টি-টোয়েন্টি মেজাজে টেস্ট মাইন্ডসেট: বিসিবিতে বুলবুলের ‘সৌম্য’ উত্তরণ

টি-টোয়েন্টি মেজাজে টেস্ট মাইন্ডসেট: বিসিবিতে বুলবুলের ‘সৌম্য’ উত্তরণ
টি-টোয়েন্টি মেজাজে টেস্ট মাইন্ডসেট: বিসিবিতে বুলবুলের ‘সৌম্য’ উত্তরণ
বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান, দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অংশ আমিনুল ইসলাম বুলবুল এবার বোর্ড কক্ষের গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে। দেশের ক্রিকেট প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দুতে তিনি বর্তমানে বিসিবির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, এবং এবার আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচালক পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে এ যাত্রা হঠাৎ শুরু হয়নি। একাধিক নাটকীয় মোড়, প্রশাসনিক পরিবর্তন এবং সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদের অপসারণের পরেই এই সুযোগ এসে যায় বুলবুলের কাঁধে।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) অনিয়মের অভিযোগ এনে পরিচালক ফারুক আহমেদের দায়িত্ব স্থগিত করে। বলা হচ্ছে, ফারুকের ‘ভুল’ ছিল, তিনি বিসিবির আসন্ন নির্বাচনে সভাপতি হতে চান, এমন ঘোষণা দিয়ে প্রস্তুতিও শুরু করেছিলেন। কিন্তু তা-ই যেন তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। সেই শুন্যতা পূরণে এনএসসি থেকে বুলবুলকে বোর্ডে পাঠানো হয়, যেখান থেকে পরিচালকদের ভোটে তিনি বোর্ড সভাপতির দায়িত্ব পান।
প্রথম দিন থেকেই বুলবুল ছিলেন সাবধানী। গণমাধ্যমের প্রশ্নে বেশ সতর্ক, নির্বাচন বা স্থায়ীভাবে বোর্ডে থাকার বিষয়ে সরাসরি কিছু বলেননি। বরং মজা করে বলেছিলেন, “আমি এখানে টি-টোয়েন্টি খেলতে এসেছি। লম্বা সময়ের কোনো ইচ্ছা নেই।”
যিনি বলেছিলেন টি-টোয়েন্টি খেলতে এসেছেন, সেই বুলবুলই এবার মাঠে নামছেন দীর্ঘ মেয়াদে বোর্ডে থাকার লক্ষ্যে। বিসিবি নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার একদিন পরই ক্রিকেট৯৭-এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি পরিচালক পদে নির্বাচনের সিদ্ধান্তের কথা জানান।
সাক্ষাৎকারে বুলবুল বলেন, “আমি নির্বাচন করব এবং পরিচালক হব ইনশাআল্লাহ। এরপর কী হবে, জানি না। কিন্তু যেসব কাজ সাফল্যের মুখ দেখেছে, সেগুলো অর্ধেক রেখে যেতে চাই না। বাংলাদেশের ক্রিকেট একটি স্বপ্নের জায়গা, এই স্বপ্নকে এগিয়ে নিতে চাই।”
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট কেবল খেলা নয়, এটি চাকরির বাজারে নতুন সুযোগ তৈরি করে, বৈদেশিক মুদ্রা আনে, পর্যটনের ক্ষেত্রেও বড় অবদান রাখে। এসব কারণেই তিনি নিজের কাজগুলো পূর্ণতা দিতে বোর্ডে থেকে যেতে চান।
বিসিবি সভাপতি হিসেবে প্রায় তিন মাসের বেশি সময় পার করেছেন বুলবুল। নিজের কাজের মূল্যায়নে নম্বর না দিলেও কাজের অগ্রগতিতে খুশি তিনি। বলেন, “আমি খুব খুশি যে কাজগুলো এগিয়ে যাচ্ছে। আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে। আরও ভালো লাগছে, কারণ এগুলো সামনে আরও ভালো করবে। আমরা শুধু খেলি না, দেশের উন্নয়নে ক্রিকেট ভূমিকা রাখছে।”
এনএসসি (জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ) থেকে নির্বাচিত হয়ে ফারুক আহমেদের জায়গায় এসেছেন বুলবুল। এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন আরও অনেক পরিচিত মুখ, এমন খবর ইতোমধ্যেই এসেছে। তবে কারা কারা নির্বাচনে আসছেন তা এখনো নিশ্চিত নন বুলবুল। সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেন, “যারা আসবেন, তাদের প্রতি অনেক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতা থাকবে।”
সাবেক অধিনায়ক, টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরির নায়ক, এবং ক্রিকেট প্রশাসনে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন সংগঠক হিসেবে বুলবুল নির্বাচনকে দেখছেন তার অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার সুযোগ হিসেবে। তবে সামনে রয়েছেন হাই-প্রোফাইল প্রতিদ্বন্দ্বী ফারুক আহমেদ এবং তামিম ইকবাল।
এখন দেখার বিষয়, পরিচালকের পদে তিনি জয়ী হতে পারেন কিনা এবং ভবিষ্যতে আবারও সভাপতি পদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান কি না। নির্বাচনের মাঠে টেস্ট মেজাজে খেললেও, লড়াইটা হতে যাচ্ছে একদম টি-টোয়েন্টি উত্তেজনাকর।