শেষের রোমাঞ্চে প্রোটিয়াদের হারিয়ে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া

দক্ষিণ অস 1
Vinkmag ad

অষ্টমবারের মতো ফাইনালে উঠল অস্ট্রেলিয়া। কোলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে সাউথ আফ্রিকা প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ২১২ রান সংগ্রহ করে। ছোট লক্ষ্যমাত্রা পেরোতে গিয়ে অবশ্য বড় ধাক্কা খেতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। তবে সে ধাক্কা কাটিয়ে ঠিকই ম্যাচ বের করে নিয়েছে ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ৩ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে দলটি।

টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে স্বস্তি পায়নি সাউথ আফ্রিকা। সাধারণত প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পুরো বিশ্বকাপ-জুড়ে স্বস্তি ছিল তাঁদের। তবে এদিন নয়। ব্যাটে যতটুকু আনন্দ, তা মিলারের শতকেই মিলেছিল। স্টার্ক-হ্যাজেলউড’দের বোলিং তোপে শুরুতে উইকেট হারানো দলটি ৪৯.৪ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২১২ রান সংগ্রহ করে।

স্পিন ধরছিল পিচে, প্রোটিয়ারা টের পেয়েছিল ভালোভাবেই। আর সেটা কাজে লাগিয়ে অজিদের আটকে দেওয়ার প্রচেষ্টাও ছিল চোখে পড়ার মতো। অজিদের ছোট ছোট জুটি, আর প্রোটিয়াদের ছোট লক্ষ্যমাত্রায় শেষপর্যন্ত আর পেরে ওঠা হয়নি। স্টার্ক-কামিন্স ধৈর্যের পরীক্ষা দিলেন ৪৭ ওভার পর্যন্ত। ৪৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে কামিন্সের বাউন্ডারিতে ম্যাচ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া।

দ্বিতীয় ইনিংসে, ২১৩ রানের মামুলি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ব্যাট করতে নামে অস্ট্রেলিয়া। ট্রাভিস হেড ও ডেভিড ওয়ার্নার মিলে শুরুটাও করেছিল অজিদের মতোই। মার্কো জানসেন ও কাগিসো রাবাদা’দের পেস বাউন্ডারি ছাড়া করতে দুই ব্যাটারের তেমন সমস্যা হচ্ছিল না।

তবে সমস্যা বাঁধল, যখন স্পিন ঢুকল মাঠে। এইডেন মার্করাম নিজের প্রথম ওভার করতে এসে প্রথম বলেই ডেভিড ওয়ার্নারকে সরাসরি বোল্ড করে দিলেন। তখন দলীয় রান ৬০। ঠিক পরের ওভারে রাবাদার ডেলিভারিতে দারুণ এক ক্যাচ দিলে ডার ডুসেন। নতুন ব্যাটার মিচেল মার্শ ফিরেছেন কোনো রান না করেই।

অল্প রানেও আশা বুনতে শুরু করেছে তখন সাউথ আফ্রিকা। হেড অবশ্য তখনো শট খেলে যাচ্ছিলেন, সাথে উইকেট নেওয়ার সুযোগও ফেলে দিয়েছিল সাউথ আফ্রিকা। তবে হেড’কে ফিরিয়েছেন কেশভ মহারাজ। একেবারে প্রথম বলেই বোল্ড! ৪৮ বলে ৬২ রান করে বিদায় নিলেন ভয়ংকর হতে থাকা এই ব্যাটার।

স্টিভ স্মিথ একপাশ ভালোই আগলে নিয়েছেন তখন। সাথে যোগ দিলেন মারনাস লাবুশেইন। দুই ব্যাটার মিলে অল্প লক্ষ্যমাত্রা দেখেশুনেই তাড়া করতে থাকেন। তবে এবার আরেক স্পিনার তাব্রেইজ শামসি এলেন দৃশ্যপটে।

লাবুশেইনকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলার পর, পরের ওভার করতে এসেই মারকুটে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল’কে শর্ট বলে পরাস্ত করে দেন। ম্যাক্সওয়েলকে ফিরতে হয়েছে মাত্র ১ রানে। দলীয় রান রান তখন ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩৭।

সাউথ আফ্রিকার আশার ভেলায় আরেকটু নাচন লাগে। কিন্তু নতুন ব্যাটার জশ ইংলিস’কে সাথে নিয়ে স্মিথ যেন পণ করে নিলেন। আস্তে আস্তে ব্যবধান কমাতে শুরু করেছে তখন অস্ট্রেলিয়া।

স্মিথ-ইংলিস এর ৩৭ রানের জুটি ভাঙে, স্মিথ ফিরলে। জেরাল্ড কোয়েটজির শর্ট ডেলিভারি খেলতে গিয়ে আকাশে তুললেন বল। উইকেটরক্ষক ডি কক এসে ভালো একটি ক্যাচ তালুবন্দি করেন।

