

ওয়ার্ন বেঁচে থাকলে আজ তাঁর বয়স হতো ৫৪ বছর। ২০২২ সালের ৪ মার্চ পৃথিবী থেকে বিদায় নেন এই স্পিন কিংবদন্তী। লেগ-স্পিনে অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়ে জয় করেছেন বহু কিছু। ছিলেন কিছুটা খেয়ালি স্বভাবের। টেস্টে ৭০৮ উইকেট, ওডিআইতে ২৯৩ উইকেট নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট-শিকারি বোলারদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন। তাঁর মোট উইকেটসংখ্যা ১০০১ টি।
আজ শেন ওয়ার্নের জন্মদিন। সেই উপলক্ষ্যে তাঁর সম্পর্কে কিছু জানা যাক;
শেন ওয়ার্ন ছিলেন ইস্ট স্যান্ড্রিংহাম ক্রিকেট ক্লাবে। বয়স তখন একেবারেই কম। সেখানে ওয়ার্নকে লেগ-ব্রেক বল করতে পরামর্শ দেওয়া হতো। খুব কম বলই ওয়ার্ন সেসময় ‘পিচ’ করতে পারতেন। তখন তিনি ব্যাট করতে পছন্দ করতেন।
১৯৯১/১৯৯২ সালে ভারত অস্ট্রেলিয়া সফর করে। সেই সিরিজের তৃতীয় টেস্টে শেন ওয়ার্নের ডেব্যু হয়। ডেব্যুকালীন সময়ে ওয়ার্নের ওজন ছিল ৯৭ কেজি।
কলম্বোতে, শ্রীলঙ্কা ৭ উইকেটে ১৫০ রানে অবস্থান করছিল। এই সময় অজি অধিনায়ক অ্যালান বোর্ডার তাঁর তরুণ লেগ স্পিনারের হাতে বল তুলে দেন। শেন ওয়ার্নের বোলিং রেকর্ড তখন, ৯৩ ওভারে ৩৪৬ রান দিয়ে ১ উইকেট। সেদিন লঙ্কানদের বাকি ৩ উইকেট নিয়ে নেন ওয়ার্ন দ্রুতই। অস্ট্রেলিয়া জয় পায় ১৬ রানে।
শেন ওয়ার্নের একটি বিখ্যাত উক্তি,
“স্পিন বোলিংয়ের একটি শিল্প হচ্ছে, যখন আসলেই কিছু ঘটছেনা, তখন ব্যাটসম্যানকে চিন্তা করানো যে, ‘স্পেশাল’ কিছু ঘটছে।”
শেন ওয়ার্ন মনে করতেন, মূলত ব্যাটসম্যানরা ‘কম্বিনেশন’ নিয়ে চিন্তিত থাকে, বোলাররা নয়। আর তাঁর যেকোনো রহস্যময় ডেলিভারি আবিষ্কার হতো অ্যাশেজ সিরিজের আগে। এবং অ্যাশেজে তিনি সেই ডেলিভারি কাজে লাগাতেন।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটি টেস্টে অ্যান্ড্রু জোনস-কে আউট করার আগে, ওয়ার্ন ফিল্ড আম্পায়ার স্টিভ ডান- এর দিকে তাকিয়ে হাসি ‘ফ্ল্যাশ’ করেন এবং বলেন: THIS IS THE ONE এবং সেই বলেই জোনস ফেরেন লেগ বিফোরের শিকার হয়ে।
শেন ওয়ার্ন স্লেজিং করতেন বিশদভাবেই।
তিনি নাসির হুসাইনকে সাদ্দাম বলে সম্বোধন করতেন, গ্রাহাম গুচকে মিস্টার গুচ বলে। আবার তিনি এও জানতেন কোথায় তাকে থামতে হবে। শচীন টেন্ডুলকারকে খুব কমই কিছু বলেছেন।
