ক্রিকেট উন্নয়নে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার বিকল্প নেই- রাজিন সালেহ
৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল
প্রকাশ : 1 মাস আগেআপডেট: 1 সেকেন্ড আগেক্রিকেট উন্নয়নে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার বিকল্প নেই- রাজিন সালেহ
ক্রিকেট উন্নয়নে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার বিকল্প নেই- রাজিন সালেহ
গেল ৫ আগস্টের পর থেকে ক্ষমতার পালাবদলে দেশে লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া। সেই পরিবর্তনের ছোঁয়াটা প্রথম পড়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেওয়ার পর ক্রীড়াঙ্গনের প্রথম বাক বদল হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে। নতুন সভাপতি ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে ক্রিকেটের উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে বিসিবি। তার অংশ হিসেবে এবার জাতীয় ক্রিকেট লিগে চারদিনের ম্যাচের পাশাপাশি এবার যুক্ত হয়েছে টি-টোয়েন্টিও।
সেই পরিবর্তনে আচ কিছুটা লেগেছে সিলেট বিভাগীয় ক্রিকেট দলেও। মোটাদাগে কোনো পরিবর্তন না আসলেও এবার সিলেট দলের ম্যানেজমেন্টে এসেছে বদল। দীর্ঘ সাত বছর পর ফরহাদ কোরেশীর জায়গায় সিলেট বিভাগীয় দলের ম্যানেজার হয়েছেন আলী ওয়াসিকুজ্জামান ওনি। আর প্রধান কোচের দায়িত্বে আছেন অভিজ্ঞ রাজিন সালেহ।
রাজিন-ওনি জুটিতে প্রায় দিন বিশেক ধরে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুশীলন করছেন রাহাতুল ফেরদৌস জাভেদ ও আবু জায়েদ রাহিরা। লম্বা সময় ধরে অনুশীলন করার মূল কারণ সামনে ২৬তম জাতীয় ক্রিকেট লিগ। ১৯ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া জাতীয় ক্রিকেট লিগে ভাল করার প্রত্যয়েই নিজেদের প্রস্তুত করছেন সিলেট দলের ক্রিকেটাররা।
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে ক্রীড়াঙ্গনে পরিবর্তনে নতুনত্ব আসলেও সিলেটের ম্যানেজমেন্টকে নতুন করে খুঁজতে হচ্ছে পুরোনো প্রশ্নের উত্তর। ‘ধার করা ব্যাটার নিয়ে আর কত খেলবে সিলেট?’
সিলেটের ধার করা ব্যাটার নিয়ে খেলার শুরুটা হয় রাজিন সালেহ অবসরে গেলে, আর তা প্রকট আকার ধারণ করে অলক কাপালি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে বিদায় জানালে। বিশেষ করে জাকির হাসান ও জাকের আলি অনিক জাতীয় দায়িত্ব পালনে গেলেই ব্যাটার ধার করতে হয় সিলেটকে।
গেল চার মৌসুম ধরেই ব্যাটার ধার করেই খেলছে সিলেট। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়, সিলেটের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া অমিত হাসানের সাথে এবার সিলেট শিবিরে যোগ দিয়েছেন পিনাক ঘোষ ও মাইশুকুর রহমান রিয়েল।
‘ধার করা ব্যাটার নিয়ে আর কত খেলবে সিলেট?’
এমন প্রশ্নের সোজাসাপটা উত্তর নেই সিলেটের কোচ রাজিন সালেহ কাছে। এমন প্রশ্নটা বিগত ম্যানেজমেন্টের কাছেই করার কথাই বললেন রাজিন। সিলেটের প্রধান কোচের ভাষ্যমতে, ‘'এই প্রশ্নটা আগের ম্যানেজমেন্ট করা উচিত। কারণ আমি সিলেট অঞ্চল নিয়ে কাজ করি না, আমি কেন্দ্রে কাজ করি। কেন্দ্র থেকে আমাকে সিলেট বিভাগীয় দলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে আমি সিলেট বিভাগীয় দল নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাই মাত্র দুই মাস। তাও জাতীয় ক্রিকেট লিগে, এর বাইরে আমার তেমন কাজ করার সুযোগ থাকে না। দুই মাস কাজ করে বিকল্প তৈরি করা আমার জন্য কঠিন। আমাদের বিকল্প ব্যাটার নাই, বিগত বছর যারা কাজ করেছেন, বিকল্প তৈরি করতে না পারা তাদের ব্যর্থতা। এখন ধার করা ব্যাটার নিয়ে কেন খেলতে হচ্ছে আর কতদিন খেলতে হবে? তাই এই প্রশ্নের উত্তর করাটা আমার জন্য কঠিন। কারণ তারা কেন এতোদিনে বিকল্প তৈরি করতে পারলেন না। বিকল্প তৈরির কাজই বা করলেন না কেন?’’
