রজতজয়ন্তীতে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট: প্রাপ্তির চেয়েও বড় যে যাত্রাপথ
- 1
পাকিস্তানের বাংলাদেশ সফরের সূচি প্রকাশ, ১ ভেন্যুতে ৩ টি-টোয়েন্টি
- 2
যেকারণে বাদ হাসান মাহমুদ, ২ বছর পর বাংলাদেশের জার্সিতে এবাদত
- 3
বিশ্বকাপের পর, আমি মানসিকভাবে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে গেছি যেখানে আর ফিরে আসা অসম্ভব: জাহানারা
- 4
আবারও টস জিতলেন নাজমুল হোসেন শান্ত
- 5
শেষদিনে ৩৫০ রান নিয়ে অবিশ্বাস্য ভাবে ভারতকে হারালো ইংল্যান্ড

রজতজয়ন্তীতে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট: প্রাপ্তির চেয়েও বড় যে যাত্রাপথ
রজতজয়ন্তীতে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট: প্রাপ্তির চেয়েও বড় যে যাত্রাপথ
২৫ বছর...মানুষের জীবনে এক প্রজন্মের সমান সময়। কোনো দেশের টেস্ট ক্রিকেটের বেলায় এ সময়টুকুতে গড়ে ওঠে ভিত্তি, তৈরি হয় শক্ত ভিত, এগিয়ে যায় ভবিষ্যৎ। ২০০০ সালের ২৬ জুন আইসিসির পূর্ণ সদস্য হয়ে যে পথে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ, আজ সেই পথচলার রজতজয়ন্তী। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া শুধু ক্রীড়া ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা নয়, বরং ছিল এক জাতিগত আত্মপরিচয়ের অর্জন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় এই ২৫ বছরে আমরা কতটুকু পথ পেরিয়েছি?
১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয় ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম বড় বাঁক। এর আগে-পরে দীর্ঘসময় ধরে দেশের ক্রিকেট প্রশাসক, খেলোয়াড় ও শুভানুধ্যায়ীদের কাঁধে ছিল টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার স্বপ্ন। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, বিশ্বকাপে পাকিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কূটনৈতিকভাবে দৃঢ় অবস্থান তৈরি করে শেষমেশ বাংলাদেশ টেস্ট মর্যাদা লাভ করে ২০০০ সালে।
তারপরই এক ঐতিহাসিক দিন ১০ নভেম্বর, ২০০০। ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের অভিষেক। তখনকার ঢাকা স্টেডিয়াম ছিল কানায় কানায় পূর্ণ, পুরো দেশ যেন অপেক্ষা করছিল নতুন পরিচয়ের প্রথম গল্প শোনার জন্য। সেই ম্যাচেই আসে প্রথম টেস্ট শতক, শুরু হয় নতুন পথচলা।
বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ২৫ বছরের ইতিহাস মূলত প্রতীকী কিছু জয়ের সঙ্গে দীর্ঘ সময়ের অস্থিরতার গল্প। হোম সিরিজে পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে হারানোর মতো স্মরণীয় কিছু ম্যাচ থাকলেও ধারাবাহিক পারফরম্যান্স গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। বিদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয় আজও বড় একটি স্বপ্ন, যার খুব কাছাকাছি গিয়ে অনেকবার ফিরে এসেছে বাংলাদেশ।
নানা সময়ে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে জ্বলে উঠেছেন হাবিবুল বাশার, আশরাফুল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল কিংবা মিরাজরা। কিন্তু দলের সংগ্রামী চেহারাটা একাধিক সময়ে ঢেকে গেছে অধিনায়কত্বের টানাপোড়েন, নির্বাচনী অস্থিরতা কিংবা কাঠামোগত দুর্বলতায়।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হিসেবে বারবার উঠে এসেছে ঘরোয়া টেস্ট ক্রিকেটের মান ও প্রণোদনার অভাব। জাতীয় লিগে পর্যাপ্ত দর্শক বা মিডিয়া কাভারেজ নেই, মাঠের কন্ডিশন কিংবা খেলোয়াড়দের প্রস্তুতিও প্রশ্নবিদ্ধ। ফলাফল টেস্ট দলের জন্য প্রয়োজনীয় গভীরতা তৈরি হয়নি। প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটাররাও সীমিত ওভারের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন, কারণ সেখানে জনপ্রিয়তা, অর্থ ও সুযোগ তুলনামূলক বেশি।
রজতজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বিসিবি দেশজুড়ে নানা আয়োজন করেছে। সিক্স-এ-সাইড টুর্নামেন্ট, ধারাভাষ্য প্রতিযোগিতা, প্রাক্তন ক্রিকেটারদের সম্মাননা সব মিলিয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ। কিন্তু এসব আয়োজনের আড়ালে চাপা পড়ে যাচ্ছে এক বড় প্রশ্ন এই ২৫ বছরে টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের প্রকৃত অবস্থান কী? কেবল কিছু ম্যাচ জয় নয়, এই দীর্ঘ পথচলায় কি তৈরি হয়েছে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী দল, একটি শক্ত ভিত?
বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। একদিকে রয়েছে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের বিদায়ের ধারা, অন্যদিকে নতুন প্রজন্মের পরীক্ষা। এই সময়ে প্রয়োজন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পরিকল্পনা যেখানে ঘরোয়া টেস্ট সংস্কারের পাশাপাশি বিদেশ সফর, কন্ডিশন ট্রেনিং, ফাস্ট বোলার উন্নয়ন ও ‘রেড বল’ স্পেশালিস্ট তৈরির দিকে নজর দেওয়া হবে।
এই রজতজয়ন্তী যেন কেবল উদযাপন নয়, বরং আত্মবিশ্লেষণের আয়না হয়ে উঠে। ২৫ বছর আগে যেভাবে স্বপ্ন দেখেছিলাম, আজ নতুন করে সেই স্বপ্নে রঙ ছড়ানোর সময়। পারফরম্যান্সই হোক সেই উত্তরণ যা প্রমাণ করবে, বাংলাদেশ শুধু অংশগ্রহণকারী নয়, প্রতিদ্বন্দ্বীও।