একবার ভারতীয় ব্যাটার সৌরভ গাঙ্গুলী হাফ-ভলি বলে রক্ষণাত্মকভাবে প্যাড করছিলেন। শেন ওয়ার্ন তাঁর দিকে এগিয়ে গিয়ে, অন্য প্রান্তে শচীনের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, লোকে তাঁর (গাঙ্গুলীর) স্ট্রোক দেখতে এসেছে, তাঁর ব্লক দেখতে নয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই গাঙ্গুলী স্টেপ-আউট করে বের হয়ে যান, এবং বল বুঝতে না পেরে স্টাম্পিং হয়ে ফেরেন।
সবচেয়ে কম রানআপে তিনি যে পরিমান ‘টর্ক’ পেয়েছিলেন তা অবিশ্বাস্য। বল যেদিকে ঘোরে, তাঁর বিপরীত দিকে প্রবাহের জন্ম দেওয়া, যা ফিজিক্সের ভাষায় ম্যাগনাস ইফেক্ট, তাই করতেন ওয়ার্ন। প্রায়শই ব্যাটসম্যানরা তাদের পা প্রসারিত করে দিতেন ওয়ার্নের বলের সামনে, তাঁর পরেও এর প্রবাহিত ক্ষমতা এত বেশি যে, তা আরো চওড়া হয়ে ঠিকই জায়গা খুঁজে নিত স্ট্যাম্প ভাঙ্গার জন্য।
তাঁর এসব কারবারের জন্য অবশ্যই তিনি পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। তাঁর প্রতিটা ডেলিভারির জন্য ছিল পরিকল্পনা। স্ট্রাউস যেমন বলেছেন, ওয়ার্ন একটি বল করার আগে পুরো ওভারের পরিকল্পনা করেছিলেন। এমনকি যদি একজন ব্যাটসম্যান মাইন্ড-গেম থেকে উতরেও যায়, তাকে আউট করার জন্য পদ্ধতিগত পরিকল্পনা ওয়ার্নের ছিল। ওয়ার্ন চিন্তা করতেননা বল কোথায় পিচ করবে বা কোনদিকে ঘুরবে। ব্যাটসম্যান কোন ধরনের স্ট্রোক খেলতে চায়, কিভাবে সেই বল তাঁর স্ট্রোকে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে, সে সম্পর্কে তিনি ভাবতেন।
শেন ওয়ার্ন কখনোই ফিটনেস ড্রিল নিয়ে আগ্রহী ছিলেন না। ইয়ান চ্যাপেল একটি গল্প বলেন। একটা ম্যাচের আগে ওয়ার্ন তাকে জিজ্ঞেস করছিলেন, কেন আমরা এই ‘স্টুপিড’ ৪৫ মিনিটের ফিল্ডিং অনুশীলন করছি? আমার যা দরকার তা হল নেটে কয়েকটি বল করা এবং তারপরে ড্রেসিংরুমে বসে স্মোক করা, চা খাওয়া এবং আজকে যে ছেলেদের বল করতে হবে তাদের কথা ভাবা।
একদা গ্যাবা টেস্টের সময়, ব্রিসবেন লায়ন্স থেকে অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবলাররা ভিজিটে এসেছিলেন, সেসময় ওয়ার্ন একটি বিয়ার ধরে ছিলেন, এক কোণে বসেছিলেন, তাঁর হাঁটুতে একটি বরফের প্যাক রেখেছিলেন এবং কথা বলার সময় তিনি ধূমপান করছিলেন।
২০১১ বিশ্বকাপ। ইংল্যান্ড বনাম ইন্ডিয়া ম্যাচের আগে শেন ওয়ার্ন একটা টুইট করলেন। লিখলেন, এই ম্যাচে তাঁর প্রেডিকশন, ম্যাচটা টাই হতে যাচ্ছে। এবং আশ্চর্যজনকভাবে সেই ম্যাচ টাই হয়। পরবর্তীতে ওয়ার্নের টুইট বেশ হৈচৈ ফেলে। ফক্স স্পোর্টস সেসময় শিরোনাম করেছিল, জিনিয়াস নাকি ফিক্সার!
শুভ জন্মদিন, শেন কিথ ওয়ার্ন!