

২০১১ সালের পর আবারও ফাইনালে উঠল ভারত। আজ মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৩৯৭ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে স্বাগতিকরা। সেই সংগ্রহ টপকাতে গিয়ে বেশ কিছুটা লড়াই শেষে হার মানে প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। ভারতের কাছে ৭০ রানে পরাজিত হয়ে গতবারের রানারআপ দলের বিদায়-ঘণ্টা বাজল এবার সেমিতে।
কোহলি ও আইয়ার এর সেঞ্চুরির উপর ভর করে প্রায় চারশো রানের কাছে সংগ্রহ নিয়ে যায় ভারত। এই বিশাল লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে যেয়ে মিচেলের ব্যাটে যা একটু আনন্দ খুঁজে নেয় কিউইরা। এদিকে ভারতীয় পেসার শামি তুলে নিয়েছেন এই বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় ৫ উইকেট। সর্বমোট ৭ উইকেট পেয়েছেন এই বোলার। নিউজিল্যান্ড অলআউট হয়েছে ৩২৭ রানে।
বড় রানের লক্ষ্য তাড়া করতে যেয়ে যে তোড়জোড় দরকার তা জাসপ্রীত বুমরাহর প্রথম ওভারে দুটি চার মেরে কিছুটা প্রমাণ রাখতে চাইলেন ডেভন কনওয়ে। কিন্তু যে মোহাম্মদ শামি উড়ছেন, তাঁকে আটকানোর উপায় কী! নিজের করা প্রথম ওভারের প্রথম বলেই কনওয়ের উইকেট তুলে নিলেন কট-বিহাইন্ডে। দলীয় ৩০ রানেই তাই প্রথম উইকেটের পতন।
আরেক ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র এদিন আর ভারতের বিপক্ষে নিজের ব্যাটের দীপ্তি দেখাতে পারেননি। শামির দ্বিতীয় ওভারেই তিনি ফিরেছেন, কট-বিহাইন্ড হয়েই। কনওয়ে ও রাচিন, দুজনের ব্যাটেই এসেছে ১৩ করে রান।
এইবার অধিনায়ক ও ড্যারিল মিচেল মিলে আশা জাগিয়ে তুললেন। কেন উইলিয়ামসন ও মিচেল দুজনেই বড় রানের দিকে ছুটছিলেন। ১৭তম ওভারে দলীয় একশো রান ছুঁয়েছে নিউজিল্যান্ড। মিচেলের ব্যাটে ফিফটি আসতে খুব বেশি সময় নেয়নি। ফিফটি করার পর রান তাড়ায় আরও গতিশীল হয়ে হয়ে ওঠেন এই ব্যাটার। দলের রান বাড়তে থাকে।
উইলিয়ামসনের ফিফটিও উঠে যায়। ওদিকে মিচেল সেঞ্চুরির কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছিলেন ধীরে ধীরে। অন্যদিকে দলীয় রান ৩০ ওভারেই ২০০ পেরিয়ে যায়। এই সময়ে নিউজিল্যান্ডকে বেশ শক্ত অবস্থানেই দেখা যায়। লক্ষ্য তখনো বহুদূর হলেও, মিটমিটি আলো দেখতে পাচ্ছিল কিউইরা।
৮৫ বলে মিচেলের সেঞ্চুরির পর, শামিকে আবারও অ্যাটাকে আনা হয়। আর সেই ওভারে শামি তুলে নিলেন দুই দুইটি একটি। বড় শট খেলতে গিয়ে উইলিয়ামসন ফিরলেন ক্যাচ হয়ে। শেষ হয় ৭৩ বলে ৬৯ রানের ইনিংস। আর নতুন ব্যাটার টম লাথাম এসেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়লেন।
সেখান থেকে বেশ পিছিয়ে পড়ে দলটি। নতুন ব্যাটার গ্লেন ফিলিপস শুরুতে সেভাবে পিচের সাথে মানিয়ে নিতে পারেননি। মিচেলের তেজেও কিছুটা শ্লথ ভাব আসে। তবে ৪০ ওভারের পর দুজনেই আবার কিছুটা তেড়েফুঁড়ে ব্যাট করতে লাগলেন। তবুও লক্ষ্য অনেক দূরে।
এরমধ্যে ফিলিপস বুমরাহর ডেলিভারিতে ৪১ রানে ক্যাচ তুলে দেন। মার্ক চ্যাপম্যান এসে নিজের জায়গা করতে পারেননি। বাকি সময়ে মিচেলও আর সুবিধা করতে পারলেন না।
শামির ডেলিভারিতে ক্যাচ তুলে দিয়ে তাঁর লড়াকু ইনিংস থামে ১১৯ বলে ১৩৪ রানে। আর শামি’র পকেটে ওঠে চলমান বিশ্বকাপে আরও এক ৫ উইকেট। এই বিশ্বকাপে মোট ৩ বার ৫ উইকেট শিকার করলেন তিনি।
এরপর সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্টের উইকেট নিয়ে সর্বমোট ৭ উইকেট নিজের করে নিয়েছেন এই বোলার। নিউজিল্যান্ড ৪৮.৫ ওভারে ৩২৭ রানে অলআউট হয়েছে।
