ক্রিকেটার হয়ে উঠার দুর্বিষহ জার্নি শোনালেন নিগার, উদাহরণে রেখেছেন সাকিব-মারুফাকে
ক্রিকেটার হয়ে উঠার দুর্বিষহ জার্নি শোনালেন নিগার, উদাহরণে রেখেছেন সাকিব-মারুফাকে
ক্রিকেটার হয়ে উঠার দুর্বিষহ জার্নি শোনালেন নিগার, উদাহরণে রেখেছেন সাকিব-মারুফাকে
বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতিকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) "Healthier in Motion: গতিতেই সুস্বাস্থ্য" ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেছে। যার লক্ষ্য বাংলাদেশের নারী ও তরুণদের মধ্যে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শারীরিক সুস্থতা এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে উৎসাহিত করা। নারীদের নিজেদের সুস্বাস্থ্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যে সামাজিক প্রতিবন্ধকতাগুলো রয়েছে সেগুলোকে মোকাবিলা করা। যেখানে নিগার শুনিয়েছেন তার ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গল্প। বাবার সাথে কৃষিকাজ করা মারুফা আক্তার যেভাবে হলেন বাংলাদেশের নাম।
"Healthier in Motion: গতিতেই সুস্বাস্থ্য" ক্যাম্পেইনের অ্যাম্বাসেডর নিগার সুলতানা জ্যোতি, খেলাধুলায় সাফল্য অর্জনে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অনুপ্রেরণাদায়ক যাত্রা সম্পর্কে জানান, "খেলাধুলা আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্তিশালী করেছে এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করেছে। আমি আশা করি, এই ক্যাম্পেইন অনেক তরুণীকে নিজেদের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে এবং তাদের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করবে।"
বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটারদের নিয়ে বায়োপিক বানানো হয়, উঠে আসে তাদের বেড়ে উঠা ও সংগ্রামের গল্প। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একেবারেই ভিন্ন। নিগার সুলতানা চান কিনা এমন কিছু এদেশে হোক, যাতে করতে তরুণ-তরুণীরা যাতে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে নিগার শোনালেন বাস্তবতা। করলেন স্মৃতিচারুণ,
'রোহিত শর্মা, ভিরাট কোহলিদের গল্প সবাই জানি। কিন্তু আমরা কি সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজার উঠে আসার কাহিনী জানি না। আমারটা বাদ দিলাম। বিহাইন্ড দ্য সিন, তাদের স্ট্রাগল, কিভাবে তারা উঠে আসছে আমরা কিন্তু জানি না। বিশেষ করে আমি যদি আমার জার্নির কথা বলি, অনেক কঠিন ছিল। কারণ আমার বেড়ে উঠা এক ছোট শহরে। ঐ সময়ে মেয়েদের ক্রিকেটকে গ্রহণ করা মানুষের জন্য দুর্বিষহ ব্যাপার ছিল, জার্সি-ট্রাউজার পড়ে মাঠে যাওয়া। আমার বাবা-মাকে সে সময় যে পরিমাণ কথা শুনতে হয়েছে। তারপর এই মানুষগুলোই চেহারা বদলে ফেলল, বলতে শুরু করে নিগার আমাদের মেয়ে। আমার পরিবার নিয়ে আমি গর্বিত, তাদের সাপোর্টের জন্যেই আমি আজ এখানে।'
'আমরা যে স্ট্রাগল করেছি এখন কিন্তু এমন নেই। মিডিয়া যতটা কাভার করছে। মানুষজন মেয়েদের সম্পর্কে জানে। মারুফা আক্তারের জার্নিটাও একেবারে অন্যরকম। বাবার সাথে ধানের ক্ষেতে সে হাল চাষ করছে, সেখানে থেকে আজকে মারুফা আক্তার। বাংলাদেশের একটা নাম। ওর গল্পট যদি সবাই জানি আমি মনে করি অনেক মেয়েরা ক্রিকেটে যুক্ত হবে, খেলোধুলায় আগ্রহ পাবে।'
মানসিক অবসাদ নিয়ে ক্রিকেটাররা কিভাবে চিন্তা করছেন। নিগার যা বললেন, 'আমি যদি এখন বিসিবিকে জানাই যে আমি মানসিকভাবে অবসাদ গ্রস্থ, আমি ক্লান্ত; আপনার কি মনে হয় আমাদের দেশে সেই সংস্কৃতি বা গ্রহণযোগ্যতা আছে এই ব্যপারটাকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেয়ার? কেই কখনো এরকম করেনি আগে।'
'সাকিব ভাই অন্যরকম, উনার সাথে কারও তুলনা করে লাভ নেই। আমার মনে হয় মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যপারটাও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমলে নেয়া দরকার কারণ আমরা সবাই শারিরীক সুস্থ্যতা বা ফিটনেসটা দেখি। আমি হয়তো টানা খেলছি বা চোটগ্রস্থ তাই আমি বিরতি নিলাম।কিন্তু সবকিছুই হচ্ছে মাথায়, ক্রিকেট খেলাটার ৭০%ই হচ্ছে মাথায়। বাকি ৩০ শতাংশ হচ্ছে আমাদের ফিটনেস ও দক্ষতা। এই ব্যপারটা আরও সামনে নিয়ে আসা দরকার। খেলোয়াড়রা যেভাবে একটার পর একটা সিরিজ খেলছে,বড় টুর্নামেন্ট খেলছে; কেউ জিজ্ঞেস করে না আমরা ভাল আছি কি না। জিজ্ঞেস করা হয় আমরা ফিট আছি কি না।'
ক্যাম্পেইনের অন্যান্য অ্যাম্বাসেডর হিসেবে জনপ্রিয় ব্যান্ড নেমেসিসের প্রধান গায়ক জোহাদ রেজা চৌধুরী এবং অভিজ্ঞ যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক ও ঢাকা ফ্লো-এর প্রতিষ্ঠাতা শাজিয়া ওমরও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।খেলবেই বাংলাদেশ এবং ঢাকা ফ্লো-এর সহযোগিতায়, "Healthier in Motion" ক্যাম্পেইন নগরায়ণ, স্থবির জীবনধারা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপরেও কাজ করবে, এবং যুবসমাজকে আধুনিক বিশ্বের ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করবে।
অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে খেলবেই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা কাজী সাবির মেয়েদের মাঠে আনার প্রসঙ্গে বলেন, 'এই মানসিকতা বদলানো উচিত। আমাদের সবারই ব্যায়াম করা দরকার। সবাইকে যে মাঠে গিয়ে খেলতে হবে ব্যাপারটা এমন না। সবসময় ছেলেদেরকে বলা হয় তুমি ব্যায়াম করো, তুমি খেলো, তুমি ফিট থাকো। সুস্থ থাকার যে মানসিক ব্যাপারটা সেটা আপনি মাঠে গিয়ে খেলেন। মাঠে মেয়েদের নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে উন্নতি প্রয়োজন। পোশাকের সাথে ফিটনেসের কোনো সম্পর্ক নেই। সবার হাতে মোবাইল ফোন আছে আমরা এই ক্যাম্পেইন ডিজিটালি করবো, এবং ঢাকার বাইরেও যাচ্ছি আমরা।'