রোমাঞ্চের অলি-গলি পেরিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ৫ রানে হারাল অস্ট্রেলিয়া

aus nz

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে ওডিআইতে যৌথভাবে সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল এই ম্যাচে, ৭৭১ রান। প্রথমে ব্যাট করতে নামা অস্ট্রেলিয়া ৩৮৮ রান সংগ্রহ করে। বিপরীতে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড সেই রান তাড়া করে শেষ ওভারের উত্তেজনায় নিয়ে যায়। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ৫ রান। কিন্তু তা আর নেওয়া হয়ে ওঠেনি। ৫ রানে ম্যাচ হারে নিউজিল্যান্ড।

একদিকে হেডের সেঞ্চুরি, অন্যদিকে রাচিনের। অস্ট্রেলিয়ার বাকি ব্যাটাররাও স্ট্রাইক-রেট বাড়িয়ে রান তুলেছেন। আর এদিকে কিউইদের পক্ষে মুগ্ধ করে গেছেন জেমস নিশাম। ৩৮৯ রানের লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়েই গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড, নিশামও হালটা ধরেছিলেন ঠিকঠাক। তবে একেবারে অল্পের জন্যই ৫ রানের জয়টা অস্ট্রেলিয়ার নামেই লেখা হয়ে গেল।

৩৮৯ রানের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা। তিনে নামা রাচিন রবীন্দ্র যতক্ষন ক্রিজে ছিলেন মুগ্ধ করে গেলেন তাঁর দক্ষতা দিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার মতোই পাওয়ারপ্লে কাজে লাগিয়েছে তাঁদের প্রতিপক্ষও। উইকেট হারিয়েছিল দুইটি, তবে এমন ম্যাচে প্রথম ১০ ওভারে ৭৩ রান আনা তো কার্যকরী হবেই।

ডেভন কনওয়ে ও উইল ইয়াং ফিরেছেন, যথাক্রমে ২৮ ও ৩২ রান নিয়ে। রাচিন একপাশ আগলে পড়ে রইলেন যতক্ষণ মন না সরে। ইন-ফর্ম ব্যাটার ড্যারিল মিচেলের সাথে গড়ে তুললেন অনবদ্য ৯৬ (৮৬) রানের জুটি।

অ্যাডাম জাম্পা ব্রেক-থ্রু নিতে বরাবরই পটু। সেই প্রমাণ আবারও দিলেন মিচেলের উইকেট তুলে নিয়ে। মিচেল ফিরলেন ৫১ বলে ৫৫ রানে। টম লাথাম, গ্লেন ফিলিপস, জেমস নিশামও সঙ্গী হয়েছেন রাচিনের।

লাথাম ও ফিলিপস ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের রান ২৫০ পেরিয়েছে ৩৫.৫ ওভারেই। রাচিনও ১০০ পেরিয়েছেন মাত্র ৭৭ বলে। রাচিনের ইনিংসে আর ১৬ রান যোগ করতেই ফিরতে হয়েছে প্যাট কামিন্সের শিকার হয়ে। ৮৯ বলে ১১৬ রানের ইনিংসে ছিল ৯ টি চার ও ৫ টি ছয়।

বাকি কাজটা একা হাতে সামলানোর দায়িত্ব নিলেন নিশাম। সামলিয়েও ফেলছিলেন প্রায়। শুধু অল্প দূরত্ব, যা পেরোনো হয়নি কিউই বা নিশামের। ১২ বলে ১৭ করে ফেরা মিচেল স্যান্টনার সঙ্গ দিলেন নিশামকে কিছু পথ এগিয়ে নিতে। ম্যাট হেনরিও ছিলেন ক্রিজে ৮ টি বল খেলেছেন।

নিশাম ওদিকে হাত চালিয়ে যাচ্ছেন লক্ষ্যের কাছাকাছি দলের রান পৌঁছে দিতে। দলটির শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৯ রান। ওভারটি করেছেন মিচেল স্টার্ক। স্লো-ওভাররেটের কারণে পেনাল্টি পেয়ে ত্রিশ গজে ছিল একজন ফিল্ডার বেশি।

