ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে নেপালের নতুন ইতিহাস
৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল
প্রকাশ: 16 ঘন্টা আগেআপডেট: 16 মিনিট আগে
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে নেপালের নতুন ইতিহাস
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে নেপালের নতুন ইতিহাস
ক্রিকেটের বিশ্ব মানচিত্রে নতুন এক উজ্জ্বল অধ্যায় শুরু করল নেপাল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৯ রানে হারিয়ে নেপাল প্রথমবার আইসিসির পূর্ণ সদস্য কোনো দলকে হারানোর গৌরব অর্জন করল। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেপাল ১৪৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে উইন্ডিজকে ১২৯ রানে থামিয়ে দেয়।
নেপাল বিশ্ব ক্রিকেটের উঠতি শক্তি, কিন্তু নেপাল ক্রিকেটের অবকাঠামো এখনও অনেকটা উন্নয়নশীল অবস্থায় রয়েছে। নেপাল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের পাশাপাশি সেখানে ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করছে চান্দ্রগিরি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন নেপাল। নেপালে ক্রিকেট জনপ্রিয় করতে বিভিন্ন লিগের আয়োজন করে মাঠে ক্রিকেট রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নেপালিরা। শুধু মাঠে ক্রিকেট চালু রাখলেই হবে না, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিজেদের জানান দিতে হবে ব্যাটে-বলের লড়াইয়ে। সেই কাজটাই যেন শনিবার শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ব্রায়ান লারা- ক্রিস গেইলদের উত্তরসূরিদের হারিয়েই করল নেপাল।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৯ রানে হারিয়ে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে নেপাল। এর আগে নেপাল ক্যারিবীয় ‘এ’ দলকে হারিয়েছে, তবে এবারই প্রথম আইসিসির কোনো পূর্ণ সদস্য দলকে হারালো তারা, যে দল কিনা একসময় বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তি!
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে নেপাল ১৪৮ রানের টার্গেট দাঁড় করায়। সেই রান তাড়া করতে নেমে উইন্ডিজ থামে মাত্র ১২৯ রানে। শেষ ১৮ বলে ক্যারিবীয়দের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৪৯ রান। সম্পাল কামির করা আঠারোতম ওভারে ফ্যাবিয়ান অ্যালেন ও আকিল হোসেন মিলে দুই চার এবং এক ছক্কায় আদায় করেন ১৯ রান। এরপর শেষ ১২ বলে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩০ রান। চেত্রির করা উনিশতম ওভারে দুই রানের বেশি নিতে পারেননি অ্যালেন ও আকিল, সঙ্গে বিদায় নেন আকিলও। শেষ ওভারে ২৮ রান প্রয়োজন ছিল, ফ্যাবিয়ান অ্যালেন তখন ২ চারে ৮ রানের বেশি নিতে পারেননি এবং ওভারের শেষ বলেই ফিরেন সাজঘরে। ফলে ১৯ রানের পরাজয়ে মাঠ ছাড়ে ব্রায়ান লারা ও ক্রিস গেইলের অনুসারীরা।
১৪৯ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ওপেনার কাইল মায়ার্সকে (৫) হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তিন নম্বরে নামা আকিম আগাস্টে ও অপর ওপেনার আমির জঙো মিলে যোগ করেন ২৭ রান। এরপর দলীয় ৩২ রানে আকিমকে (১৯) নন্দন যাদব প্যাভিলিয়নের পথ দেখালে ভাঙে এই জুটি।
আকিমের বিদায়ে ব্যাট করতে আসা জুয়েল এন্ড্রুকে (৫) দ্রুত তুলে নেন রোহিত পাউডেল। আকিম-জুয়েলের দেখানো পথে হাঁটেন আমিরও, রান তাড়ায় ক্যারিবীয় এই ওপেনার ফিরেন মাত্র ১৯ রান করে।
এরপর আরও তিন উইকেট হারায় লারা-গেইলের উত্তরসূরীরা। একে একে ফিরেন কেসি কার্টি (১৮), যিনি রান আউটে আউট হন, জেসন হোল্ডার ফিরেন (৫) বার্টালের বলে। এক ওভার পরে বার্টেল আবার নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন নাভিন বাদাইসিকে। বার্টেলের বলে হিট উইকেটে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারেন নাভিন। ফলে ৯৪ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসে উইন্ডিজ।
শেষ ১৮ বলে যখন ৪৯ রানের দরকার ছিল, তখন ক্রিজে আসেন অধিনায়ক আকিল হোসেইন। ফ্যাবিয়ান অ্যালেনকে সঙ্গে করে সেই রানের দিকে পা বাড়ান আকিল। এক ওভারে ১৯ রান নিয়ে সেই আশার সঞ্চার করেন আকিল ও অ্যালেন। তবে আইরি ও করন চেত্রির নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে দুজনে ফিরেন সাজঘরে, ফলে জয় হাতছাড়া হয়ে যায় উইন্ডিজের। ১৯ রানের জয়ে নেপালি রুপকথা লিখে পেলে লামিচানের দেশ।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নেপাল মাত্র ১২ রানের মাথায় দুই ওপেনারকে হারায়। কুশল বার্টেলকে (৬) ফিরিয়ে শুরুটা করেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক আকিল। আসিফ শেখের (৩) উইকেট নেন জেসন হোল্ডার।
তবে দ্বিতীয় উইকেটে রোহিত পাউডেল ও কুশল মাল্লার ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় নেপাল। এই দুই ব্যাটার মিলে যোগ করেন ৫৮ রান। কিন্তু এই জুটিকে বেশিদূর যেতে দেননি বাদাইসি, দলীয় ৭০ রানে মাল্লাকে (৩০) হোল্ডারের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে পাঠালে ভাঙে জুটি। এক ওভার পরে বাদাইসি ফেরান আরেক ব্যাটার পাউডেলকে (৩৮)। ফলে ৮৯ রানেই ৪ উইকেট হারায় নেপাল।
পাউডেল-মাল্লার মতো নেপালের হয়ে কেউ উইকেটে থিতু হতে পারেননি। ফলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৮ রানের বেশি করতে পারেনি নেপাল। এখানে মূল কৃতিত্ব অবশ্যই বাদাইসির, পাউডেল-মাল্লার পাশাপাশি আরেক ব্যাটার গুলশান ঝাকেও (২২) সাজঘরে পাঠান ক্যারিবীয় এই বোলার। এছাড়া হোল্ডার নেপালের লোয়ার অর্ডার গুঁড়িয়ে দিলে এই ১৪৮ রানেই থেমে যায় উইন্ডিজের ইনিংস। ইনিংসের ১৯তম ওভারে হোল্ডার ওভার হ্যাটট্রিকে একে একে দিপেন্দ্র সিং আইরি (১৭), সুন্দ্বীপ ঝরা (৯), করন চেত্রি (০) শিকার করেন তিন উইকেট।
ক্যারিবীয়দের পক্ষে ৪ ওভারে ২০ রানে ৪ উইকেট নেন জেসন হোল্ডার। বাদাইসি নেন ৩ উইকেট। এছাড়া একটি উইকেট নেন আকিল হোসেইন।
নেপালের ঐতিহাসিক ১৯ রানের জয়ে ম্যাচ সেরার খেতাব পান রোহিত পাউডেল।