

অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেললেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল! পুরো ম্যাচ নিজের করে নিয়েছেন। আফগানিস্তানের দেওয়া ২৯২ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে গিয়ে ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটেই এসেছে ২০১ রান। ১৯ বল বাকি থাকতেই ৩ উইকেটের জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
ইব্রাহিম জাদরানের দারুণ এক শতকে ২৯২ রানের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড় করায় আফগানরা। অস্ট্রেলিয়া ব্যাট করতে নেমে প্রথম দশ ওভারেই চার উইকেট হারিয়ে বসে। দলের জন্য ভরসা হয়ে দাঁড়ান ম্যাক্সওয়েল, সকল কিছু বৃথা করে দিয়ে ডাবল-সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ৪৬.৫ ওভারেই ম্যাচ নিজেদের করে নেয় অস্ট্রেলিয়া।
২৯২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে পাওয়ারপ্লেতে দিশেহারা অবস্থায় পড়ে অস্ট্রেলিয়া। আফগান বোলারদের সামলাতে না পেরে প্রথম দশ ওভারেই হারায় ৪ উইকেট।
ট্রাভিস হেড ফিরেছেন ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই, নাভিন উল হকের শিকার হয়ে। দলীয় ৪৩ রানে এই পেসারের ডেলিভারিতে লেগ বিফোরের শিকার হন মিচেল মার্শ।
এরপর চিত্রপটে দেখা যায় আজমতউল্লাহ ওমরজাই’কে। এই বোলারের পর পর দুই ডেলিভারিতে ডেভিড ওয়ার্নার ও জশ ইংলিস কুপোকাত হন। হ্যাটট্রিকের সুযোগ নিতে ম্যাক্সওয়েল’কে করা পরের ডেলিভারিতে রিভিউ নেয় আফগান দল। তবে সেটি কাজে লাগেনি।
আফগানদের কাজে লাগেনি আরও অনেক সুযোগ। ম্যাক্সওয়েলের ক্যাচ মিসও করেছে দলটি। আর সেসবের মাশুল দিতে হয়েছে পুরো ইনিংস জুড়ে।
মারনাস লাবুশেইন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গী হিসেবে টিকতে পারেননি, রানআউট হয়ে ফিরেছেন। টিকতে পারেননি মার্কাস স্টইনিস ও মিচেল স্টার্কও। কিন্তু টিকে রইলেন প্যাট কামিন্স। একেবারে আঠার মতো।
অস্ট্রেলিয়ার দলীয় দুইশো’তে ম্যাক্সওয়েল ৭৬ বলে শতকে পৌঁছে যান। এদিকে কামিন্স বল মোকাবিলা করে শুধু সমর্থন দিয়ে যেতে থাকেন এই ব্যাটারকে।
রাশিদ খানের একটি ডেলিভারিতে ছয় হাঁকিয়ে, বেশ সমস্যায় পড়তে দেখা যায় ম্যাক্সওয়েলকে। পায়ে ব্যথা আর ক্রাম্প নিয়ে, অনিশ্চিত মনে হয়, অ্যাডাম জাম্পাও একবার বাউন্ডারি লাইনে এলেন, রিটায়ার্ড হার্ট হতে হয় কি না, কিন্তু না ম্যাক্সওয়েল আবার দাঁড়ালেন।
পায়ের ব্যবহার না করেই একের পর এক বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। প্রয়োজনে নিয়েছেন দুই একটি সিঙ্গেল।
একটা সময়ে গিয়ে অজিদের প্রয়োজন হয় ২৪ বলে ২১ রান। বল করতে আসেন মুজিব উর রহমান। সেই ওভার ডট দিয়ে শুরু করেন ম্যাক্সওয়েল। এরপর ৬, ৬, ৪– জিততে দরকার আর মাত্র পাঁচ রান। এদিকে ম্যাক্সওয়েলের ডাবল সেঞ্চুরি পেরোতে দরকার পাঁচ রান। পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দলের জয় ও নিজের দ্বি-শতক দু’টিই পূরণ করেন এই অজি হার্ড-হিটার।
ম্যাক্সওয়েল অপরাজিত রইলেন ১২৮ বলে ২০১ রান করে। খেলেছেন ২১ টি চার ও ১০ টি ছয়ের মার। অন্যদিকে কামিন্স ৬৮ বলে ১২ রান করে একপাশে স্থির হয়ে থাকলেন।
এর আগে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় আফগানিস্তান। ওপেনিংয়ে নামা ইব্রাহিম জাদরান শতক হাঁকিয়ে অপরাজিত থাকেন। আর বাকি ব্যাটারদের প্রচেষ্টায় ৫ উইকেট হারিয়ে ২৯১ রানের সংগ্রহ তোলে দলটি।
রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও জাদরান শুরুটা ভালোই করেছিলেন দেখেশুনে। তবে জশ হ্যাজেলউডের ডেলিভারিতে গুরবাজ ফিরলেন মাত্র ২১ রান করেই।
এরপর রহমত শাহ’কে সঙ্গী করে পথ চলা শুরু করলেন জাদরান। ৩০ এর বেশি করতে পারেননি রহমত। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বলে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ হন। ভাঙে জাদরানের সাথে ৮৩ রানের জুটি।
জাদরান একপাশ আগলে খেলতে থাকেন। দলের রান দুই উইকেট হারিয়ে ১৫০ ছাড়ায় ৩৩ ওভারে। এরমধ্যে অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি ফেরেন ২৬ রান করে।
আজমতউল্লাহ ওমরজাই’কে সঙ্গী করে জাদরানের ব্যাটে চড়ে ৪০ ওভারের মধ্যে ২০০ এর ঘরে পৌঁছে আফগানিস্তান। এদিকে জাদরানও দেখা পান শতকের। ১৩১ বলে ১০০!
৪৬ ওভারে ২৫০ হওয়ার পর, রাশিদ খানের ক্যামিও ইনিংসে আফগানদের রান বেড়ে গিয়ে নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছে। রাশিদ ৪ ছয় ও ২ চারে ১৮ বলে ৩৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। অন্যদিকে জাদরান ১৪৩ বলে ১২৯ রান করে অপরাজিত ছিলেন।
আফগানরা থামে ২৯১/৫ স্কোরে।