হঠাৎ উধাও ভারতীয় লিগের আয়োজকেরা, বিপাকে গেইল-পেরেরা, অংশ নেয়ার কথা হিল সাকিবেরও
৯৭ প্রতিবেদক: নাজিফা তাসনিম
প্রকাশ: 7 ঘন্টা আগে আপডেট: 1 সেকেন্ড আগে
হঠাৎ উধাও ভারতীয় লিগের আয়োজকেরা, বিপাকে গেইল-পেরেরা, অংশ নেয়ার কথা হিল সাকিবেরও
হঠাৎ উধাও ভারতীয় লিগের আয়োজকেরা, বিপাকে গেইল-পেরেরা, অংশ নেয়ার কথা হিল সাকিবেরও
ভূস্বর্গখ্যাত কাশ্মীরের ক্রিকেট মাঠ এবার আলোচনায়, তবে খেলার উত্তেজনায় নয় বরং বিশৃঙ্খলার গল্পে। ‘ইন্ডিয়ান হেভেনস প্রিমিয়ার লিগ’ (আইএইচপিএল) নামে আয়োজিত এই টুর্নামেন্ট পরিণত হয়েছে এক নাটকীয় কেলেঙ্কারিতে। ক্রিস গেইল, থিসারা পেরেরা, রিচার্ড লেভি থেকে শুরু করে বিশ্ব ক্রিকেটের নামকরা খেলোয়াড়দের অনেকেই পড়ে গেছেন মহাবিপাকে। হোটেলে রেখে আয়োজকেরা হঠাৎ শহর ছেড়ে পালিয়েছেন, বকেয়া বিলও পরিশোধ করা হয়নি কারও।
২৫ অক্টোবর জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আট দল নিয়ে শুরু হয়েছিল আইএইচপিএল, যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ৮ নভেম্বর। কিন্তু শনিবার সকালে খেলোয়াড়দের জানানো হয় “কারিগরি কারণে খেলা বাতিল।” পরদিন সকালে হোটেলে থাকা খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা জানতে পারেন, আয়োজকেরা আগের রাতেই শ্রীনগর ত্যাগ করেছেন।
হোটেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, আয়োজকদের কাছ থেকে কোনো বিল পায়নি তারা। তখন প্রায় ৪০ জন খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা হোটেলেই আটকে ছিলেন।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) কর্মকর্তা মেলিসা জুনিপার, যিনি টুর্নামেন্টে আম্পায়ারিং করতে গিয়েছিলেন, বলেন,
“আয়োজকেরা হোটেল থেকে পালিয়ে গেছেন। তাঁরা হোটেল, খেলোয়াড় বা আম্পায়ার কারও বিল পরিশোধ করেননি। আমরা হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতায় এসেছি যেন সবাই বেরিয়ে যেতে পারে।”
শ্রীনগরের যে হোটেলে খেলোয়াড়দের রাখা হয়েছিল, সেখানকার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “আয়োজকেরা ১০ দিন আগে খেলোয়াড়দের জন্য ১৫০টি কক্ষ চেয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, ক্রিস গেইলের মতো তারকার কারণে কাশ্মীরের পর্যটন উপকৃত হবে। কিন্তু রোববার সকালে দেখি তাঁরা উধাও হয়ে গেছেন। আমাদের বিলও দেননি। গেইলসহ কয়েকজন খেলোয়াড় শনিবারই হোটেল ছেড়ে চলে গেছেন।”
গেইল ছাড়াও টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার থিসারা পেরেরা, নিউজিল্যান্ডের জেসি রাইডার, দক্ষিণ আফ্রিকার রিচার্ড লেভি ও ওমানের আয়ান খান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টুর্নামেন্টের প্রচারণায় ব্যবহৃত পোস্টারগুলোতেও দেখা গেছে বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের বড় ছবি। গত ১৫ অক্টোবর আইএইচপিএলের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম পেজে প্রকাশিত ভিডিওতে তাঁকে “অংশ নেবেন” বলতে দেখা যায়, যদিও পরবর্তীতে তিনি খেলেছেন কি না নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার পারভেজ রসুল, যিনি এই লিগে খেলেছিলেন, বলেন, “কয়েকজন বিদেশি খেলোয়াড় হোটেলে আটকা পড়েছিলেন। পরে ব্রিটিশ হাইকমিশনের সহায়তায় তাঁরা বেরিয়ে যান। এক ইংলিশ আম্পায়ার হাইকমিশনে যোগাযোগ করেছিলেন।”
স্থানীয় এক ক্রিকেটার জানান, আয়োজকেরা হয়তো বুঝতেই পারেননি এমন একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে কত বড় বাজেট প্রয়োজন। শেষ মুহূর্তে স্পনসর সরে যাওয়ায় তৈরি হয় অর্থসংকট। তাঁর ভাষায়, “প্রথম দিন নির্ধারিত পোশাকও ছিল না, স্থানীয়ভাবে কিনে আনা হয়েছিল। কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গেও লিখিত চুক্তি করা হয়নি।”
টুর্নামেন্টটির আয়োজক ছিল ‘যুবা সোসাইটি মোহালি’, সহযোগিতায় ছিল জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর স্পোর্টস কাউন্সিল। কাউন্সিলের এক কর্মকর্তা জানান,
“আইএইচপিএল সভাপতি আশু দানি পুলিশের ছাড়পত্র ও মাঠ ব্যবহারের অনুমতি নিয়েছিলেন। তারা আমাদের টাকা দিয়েছে। সরকারের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা নেই। কেন লিগ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেল, আমরা জানি না।”
তবে সরকারি রেকর্ড বলছে, ২২ অক্টোবর বিভাগীয় কমিশনার অংশুল গার্গের সভাপতিত্বে আইএইচপিএল নিয়ে এক প্রস্তুতি সভা হয়েছিল, যেখানে অনুমান করা হয় বকশি স্টেডিয়ামে ২৫ থেকে ৩০ হাজার দর্শক উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু বাস্তবে দর্শক ছিল হাতেগোনা, টিকিটের দাম কমিয়েও সাড়া মেলেনি।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনারের মন্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
