

বিশ্বকাপে আরও এক ম্যাচ, বাংলাদেশের আরও এক লজ্জার পরাজয়। হারতে-হারতে বাংলাদেশ পূর্ণ করল হাফ ডজন। টানা ছয় পরাজয়ে ফের টাইগারদের জায়গা হল টেবিলের একেবারে তলানিতে। কোলকাতায় বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তান ফিরল জয়ের ধারায়। আজকের বড় পরাজয়ের ফলে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের খেলার সম্ভাবনাও কমে এসেছে।
বাংলাদেশের দেওয়া ২০৫ রানের টার্গেট সহজেই টপকে যায় পাকিস্তান। ৭ উইকেটের বড় জয়ে বাকি থাকে ১৭.৩ ওভার। টিকে রইল বাবর আজমদের সেমির আশা।
ইডেন গার্ডেন্সে আজ টস জিতেন সাকিব আল হাসান। আগে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ খেলতে পারেনি ৩০০ বল। ৪৫.১ ওভারে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ ২০৪ রানে। লক্ষ্য তাড়ায় নেমে দুই ওপেনারের ব্যাটেই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যায় পাকিস্তানের। ১৮তম ওভারে দলের সংগ্রহ ছাড়িয়ে যায় একশো। তাসকিনের এই ওভারেই আবদুল্লাহ শফিক, ফখর জামান তুলে নেন ফিফটি।
আগের বলে সিঙ্গেল নিয়ে শফিক দেখা পান পঞ্চাশের। পরের বলে তাসকিনকে ছক্কা হাঁকিয়ে ফিফটি পূর্ণ করেন ফখর জামান। এই পঞ্চাশ রানের মধ্যেই ফখরের ব্যাটে আসে ৫ ছয় ও ২ চার। ফিফটি পূর্ণ করে দুই ওপেনার হয়ে উঠেন আরও মারমুখী। পাঁচ ম্যাচ বেঞ্চে থাকা ফখর জামান প্রমাণ করলেন নিজের সামর্থ্য। তবে ১২৮ রানে মিরাজের হাতে ভাঙে পাকিস্তানের উদ্বোধনী জুটি। ৬৯ বলে ৬৮ করা শফিক রিভিউ নিয়েও উইকেট বাঁচাতে পারেননি।
অধিনায়ক বাবর আজমকেও দ্রুত ফিরিয়ে দেন মিরাজ। লফটেড শট খেলতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ হন ৯ রান করা বাবর। তান্ডব চালিয়ে ৮২ রান করে ফেলা ফখর জামানের উইকেটও তুলে নেন মিরাজই। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ৮১ রানের ইনিংস সাজান ৭ ছক্কা ও ৩ চারে। দলীয় ১৬৯ রানে তৃতীয় উইকেট হারানো পাকিস্তান জয়ের বাকি পথটুকু শেষ করে মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদের ব্যাটে।
৩২.৩ ওভারেই পাকিস্তানের ৭ উইকেটের জয়। রিজওয়ান ২৬ ও ইফতিখার অপরাজিত থাকেন ১৭ রানে।
এর আগে ম্যাচের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই তানজিদ হাসান তামিমকে ফিরিয়ে ১০০তম ওয়ানডে উইকেটের কীর্তি গড়লেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। এবারের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের তালিকায় আফ্রিদি ঢুকলেন সেরা তিনে। তানজিদ তামিম পেলেন বিশ্বকাপে প্রথম ডাক হওয়ার স্বাদ। রিভিউ নিয়েও এলবিডব্লিউর উইকেট বাঁচাতে পারেননি তামিম। আফ্রিদি এই উইকেট নিয়ে লিখেছেন আরও এক রেকর্ড। পেসারদের মধ্যে ওয়ানডেতে দ্রুত ১০০ উইকেট দখলের মাইলফলক এখন তার নামে।
