লিটনের দ্যোতি ছড়ানো ম্যাচ থামল বৃষ্টিতে
৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল
প্রকাশ: 2 ঘন্টা আগেআপডেট: 1 সেকেন্ড আগে- 1
আইএলটি-টোয়েন্টিতে শুরুর দিনই মাঠে নামবে মোস্তাফিজরা
- 2
কোচিংয়ে ঐতিহাসিক উদ্যোগ, অ্যাশলে রসের নেতৃত্বে বিসিবির নিজস্ব লেভেল থ্রি কোর্স
- 3
টি-টোয়েন্টি মেজাজে টেস্ট মাইন্ডসেট: বিসিবিতে বুলবুলের ‘সৌম্য’ উত্তরণ
- 4
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে উইলিয়ামস ও টেইলরকে নিয়ে জিম্বাবুয়ের দল ঘোষণা
- 5
নিউজিল্যান্ড নারী দলের সহকারী কোচের দায়িত্বে ক্রেইগ ম্যাকমিলান

লিটনের দ্যোতি ছড়ানো ম্যাচ থামল বৃষ্টিতে
লিটনের দ্যোতি ছড়ানো ম্যাচ থামল বৃষ্টিতে
শরতের এক স্নিগ্ধ সন্ধ্যায় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ছিল এক অন্যরকম উত্তেজনা। ভাদ্রের গরমে হাঁসফাঁস করা শহরের আকাশে সাদা-নীল মেঘের লুকোচুরি! সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল, প্রকৃতিও বুঝি ক্রিকেট উৎসবে শামিল। বেলা যত গড়াতে থাকে ততই মেঘ রং বদলাতে শুরু করে। সাদা মেঘ ক্রমেই কালো হয়ে ওঠে, গরমের তীব্রতা কমতে থাকে। এমন আবহে সন্ধ্যার শীতলতায় সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নামে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস, তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে। যদিও ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়ে যায়, তবে আলো ছড়ান একাই, অধিনায়ক লিটন দাস।
লিটনের ব্যাটে ছিল সৌন্দর্য, আত্মবিশ্বাস আর আগ্রাসনের ছাপ। সেই ব্যাটিং নৈপুণ্যেই সিলেটের বাইশ গজে তিনি হয়ে ওঠেন ম্যাচসেরা ও সিরিজসেরা।
ডাচ-বাংলার এই লড়াইয়ে শুরুতেই বড় প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায় ফ্লাডলাইটের যান্ত্রিক ত্রুটি। এরপর দিনের আলো ম্লান করে আকাশভরা কালো মেঘ, বৃষ্টির বালাই। কৃত্রিম আলোর স্বল্পতা আর বৃষ্টির বাধার মাঝে ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল লিটন দাস। ডাচ বোলারদের উপর চড়াও হয়ে ঝলমলে এক ইনিংস খেলেছেন তিনি ৪৫ বলে ৭৩ রান। এই ইনিংসেই তিনি ছাড়িয়ে যান সাকিব আল হাসানের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ফিফটির রেকর্ড। পরে ম্যাচসেরা তো বটেই, জিতে নেন সিরিজ সেরার পুরস্কারও।
টানা দুই ম্যাচে টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। শেষ ম্যাচে যদিও টসে হারেন, তবে ডাচ অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসও লিটনের পথেই হাঁটেন, বেছে নেন ফিল্ডিং। ফলে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ।
পাঁচটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে স্বাগতিকরা। লিটনের সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন সাইফ হাসান। শুরু থেকেই সাইফ কিছুটা আক্রমণাত্মক খেলতে চাইলেও সেটি খুব একটা কার্যকর ছিল না।
প্রথম ওভারে আরিয়ান দত্তের বল মোকাবিলায় প্রথম বল ডট, দ্বিতীয় বলে প্যাডল সুইপ করতে গিয়ে বল উঠে যায় স্লিপের ওপর দিয়ে, সেখান থেকে পান ২ রান। ওভারের পঞ্চম বলে আবারও প্যাডল সুইপ করেন, এবার বল ঠিকঠাক ব্যাটে লাগলেও ছক্কা হওয়ার মতো দূরত্ব ছিল না। ফাইন লেগে দাঁড়ানো ফিল্ডারের হাতে বল গেলেও সাইফ বেঁচে যান, কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি।
চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই কাইল ক্লেইনের অসাধারণ এক ডেলিভারিতে সরাসরি বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। অফ-স্টাম্পের ওপর লাফানো বল অনসাইডে খেলতে গিয়ে পরাস্ত হন। ৮ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১২ রান করেন সাইফ, লিটনের সঙ্গে ১৯ বলে ৩৯ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন। এর মধ্যে লিটনের সংগ্রহ ছিল ২৭ রান।
লিটনের ব্যাট তখন তপ্ত। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ডানিয়েল ডোরামের ছয় বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় তুলে নেন ২৩ রান। সাইফ বিদায় নিলেও লিটনের ব্যাটে ছিল আত্মবিশ্বাস। ঠিক সেই সময়েই বাধা হয়ে দাঁড়ায় ফ্লাডলাইটের যান্ত্রিক ত্রুটি। দলীয় পঞ্চাশ পার হতেই খেলা থেমে যায়।
সাত মিনিট পর খেলা শুরু হলে এবার নামে বৃষ্টি। লিটন তখন ১৬ বলে ৪২ রানে অপরাজিত। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় সাজানো ছিল তার ইনিংস। বৃষ্টিতে খেলা আবার বন্ধ হয়ে গেলে তাকে ফিরতে হয় ড্রেসিংরুমে।
প্রায় ত্রিশ মিনিট পর আবার বল গড়ায় সিলেটের বাইশ গজে। ফিরেই আরও ভয়ংকর রূপ নেন লিটন। ২৯ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় তুলে নেন ফিফটি। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সাকিব আল হাসানের ১৩টি ফিফটির রেকর্ড ছাড়িয়ে নিজেকে বসান শীর্ষে, বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ফিফটির মালিক এখন লিটন দাস।
লিটনের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, হয়তো এবার টি-টোয়েন্টিতেও ভেঙে দেবেন তামিম ইকবালের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। তার সেই চেষ্টা ছিল স্পষ্ট। তবে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ৭০-এর ঘরে একবার জীবন পেলেও বেশিদূর এগোতে পারেননি। কাইল ক্লেইনের বলে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে মিড-অফে ম্যাক্স ও’ডাউডের হাতে ধরা পড়েন তিনি। তার ৭৩ রানের ইনিংসে ছিল ৬টি চার ও ৪টি ছক্কা।
তিন নম্বরে নামা তাওহীদ হৃদয় (১৪ বলে ৯) সুবিধা করতে পারেননি। তবে শামীম হোসেন (২১), জাকের আলী (২০*) এবং নুরুল হাসান সোহান (২২*) ঝড় তোলেন শেষদিকে। বিশেষ করে জাকের ও সোহান ২৩ বলে গড়েন অবিচ্ছিন্ন ৪২ রানের জুটি, যা দলকে এনে দেয় শক্ত ভিত।
রাত সাড়ে আটটায় আবারও নামে বৃষ্টি। তখন বাংলাদেশের স্কোর ১৮.২ ওভারে ৪ উইকেটে ১৬৪। আর এরপর আর খেলা গড়ায়নি। হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি চলতেই থাকে। একাধিকবার মাঠ পর্যবেক্ষণ শেষে রাত ৯:৪৫ মিনিটে ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন আম্পায়াররা।
বাংলাদেশ আগেই সিরিজ নিশ্চিত করেছিল ২-০ ব্যবধানে। শেষ ম্যাচে হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্য থাকলেও বৃষ্টি রক্ষা করল ডাচদের।
৪৫ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৩ রান করে ম্যাচসেরা হন লিটন দাস। তিন ম্যাচে ২টি ফিফটিতে ১৪৫ রান করে জিতে নেন সিরিজ সেরার পুরস্কারও।