বিশ্বকাপের পর, আমি মানসিকভাবে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছি যেখানে আর ফিরে আসা অসম্ভব: জাহানারা

বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম ২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময়কার এক হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতার কথা জানালেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত ওই বিশ্বকাপ চলাকালীন তিনি মারাত্মক মানসিক চাপের মুখে পড়েছিলেন এবং নিজেকে দলের ‘বহিরাগত’ মনে হয়েছিল বলে জানিয়েছেন জাহানারা। এই মানসিক বিপর্যয়ই শেষ পর্যন্ত তাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সাময়িক বিরতিতে বাধ্য করে।

ক্রিকবাজকে দেওয়া এক খোলামেলা সাক্ষাৎকারে জাহানারা বলেন, "যা কিছু আমি বিশ্বকাপে দেখেছি, সেটা একদমই প্রত্যাশিত ছিল না। এমন এক ঘটনা ঘটল যেখানে একজন জুনিয়র খেলোয়াড়কে মানসিকভাবে হয়রানি করা হলো। তার চোখের জল আমার সহ্য হচ্ছিল না। খেলার মাঝেই তাকে মাঠ ছাড়তে বলা হলো, 'মাঠ থেইকা বাইর হইয়া যা এখনই' এই ধরণের ভাষা একজন খেলোয়াড়ের প্রাপ্য নয়। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছেড়ে যায়। এটা কোনোভাবেই মানা যায় না।"

তিনি আরও বলেন, "যে জায়গায় খেলোয়াড়দের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে এত বাজেট খরচ হয়, সেখানে এই ধরনের ঘটনা ঘটে কীভাবে? শুধু আমার ক্ষেত্রেই নয়, আরও কিছু অসহায় ক্রিকেটারের ক্ষেত্রেও এমন ঘটেছে। যারা কিছু বলার অবস্থাতেই ছিল না। বাইরে থেকে কেউ তা বোঝার সুযোগ পাবে না। একটা সময় আমার মনে হয়েছে, আর পারছি না, ঘুমাতে গেলেও দুঃস্বপ্ন দেখতাম।"

জাহানারার ভাষ্য মতে, এই মানসিক অস্থিরতা শুধু বিশ্বকাপেই সীমাবদ্ধ ছিল না দীর্ঘ ৩-৪ বছর ধরেই তা জমে উঠছিল, বিশেষ করে শেষ ১৮ মাসে। তিনি বলেন, "২০০৯, ২০২০, ২০২২ এই তিন সময়ে আমি ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু ২০২৩ সালে যখন দল থেকে বাদ পড়লাম, তখন উল্টো ফিরে আসার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলাম। কিন্তু বিশ্বকাপে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আমাকে শেষ পর্যন্ত মানসিকভাবে ভেঙে দেয়।"

বিশ্বকাপ শেষে কিছুটা সময় কাটাতে অস্ট্রেলিয়ায় যান জাহানারা। সেখানে থাকাকালীন মানুষের আন্তরিকতা এবং সম্মানবোধে তিনি মুগ্ধ হন। "অস্ট্রেলিয়ায় মাত্র দুই সপ্তাহের জন্য গিয়েছিলাম, কিন্তু সেখানকার ভালোবাসা আর সম্মান আমাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। বুঝলাম, দেশে ফিরলে মানসিক অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে। তাই আরও কিছুটা সময় থাকার সিদ্ধান্ত নেই।"

সম্প্রতি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার লেভেল-২ কোচিং সনদ অর্জন করেছেন জাহানারা। নিজেকে ৯৯ শতাংশ সুস্থ বলে মনে করছেন তিনি। এখন সামনে তাকিয়ে আছেন নতুন সম্ভাবনার দিকে। "আমি আবার ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে চাই। পাশাপাশি কোচিংয়ের সুযোগ পেলে সেটাও গ্রহণ করব। তবে এখনই খেলোয়াড়ি জীবন ছাড়ছি না,"

জাতীয় দলের ক্যাম্পে ফিরে পাওয়া অভিজ্ঞতা নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি। বললেন, "ড্রেসিংরুমে এখন আর ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হয় না, শুধু দ্বন্দ্ব আর ঝগড়া। বন্ধুতা বা পারস্পরিক সম্মানবোধ কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।"

শেষ পর্যন্ত জাহানারা বলেন, "জাতীয় দল থেকে আমি নিজেই ছুটি নিয়েছি, আমাকে বাদ দেওয়া হয়নি। এখন দেখতে হবে, সামনে জাতীয় দলে কী সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আপাতত নিজেকে গুছিয়ে নিতে চাই।"