এর আগে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাগতিক ভারত। সিদ্ধান্তের যথার্থতা নিয়ে নেই কোনো প্রশ্ন। কোহলি ও আইয়ার– দুজনের ব্যাটেই এসেছে শত রান। কোহলির জন্য একটু বেশিই উদযাপনের। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে এখন সর্বোচ্চ-সংখ্যাক সেঞ্চুরি এই ব্যাটারের। শচীনের ৪৯ টি সেঞ্চুরি পেরিয়ে কোহলির আজ পঞ্চাশে পদার্পণ।
পাওয়ারপ্লে কাজে লাগাতে ভারতীয় দুই ওপেনার সিদ্ধহস্ত। এই বিশ্বকাপে প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন বারবার। রোহিত শর্মার দ্রুতগতিতে রান তোলার অভ্যাস স্বাগতিকদের শুরুতেই বড় রানের আভাস দিতে থাকে।
এদিনও শুবমান গিল’কে সাথে নিয়ে ৮.২ ওভারেই ৭১ রান তুলেছেন রোহিত, টিম সাউদির স্লোয়ারে পরাস্ত হয়ে ক্যাচ তুলেছেন কেন উইলিয়ামসনের হাতে। ফিফটি না করেই ফিরতে হয়েছে তাঁকে। ২৯ বলে ৪৭ রান করে।
জুটি ভেঙে অবশ্য ভারত ভেঙে পড়েনি কোনো অংশেই। তিনে নামা ভিরাট কোহলি নিজের ৫০তম ওডিআই শতক করবেন, এমন আশা তো দর্শকরা করছিল। কোহলি নিজেও নিশ্চয়ই করেছেন। সেমিফাইনাল ম্যাচ, যেন মঞ্চটা প্রস্তুত ছিল এই ভারতীয় ব্যাটারের জন্য।
গিল ও কোহলি মিলে দলের রান তুলতে থাকেন সমানতালে। ১৩তম ওভার চলাকালীন ভারত দলীয় শতক পূরণ করে। গিল নিজের অর্ধশতক পূরণ করেন ৪১ বলে। ৬৫ বলে ৭৯ রান করে অবশ্য রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফিরতে হয়েছিল গিলকে।
দুর্দান্ত ফর্মে থাকা শ্রেয়াস আইয়ার এবার ক্রিজে। আইয়ার ও কোহলি মিলে ২৮.১ ওভারে দলীয় রান দুইশো’তে নিয়ে যায়। কোহলি তখন পঞ্চাশ পেরিয়ে ছুটছেন বড় কিছুর দিকে। ভারতের আড়াইশো ছুয়ে যায়, একইসাথে কোহলি-আইয়ার জুটিও শতক ছাড়িয়ে নেয়।
এবার যেন অপেক্ষা কোহলির কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরির। শচীন টেন্ডুলকারের ৪৯তম সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে, নিজের পঞ্চাশতম সেঞ্চুরির পথে তখন এই ব্যাটার। সেঞ্চুরি করার ঠিক আগের বলে একটি রিভিউ নেয় নিউজিল্যান্ড। তবে আজ ছিল এই ভারতীয়’র দিন।
লোকি ফার্গুসনের ডেলিভারিতে ডাবল রান নিয়ে নিজের পঞ্চাশতম ওডিআই সেঞ্চুরি পূরণ করেন কোহলি। গ্যালারিতে ভাসতে থালে করতালির জোয়ার।
এরপর আর বেশিক্ষণ টিকেননি কোহলি। মাঝে এক ওভার খেলে, পরের ওভারেই সাউদির ডেলিভারিতে ক্যাচ তুলে দেন। ১১৩ বলে ১১৭ রানে তাঁর স্মরনীয় ইনিংস শেষ শেষ হয়।
এদিকে আইয়ারও তখন ফুঁসে উঠেছেন। নিজের রান বাড়িয়ে নিচ্ছেন দ্রুত। তিনিও ছুটছেন সেঞ্চুরির দিকে। লোকেশ রাহুলের সাথে বাকি অল্প পথ পাড়ি দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে ব্যাট করতে থাকা আইয়ার ৬৭ বলে শতক হাঁকিয়ে বসলেন। এই ব্যাটার আগের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও পেয়েছিলেন সেঞ্চুরি।
ভারতের রান তখন ৩৫০ ছাড়িয়ে ছুটছিল আরও বেশি কিছুর আশায়। ট্রেন্ট বোল্টের ওভারে ৪ বলে ১৫ রান আসার পর, আইয়ার ক্যাচ তুলে দেন। ৭০ বলে ১০৫ রানের ইনিংস সেখানেই থামে। রাহুলের সাথে আর শেষ করা হয় না ইনিংস-খানি৷
শেষ ওভারে সূর্যকুমার যাদব ফিরেছেন ক্যাচ দিয়ে। কিন্তু রাহুলের ক্যামিও ইনিংসে ভারতের রান বেড়েছে আরও। সাউদির শেষ ওভারে আসা ১৫ রানে ভারত থামে ৩৯৭ রানে। রাহুল অপরাজিত ছিলেন ২০ বলে ৩৯ রানে।