবে।
সালাহউদ্দিন বলেন, 'দেখুন একজন কোচের কাজ হল ক্রিকেটারকে সঠিক পথ দেখানো। সে ট্রেনিং টা কীভাবে করবে। মাঠে খেলবে তো ছেলেরা। কোচ হিসাবে আমার বড় চ্যালেঞ্জ যে তাঁরা যেনো ভাবতে শিখে, তাঁরা যেনো চিন্তা করতে শিখে যে ভবিষ্যতে তাঁরা বিশ্ব ক্রিকেটকে ডমিনেট করবে। বয়সভিত্তিক, এইচপির কাউকে লক্ষ্যের কথা জিজ্ঞাসা করলেই বলবে যে জাতীয় দলে খেলতে চাই। আপনার লক্ষ্যটা স্থির হয়ে গেল। আপনি জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে গেলে এরপর লক্ষ্য কীভাবে সেট করবেন জানেন না। লক্ষ্য কীভাবে সেট করা উচিত, কীভাবে আরও বড় ক্রিকেটার হয়ে উঠতে নিজেকে মোটিভেট করা উচিত সেই ছোট ছোট কাজ যদি করা যায়... ড্রেসিংরুম, ড্রেসিংরুমের বাইরে কীভাবে চিন্তা করবে, চিন্তার জগতটাকে কীভাবে সমৃদ্ধ করা যায়। টেকনিক্যালি সবাই ই কম বেশি ভাল। একটু মানিয়ে নেওয়া, সময়ের সাথে মানিয়ে নেওয়া, ক্রিকেটের সাথে মানিয়ে নেওয়া, উইকেটের সাথে মানিয়ে নেওয়া- এসব ছোট ছোট বিষয়ে মানিয়ে নিতে পারলে তাঁদের ভবিষ্যত ভালো আছে। সাকিব, তামিম, মুশফিকরা আমাদের একটা পর্যায় অব্দি নিয়ে গেছে। এখন এই পর্যায়টা যদি আমরা না ভাঙতে পারি, তাহলে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি আমাদের ক্রিকেটটা আগায়নি। আমাদের পরবর্তী ক্রিকেটাররা যাতে তাঁদের চেয়ে বড় ক্রিকেটার হতে পারে, সেই কাজটা যদি আমরা করতে পারি। এটা যে খুব কঠিন কাজ তাও না।'