যে হারে সিলেট দলে বাইরের ক্রিকেটারদের আনাগোনা হচ্ছে, দ্রুত বিকল্প তৈরি না করতে পারলে সিলেট দল বিসিবির নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে বলে শঙ্কা রাজিনের। বাইরের ব্যাটার খেলানো প্রসঙ্গে সিলেটের প্রধান কোচ বলেন,
‘আসলে এভাবে কত খেলতে হবে, আমার জানা নেই৷ তবে যতদিন পর্যন্ত বিকল্প তৈরি না হবে ততদিন পর্যন্ত বোর্ডের ক্রিকেটার নিয়েই খেলতে হবে। আর দ্রুত বিকল্প তৈরি না করতে পারলে, একটা সময় সিলেট দল বোর্ডের হাতেই চলে যাবে। এটা খুব জরুরী, এক্ষেত্রে শিগগিরই আমাদেরকে বিকল্প ব্যাটার খুঁজতে হবে। আমাদের হাতে তরুণ প্রতিভাবান কিছু ক্রিকেটার আছে, তাদেরকে ঠিকমতো পরিচর্যা করলে, সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দিলে হয়তো তারা আজ প্রস্তুত হয়ে যেত। সাড়ে তিন বছর ধরে সিলেট দলে কাজ করছি। এই সময়ে নতুন অনেক প্লেয়ার আসছে। যেমন ফেরদৌস (তাওহিদুল ইসলাম), দিশান; খুব তরুণ, মাত্র অনূর্ধ্ব-১৭ খেলে আসছে। তারও যথেষ্ট ভাল করার সম্ভাবনা আছে। তোফায়েল আছে। নতুন প্লেয়ার আসছে না যে তা না, কিন্তু তাদের দলের সাথে রেখে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।’
ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণের মর্যাদা পাওয়ার প্রায় ২৫ বছর পরও আজও কেন বিসিবির হাতেই বিভাগীয় দল গঠনের দায়িত্ব থাকবে। যেখানে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার প্রধান শর্তই ছিল, ক্রিকেটটাকে দেশব্যাপি ছড়িয়ে দেওয়া। এদিক থেকে বিসিবিই বা কেন এখনও পিছিয়ে আছে?
এ প্রসঙ্গে রাজিন বলেন, ‘'আসলে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা নামে মাত্র করে দেওয়া হয়েছিল। সিলেটে যাদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তারাও ঠিকঠাক কাজ করতে পারেননি। আমরা এটাকে আমাদের আওতায় আনতে পারিনি। মোটামুটি প্রায় ক্রিকেট বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ ছিল। ভারতের প্রতিটা অঞ্চল একেকটা ছোট ক্রিকেট বোর্ড আছে। আমাদের সেটা নাই।”
তবে ক্রিকেট বোর্ডে সংস্কার হওয়াতে রাজিন আশাবাদী যে, নতুনরা এটা নিয়ে কাজ করবেন। এক্ষেত্রে তিনি নতুন সভাপতি ফারুক আহমেদের নেতৃত্বেই আস্থা রাখছেন। এ বিষয়ে রাজিন বলেন, ‘এখন বোর্ডে নতুন যারা আসছেন তারা অবশ্যই এটা নিয়ে কাজ করবেন। ফারুক ভাই দায়িত্ব নিয়েছেন, সাথে ফাহিম স্যার (নাজমুল আবেদিন ফাহিম)। আসলে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা পুরোপুরি ভাবে চালু না হলে, আমরা আমাদের মতো করে কাজ করতে পারব না। আমরা নতুন প্লেয়ার তৈরি করতে পারব না। আসলে এটা বাস্তবায়ন করা জরুরি। তৃণমূলের ক্রিকেটেই বলেন আর জাতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বলেন, সবদিকেই কিন্তু আমরা ব্যাটিংয়েই বেশি পিছিয়ে। কারণ আমরা ভাল মানের ব্যাটার তৈরি করতে পারছি না। একটা বোলার বের করা সহজ কিন্তু একটা ব্যাটার বের করা অনেক কঠিন। এদিক থেকে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা বাস্তবতার মুখ দেখলে, আমরা হয়তো বছর দুইয়েকের ভিতরে ব্যাটিংয়ের সমস্যাটা কাটিয়ে উঠতে পারব।’
সিলেটে তরুণ ব্যাটারদের মধ্যে মিজানুর রহমান সায়েম আছেন, একটা সময় শেনাজ আহমেদ ছিলেন। ক্রিকেটে নিয়মিত সুযোগের অপেক্ষায় থাকা সায়েম আলম রিজভী হাল ছেড়ে বনে গেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা।
স্থানীয় ক্রিকেটাররা সুযোগ পেলেও নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হলে এক দুই ম্যাচ পর বাদ পড়ছেন একাদশ থেকে। এসব ক্রিকেটারদের না রেখে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দেওয়া ক্রিকেটারদের নিয়েই বা কেন খেলতে হবে!
