Image

ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট: উত্তেজনা কমেছে, রাজনীতি বেড়েছে

৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল

প্রকাশ: 2 ঘন্টা আগেআপডেট: 1 সেকেন্ড আগে
ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট: উত্তেজনা কমেছে, রাজনীতি বেড়েছে

ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট: উত্তেজনা কমেছে, রাজনীতি বেড়েছে

ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট: উত্তেজনা কমেছে, রাজনীতি বেড়েছে

একসময় ভারত-পাকিস্তান মানেই ছিল ক্রিকেট মাঠে এক বিস্ফোরক মহারণ। গ্যালারিতে উত্তেজনা, টিভি স্ক্রিনের সামনে কোটিরও বেশি দর্শক, পত্রিকার পাতাজুড়ে জল্পনা-কল্পনা। কিন্তু সময় বদলেছে। এখন আর আগের মতো দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হয় না। রাজনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন সেই সম্ভাবনায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সন্ত্রাস, রাজনীতি এবং ক্রিকেট: ত্রিমুখী সংঘর্ষ

২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল, জম্মু-কাশ্মীরের পর্যটন শহর পেহেলগামে সংঘটিত হয় এক ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলা। এই আক্রমণে প্রাণ হারান অন্তত ২৬ জন, যাঁদের বেশিরভাগই ছিলেন ভারতীয় হিন্দু পর্যটক। আহত হন আরও ২০ জন। ভারী অস্ত্রে সজ্জিত জঙ্গিরা বনের ভেতর থেকে এসে নিশানা করে একটি পর্যটকবাহী বাসকে।
প্রথমে এই হামলার দায় স্বীকার করেছিল “দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট” (TRF), যেটি লস্কর-ই-তায়বার সহযোগী একটি সংগঠন। তবে পরে তারা দায় অস্বীকার করে, বিষয়টিকে করে তোলে আরও জটিল। ভারত সরকার স্পষ্ট ভাষায় এই হামলার জন্য পাকিস্তান-ঘনিষ্ঠ জঙ্গি গোষ্ঠীকেই দায়ী করে, যার ফলে রাজনৈতিক টানাপোড়েন দ্রুতই ক্রিকেটীয় সম্পর্কেও ছায়া ফেলে।

উত্তেজনার কেন্দ্রে ক্রিকেট নয়, রাজনীতি

২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পর থেকে ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট কার্যত বন্ধ। শুধু তাই নয়, আইপিএলেও পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ, প্রথম আইপিএলে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া।

ফলে দুই দেশের ক্রিকেট এখন সীমাবদ্ধ বিশ্বকাপ কিংবা এশিয়া কাপের মতো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেই। কিন্তু এখানেও খেলা নিয়ে থাকে অনিশ্চয়তা। কারণ রাজনীতি এখন মাঠের খেলার থেকেও বড় বাধা।

আসন্ন এশিয়া কাপ: ফের দেখা হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর?

অতীতে বিশ্বকাপ বা এশিয়া কাপ ছাড়া এই দুই দলকে একে অপরের বিপক্ষে মাঠে দেখা যায়নি। এ বছর এশিয়া কাপেও সেই একই চিত্র।
এশিয়া কাপ শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর, সংযুক্ত আরব আমিরাতে। গ্রুপ পর্বে ১৪ সেপ্টেম্বর মুখোমুখি হবে ভারত ও পাকিস্তান। যদিও দল দুটি তিনবার পর্যন্ত মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, সাম্প্রতিক হামলার পর সেই সম্ভাবনাও নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

সরকারের কঠোর অবস্থান

সম্প্রতি ভারতের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “ভারত দ্বিপাক্ষিক কোনো খেলায় পাকিস্তানে ক্রীড়াবিদ পাঠাবে না বা পাকিস্তানি ক্রীড়াবিদদের ভারতে আসতেও দেবে না। তবে বহুজাতিক টুর্নামেন্টে, যেখানে পাকিস্তান অংশ নিচ্ছে, সেখানে ভারতীয় দল অংশ নেবে।”

ভবিষ্যতে যদি ভারত কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের আয়োজক হয়, পাকিস্তানকে ভিসা দেওয়া হবে ঠিকই, তবে তা সীমিত মেয়াদের হবে এবং বাড়তি যাচাইয়ের পর।
এদিকে, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা আর ভারতে খেলতে যাবে না, তাদের চাই নিরপেক্ষ ভেন্যু।

মাঠে এখন আর আগের সেই উত্তেজনা নেই

মাঠের ক্রিকেটেও ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হারিয়েছে আগের রোমাঞ্চ। বেশিরভাগ ম্যাচেই দাপট থাকে ভারতের। পাকিস্তানের ব্যাটিং দুর্বলতা স্পষ্ট, যদিও বোলাররা মাঝে মাঝে লড়াই জমিয়ে তোলেন। দর্শকরা যেমন দেখার অপেক্ষায় থাকেন ভারতের ব্যাটসম্যান বনাম পাকিস্তানের পেস আক্রমণ, তা এখন আর তেমন দেখা যায় না।

বাইরের বিতর্কও বন্ধ হচ্ছে না

সম্প্রতি যুবরাজ সিংয়ের নেতৃত্বাধীন ভারতের লিজেন্ডস দল ‘ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অব লিজেন্ডস’-এ পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার কথা থাকলেও সেমিফাইনালে ম্যাচ না খেলার সিদ্ধান্ত নেয়। মুম্বাইয়ে সূর্যকুমার যাদবের এক সাক্ষাৎকারেও পাকিস্তান সংক্রান্ত প্রশ্ন উঠতেই দলের মিডিয়া ম্যানেজার তা থামিয়ে দেন। এসব ঘটনায় স্পষ্ট ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই এখন শুধু ক্রিকেট নয়, বরং কূটনীতির এক পরোক্ষ লড়াই।

ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ মানেই আগে ছিল এক রোমাঞ্চকর ক্রিকেট যুদ্ধ। এখন সেখানে রাজনীতির সুর স্পষ্ট। দর্শক এখনো চায় দুই দলের হাই-ভোল্টেজ লড়াই, কিন্তু দুই দেশের সরকার ও বোর্ডের সিদ্ধান্ত সে ইচ্ছেকে বাস্তবে রূপ দিতে বারবার বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

আগামী এশিয়া কাপে হয়তো আবার একসঙ্গে মাঠে নামবে ভারত-পাকিস্তান। তবে প্রশ্ন রয়ে যায়, এই লড়াই কি শুধুই ব্যাটে-বলে হবে, নাকি পর্দার আড়ালে চলবে আরও জটিল খেলা?

Details Bottom
Details ad One
Details Two
Details Three