আইপিএলের রঙ্গমঞ্চে গেইলের শেষ অঙ্কটা বিষাদের
৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল
প্রকাশ: 16 ঘন্টা আগেআপডেট: 1 সেকেন্ড আগে- 1
এশিয়ার সর্বকালের সেরা একাদশে সাকিব আল হাসান
- 2
আইপিএলের রঙ্গমঞ্চে গেইলের শেষ অঙ্কটা বিষাদের
- 3
আইজ্যাকের শতকে টাইগারদের হারিয়ে সিরিজে ইংল্যান্ডের সমতা
- 4
বিসিবি নির্বাচন, ফিক্সিং ইঙ্গিত ও ক্রীড়া উপদেষ্টার ‘সীমিত হস্তক্ষেপ’: আড়ালের গল্প কী?
- 5
এশিয়া কাপে দুই বাংলাদেশি আম্পায়ার, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের দায়িত্বেও তারা

আইপিএলের রঙ্গমঞ্চে গেইলের শেষ অঙ্কটা বিষাদের
আইপিএলের রঙ্গমঞ্চে গেইলের শেষ অঙ্কটা বিষাদের
টি-টোয়েন্টি মানেই চার-ছক্কার ঝড়, রানের বন্যা, আর সেই ব্যাটিং দুনিয়ার এক কিংবদন্তির নাম ক্রিস গেইল। "ইউনিভার্স বস" খ্যাত এই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারকে বলা যায় ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের ফেরিওয়ালা। তাঁর ব্যাট যেন বোলারদের জন্য বজ্রপাত! আর এই ক্যারিবীয় মারকাটারি ব্যাটার সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন আইপিএলে, ভারতের জনপ্রিয় টি-টোয়েন্টি লিগে, যা বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি সংস্কৃতিকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। সেই উত্তাপ ছড়ানোর মূল অনুঘটক ছিলেন গেইল নিজেই।
আইপিএলে গেইলের যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে। এরপর ৭টি আসর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে কাটান, আর শেষ চার আসরে খেলেন কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব (বর্তমানে পাঞ্জাব কিংস) দলে। তবে পাঞ্জাব পর্বের শেষটা ছিলো গেইলের জন্য বেদনাদায়ক। এক সময় দলটির প্রতি টান থাকলেও, সেই অধ্যায় তাঁর মনে রেখে গেছে গভীর দাগ।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে গেইল জানিয়েছেন, আইপিএলের শেষদিকে পাঞ্জাব শিবিরে তিনি কেমন অসম্মানিত বোধ করেছিলেন। কোভিডকালের কঠিন বায়োবাবলের মধ্যে মানসিক চাপের সাথে লড়াই করছিলেন তিনি। দলের একাদশে জায়গা পাচ্ছিলেন না, হোটেল বন্দি জীবন আর একঘরে করে রাখার মতো ব্যবহারে এক সময় নিজেকে ভেঙে পড়তে দেখেন গেইল।
তিনি বলেন, "আমার আইপিএল ক্যারিয়ার আগেভাগেই শেষ হয়ে গেছে। পাঞ্জাবের পক্ষ থেকে আমি অসম্মানিত বোধ করেছিলাম। সিনিয়র একজন খেলোয়াড় হিসেবে যা প্রাপ্য ছিল, সেটা পাইনি। এক সময় মনে হয়েছিল আমি যেন কোনো বাচ্চা ছেলে। তখনই প্রথম জীবনে ডিপ্রেশনের মুখোমুখি হই।"
সেই সময় নিজের জন্মদিনেও তাকে একাদশে রাখা হয়নি। গেইলের মতে, তখন অর্থ নয়, মানসিক শান্তিই ছিল প্রধান বিষয়।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এই ফেরিওয়ালা বলেন, "মানসিক অবস্থা ধীরে ধীরে আমায় শেষ করে দিচ্ছিল। মুম্বাইয়ের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচ খেলার পর মনে হয়েছিল, আর নয়। শান্তি দরকার। নিজেকে আর কষ্ট দিতে চাই না।"
সেই কঠিন সিদ্ধান্তের আগে তিনি কথা বলেন দলের কোচ অনিল কুম্বলে এবং অধিনায়ক লোকেশ রাহুলের সঙ্গে। গেইল বলেন, "আমি কুম্বলের সাথে কথা বলেছিলাম। খুব কষ্টে ছিলাম। কান্নাও চলে এসেছিল। রাহুল আমায় বলেছিল, 'তুমি যেও না, পরের ম্যাচে খেলাবো'। আমি শুধু বলেছিলাম, "তোমাদের জন্য শুভকামনা'। এরপর ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে যাই।"
সম্প্রতি সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার কেভিন পিটারসেনও বিষয়টি সামনে আনেন। তিনি বলেন, "গেইলের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করা হয়েছিল। তাকে শুধু ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। জন্মদিনেও একাদশে জায়গা দেয়নি, যেন একঘরে করে রাখা হয়েছিল। গেইল যদি খুশি না হয়, তবে তাকে মুক্ত থাকতে দেওয়া উচিত ছিল।"
আইপিএলে তিন ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে ১৪২ ম্যাচে ১৪১ ইনিংসে ব্যাট করেছেন গেইল। রান সংগ্রহ ৪,৯৬৫। এর মধ্যে রয়েছে ৬টি শতক ও ৩১টি অর্ধশতক। তবে পরিসংখ্যানের সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হচ্ছে, তিনি হাঁকিয়েছেন ৩৫৭টি ছক্কা ও ৪০৪টি বাউন্ডারি। যেখানে তাঁর সর্বোচ্চ ইনিংস টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের অন্যতম রূপকথা, অপরাজিত ১৭৫ রানের সেই অতিমানবীয় ইনিংস।
তিন ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে শেষেরটি ছিল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। এই দলের হয়ে চার আসরে খেলেছেন ৩১টি ম্যাচ, রান করেছেন ১,৩৩৯, যেখানে রয়েছে একটি শতক, অপরাজিত ১০৪ রান। আইপিএলে গেইলের ৩৫৭ ছক্কার মধ্যে পাঞ্জাবের হয়েই এসেছে ৯২টি। যদিও পরিসংখ্যান চোখ ধাঁধানো, তবে গেইলের মনে জায়গা করে নিয়েছে সেই ‘অসম্মানিত’ হওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা।
এতোকিছু সত্ত্বেও গেইলের মনে এখনও পাঞ্জাব কিংসের জন্য আলাদা জায়গা আছে। তিনি বলেন, "আমার প্রতি ন্যায্য আচরণ করা হয়নি। তবুও আমি এখনও তাদের জন্য প্রস্তুত। ডাকলে আমি ফিরব। তবে লয়্যালিটি খুব বড় ব্যাপার।"