তবে ইংলিস ওদিকটায় তখন থিতু হয়ে উঠেছেন। আর নতুন ব্যাটার মিচেল স্টার্কও দিচ্ছিলেন যোগ্য সমর্থন। ম্যাচ বের করেই আনবেন, এমনই পরিস্থিতিতে, ২০ রান বাকি থাকতেই কোয়েটজির ফুল লেন্থ ডেলিভারির শিকার হয়ে ফিরতে হয় ইংলিসকে, ২৮ রানে।

বাকি ছোট পথটুকু অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ও স্টার্ক মিলে খুব একটা ঝুঁকি ছাড়াই পাড়ি দিলেন। ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে, স্টার্ক অপরাজিত রইলেন ৩৮ বলে ১৬ রানে, অন্যদিকে কামিন্স ২৯ বলে ১৪৩ রানে অপরাজিত থেকে কোলকাতায় সেমি জিতেই মাঠ ছাড়লেন।

এর আগে প্রথম ইনিংসে, দক্ষিণ আফ্রিকা টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ইনজুরিকে সাথে করে নামা টেম্বা বাভুমা চার বলের বেশি ক্রিজে থাকেননি। ফিরেছেন শুন্য হাতে। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা কুইন্টন ডি কক, তিনিও আজ নিভু নিভু করে ১৪ বল খেলে ৩ রান নিয়ে বিদায় নিয়েছেন জশ হ্যাজেলউড এর শিকার হয়ে।

তাতে কী! ভরসা করার মতো ব্যাটার তাঁদের ছিল। এইডেন মার্করাম ও ভ্যান ডার ডুসেন। কিন্তু এদিন দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। দলীয় ২২ রানে মার্করাম ও ২৪ রানে ফিরেছেন ডুসেন। অর্থাৎ ২৪ রানে প্রোটিয়াদের ৪ উইকেট নেই।

মিচেল স্টার্কের সাথে হ্যাজেলউড- দুইটি করে উইকেট ভাগ করে নিয়েছেন।

হেনরিখ ক্লাসেনের সাথে এবার ডেভিড মিলার দায়িত্ব নিলেন। অজি পেসারদের সামলিয়ে কীভাবে টিকে থাকা যায়, সেটাই যেন বড় হয়ে উঠল কোলকাতায়। ধীরে ধীরে বিপর্যয় কাটিয়ে দুই ব্যাটার দলের রান এগিয়ে নিতে থাকলেন।

এদিকে ওভারের সাথে রানের তাল মিলানোতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। মাঝখানে বৃষ্টিও একবার বাগড়া দিয়ে গেল। ২৮ ওভারের মাথায় দক্ষিণ আফ্রিকা পেয়েছে দলীয় শতক। মিলান-ক্লাসেন এর ৯৫ রানের জুটি ভাঙে ট্রাভিস হেড এর ডেলিভারিতে ক্লাসেন বোল্ড হয়ে ফিরলে।

ফিফটিও করা হয়নি তাঁর, ৪৭ রানেই ফিরেছেন। ওদিকে হেড অপেক্ষা করছেন পরের ডেলিভারির জন্য আরেকটি উইকেট তুলতে। মার্কো জানসেন একেবারে পরের বলেই লেগ বিফোরের শিকার হয়ে ফিরলে, আফ্রিকা আবারও সংকটে পড়ে।

ফিফটি করে ওদিকে একা হাতে যতটুকু পারা যায়, করে যাচ্ছিলেন মিলার। জেরাল্ড কোয়েটজিকে সাথে নিয়ে জুটি গড়ে তুলতে থাকেন। প্রোটিয়াদের রানের গতিতে তেমন উন্নতি হয়নি। শ্লথ গতিতে দুই ব্যাটার মিলে ৫৩ রানের জুটি গড়েছেন, যা প্যাট কামিন্সের ডেলিভারিতে কোয়েটজির ফেরায় ভেঙে যায়।

দলের রান তখন ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭২। দলের দুইশোর সাথে, মাঠে পড়ে থাকা লড়াকু সৈনিক মিলার তখন শতক হাঁকিয়েছেন। শতক হাঁকিয়েই কামিন্সের বলে বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ১১৬ বলে ১০১ রান করে।

সর্বশেষ দুই ব্যাটার তখন ক্রিজে, ওভারও ছিল হাতে গোনা দুইটি। কাগিসো রাবাদার ব্যাটে একটি ছয় ছাড়া আর কোনো বাউন্ডারি আসেনি। শেষ ওভারের দুই বল বাকি থাকতে কামিন্সের ডেলিভারিতে রাবাদা ক্যাচ দিয়ে ফিরলে শেষ হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং ইনিংস।

৯৭ ডেস্ক

Read Previous

কন্যা সন্তানের বাবা হলেন লিটন দাস

Read Next

ধন্যবাদ, কুইন্টন ডি কক

Total
0
Share