প্রথম বলে ট্রেন্ট বোল্ট ঠিকই সিঙ্গেল নিয়ে দিলেন নিশামকে। পরের বল ওয়াইড ও চার, ভাগ্যটা সহায় ছিল বলেই মনে হচ্ছিল। পরের ৩ বলে ডাবল-রান নিয়েছেন নিশাম। প্রয়োজন ছিল ২ বলে ৭ রান। কিন্তু এরপরের বলেও দুই রান নিতে গিয়ে রানআউটের শিকার হন নিশাম। এখানেই যেন ম্যাচটা শেষ হয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের। শেষ বলে ৫ রান প্রয়োজন, স্টার্কের ফুল লেন্থ ডেলিভারিতে লোকি ফার্গুসন কোনো রান তুলতে পারেননি। ফলে ৫ রানের ব্যবধান রেখেই ম্যাচ শেষ করে নিউজিল্যান্ড। নিশাম ৩৯ বলে করেছেন ৫৮ রান।

অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন অ্যাডাম জাম্পা। ২ টি করে উইকেট নিয়েছেন জশ হ্যাজেলউড ও প্যাট কামিন্স।

এর আগে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের একরকম তুলোধুনো করে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা। যেখানে ট্রাভিস হেডের সেঞ্চুরির কথা বলতে হয় বড় গলায়। ৬৭ বলে ১০৯ রানে আউট হয়েছেন এই ব্যাটার। ডেভিড ওয়ার্নারের সাথে শুরু ছিল ইনজুরি থেকে ফিরে আসা হেডের। এই দুইজনের শুরুর পর পরের দিকে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, জশ ইংলিস, প্যাট কামিন্সদের স্ট্রাইকরেটের তুবড়ি ছুটিয়ে করা রানে প্রায় ৪০০ এর কাছাকাছি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।

বোলাররা পাত্তা তো পায়নি, মাঠের এফোর্টেও বেশ কমতি ছিল নিউজিল্যান্ডের। কিছু ‘চান্স মিস’ করতেও দেখা গেছে তাঁদের। যদিও ইনিংসের শেষদিকে ট্রেন্ট বোল্টের ৩ উইকেট-প্রাপ্তিতে কিছুটা স্বস্তি মিলেছিল, কিন্তু তা বড্ড দেরি হয়ে গেছে।

হাতের ফ্র্যাকচারের ইনজুরিতে ছিল হেড। ফিরেই ডেভিড ওয়ার্নারের সাথে গড়লেন ১৭৫ রানের জুটি। যেখানে ওয়ার্নার খেলেছেন ৬৫ বলে ৮১ রানের ইনিংস। সেঞ্চুরিটা পাওয়া হয়নি। ইনিংসের শুরুর ১০ ওভারে এই দুইজন মিলে ১০ ছয়ে দলের খাতায় তোলেন ১১৮ রান।

এই দুই ব্যাটার ছাড়াও ম্যাক্সওয়েল খেলেছেন ২৪ বলে ৪১ রানের ইনিংস। ইংলিশের ব্যাটে আসে ২৮ বলে ৩৮ রান। অধিনায়ক কামিন্সকেও আটকানো যায়নি, ১৪ বলে তুলেছেন ৩৭ রান, যেখানে ছিল ৪ টি ছয়ের মার। শেষপর্যন্ত সব উইকেত হারায় বটে অস্ট্রেলিয়া, ৪৯.২ ওভারে থামে ৩৮৮ রানে।

নিউজিল্যান্ডের হয়ে গ্লেন ফিলিপস চমৎকার ওভার করেন। ১০ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৩৭ রান, নিয়েছেন ৩ টি উইকেট। বোল্ট ৭৭ রান ও ৩ উইকেট নিয়েছেন, তবে আরও বড় স্কোর থেকে অস্ট্রেলিয়াকে বিরত রাখতে ভূমিকা ছিল তাঁরও। মিচেল স্যান্টনার ৮০ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট।

৯৭ ডেস্ক

Read Previous

কোলকাতায় ডাচদের অল্পতেই আটকে দিল বাংলাদেশ

Read Next

নওয়াজ’কে কেন বল দেওয়া হলো, বোঝেননি ওয়াসিম আকরাম

Total
0
Share