ভারতের কাছে হেরে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের 'সেমিফাইনাল'
৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল
প্রকাশ: 13 ঘন্টা আগেআপডেট: 1 সেকেন্ড আগে
ভারতের কাছে হেরে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের 'সেমিফাইনাল'
ভারতের কাছে হেরে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের 'সেমিফাইনাল'
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার সুপার ফোরের ম্যাচটি ছিল বহু প্রতীক্ষিত। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দীর্ঘদিন পর দুই প্রতিবেশীর মুখোমুখি হওয়া, মাঠে নামার আগেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কিন্তু মাঠের লড়াই সেই প্রত্যাশার ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের একপেশে পরাজয়ে দেখা মিলেছে চিরাচরিত ব্যর্থতার, যার ছাপ পড়েছে ব্যাটিং, পরিকল্পনা ও মনোভাবে।
টস জিতে বোলিং নেওয়ার সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ বড্ড বেশি পরিচিত। কিন্তু প্রতিপক্ষ যখন ভারত, তখন চেনা পথে হাঁটা মানে ঝুঁকির দাওয়াত।
ভারতীয় দুই ওপেনার—অভিষেক শর্মা ও শুভমান গিল মাত্র ৩৮ বলে ৭৭ রানের জুটি গড়েন। গিল ফিরলেও অভিষেক খেলেন ৩৭ বলে ৭৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস।
বাংলাদেশের বোলাররা শুরুতে দিশেহারা হয়ে পড়লেও মিডল ওভার থেকে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে। মুস্তাফিজের দুর্দান্ত অফ কাটারে সূর্যকুমার যাদবের উইকেট ম্যাচে মোড় ঘোরানো মুহূর্ত হয়ে আসে।
মুস্তাফিজ এই উইকেটের মাধ্যমে টি-টোয়েন্টিতে ১৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন, পেছনে ফেলেন সাকিব আল হাসানকেও।
শেষ দিকে হার্দিক পান্ডিয়ার কার্যকর ৩৮ রানে ভর করে ভারত থামে ৬ উইকেটে ১৬৮ রানে। যদিও শুরুর ১০ ওভার দেখে মনে হয়েছিল দুইশ ছুঁয়ে ফেলবে তারা।
১৬৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ কখনওই প্রতিযোগিতায় ছিল না। ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ১ রানে ফিরলে শুরুতেই ধাক্কা। এরপর একে একে ফিরেছেন তাওহীদ হৃদয় (৭), শামীম হোসাইন (০), জাকের আলী (৪), সাইফ উদ্দিন (৪), রিশাদ হোসেন (২), তানজিম হাসান সাকিব (০), তাদের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং প্রদর্শনী দেখে মনে হয়েছে, তারা যেন উইকেটে এসেছিলেন কেবল নাম লেখাতে।
একের পর এক ব্যাটার ব্যর্থ হলেও এক প্রান্ত আগলে ছিলেন সাইফ হাসান। ৫১ বলে ৬৯ রানের ঝকঝকে ইনিংসে মারেন ৫টি ছক্কা ও ৩টি চার। কিন্তু তার এই একার লড়াই কোনো অর্থবহ হয়নি, কারণ দলীয় ১১৬ রানে তিনি আউট হতেই ইনিংস ভেঙে পড়ে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থামে ১২৭ রানে। হার ৪১ রানে।
এই হারের পর শুধু পারফরম্যান্স নয়, প্রশ্ন উঠছে পরিকল্পনা ও মানসিকতা নিয়েও। ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে জিততে হলে সাহসী ব্যাটিং, বুদ্ধিদীপ্ত ফিল্ডিং ও কৌশলী বোলিং প্রয়োজন। বাংলাদেশ প্রথমটি পুরোপুরি হারিয়েছে, দ্বিতীয়টি আংশিক সফল, আর তৃতীয়টি শেষের দিকে কিছুটা করে দেখিয়েছে।
ব্যাটিং লাইনআপে ধারাবাহিকতা নেই, মিডল অর্ডারে দায়িত্বহীনতা, আর টপ অর্ডারে নেই দৃঢ়তা। এভাবে ম্যাচ জেতা তো দূরের কথা, লড়াই করাও কঠিন।
সবকিছুর মাঝেও কিছু ইতিবাচক দিক ছিল। মুস্তাফিজুর রহমান দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল টি-টোয়েন্টি বোলার হয়ে উঠেছেন—১১৮ ম্যাচে ১৫০ উইকেট।
রিশাদ হোসেন নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ২টি উইকেট তুলে নিয়েছেন, নাসুম ও তানজিমও মাঝের ওভারে ভালো করেছেন। কিন্তু বোলিংয়ে তাদের এই লড়াই রান তাড়ায় মাঠে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি, কারণ ব্যাটিং ব্যর্থতা সব ঢেকে দিয়েছে।
এই ম্যাচটা প্রমাণ করেছে, একজন খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্স দিয়ে ম্যাচ জেতা যায় না। সাইফ হাসান ব্যতিক্রমী ইনিংস খেলেছেন, মুস্তাফিজ ও রিশাদ বল হাতে চেষ্টা করেছেন, কিন্তু দল হিসেবে বাংলাদেশ খেলতে পারেনি।
ভারতের বিপক্ষে হার তেমন দৃষ্টিকটু না হলেও লড়াই না করাটা ছিল হতাশাজনক। সুপার ফোরের বাকি আর মাত্র এক ম্যাচ, ফাইনাল খেলতে হলে আগামীকাল পাকিস্তানের বিপক্ষে তাই বাংলাদেশের সামনে জয়ের কোনো বিকল্প নেই। পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনাল খেলতে হলে কেবল পারফরম্যান্স নয়, আত্মবিশ্বাস ও মনোভাবেও পরিবর্তন আনতে হবে টাইগারদের।