Image

অবসরের পরেও মাঠে, প্রশ্নের মুখে মুশফিক-রিয়াদ : প্রশ্নবিদ্ধ ক্রিকেট নীতি ও নৈতিকতা

৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল

প্রকাশ: 2 ঘন্টা আগেআপডেট: 19 সেকেন্ড আগে
অবসরের পরেও মাঠে, প্রশ্নের মুখে মুশফিক-রিয়াদ : প্রশ্নবিদ্ধ ক্রিকেট নীতি ও নৈতিকতা

অবসরের পরেও মাঠে, প্রশ্নের মুখে মুশফিক-রিয়াদ : প্রশ্নবিদ্ধ ক্রিকেট নীতি ও নৈতিকতা

অবসরের পরেও মাঠে, প্রশ্নের মুখে মুশফিক-রিয়াদ : প্রশ্নবিদ্ধ ক্রিকেট নীতি ও নৈতিকতা

সম্প্রতি বাংলাদেশ হেরেছে শ্রীলঙ্কার কাছে, এদিকে এনসিএল টি-টোয়েন্টি শুরু হয়েছে আজ। যেখানে খেলছেন টি২০ এবং ওয়ানডে ফরম্যাট থেকে অবসর নেওয়া দুই ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। দেশের ক্রিকেটের এই দুই ক্রিকেটার ক্রিকেটের সীমিত সংস্করণে খেলার সুযোগ নাই, যেহেতু তাঁরা অবসর নিয়েছেন। তাই দেশের তরুণদের জন্য জায়গা ছেড়ে না দিয়ে নিজেরা সেই জায়গায় খেলাটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন না অনেকে। 

রিয়াদ ও মুশফিকরা ঘরোয়া ক্রিকেটে খেললে দেশের তরুণরা উপকৃত হবে এটা ঠিক, কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলা অভিজ্ঞতা তাঁরা তরুণদের মাঝে ভাগাভাগি করতে পারবেন। তবে তরুণদের মাঠে খেলার সুযোগটা কমে যাবে। রিয়াদ-মুশফিকরা চাইলে কোচের ভূমিকায় দেশের তরুণদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারতেন।

এই প্রেক্ষাপটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি বক্তব্য বেশ আলোচিত হচ্ছে। বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক পেসার এবং সিলেটের এক সময়ের প্রধান বোলিং ভরসা তাপস বৈশ্য তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে শুধু মুশফিক-রিয়াদ নয়, সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন দেশের ক্রিকেট বোর্ড ও লোকাল কোচিং কাঠামোর দিকেও।

তাপস বৈশ্য লিখেছেন, “যে দেশের ক্রিকেট বোর্ড, অবসর নিয়ে নেওয়া খেলোয়াড়দের সুযোগ করে দেয় খেলার জন‍্য, আর অবসর নেওয়া খেলোয়াড়দের পিছনে টাকা ইনভেস্ট করতে পারে, তাদের কাছে অন্তত সেরা দল হওয়ার আশাটা এই মুহূর্তে করা ঠিক না”।

তাপসের বক্তব্যের মূলে আছে গভীর হতাশা। ক্রিকেটে অবসর নেওয়ার অর্থ যদি হয় একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাট থেকে সরে যাওয়া, তবে সেই ফরম্যাটভিত্তিক ঘরোয়া টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অসঙ্গত নয়। তাপস মনে করছেন, এই জায়গাগুলোতে সুযোগ পাওয়া উচিত তরুণ ও প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটারদের, যারা ভবিষ্যতে জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন। অভিজ্ঞদের জন্য যদি অবসর মানে হয় খেলার ইতি, তবে সেটিকে সম্মান জানানোর দায় সবারই রয়েছে, বিশেষত সংশ্লিষ্ট বোর্ডের।

স্ট্যাটাসে আরও বলা হয়, “এই আধুনিক যুগের ক্রিকেটে এই দেশের ৫০ বছরের নিচের লোকাল কোচদের ব্যক্তিগত কোনো হেটম নাই, তারা শুধু গাছ খুঁজে যেনো ঢাল ধরে কাজ চালিয়ে নিতে পারে”। 

এই কথায় বোঝা যায়, কেবল খেলোয়াড় নির্বাচন নয়, দেশীয় কোচিং ব্যবস্থাকেও এক ধরনের জড়তা ও নিষ্ক্রিয়তার কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন তাপস। তাঁর অভিযোগ, লোকাল কোচরা কৌশলগত নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ, বরং সিনিয়র ক্রিকেটাররাই মাঠের ভেতরে-বাইরে সিদ্ধান্তের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠছেন।
তাই সবচেয়ে আলোচিত অংশটি সম্ভবত এটাই, “অবসর নেওয়া সিনিয়রদের সাথে খেলে জুনিয়ররা শিখবে!! কি শিখবে?” 

তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে আরও বলেন, “টি২০ এবং ৫০ ওভারের অবসর নেওয়া ক্রিকেটারদের চোখে চোখ রেখে একটা কথা বলতে চাই ‘তোমাদের চক্ষু লজ্জা নাই’!” 

এখানেই তাপসের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট হয়ে যায়। তাঁর প্রশ্ন, যদি টুর্নামেন্টের মূল উদ্দেশ্য হয় নতুনদের যাচাই করা, তবে অবসরপ্রাপ্তদের জন্য জায়গা তৈরি করে সেই উদ্দেশ্য বাস্তবে কতটা সফল হচ্ছে? টিমের সঙ্গে থাকা স্ট্যান্ডবাই ক্রিকেটাররা গ্যালারিতে বসে কী শিখবে, সেটা নিয়েই তার প্রধান আপত্তি।

তাপসের পোস্টের ভাষা হয়তো কারও কাছে রূঢ় মনে হতে পারে, তবে সেটির পেছনে যে একটা দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভ ও হতাশা কাজ করেছে, তা বোঝা যায় তাঁর লিখিত প্রতিটি পঙক্তিগুলো ভেতর দিয়ে। জাতীয় দলের বাইরে থাকা অনেক সাবেক ক্রিকেটারই মনে করেন, দেশে এখনো শক্তিশালী পাইপলাইন তৈরি হয়নি, কারণ ঘরোয়া পর্যায়েই প্রতিভাবানদের জায়গা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

যে কথাটা তিনি লেখার শেষাংশে তুলে এনেছেন, “আইন সবার জন‍্য সমান”। 

এটি আসলে শুধু ক্রিকেট নয়, দেশের অনেক কাঠামোগত অসাম্যকেই প্রশ্ন করে। অবসরপ্রাপ্ত একজন ক্রিকেটার কি তাঁর অভিজ্ঞতা দিয়ে নতুনদের পথ দেখাতে পারেন? নিশ্চয়ই পারেন। কিন্তু তা কি মাঠে খেলে, না কি মাঠের বাইরে থেকে, সেটি নির্ধারণ করাটা প্রয়োজন বোর্ডের স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে।
 

Details Bottom
Details ad One
Details Two
Details Three