অবশেষে তারুণ্যের হাত ধরে চ্যাম্পিয়ন সিলেট
অবশেষে তারুণ্যের হাত ধরে চ্যাম্পিয়ন সিলেট
অবশেষে তারুণ্যের হাত ধরে চ্যাম্পিয়ন সিলেট
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বেশ ধারাবাহিক সিলেট। টানা দুইবার রানার্সআপের পর এবার এক ম্যাচ হাতে রেখেই শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে সিলেট বিভাগ। মঙ্গলবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বরিশাল বিভাগকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ২৬তম ক্রিকেট লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সিলেট।
এবার জাতীয় ক্রিকেট লিগে শুরু থেকেই ভাল খেলছে সিলেট। প্রথম ম্যাচে বৃষ্টিবিঘ্নিত ড্র, এরপর টানা দুই জয়, আবার এক ড্র, অত:পর টানা দুই জয়ে শিরোপা এবার এলো সিলেটের ঘরে।
ষষ্ঠ ম্যাচে এসে বরিশালকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চারদিনের ম্যাচের শিরোপার স্বাদ পেল রাজিন সালেহ শিষ্যরা। এর আগে জাতীয় ক্রিকেট লিগের ওয়ানডে সংস্করণের একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সিলেট। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সিলেটের এটাই প্রথম শিরোপা।
সিলেটের জন্য এই পথ পাড়িয়ে দেওয়া এতোটা সহজ ছিল না। বোলিংয়ে সয়ংসম্পূর্ণ সিলেটের দুশ্চিন্তার কারণ ছিল ব্যাটিং। সেখানে এক অমিত হাসানের ব্যাটে রানের ফোয়ারা ছুটলেও বাকি সিলেটের ব্যাটাররা ছিলেন নিষ্প্রভ। তবে অমিতের পাশাপাশি সিলেটের ব্যাটিংয়ের কিছুটা আশার আলো জ্বালিয়েছেন পিনাক ঘোষ। এই দুজনের বাইরে আসাদুল্লাহ আল গালিবের ব্যাটেও মিলেছে রানের দেখা।
তবে ওপেনিংয়ে তৌফিক খান তুষার ভুগছেন ইনিংস বড় করতে, অন্যদিকে রাহাতুল ফেরদৌস জাবেদ বোলিংয়ে আলো ছড়ালেও ব্যাটিংয়ে ছিলেন নিরব দর্শক।
সেখানে আবার জাতীয় দলের হয়ে খেলার কারণে সিলেট এবার সব ম্যাচে পায়নি জাকির হাসান ও জাকের আলী অনিককে। তাদের জায়গা পূরণে মাইশুকুর রহমান রিয়েলকে দিয়ে চেষ্টা চালায় সিলেট ম্যানেজমেন্ট। সেখানে চরম হতাশ করেন রিয়েল, ব্যাট হাতে পুরোপুরি ব্যর্থ দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।
শিরোপা ঘরে তুলতে অমিত-পিনাকের পাশাপাশি সিলেটের তরুণদের জ্বলে উঠার প্রয়োজন ছিল। সেখানে রিয়েলে ব্যর্থতায় সুযোগ পাওয়া তরুণ ব্যাটার মুবিন আহমেদ দিশানের ব্যাটেই আশার সঞ্চার পায় সিলেট। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৭ দলের এই ক্রিকেটার শুরু থেকেই নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করছেন। ১৭, ২১, ৪৩ এবং ৫৩ রানের ছোট ছোট এই ইনিংসগুলোই তার প্রমাণ।
সিলেটের এই তরুণের সাথে নবাগত তোফায়েল আহমেদও নিজেকে প্রমাণ করছেন প্রতিনিয়ত। অভিষেকে বোলিংয়ে নিজের জাত চেনালেনও, সময় যত গড়াচ্ছে নিজের আসল কাজ ব্যাটিংটাও সামনে আনছেন তোফায়েল। শুরুটা ঢাকা মেট্রোর বিপক্ষে ৬ ছক্কায় ৩৪ বলে অপরাজিত ৪৭ রানের ইনিংসে।
