

এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল এই ম্যাচে! গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে জয় ব্যতীত কোন প্রয়োজন দেখেনি টাইগাররা। নাজমুল হোসেন শান্ত ও মেহেদি হাসান মিরাজ মিলে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে তুলেছেন ১৯৪ রান। মিরাজ ও শান্তর ব্যাটে আসে সেঞ্চুরি। সবমিলিয়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩৫ রানের। বড় লক্ষ্য টপকাতে পারেনি আফগানরা। তাসকিন-শরিফুলদের বোলিং তোপে ২৪৫ রানে সব উইকেট হারায় দলটি। ফলে বাংলাদেশ জয় পায় ৮৯ রানের!
প্রথম ওভারে তাসকিন আহমেদ দিয়েছিলেন মাত্র ১ রান। দ্বিতীয় ওভার করতে এসে আফগানদের শিবির নাড়িয়ে দেন শরিফুল ইসলাম। লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন বিপজ্জনক ব্যাটসম্যান রহমনুল্লাহ গুরবাজকে। দলীয় ১ রানে প্রথম উইকেটের পতন ঘটে আফগানদের।
সেই চাপ অবশ্য কাটিয়ে ওঠে রহমত শাহ ও ইব্রাহিম জাদরান জুটি। এই জুটি বেশ ভয়ংকর হয়েই উঠছিল। তবে তাসকিন আহমেদের বলে রহমত শাহ সরাসরি বোল্ড হয়ে ফিরলে, ৭৮ রানের এই জুটি থেমে যায়। ইব্রাহিম তখনো ছিলেন। দারুণ ফর্মে থাকা এই ব্যাটার অর্ধশতক পেরিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। বাংলাদেশ যেন তাঁদের ৬ষ্ঠ বোলারকে মিস করতে থাকে এসময়।
হাসান মাহমুদের বলে দারুণ এক ক্যাচ নিলেন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম। সেই ক্যাচে ফিরলেন ইব্রাহিম, ৭৫ রান করে। নিস্তার পায়নি তখনো বাংলাদেশ। হাশমতউল্লাহ শহীদির সাথে জুটি বড় হতে থাকে নাজিবুল্লাহ জাদরানের। ৬২ রানের এই জুটি ভাঙ্গে দলীয় ১৯৩ রানে নাজিবুল্লাহর উইকেট পড়লে। মিরাজের বলে বোল্ড হন এই ব্যাটার। এরপর দলের খাতায় আর ৩ রান যোগ না হতেই হাশমতউল্লাহকে ফেরান শরিফুল ইসলাম, থার্ডম্যান অঞ্চল থেকে ক্যাচটি নেন হাসান মাহমুদ।
গুলবাদিন নাইব কিছু ক্যামিও খেলার চেষ্টা করলে, শরিফুলের বলে পতন ঘটে তাঁর। দলীয় ২১৪ রানে মোহাম্মদ নবীর উইকেট হারায় আফগানিস্তান। করিম জানাতও ফেরেন রানআউট হয়ে।
একপ্রান্তে ছিলেন রশিদ খান। যিনি ব্যাটিংয়েও এখন দারুণ পারফর্ম করে থাকেন। মুজিব-উর-রহমানের সাথে জুটি গড়লেন আরো ২৩ রানের। দুর্ভাগ্যজনকভাবে নিজের ব্যাটে ছয় হাঁকিয়ে, সেই ব্যাটেই স্টাম্পে হিট করে হিট-উইকেট হয়ে ফিরেছেন এই ব্যাটার, তাসকিনের বলে। ১৫ বলে ২৪ রান করা রশিদের শেষ উইকেটটিও তাসকিন তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের আনন্দে ভাসালেন।
বাংলাদেশের বোলারদের পক্ষে, তাসকিন আহমেদ পেয়েছেন ৪ উইকেট। শরিফুল ইসলাম ৩ উইকেট পেয়েছেন। হাসান মাহমুদ ও মেহেদি হাসান মিরাজ পেয়েছেন ১ টি করে উইকেট।
এর আগে টসে জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। ব্যাটিং অর্ডারে বাংলাদেশের পরিবর্তন খেয়াল করা যায়। মোহাম্মদ নাঈম ছাড়া দলে আর কোন প্রথিত ওপেনার ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছিল, নাঈমের সঙ্গী হচ্ছেন নতুন কেউ। সেই নতুন জন মেহেদি হাসান মিরাজ। ওডিআইতে এর আগে একবারই নেমেছিলেন ওপেনিংয়ে। সেটা ২০১৮ এশিয়া কাপ ফাইনালে। লিটন দাসের সাথে সেবার ১২০ রানের জুটিও গড়েন মিরাজ। তাঁর নিজের ব্যাট থেকে আসে ৫৯ বলে ৩২ রান।
ইনিংসের প্রথম ওভারেই ১৪ রান আসে। বাংলাদেশের জন্য দারুণ শুরু ছিল। এই শুরু দেখেই মনে হচ্ছিল, বড় স্কোর হতে যাচ্ছে। ফজল হক ফারুকী ও মুজিব-উর-রহমান; এই দুই বোলারকে মিরাজ-নাঈম মিলে ভালোই সামাল দিচ্ছিলেন। ফলে ৫ ওভারে বিনা উইকেটে ৩৩ রান ওঠে। নাঈমের ব্যাটে এদিন আত্মবিশ্বাস স্পষ্ট টের পাওয়া যায়। হোক লাহোরের ফ্লাট পিচ, তবুও মুজিবের বল যেভাবে মোকাবিলা করছিলেন, পূর্বের চেয়ে বাংলাদেশি দর্শকদের দেখতে ভাল বোধ করার কথা। দুজনের ওপেনিং জুটি অর্ধশতক ছাড়িয়ে যায়। বাংলাদেশ দল ৭ ম্যাচ পর ওপেনিংয়ে পঞ্চাশ রানের জুটি পেল।