তামিমের দ্রুত বিদায়ে প্রথম ওভারেই উইকেটে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু নেদারল্যান্ডস ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই যেন করলেন। আফ্রিদির নিচু হয়ে আসা বল ফ্লিক করতে গিয়ে উসামা মীরের হাতে হয়েছেন দুর্দান্ত ক্যাচ। ফেরার আগে শান্ত করে গেছেন ৩ বলে ৪। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে অপরাজিত ৫৯ রানের ইনিংস খেলা শান্ত পরের ৬ ম্যাচে একবারও যেতে পারেননি দুই অংকের ঘরে। ৫৯* এর পর থেকে ০, ৭, ৮, ০, ৯, ৪ রানের ইনিংসগুলো যে ক্রমশ বাড়াচ্ছে হতাশা।
অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম চারে নেমেও হয়েছেন ব্যর্থ। শুরুটা দারুণভাবে করে মুশফিক টিকতে পারলেন না বেশিক্ষণ। ১৪৪.৭ কিমি. গতির হারিস রউফের ডেলিভারিতে ব্যাট ছুঁয়ে রিজওয়ানের গ্লাভসে ধরা ৫ রানে থাকা মুশফিক। মাত্র ২৩ রানেই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারিয়ে চরম বিপাকে বাংলাদেশ।
মুশফিকের মতো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদেরও এদিন ব্যাটিং পজিশনে উন্নতি। সাকিবের আগেই ব্যাট হাতে ক্রিজে রিয়াদ। ছন্দে থাকা লিটন দাসকে দেন উপযুক্ত সঙ্গ। লিটনের ব্যাট থেকে আসে ৪৫ রানের ইনিংস। ৬৪ বলে খেলা তার ইনিংস গড়া ছয়টি চারে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ৮৯ বলে জুটিতে আসে ৭৯ রান। আউট হয়ে লিটন নিজেই অবাক হয়ে যান। নেদারল্যান্ডস ম্যাচে মাত্র ৩ রানে আউট হওয়া লিটন আজ পাকিস্তান ম্যাচে ফিরেন ছন্দে। স্ট্রোক্সের ফোয়ারা ছুটিয়ে ছিলেন ফিফটির খুব কাছেই। চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস খেলে ফিরতে পারতেন প্যাভিলিয়নে। কিন্তু হঠাতই ছন্দপতন। ইফতিখারের খুব সহজ বলে অবিশ্বাস্যভাবে হারান উইকেট।
অভিজ্ঞ রিয়াদ আরও একবার ধরেন হাল। ৫৮ বলে হাঁকিয়েছেন পঞ্চাশ। তবে শাহীন শাহ আফ্রিদি অ্যাকশনে আসতেই বোল্ড রিয়াদ। ৫৬ রানে রিয়াদের বিদায়ে তাওহীদ হৃদয়ের আগমন। ফেরার ম্যাচে দারুণ শুরুর ইঙ্গিত দিয়েও ব্যর্থ হৃদয়। সিঙ্গেল নিয়ে শুরু, দ্বিতীয় বলেই উসামা মীরকে মিড উইকেট দিয়ে হাঁকান ছয়। পরের বলেই স্লিপে ক্যাচ তুলে হাটা ধরেন সাজঘরের পথে।
ইফতিখারকে ইনিংসের ৩৭ তম ওভারে পেয়ে সাকিবের ব্যাটে হ্যাটট্রিক বাউন্ডারি। ২৬ থেকে ৩ বলের ব্যবধানে সাকিবের ৩৮ রান। শুরুতে ব্যাটে বলে ঠিকঠাক হচ্ছিল না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বেশ মানিয়ে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন অর্ধশতকের দিকে। বাধ সাধলেন হারিস রউফ। অর্ধশতক না করেই ফিরতে হল সাজঘরে। ৬৪ বলে ৪ চারে ৪৩ রান করে আউট হলেন অধিনায়ক। এরপর তাসকিনকে নিয়ে লড়াই চালান মেহেদী হাসান মিরাজ। মোহাম্মদ ওয়াসিম তিন বলের ব্যবধানে স্টাম্প ভেঙে বিদায় করেন মিরাজ ও তাসকিনকে।
শেষ ব্যাটার মুস্তাফিজকেও বোল্ড করে বাংলাদেশের ইনিংস থামান ওয়াসিম জুনিয়র। ২০৫ রানের টার্গেট পাকিস্তানের।