প্রতিযোগিতা মূলক ক্রিকেটে দলের ভাল ফলাফলের কথা চিন্তা করে বোর্ড ভাল মানের ক্রিকেটার খেলায় বলে মনে করেন রাজিন। তরুণদের সুযোগ দিতে গিয়ে যদি দলের ফল না আসে, আর দল যদি নিয়মিত হারতে থাকে তাহলে পরিবর্তন আনাটা দরকার রাজিনের কাছে। এ ব্যাপারে রাজিন যোগ করেন,
‘প্রতিযোগিতা মূলক ক্রিকেটে দলের ফলাফলের কথা চিন্তা করেই খেলতে হয়। এখানে এক দুই ম্যাচ খেলানোর পর পারফর্ম না করলে বাদ পড়তে হয়৷ এখানে যে সুযোগটা আসে তা কাজে লাগাতে হয়, এখন একজনকে নিয়মিত সুযোগ দিতে গিয়ে যদি দল হারতে থাকে তাহলে তো হবে না। শেনাজ অনেকগুলো ম্যাচ খেলেছে, কিন্তু এতোগুলো ম্যাচ খেলার পর যদি গড় থাকে ২০/২২ ঘরে তাহলে তো হল না। আর সায়েম আমাদের তালিকায় আছে, সে খুব প্রতিভাবান। তাকে ভালভাবে ট্রেনিং করালে অনেক ভাল করবে। বোর্ড প্রতিযোগিতা মূলক ক্রিকেটের কথা চিন্তা করেই, অধিক ভাল মানের ক্রিকেটার দিয়ে থাকে। যাতে একটা দল ভাল করতে পারে। আপনি যখন একটা টুর্নামেন্ট খেলতে যাবেন, সেখানে প্রতিযোগিতা থাকবে। ভাল করার ইচ্ছা থাকবে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াই করবেন। সেই রেজাল্ট বের করতে আপনাকে ভাল প্লেয়ার খেলাতে হবে। দিনশেষে সবাই রেজাল্ট দেখতে চায়। আর রিজভীর ব্যাপারে তেমন কিছু বলতে চাচ্ছি না, তাকে নিয়ে বলতে গেলে আবার বলবে সে আমার ভাই। এদিক থেকে রিজভীকে নিয়ে না বলাই ভাল।’
দেশের ক্রিকেটে যেহেতু দিন বদলে হাওয়া লেগেছে তার আচ কিছুটা এসে পড়বে সিলেটের ক্রীড়াঙ্গনে। সেদিক থেকে নতুন নেতৃত্বের কাছে তাঁর প্রত্যাশা কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নতুন যারা আসবেন, তাদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে তারা যেন ক্রিকেটটা নিয়ে কাজ করেন৷ অনুরোধ থাকবে তারা যেন নতুন ক্রিকেটার বের করার কাজ করেন। অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা যতটা আছে, এটাই আমার কাছে যথেষ্ট মনে হচ্ছে। প্রাথমিক অবস্থায় ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করার অনুরোধ থাকবে। বিশেষ করে তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে। বিগত দিনে অবকাঠামো এতো সুযোগ সুবিধা ছিল না কিন্তু আমাদের মতো ক্রিকেটার বের হয়ে গেছে। একটা সময় চার পাঁচটা ক্রিকেটার জাতীয় দলের হয়ে খেলেছে। তখন আমাদের যতটুকু সাহায্য সহযোগিতা করেছেন, এরকম সংগঠকরাই ক্রীড়াঙ্গনে আসা উচিত। বিশেষ করে বিগত দশ বছর ধরে আমরা যে ব্যাটিং নিয়ে ভুগছি, সেটা থেকে বের হয়ে আসার পথ খুঁজতে হবে। ব্যাটিংয়ে অলক-রাজিন আর জাকির-জাকের এর বাইরে জাতীয় দলে তেমন কেউ নাই। এদিকটা নিয়ে কাজ করার পরামর্শ থাকবে।’