Image

রোমাঞ্চকর জয়ে বাংলাদেশের সুপার ফোরের আশা

৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল

প্রকাশ: 2 ঘন্টা আগেআপডেট: 6 মিনিট আগে
রোমাঞ্চকর জয়ে বাংলাদেশের সুপার ফোরের আশা

রোমাঞ্চকর জয়ে বাংলাদেশের সুপার ফোরের আশা

রোমাঞ্চকর জয়ে বাংলাদেশের সুপার ফোরের আশা

আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক চরম উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ৮ রানের দুর্দান্ত জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তানজিদ হাসান তামিমের ব্যাটিং ঝলক, নাসুম-রিশাদ-মুস্তাফিজদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং এবং শেষ দিকে সাহসী ফিল্ডিংয়ে ভর করে টাইগাররা রক্ষা করেছে টুর্নামেন্টে টিকে থাকার সম্ভাবনা।


আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়াম, যেখানে খেলা দুই ম্যাচে এক জয়, আর এক হার। এশিয়া কাপের সুপার ফোর নিশ্চিত করতে তাই মঙ্গলবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের। বাঁচা-মরার এমন লড়াইয়ে টসে জিতে বহুল প্রত্যাশিত ব্যাটিং নেন টাইগার কাপ্তান লিটন দাস। তানজিদ হাসান তামিমের ফিফটিতে ১৫৪ রানের পুঁজি গড়ে নাসুম-রিশাদ-মুস্তাফিজুরের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে জমজমাট লড়াইয়ে ৮ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে সুপার ফোরের আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ।

টস জিতে ব্যাটিং—এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল ভক্ত-সমর্থকদের। তবে তা যেন মানতে পারছিলেন না লিটন দাস। বাংলাদেশের এই অধিনায়ক টস জিতলেই বেছে নিতেন বোলিং। এশিয়া কাপে নিজেদের বাঁচা-মরার ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অবশ্য টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেননি লিটন, তিনি এবার ব্যাটিংটাই বেছে নিয়েছেন।

টস জিতে ব্যাটিংয়ের খরা কাটিয়ে ব্যাট করতে নেমে তানজিদ হাসান তামিমের ফিফটিতে নির্ধারিত ২০ ওভারে পাঁচ উইকেটে ১৫৪ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ১৫৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নাসুম আহমেদ ও রিশাদ হোসেনের স্পিন ঘূর্ণিতে ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। বাঁহাতি স্পিনের ভেল্কিতে ২টি উইকেট নেন নাসুম, অন্যদিকে লেগ স্পিনের গুগলিতে রিশাদ তুলে নেন ২ উইকেট। মুস্তাফিজুর রহমান কাটারে আফগান ব্যাটারদের বিধ্বস্ত করে তুলে নেন তিন উইকেট।
বাংলাদেশের বোলারদের সামনে মাত্র ১৫৪ রানের মামুলি সংগ্রহ। এই রানে আফগানিস্তানকে থামিয়ে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সুপার ফোরের আশা বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এমন হিসাব-নিকাশের ম্যাচে টাইগার অধিনায়ক প্রথম ওভারেই ডেকে আনেন নাসুম আহমেদকে। বাংলাদেশের এই বাঁহাতি স্পিনার বল হাতে চমক দেখান—ইনিংসের প্রথম বলেই এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন সাদিকুল্লাহ আতালকে (০)। অফ স্টাম্পের উপর থেকে ভাসিয়ে করা ডেলিভারিটি সোজাসুজি ঢুকে যায় ব্যাট-প্যাড ফাঁকি দিয়ে; ব্যাটসম্যান বল বুঝতে না পেরে পেছনের প্যাডে আঘাত করে। আম্পায়ার কোনও দ্বিধা না করেই আঙুল তুললে আতালের বিদায় ঘটে ইনিংসের শুরুতেই।

নিজের তৃতীয় ওভারে এসে আবারও আফগান শিবিরে আঘাত হানেন নাসুম। এবারও এলবিডব্লিউতে কাবু আফগান ব্যাটার ইব্রাহিম জাদরান (৫)। বাঁচার জন্য ইব্রাহিম রিভিউ নেন, তবে শেষ রক্ষা হয়নি এই আফগান ব্যাটারের। বল স্টাম্প ছুঁয়ে যাচ্ছিল বলে আম্পায়ার্স কলেই ফিরতে হয় তাকে! এরপর রিশাদের বলে ফেরেন গুলবাদিন নাইব (১৬)।

