

বিশ্বকাপের পর ক্রিকেটের দ্বিতীয় বড় টুর্নামেন্ট বলা হয় অনেকক্ষেত্রে। আদতে তাই হওয়ার কথা। এশিয়া কাপ। এশিয়ান ক্রিকেট দলগুলোর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়৷ সংখ্যাটা অবশ্য খুব বেশি নয়। এবারও ৬ দলের আয়োজনে এই টুর্নামেন্ট চলছে। এই আয়োজনে ফাইনাল ব্যতীত আর কোনো ম্যাচে রিজার্ভ ডে ছিল না। পরবর্তীতে সুপার ফোরে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে রিজার্ভ ডে নির্ধারণ করে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)। রিজার্ভ ডে অবশ্য কাজে লাগছে, ম্যাচ গড়িয়েছে সেখানেই। আদতে এই সিদ্ধান্ত কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে ক্রিকেটের জন্য?
এই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সুপার ফোরে বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কার ম্যাচের ক্ষেত্রে কোনো অতিরিক্ত দিনের সুবিধা পাচ্ছে না দল দুটি। তাঁদের জন্য এই সিদ্ধান্ত কেমন হয়েছে? বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, এমন কিছু তিনি আগে দেখেননি। টুর্নামেন্টের মাঝপথে রিজার্ভ ডে দেওয়ার সিদ্ধান্ত, তাও আবার শুধুমাত্র একটা ম্যাচকে কেন্দ্র করে, হতাশই মনে হয়েছে বাংলাদেশ দলের কোচকে। এই হতাশা বা বিরক্তি ছিল শ্রীলঙ্কান কোচ ক্রিস সিলভারউডের মধ্যেও। বা কিছুটা অবাক হয়েছেন। ভদ্রতার খাতিরে অবাক হওয়া শ্রেয়।
বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বোর্ড থেকে যে বিবৃতি, সেখানে আবার ভিন্ন কথা বলা হয়েছে। দুই দেশের বোর্ড একইরকম বিবৃতি দিয়েছেন। এবং তারা জানিয়েছেন, রিজার্ভ ডে- এর এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তারা অবগত ও তাদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন এতে রয়েছে। কিছুটা অবাকই হতে হয় দেখে। হয়তো এখানেও ‘ভদ্রতা’ প্রধানতম বিষয় হিসেবে দেখা দিয়েছে। অথচ দুই দলের কোচ ঠিকই নিজেরদের ‘ট্রু ফিলিংস’ প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশ কোচ কিছুটা বেশিই বৈকি।
রিজার্ভ ডে দেওয়ায় তো উপকার হয়েছে, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ চলে গেছে অতিরিক্ত দিনে। এটা না হলে, ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকত। জি, এ কথাও সত্য। সত্য ও সমর্থিত হওয়ার মধ্যে এখানে সূক্ষ্ম পার্থক্য তৈরি হয়েছে। শুধুমাত্র এক ম্যাচকে কেন্দ্র করে কর্তৃপক্ষ যে নতুন নিয়মের অবতারণা করলেন, তা কি একটা বাজে উদাহরণ সৃষ্টি করল না? কিঞ্চিৎ সুবিবেচনার পথে হাঁটলে, এতটুকু পরিষ্কার হওয়ার কথা। এইসব উদাহরণ ক্রিকেটের জন্য কতটা মঙ্গল বয়ে আনবে, সে বিষয়ে আলোচনা থাকে।
এর আগে এশিয়া কাপের আয়োজন নিয়েও ভারত-পাকিস্তান দুই দল থেকে দুই দেশ, নানারকম জল ঘোলা হয়েছে। এবারের এশিয়া কাপের মূল আয়োজক ছিল পাকিস্তান। ভারতের আপত্তিতে, হাইব্রিড মডেলের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কাও আয়োজনে যুক্ত হয়। ফলে পাকিস্তানে মাত্র ৪ টি ম্যাচ, বাকি ম্যাচ শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সে গেল এক কথা। অক্টোবর থেকে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ভারতের মাটিতে। পাকিস্তানের ছিল সেখানে আপত্তি। শেষ পর্যন্ত দেশটির সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়, পাকিস্তান বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাচ্ছে। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে সুনজর রাখার আহ্বান জানায় ভারতের প্রতি।
আপনি না-হয় উপরের বিষয়গুলো বিরক্ত হলেও মেনে নিলেন। যেহেতু দুই দেশের রাজনৈতিক কিছু বিষয় রয়েছে। সেসবের কারণে জটিলতা তৈরি হয়েছে। তা একটা সমাধানের দিকেও গেছে। কিন্তু একটা টুর্নামেন্টের মাঝপথে, একটা ম্যাচের উপর আলাদা নিয়ম যখন আপনি জারি করছেন, তা কখনোই সামগ্রিকভাবে সুফল বয়ে আনবেনা। এতটুকু নিশ্চিত থাকা যায়। বাকি দল, দেশ ও সমর্থকেরা, তাঁরা কীভাবে, কোন জিনিস নিবে– সে বিষয়ে আরও বিজ্ঞের পরিচয় দেওয়া প্রয়োজন ছিল। যা দিতে ব্যর্থ হয়েছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল । স্বীকার করুন হে এসিসি!