যে কারণে ৪০০ রান করেননি উইয়ান মুল্ডার

যে কারণে ৪০০ রান করেননি উইয়ান মুল্ডার
যে কারণে ৪০০ রান করেননি উইয়ান মুল্ডার
ক্রিকেটের ইতিহাসে ৪০০ রানের ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে হলে অনেক কিছুই একসাথে হতে হয় প্রতিভা, ধৈর্য, সময় এবং সুযোগ। দক্ষিণ আফ্রিকার উইয়ান মুল্ডার সবই পেয়েছিলেন। কিন্তু যখন ব্যাটে ৩৬৭ রান, তখন তিনি থামলেন ইচ্ছাকৃতভাবে। কারণ সামনে ছিলেন একজন কিংবদন্তি ব্রায়ান চার্লস লারা।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাট হাতে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন ২৭ বছর বয়সী এই ডানহাতি। দুই ইনিংসে করেছেন ১৪৭ ও অপরাজিত ৩৬৭ রান। আর দলীয় স্কোর ৬২৬-৫ হওয়া মাত্র মধ্যাহ্ন বিরতির পর ইনিংস ঘোষণা করে দেন। ফলে মাত্র ৩৩ রানের দূরত্বেই থেমে গেল টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত ইনিংস গড়ার স্বপ্ন।
মুল্ডার বলেন, "রেকর্ড লারারই থাকা উচিত। তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের প্রতীক। আমি নিজেও তার ব্যাটিং দেখে বড় হয়েছি। ওনার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই আমি থেমে গেছি।"
এই সিদ্ধান্তে পূর্ণ সমর্থন ছিল দলের কোচ শুকরি কনরাডেরও। তিনি নাকি মুল্ডারকে বলেছিলেন, "সব রেকর্ড ভাঙার জন্য না। কিছু রেকর্ড কিংবদন্তিদের থাকলেই ভালো দেখায়।"
মুল্ডারের ৩৬৭ এখন টেস্ট ইতিহাসে পঞ্চম সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস, আর দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড়। এর আগে প্রোটিয়াদের হয়ে একমাত্র ট্রিপল সেঞ্চুরি ছিল হাশিম আমলার, ২০১২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ৩১১ রান।
এই ইনিংসে ছিল নাটকীয়তা। ২৪৭ রানে তানাকা চিভাঙ্গার বলে বোল্ড হন মুল্ডার, কিন্তু রিপ্লেতে ধরা পড়ে বলটি ছিল নো। জীবন পেয়ে আবারও শেকড় গেড়ে খেলেন মাটির নিচে, যেন প্রাচীন বটগাছ। এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছায়া দিচ্ছিলেন সতীর্থদেরও।
লারার ৪০০ রানের ইনিংস এসেছিল ২০০৪ সালে, তারও আগে ছিল ৩৭৫। একবার ম্যাথু হেইডেন লারাকে পেছনে ফেললেও, তিনি আবার ফিরে এসে ইতিহাস নিজের করে নেন। সেই রেকর্ড বহু বছর অক্ষত, আর মুল্ডার নিজেই চাইলেন সেটা থাকুক সেভাবেই।
সময় ছিল, পরিস্থিতিও। টেস্টে তখনও চার দিনের খেলা বাকি। কিন্তু ইতিহাস গড়ার মোহে পড়ে দলকে ঝুঁকিতে ফেলতে চাননি এই দক্ষিণ আফ্রিকান।
একটা রেকর্ড হয়তো পেলেন না মুল্ডার, কিন্তু খেলাটির প্রতি শ্রদ্ধা, নেতৃত্বের বোঝাপড়া এবং আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত গড়ে ক্রিকেট ইতিহাসেই জায়গা করে নিলেন তিনি।
ক্রিকেট শুধু পরিসংখ্যানের খেলা নয়, খেলোয়াড়ের চরিত্রই গড়ে তোলে ইতিহাস যেখানে উইয়ান মুল্ডার এখন নিজেই একটি অধ্যায়।