Image

কার্ডিফের স্মৃতির পাতায় বাংলাদেশ: দুই জয় ও চার সেঞ্চুরির কাব্য

৯৭ প্রতিবেদক: মোহাম্মদ আফজল

প্রকাশ: 2 মাস আগেআপডেট: 6 মিনিট আগে
কার্ডিফের স্মৃতির পাতায় বাংলাদেশ: দুই জয় ও চার সেঞ্চুরির কাব্য

কার্ডিফের স্মৃতির পাতায় বাংলাদেশ: দুই জয় ও চার সেঞ্চুরির কাব্য

কার্ডিফের স্মৃতির পাতায় বাংলাদেশ: দুই জয় ও চার সেঞ্চুরির কাব্য

বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ আজ এক পরিচিত নাম। তবে এই পথচলায় কিছু মাঠ আছে, যেগুলো টাইগারদের জন্য শুধু ভেন্যু নয়, ইতিহাসের ক্যানভাস। তেমনই এক নাম—কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন। সোফিয়া গার্ডেনেই বারবার নতুন ইতিহাস লিখেছে বাংলাদেশ।

এক মাঠে দুই জয়, চার সেঞ্চুরি—কার্ডিফে লেখা আছে টাইগারদের গর্বের ইতিহাস।

কার্ডিফ—ওয়েলসের রাজধানী, কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য যেন এক স্বপ্নভূমি। সোফিয়া গার্ডেনেই বাংলাদেশ খেলেছে মাত্র তিনটি ওয়ানডে, এবং এর মধ্যে দুইটি স্মরণীয় জয় ও চারটি দুর্দান্ত সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছে টাইগাররা। এখানেই অস্ট্রেলিয়ার মতো পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ, এখানেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য এক প্রত্যাবর্তনের গল্প রচিত হয়েছিল।

আর তাইতো বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এটি এক গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতি—এক যুগে দুইটি বড় জয়, চারটি গৌরবময় সেঞ্চুরি। তিনটি ম্যাচ, তিনটি অধ্যায়—যেখানে রচিত হয়েছে লাল-সবুজের অমর কাব্য।

🏏 ২০০৫: আশরাফুল ঝড়ে অস্ট্রেলিয়া পতন

২০০৫ সালের ১৮ জুন, ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ টসে জিতে বোলিং নেয়। শুরুতেই মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে। এরপর তাপস বৈশ্য ফিরিয়ে দেন রিকি পন্টিংকে মাত্র ১ রানে। ম্যাথু হেইডেন কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও শেষ পর্যন্ত ৩৭ রানে নাজমুল হোসাইনের শিকার হন।

শেষমেশ মাইকেল ক্লার্ক (৫৪) এবং ডেমিয়েন মার্টিন (৭৭) দুই ফিফটিতে ভর করে অজিরা তোলে ২৪৯ রান। শেষদিকে সায়মন ক্যাটিচ ও মাইক হাসির দ্রুত জুটি কিছুটা চাপে ফেলে। কিন্তু বাংলাদেশের বোলাররা ছিলেন দুর্দান্ত—বিশেষত মাশরাফি (১০-২-৩৩-১) ও রফিক (১০-০-৩১-০)।

ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই নাফিস ইকবালকে হারালেও আশরাফুলের ব্যাটে রূপ নেয় স্বপ্ন। ১০১ বলে ১০০ রান, যার মধ্যে ছিল ১১টি চারের মার। অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের সঙ্গে গড়া ১৩২ রানের জুটি ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। শেষদিকে আফতাব আহমেদের ১৩ বলে ২১ রানে ৪ বল হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।

শেষদিকে আফতাব আহমেদের সেই ঐতিহাসিক ছক্কা আর ধারাভাষ্যকার ডেভিড লয়েডের বিখ্যাত কণ্ঠ- 🎙️ “That is slower. That’s six, that’s out of here. that’s away. All the way. Aftab Ahmed, 19 years of age! And he(Ponting) can only look on. Bangladesh are home.”
— আজও অনুরণিত হয় ভক্তদের কানে।

🏆 ২০১৭: সাকিব-রিয়াদের জাদুতে সেমিফাইনাল

১২ বছর পর, ২০১৭ সালের ৯ জুন একই মাঠে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ থামায় ২৬৫ রানে। পার্টটাইম বোলার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ঘূর্ণিতে নিউজিল্যান্ডের মিডল অর্ডার ভেঙে পড়ে। সৈকতের বোলিং ফিগার—৩ ওভারে ১৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট—ছিল ম্যাজিকাল।

তবে ২৬৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে একপ্রকার ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় বাংলাদেশের ইনিংস। সেই ধ্বংসাবশেষ থেকে উঠে দাঁড়ান সাকিব আল হাসান (১১৪) এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (১০২*)। তাঁদের ২২৪ রানের জুটি শুধু ম্যাচই জেতায়নি, বাংলাদেশকে প্রথমবার আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে পৌঁছে দেয়।

💔 ২০১৯: সাকিবের লড়াই, বাকিদের নিস্তব্ধতা

২০১৯ সালের বিশ্বকাপে কার্ডিফে বাংলাদেশের তৃতীয় ম্যাচ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ইংল্যান্ড তোলে ৩৮৬ রান—জেসন রয়ের ১৫৩ রানের ইনিংস ছিল বিধ্বংসী। জবাবে বাংলাদেশ করতে পারে মাত্র ২৮০ রান। সাকিব আল হাসান একাই লড়াই করেন, করেন ১১৯ বলে ১২১ রান—একটি অতিমানবীয় ইনিংস, কিন্তু একা লড়াই দিয়ে দল জেতানো যায় না। সেই ম্যাচটি স্মরণ করিয়ে দেয়, প্রতিভা যতই থাকুক, জয় আসে দলের সম্মিলিত পারফরম্যান্সে।

সাকিবের শতক দেখিয়ে দিয়েছিল, ব্যক্তিগত নৈপুণ্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছলেও জয় আসে তখনই, যখন দল একসঙ্গে লড়ে।

🏟️ কার্ডিফে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান-

সাল      প্রতিপক্ষ    ফলাফল    সেঞ্চুরিয়ান

২০০৫   অস্ট্রেলিয়া      জয়      মোহাম্মদ আশরাফুল

২০১৭    নিউজিল্যান্ড   জয়      সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ

২০১৯    ইংল্যান্ড    পরাজয়      সাকিব আল হাসান

তাই কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে কেবল একটি মাঠ নয়, এটি এক আত্মবিশ্বাসের নাম, প্রত্যাবর্তনের প্রতীক। এখানে আশরাফুলের শতক যেমন আমাদের স্মৃতিতে অম্লান, তেমনি সাকিব-রিয়াদ জুটির ম্যাচও এক অনুপ্রেরণা। তিন ম্যাচে দুটি জয়, চারটি সেঞ্চুরি—কার্ডিফে টাইগারদের রেকর্ড গর্ব করার মতোই।

Details Bottom
Details ad One
Details Two
Details Three