

এশিয়া কাপের আর একটি ম্যাচ বাকি। সেটা ফাইনাল। মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। পরপর দুইবার এশিয়া কাপের ফাইনালে লঙ্কানরা। ঘরের মাটিতে খেলা। দলও আছে ভালো ছন্দে। অন্যদিকে ২০১৮ সালের পর ফাইনালে ভারত। সেবার পেয়েছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার তকমা। এরপর থেকে ভারতের কপালে আর কোনও শিরোপা জোটেনি। দুই দলই মুখিয়ে আছে বিশ্বকাপের আগে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দিকে।
১৭ সেপ্টেম্বর, কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম প্রস্তুত হয়ে আছে ফাইনাল আয়োজনে। শ্রীলঙ্কার ঘরের মাঠ, লঙ্কান দর্শক দিয়ে ঠাসা থাকবে গ্যালারি, সে কথা না বললেও চলে। তবে ভারতীয় দর্শকও কম নয়। এর আগের ম্যাচগুলোতেও দেখা গেছে, ভারতের খেলার দিনে আকাশি-নীল জার্সি-ধারী বিভিন্ন-বয়সী লোকদের। তাই ফাইনালে দুই দলের দর্শক থাকছে গ্যালারি-ভরা।
সমীকরণে এগিয়ে কোন দল
স্বাভাবিকভাবে ভারতের কথাই আসবে, প্রশ্ন যদি হয় সমীকরণে। দুই দলের ওডিআই পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেও, ভারত-শ্রীলঙ্কা মুখোমুখি দেখায় ভারত এগিয়ে আছে। এশিয়া কাপের পরিসংখ্যানে, শিরোপায় ভারত ৭ বার এবং শ্রীলঙ্কা ৬ বার। এখানে খুব বেশি পার্থক্য নেই বললেই চলে। এশিয়া কাপ জিতে যে বেশ অভ্যস্ত লঙ্কান দল, তা অনুমান করা যেতেই পারে। দলটি এখনো ‘ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে টুর্নামেন্টে টিকে আছে।
ভারত-শ্রীলঙ্কা এশিয়া কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছে ৮ বার। তাতে ভারতের জয় ৫ এবং শ্রীলঙ্কার জয় ৩। শেষ যেবার দুই দল মুখোমুখি, তা ২০১০ সালের কথা- সেবার ভারতের কাছে পরাজিত হতে হয় লঙ্কানদের। তবে এসেছে নতুন সময়। তাই আসন্ন ম্যাচের ফলাফল নিয়ে খুব আগাম কিছু অনুমান করা যায় না।
দুই দলের খবরা-খবর
সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক জয় নিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে শ্রীলঙ্কা। দলের মধ্যে সেই আত্মবিশ্বাস থাকবে, এমনটা বোঝা যায়। অন্যদিকে সুপার ফোরে নিজেদের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশে বিপক্ষে ৬ রানের পরাজয় গুনতে হয়েছে ভারতকে। তবে পরিবর্তিত একাদশ নিয়ে নামা ভারতের হয়তো সেই হার তেমন প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু সেটা খুব জোর দিয়েও বলা যায় না। কিছু চিন্তার ছাপ ভারতীয় দলে থাকতে পারে।
নতুন করে ইনজুরির খবর আছে দুই দল থেকেই। পাকিস্তান ম্যাচের দিন চোট পাওয়া লঙ্কান স্পিনার মাহিশ থিকশানা থাকতে পারছেন না ফাইনাল ম্যাচে। তাঁর বদলে দলে সুযোগ দেওয়া হয়েছে টপ অর্ডার ব্যাটার সাহান আরচ্চিগে’কে। তবে থিকশানার বদলে একাদশে দেখা যেতে পারে স্পিনার দুশন হেমন্ত’কে।
অন্যদিকে ভারতীয় দলে চোট পেয়েছেন স্পিন-বোলিং-অলরাউন্ডার অক্ষর প্যাটেল। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ-চলাকালীন সময়ে ‘নিগলস’ বোধ করেন তিনি। গতকালের ম্যাচ এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাটে বেশ ভাল করেন অক্ষর। তাঁর বদলে দলে ডাক পেয়েছেন আরেক স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দর।