আর মাত্র ১০ রান যোগ হয়। পাওয়ারপ্লে-র শেষ ওভার, দশম ওভারের পঞ্চম বলে মুজিবের ডেলিভারিতে লাইন মিস করেন নাঈম। ভাল শুরু করা নাঈমের ইনিংস শেষ হয় এখানেই। ওডিআই ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ৩২ বলে ২৮ রান করে থামেন নাঈম। তিন নম্বরে তাওহিদ হৃদয়? হ্যাঁ তাই। এদিন নাজমুল হোসেন শান্ত’র পরিবর্তে তিনে দেখা গেল হৃদয়কে।
কিন্তু হৃদয় এই জায়গায় ব্যর্থ হলেন। মাত্র দুই বলের ব্যবধানে ফিরতে হলো তাঁকে। কিছুটা ড্রাইভ, কিছুটা ডিফেন্সের মধ্যবর্তী জায়গায় পড়ে এজ হলেন। গুলবাদিন নাইবের ডেলিভারিতে অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদির দারুণ ক্যাচে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নিতে হয় এই ব্যাটারকে। সেসময় মনে হচ্ছিল, শুরুতে যে চাপ এড়ানো গেছে, সেই চাপ বোধহয় এখন এসে পড়ল। ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ দলের রান তখন ৬৩।
চারে নামলেন শান্ত। আগের ম্যাচেই ৮৯ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। লড়েছিলেন একাই। সেই শান্ত আফগানদের বিপক্ষেও শুরু থেকেই ভাল করার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। মিরাজের সাথে ধীরে ধীরে দ্রুত দুই উইকেট পতনের সমস্যাটুকু কাটিয়ে উঠতে চাচ্ছিলেন। দুই ব্যাটার মিলে বাউন্ডারি বের করতে থাকেন সুযোগ বুঝে। ১০০ রানের জুটি পেরিয়ে যান। এর আগে মিরাজের ফিফটি এসেছে, এরপর আসল শান্তর ফিফটিও। এরমধ্যে ৩৫তম ওভারেই ২০০ পেরোয় বাংলাদেশ।
মিরাজ-শান্ত জুটি ১৫০ রানও ছাড়িয়ে যায়। দীর্ঘ হতে থাকে দুজনের ইনিংস। পঞ্চমবারের মতো তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৫০ রানের বেশি জুটি দেখল বাংলাদেশ। দুজনের মধ্যে প্রথম সেঞ্চুরি তোলেন ওপেনিংয়ে আসা মিরাজ। নিজের ওডিআই ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি ছিল গতবছর ডিসেম্বরে, মিরপুরে। প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। ১১৫ বলেই দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুললেন। আঙ্গুলে ক্র্যাম্পের কারণে ১১৯ বলে ১১২ রান করে মাথ থেকে উঠে যান মিরাজ। এই ইনিংসে ছিল ৭ টি চার ও ৩ টি ছক্কার মার।
মিরাজের বদলি হিসেবে নতুন ব্যাটার হিসেবে আসেন মুশফিকুর রহিম। মুশফিক ক্রিজে থাকা অবস্থায় শান্ত পেয়ে যান নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ১০১ বল খরচা হয় তাঁর এই সেঞ্চুরি পেতে। এই ক্রিকেটার বাবা হয়েছেন এশিয়া কাপ শুরুর আগে আগে। উদযাপনে থাকল তাই সেরকমই নিদর্শন। উৎসর্গ করলেন নিজের ছেলে সন্তানকে।
পঞ্চমবারের মত একই ওডিআইতে দুই বাংলাদেশির সেঞ্চুরি। শান্ত-মিরাজের জুটি ছিল ১৯০ বলে ১৯৪ রানের।
শান্তকে রানআউট হয়ে ফিরতে হয়েছে। রিভার্স সুইপ করেই দৌড় দিয়েছেন। ঘুরে আবার ফিরে আসতে গিয়ে পিছলে যান, ফলে দুর্ভাগ্যজনকভাবেই ফিরতে হয় তাঁকে। তবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেলেন দলের জন্য। করলেন ১০৫ বলে ১০৪ রান। এই ইনিংসে ৯ টি চার ও ২ টি ছক্কার মার ছিল।
মুশফিককেও ফিরতে হয়েছে রানআউট হয়ে। তখন তাঁর সাথে ছিলেন সাকিব আল হাসান। মুশফিক ফেরেন ১৫ বলে ২৫ রানে। শামীম হোসেন ক্রিজে এসে নিজের খেলা প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে দেন। ডিপ ফাইন লেগে তাঁর সেই ‘ট্রেড মার্ক’ শটে। বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে আসে কাঙ্ক্ষিত ৩০০ রান। পরবর্তীতে সাকিব-শামীম মিলে আরও ২৯ রান যোগ করেন দলের খাতায়। শামীমও ৬ বলে ১১ রান করে রানআউট হয়ে ফিরলে, আফিফ হোসেন সাকিবকে শেষ পর্যন্ত সঙ্গ দেন। অধিনায়ক সাকিবের ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ১৮ বলে ৩২ রান।
আফগান বোলাররা এদিন দারুণ খরুচে ছিল। বিশেষ করে, রশিদ খান ও মুজিব-উর-রহমান ১০ ওভার বল করে যথাক্রমে; ৬৬ ও ৬২ রান দিয়েছেন। মুজিব ও গুলবাদিন নাইব ১ টি করে উইকেট লাভ করেছেন।