ভিরাট কোহলির টেস্ট অবসরের বিষয়ে মুখ খুললেন রবি শাস্ত্রী

ভিরাট কোহলির টেস্ট অবসরের বিষয়ে মুখ খুললেন রবি শাস্ত্রী
ভিরাট কোহলির টেস্ট অবসরের বিষয়ে মুখ খুললেন রবি শাস্ত্রী
ভারতীয় ক্রিকেটের পোস্টারবয় ভিরাট কোহলির হঠাৎ টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত অনেককে চমকে দিলেও, সাবেক ভারত কোচ রবি শাস্ত্রীর মতে এটি ছিল না একেবারে আকস্মিক। কোহলির সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন শাস্ত্রী—মাঠের ভেতরে-বাইরে তাদের সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ঠ এবং সফলতম অধিনায়ক-कोচ জুটির একটি হিসেবে বিবেচিত।
আইসিসি রিভিউ-এ কথা বলতে গিয়ে শাস্ত্রী জানান, অবসরের এক সপ্তাহ আগেই কোহলির সঙ্গে তাঁর একটি আলোচনায় বিষয়টি উঠে আসে। বিশ্বজুড়ে সমর্থকরা যেখানে কোহলির কাছ থেকে আরও কয়েক বছর সাদা পোশাকে খেলার আশা করছিল, শাস্ত্রীর কাছে তখনই স্পষ্ট হয়ে যায় কোহলির সিদ্ধান্ত।
“এক সপ্তাহ আগে আমি ওর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ওর স্পষ্টতা ছিল চোখে পড়ার মতো,” বলেন শাস্ত্রী। “ও বলেছিল—সব দিয়ে দিয়েছে। কণ্ঠে বিন্দুমাত্র দ্বিধা ছিল না। আমি কয়েকটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন করেছিলাম, আর ওর উত্তর আমাকে বোঝায় যে সে মানসিকভাবে এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে শান্তিতে রয়েছে। ওর মন ও শরীরকে জানিয়ে দিয়েছে—সময় শেষ।”
কোহলির টেস্ট থেকে অবসর আসে এক দীর্ঘ ফর্মহীন সময়ের মাঝেই। একসময় যেখানে তার টেস্ট গড় ছিল ৫০-এরও বেশি, ২০২০ সালের পর সেই গড় নেমে আসে ৪৬-এর নিচে। ডিসেম্বর ২০২০ পরবর্তী ৬৫ ইনিংসে কোহলি গড় করেন মাত্র ৩২.০৯, যেখানে ছিল মাত্র তিনটি সেঞ্চুরি ও নয়টি হাফসেঞ্চুরি।
তবে শুধু পরিসংখ্যান নয়, শাস্ত্রী তুলে ধরেন কোহলির অতুলনীয় প্রাণশক্তি ও লড়াকু মানসিকতার প্রভাব। তিনি বলেন, “যখন কোহলি কিছুতে কমিট করে, তখন সে পুরোপুরি ডুবে যায়। এটা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। বেশিরভাগ খেলোয়াড় শুধু নিজের ভূমিকায় ফোকাস করে—বোলার বোলিং করে, ব্যাটার ব্যাট করে। কিন্তু কোহলি প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিজের মতো করে নেয়। প্রতিটি উইকেটে উদযাপন করে, প্রতিটি ক্যাচ মিসে কষ্ট পায়, যেন সবকিছু তার একার দায়িত্ব। এমন জড়িত থাকা কাউকে ক্লান্ত করে দেয়।”
শাস্ত্রীর মতে, কোহলির মতো পূর্ণোদ্যমে খেলা একজন খেলোয়াড় যদি নিজের ওয়ার্কলোড সঠিকভাবে না সামলায়, তাহলে বার্নআউট হওয়াটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবু কোহলির অবসরের ঘোষণা তাঁকে কিছুটা অবাক করেছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
“সত্যি বলতে, আমি ভেবেছিলাম ওর টেস্ট ক্যারিয়ারে আরও দুই-তিন বছর বাকি আছে। কিন্তু যখন মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন সেটা শরীরকেও জানান দেয়। আপনি যত ফিটই হোন না কেন, যদি মানসিকভাবে ক্লান্ত থাকেন, তাহলে আর কিছু যায় আসে না। তখনই পর্দা নামার সময় হয়।”
কোহলির টেস্ট ক্রিকেটে অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করে শাস্ত্রী বলেন, কোহলি এমন এক সময়ে লাল বলের ক্রিকেটে নতুন প্রাণ ফিরিয়েছেন, যখন ক্রিকেটের মূল আকর্ষণ ছিল টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে।
“সে একটি গ্লোবাল আইকন,” বলেন শাস্ত্রী। “গত দশ বছরে এমন ফ্যানবেস আর কোনো ক্রিকেটারের ছিল না। অস্ট্রেলিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা—সে দর্শক টেনেছে। মানুষ তাকে ভালোবাসত বা ঘৃণা করত—মধ্যমপন্থা ছিল না।”
“তার উদযাপন, তার তীব্রতা—সেগুলো কখনো আগ্রাসী ছিল, কখনো উসকানিমূলক। কিন্তু সেটাই তাকে আলাদা করেছে। সে কেবল একজন ক্রিকেটার ছিল না, ছিল এক জীবন্ত দৃশ্য। তার এনার্জি ছড়িয়ে পড়ত ড্রেসিংরুম থেকে শুরু করে দর্শকদের ঘরেও। সে খেলায় প্রাণ এনে দিয়েছিল।”