বরিশালের বিপক্ষে সিলেটের ইনিংসে সর্বোচ্চ ৬৪ রান আসে তোফায়েলের ব্যাট থেকে। তোফায়েলের ফিফটিতে সিলেট লিড পায় ৩৮ রানের। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বল হাতে ৩ উইকেট শিকার করে বরিশালকে অল্পতে গুটিয়ে দিতেও বড় ভূমিকা রাখেন তোফায়েল।
সিলেটের ইনিংসে তোফায়েল ছাড়াও অধিনায়ক অমিত হাসান (৫৬), নাসুম আহমেদ (৫৩), দিশান (৫৩) চার ফিফটিতে প্রথম ইনিংসে সিলেট সংগ্রহ করে ৩৪২ রান।
এবার লিগের ইতিবাচক দিক হচ্ছে নিজের বোলিং ছাপিয়ে নিজেকে ব্যাটার হিসেবে আবিষ্কার করেছেন নাসুম। বরিশালের বিপক্ষে নিজেকে পুরোদস্তুর ব্যাটার হিসেবে প্রকাশ করেন নাসুম। প্রথম ইনিংসে ৫৩ রানের পাশাপাশি রান তাড়ায় খেলেছেন ৫২ বলে ৪৪ রানের ম্যাচ জয়ী দারুণ এক ইনিংস। নিজের আসল কাজ বোলিংয়েও ম্যাচে ৩ উইকেট শিকার করে সিলেটের জয়ে অবদান রেখেছেন এই স্পিনার।
সিলেটের হয়ে অভিষেকের পর থেকেই বোলিংয়ে ধারাবাহিকভাবে ভাল করছেন রেজাউর রাহমান রাজা। অভিষেক সিজনেই ডাক পান বাংলাদেশ টেস্ট দলে, এরপর একাধিকবার ডাক পেলেও এখনও পর্যন্ত জাতীয় দলের হয়ে বাইশগজে নামতে না পারা রাজাও এবার আছেন দারুণ ফর্মে। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফর্ম করে জিতিয়েছেন রংপুর বিভাগের বিপক্ষে।
নিজ মাঠে বরিশালের বিপক্ষেও বোলিংয়ে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও করেছেন ৩৫ রান। সিলেটের হয়ে এখনও পর্যন্ত চার ম্যাচে ৮ ইনিংসে ২০ উইকেট রাজার ঝুলিতে।
ভারতে বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের পর বাংলাদেশ টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েছেন খালেদ আহমেদ। নিজেকে ফিরে পাওয়ার মিশনে খালেদ খেলছেন জাতীয় ক্রিকেট লিগে। সেখানে সিলেটের হয়ে ২৪ উইকেট শিকারে আছেন দারুণ ছন্দে। বরিশালের বিপক্ষে ৪ উইকেট শিকারে সিলেটের শিরোপা জয়ে রয়েছে তার অবদান।
ব্যাটিংয়ে সিলেটের শিরোপা জয়ের মূল কারিগর অমিত হাসান। অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ব্যাট হাতে দলকে সামনে থেকেই টেনেছেন এই ব্যাটার। ৬ ম্যাচের ৯ ইনিংসে এক সেঞ্চুরি আর এক ডাবল, সাথে ৩ ফিফটিতে প্রায় সাতচল্লিশ গড়ে অমিত রান করেছেন ৬২৩। ৬ ম্যাচের ৯ ইনিংসে ৩৫০ রান করে সিলেটের শিরোপা জয়ের পার্শ্বনায়ক পিনাক ঘোষ। অন্যদিকে ৬ ম্যাচের ৯ ইনিংসে ২৯৭ রান করে অমিত-পিনাককে সঙ্গ দিয়েছেন সিলেটের আসাদুল্লাহ আল গালিব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
প্রথম ইনিংস
বরিশাল বিভাগ ৩০৮/১০ (৯৩.২ ওভার) আব্দুল মজিদ ৭৮, সোহাগ গাজী ৪৩; রাজা ৫/৬৯, এবাদত ২/৪০
সিলেট বিভাগ ৩৪২/১০ (১০২.২ ওভার) তোফায়েল আহমেদ ৬৪, অমিত হাসান ৫৬; রুয়েল মিয়া ৩/৭৯, সোহাগ গাজী ২/২৯
দ্বিতীয় ইনিংস
বরিশাল বিভাগ ১৪২/১০ (৩৫.৩ ওভার) সোহাগ গাজী ৩৫, মঈন খান ৩২; খালেদ আহমেদ ৪/১৮, তোফায়েল আহমেদ ৩/১৭
সিলেট বিভাগ ১৪২/৫ (২৭.৩ ওভার) নাসুম ৪৪, অমিত ৩৮*; রুয়েল মিয়া ২/১১, মইনুল ইসলাম ২/৯
ফলাফল: সিলেট ৫ উইকেটে জয়ী।