রান তাড়ায় কিছুটা উইকেটে সাবলীল ছিলেন ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ, তবে তাঁকে উইকেটে থিতু হতে দেননি লেগ স্পিনার রিশাদ। ইনিংসের ১১তম ওভারে রিশাদের দ্বিতীয় বলে প্যাডল সুইপ খেলতে গিয়ে গুরবাজ ধরা পড়েন ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে। সেখানে বাউন্ডারি লাইনে দারুণ দক্ষতার সঙ্গে ক্যাচটি লুফে নেন জাকের আলি। ফলে ব্যক্তিগত ৩৫ রানে সাজঘরে ফেরেন গুরবাজ। ৩১ বলে সমানসংখ্যক ২ চার এবং ১ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান তিনি।
এরপর বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় আফগানিস্তান। ফলে রান তাড়ায় কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি আফগান ব্যাটাররা। মোহাম্মদ নাবীকে ব্যক্তিগত ১৫ রানে মুস্তাফিজুর রহমান ফেরালে আফগানরা ৭৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বসে।

তবে ছয়ে নামা আজমতুল্লাহ ওমরজাইয়ের ব্যাটে কিছুটা আশার আলো পায় আফগানিস্তান। মারমুখী ভঙ্গিতে খেলতে থাকা এই ব্যাটারকে বাংলাদেশের জয়ে বাধা হয়ে ওঠার আগেই প্যাভিলিয়নের পথ দেখান তাসকিন আহমেদ। তাসকিনের বলে ফুল শট খেলতে গিয়ে আজমতুল্লাহ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ধরা পড়েন সাইফের হাতে। আর তাতেই থামে আজমতুল্লাহর ১৬ বলে ৩০ রানের ঝড়ো ইনিংস। ৩ ছক্কা এবং ১ চারে এই রান করেন তিনি।

এরপর রশিদের ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল আফগানিস্তান, সেখানে তাঁকে ভালো সঙ্গ দিচ্ছিলেন করিম জান্নাত। কিন্তু ইনিংসের ১৮তম ওভারের প্রথম বলেই নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউটে কাটা পড়েন করিম (৬)। নাসুমের করা সেই ওভার থেকে ৪ রানের বেশি পায়নি আফগানরা।

শেষ ১২ বলে আফগানদের প্রয়োজন ছিল ২৭ রান। মুস্তাফিজের করা ইনিংসের ১৯তম ওভারের প্রথম বলে "নট লুকিং" শটে রশিদ হাঁকান চার। তবে পরের বলেই চিপ শটে সরাসরি বল চলে যায় তাসকিনের হাতে। আর তাতেই থামে রশিদের ১১ বলে ২০ রানের ইনিংস। সেই সঙ্গে আফগানদের জয়ের সুযোগ নেমে আসে শূন্যের কোটায়। শেষ ৬ বলে ২২ রানের লক্ষ্যে আফগানরা ২ ছক্কায় ১২ রানের বেশি নিতে পারেনি। শেষ বলে ছক্কার আশায় ব্যাট চালিয়ে নুর আহমেদ (১৪) ফিরেন তাসকিনের বলে। ফলে ১৪৬ রানে আফগানিস্তানকে গুঁড়িয়ে ৮ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে এশিয়া কাপে সুপার ফোরে খেলার আশা বেঁচে রইল টাইগারদের।
নাসুম ৪ ওভারে ১ মেডেনসহ ১১ রানে নেন ২ উইকেট। ৪ ওভারে ১৮ রানে রিশাদের শিকারও ২ উইকেট। শেষদিকে জোড়া আঘাতে মুস্তাফিজুরের ৪ ওভারে ২৮ রানে উইকেট সংখ্যা ৩। ৪ ওভারে ৩৩ রানে ২ উইকেট পান তাসকিন। ৩ ওভারে কোনো উইকেটের দেখা না পেলেও সাইফকে গুনতে হয়েছে ৩৮ রান।
একাদশে চার পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামা বাংলাদেশ দুই ওপেনারের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায়। পারভেজ হোসেন ইমনের পরিবর্তনে একাদশে ফেরা সাইফ হাসান ভালোই সঙ্গ দেন তানজিদ হাসান তামিমকে। তানজিদ একপ্রান্তে ছিলেন আগ্রাসী ভূমিকায়, অন্যপ্রান্তে সাইফ খেলেন রয়েসয়ে।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ৪ বাউন্ডারিতে ১৬ রান নেন তানজিদ। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে এএম গাজনফারের বলে দুই ছক্কায় পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশকে ৫৯ রানের সংগ্রহ এনে দেন তানজিদ, যার মধ্যে তার অবদান ১২ বলে ৩২ রান, ৪ বাউন্ডারি এবং ২ ছক্কা।

