

বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম বেদনার এক রাত, কোলকাতার ইডেনে ডাচ বোলারদের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ। এবারের বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের কাছেও পরাজয়ের লজ্জায় ডুবল সাকিব আল হাসানের দল। টানা পাঁচ হারে বাংলাদেশের জায়গা হল পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে। ২৩০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে টাইগারদের ইনিংস থামে ১৪২ রানে। ৮৭ রানের রোমাঞ্চকর জয়ে বিশ্বকাপ রাঙাল নেদারল্যান্ডস।
২৩০ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুটা দেখে-শুনেই করেন লিটন দাস ও তানজিদ তামিম। তবে মুহূর্তেই যে পালটে যায় টাইগারদের সাজানো দৃশ্যপট। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ব্যর্থ লিটন, উইকেটকিপারের গ্লাভসে হয়েছেন ক্যাচ। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই ব্যর্থতার বৃত্তে থাকা লিটন দাস আজ ডাচদের পেয়েও করতে পারলেন না ইনিংস বড়। ১২ বল খেলে বিদায় নিয়েছেন ৩ রানে।
লিটনের বিদায়ের পর উইকেটে থাকতে পারেননি তানজিদ তামিমও। তিন বাউন্ডারিতে ১৫ রানে থাকা তামিমও এজ হয়ে ক্যাচ স্কট এডওয়ার্ডসের গ্লাভসে। ১৯ রানেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে চরম বিপাকে বাংলাদেশ। তিনে নামেন মেহেদী হাসান মিরাজ, শান্ত ব্যাট করতে আসেন চারে। এই জুটিতে ফিরেছিল স্বস্তিও। কিন্তু শান্তই ফিরতে পারেননি রানে।
পল ভ্যান মেকেরেনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট ছুয়ে স্লিপে ভ্যান বিকের হাতে হয়েছেন দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার। দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে ডাক হওয়া শান্তর ব্যাট থেকে আজ আসে ৯ রান। আফগানিস্তানের ম্যাচে অপরাজিত ৫৯ রানের ইনিংস খেলা শান্ত পরের ৫ ম্যাচে একবারও যেতে পারেননি দুই অংকের ঘরে। ৫৯* এর পর থেকে ০, ৭, ৮, ০, ৯ রানের ইনিংসগুলো যে ক্রমশ বাড়াচ্ছে হতাশা।
থিতু হয়েও দলকে টানতে পারলেন না অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। মাত্র ৫ রানেই সাকিবের বিদায় বাংলাদেশের রান তাড়া কঠিন হয়ে যায় বাংলাদেশের। দারুণ খেলতে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজও ফিরলেন উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ তুলে। ফেরার আগে ৫ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় মিরাজের সংগ্রহ ৪০ বলে ৩৫।
৬৯ রানে পাঁচ উইকেট হারানো বাংলাদেশ এদিন পায়নি মুশফিকুর রহিমের সাপোর্টও। ১ রানের ব্যবধানে মুশফিক হয়েছেন বোল্ড। ৭০ রানে ৬ উইকেট নেই বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে। মেকেরেনের তৃতীয় শিকার হওয়া মুশফিকের রান কেবল ১। এরপর বাংলাদেশ পায় শেষ ভরসা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে।
রিয়াদ-মেহেদী মিলে ধীরগতিতে জুটি বড় করার চেষ্টায়। ২৮ ওভারে গিয়ে বাংলাদেশ পৌঁছায় একশো রানে। তবে এই দুইয়ের ব্যাট থেকে ৩৮ রানের বেশি আসেনি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউটের শিকার শেখ মেহেদী। ১৭ রানে থামে তার লড়াইয়ের ইনিংস। ১০৮ রানে সপ্তম উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ পুরোপুরিভাবে খাদের কিনারায়।
আগের ম্যাচের মতোই একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে তাসকিন আহমেদ টিকে গেলেও রিয়াদই হারিয়েছেন উইকেট। বাস ডি লিডের বলে পুল খেলতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে হয়েছেন ক্যাচ। ৪১ বল খেলা রিয়াদের ইনিংস থামে ২০ রানে। আর তাতেই জয়ের সুবাস বইয়ে যায় ডাচ শিবিরে।
তাসকিন, মুস্তাফিজ জুটিতে কমে কেবল হারের ব্যবধান। মুস্তাফিজ ২০ ও তাসকিন ১১ রানে আউট হলে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ৮৭ রানের বড় পরাজয়ে নেদারল্যান্ডস রাঙাল বিশ্বকাপ। মাত্র ২৩ রান খরচায় পল ভ্যান মেকেরেনের শিকার ৪ উইকেট। তার হাতেই উঠল ম্যাচ সেরার পুরষ্কার।