দুই দলেই বেশ চলমান পারফর্মার রয়েছে। আগের ম্যাচেই ভারতীয় ওপেনার শুবমান গিল সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। ভিরাট কোহলিও আছেন ছন্দে, যদিও শেষ ম্যাচে তিনি একাদশে ছিলেননা। ভারতীয় ওপেনিং-জুটি লঙ্কানদের চিন্তার কারণ হতে পারে। পাশাপাশি লোকেশ রাহুল-ইশান কিষানের মিডল-অর্ডার ব্যাটিং বেশ আশা জাগানিয়া। বোলিংয়েও দারুণ দলের পেসার ও স্পিনাররা। জাসপ্রীত বুমরাহ তো আছেন। ওদিকে লঙ্কান কন্ডিশনে কুলদীপ যাদব যেকোনো সময় হয়ে যেতে পারেন ভয়ংকর।
এদিকে শ্রীলঙ্কার ওপেনিংয়ে এর আগের ম্যাচে কুশল পেরেরাকে দেখা গেছে। দুর্ভাগ্যজনক রান-আউট হওয়ার আগে বেশ দুরন্ত শুরু করেছিলেন ব্যাটে। ফাইনালে হয়তো তাকেই দেখা যাবে। লঙ্কানদের টপ-অর্ডারের দিকে তাকালে বেশ আশাবাদী হতে হয়। কুশল মেন্ডিসের কথা বলতে হয়, যিনি এই টুর্নামেন্টে ৩ টি অর্ধশতকের মালিক, যেখানে আবার দুইটি ইনিংস নব্বইয়ের ঘরে। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে অবস্থান করছেন। এছাড়াও চারিথ আসালাঙ্কা, সাদিরা সামারাবিক্রমা- দলের ব্যাটিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারেন। লঙ্কানদের স্পিনের কথা আলাদাভাবে বলতে হবে। ভারত অবশ্য ইতোমধ্যে জেনেই গেছে। সুপার ফোরের ম্যাচে ভারতীয় ব্যাটিংয়ে ধস নামানোর কাজটা স্পিনাররাই করেছিল। পেস বোলিংয়ে মাথিশা পাথিরানা পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন। অবস্থান করছেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট-শিকারি হিসেবে।
ভারতের সম্ভাব্য একাদশ:
রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শুবমান গিল, ভিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল (উইকেটরক্ষক), ইশান কিষান, হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, শার্দুল ঠাকুর, জাসপ্রীত বুমরাহ, কুলদীপ যাদব, মোহাম্মদ সিরাজ
শ্রীলঙ্কার সম্ভাব্য একাদশ:
পাথুম নিশাঙ্কা, কুশল পেরেরা, কুশল মেন্ডিস (উইকেটরক্ষক), সাদিরা সামারাবিক্রমা, চারিথ আসালাঙ্কা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, দাসুন শানাকা (অধিনায়ক), দুনিথ ওয়াল্লেলাগে, দুশন হেমন্ত, কাসুন রাজিথা, মাথিশা পাথিরানা
আবহাওয়া, পিচ ও কন্ডিশন
কলম্বোতে গত কয়েকদিন থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে থেমে থেমে। সুপার ফোরের ম্যাচগুলো বিভিন্ন সময় বৃষ্টির কারণে বন্ধ ছিল। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ গড়াল রিজার্ভ-ডে’তেও। ফাইনাল ম্যাচের দিনও আকাশ মেঘলা ধরনের থাকবে। ওভার কমিয়ে খেলার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। একেবারে খেলার পরিস্থিতি না থাকলে, পরদিন রিজার্ভ-ডে’তে গড়াবে ফাইনাল ম্যাচ।
পিচের প্রসঙ্গ আনলে বলতে হয়, একই মাঠে গত ৯ দিন থেকে ফাইনাল দিয়ে ৬ষ্ঠ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্যান্ডির পাল্লেকেলেতে সুপার ফোরের ম্যাচগুলো হওয়ার কথা থাকলেও, আবহাওয়ার কারণে কলম্বোতে আনা হয়। পিচ স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা ‘স্লো’ থাকবে। বল টার্ন করবে, স্পিনাররা সুবিধা পাবে। পাশাপাশি ব্যাটারদের জন্যেও একেবারে মন্দ কিছু হবেনা আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের পিচ।