অন্যপ্রান্তে সাইফের অবদান ২৪ বলে ২৬ রান। আফগান স্পিন-পেস ঠিকঠাক সামাল দিয়ে এগুচ্ছিলেন টাইগার দুই ওপেনার। ইনিংসের সপ্তম ওভারে সাইফকে (৩০) সরাসরি বোল্ড আউটে সাজঘরে পাঠান আফগান লেগি রশিদ খান। সাজঘরে ফেরার আগে সাইফ ২৮ বলে ৩০ রানের ইনিংস সাজান, ২ চার এবং ১ ছক্কায়। ফলে ৬৩ রানে থামে সাইফ-তামিম ওপেনিং জুটি।

তিনে নামা টাইগার অধিনায়ক লিটন আফগানিস্তানের বিপক্ষে সুবিধা করতে পারেননি। নুর আহমেদের এলবিডব্লিউ ফাঁদে পড়ে লিটন ফিরেন মাত্র ৯ রান করে। ১১তম ওভারের প্রথম বলে লিটন প্যাডল সুইফ খেলতে গিয়ে ব্যর্থ হন; নুর আহমেদের বল গিয়ে আঘাত হানে তার প্যাডে। নুরের জোড়ালো আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রশিদ খান নেন রিভিউ, যা সফল হয় এবং লিটনকে ফেরত পাঠাতে হয়।

এরপর বাংলাদেশের রানের চাকা সচল রাখার দায়িত্ব পড়ে তামিমের কাঁধে, অন্যপ্রান্তে তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাটে ততটা ঝলকানি দেখা যায়নি। তামিম ঝড় তুলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু লিটনের বিদায়ের পর সেই ঝড় কিছুটা থেমে যায়। ১২ বলে ৩২ রান করা তামিম ফিফটি করেন ১৬ বলে। ফিফটির পর ইনিংস টেনে বড় করতে পারেননি, ১৩ ওভারের পঞ্চম বলে নুর আহমদকে লং অফের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন ইব্রাহিম জাদরানের হাতে। তামিমের বিদায়ে বাংলাদেশের ইনিংসে নামে বিষাদের সুর। সাইফ-তামিমের উড়ন্ত সূচনা ধরে রাখতে পারেননি হৃদয়, শামীম হোসাইন ও জাকের আলী।

মাঝের ওভারগুলোতে বাংলাদেশ ৪ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৬৪ রান তুলেছে, যেখানে হৃদয়ের ব্যাট থেকে এসেছে ২০ বলে ২৬ রান। শামীম বারবার রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েও বোল্ড হন রশিদের বলে। হৃদয় ফিরেন আজমতুল্লাহ ওমরাজাইয়ের বলে করিম জান্নাতের হাতে ক্যাচ দিয়ে।

শেষ দিকে জাকের-নুরুল হাসান সোহানের অবিচ্ছিন্ন ১১ বলে ১৫ রানের জুটিতে ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৫৪ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। জাকের অপরাজিত ছিলেন ১৩ বলে ১২ রানে, আর সোহানের ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ৬ বলে ১২ রান।

আফগানিস্তানের হয়ে ২টি করে উইকেট শিকার করেন রশিদ খান ও নুর আহমেদ। এছাড়া একটি উইকেট নেন আজমতুল্লাহ ওমরাজাই।
 

Details Bottom
Details ad One
Details Two
Details Three