জোড়া সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ!

শান্ত মিরাজ 1
Vinkmag ad

এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি! এই লাইন দেখলেই বোঝা যায় কতটা ভাল ব্যাটিং আজ করেছে বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্ত ও মেহেদি হাসান মিরাজ মিলে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে তুলেছেন ১৯৪ রান। মিরাজ ও শান্তর ব্যাটে আসে সেঞ্চুরি। তাঁরা দুইজন গড়ে দেন দলের ভিত। পরবর্তীতে সাকিব-মুশফিকরা মিলে সেটা টেনে নিয়ে যান ৩০০ পেরিয়ে। শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৩৪ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। জয়ের জন্য আফগানদের প্রয়োজন হবে ৫০ ওভারে ৩৩৫ রান।

টসে জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। একাদশে ছিল ৩ পরিবর্তন। তানজিদ হাসান তামিম, শেখ মেহেদী ও মোস্তাফিজুর রহমান নেই। আছেন, আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন, হাসান মাহমুদ। একাদশের মতো ব্যাটিং অর্ডারেও বাংলাদেশের পরিবর্তন খেয়াল করা যায়। মোহাম্মদ নাঈম ছাড়া দলে আর কোন প্রথিত ওপেনার ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছিল, নাঈমের সঙ্গী হচ্ছেন নতুন কেউ। সেই নতুন জন মেহেদী হাসান মিরাজ। ওডিআইতে এর আগে একবারই নেমেছিলেন ওপেনিংয়ে। সেটা ২০১৮ এশিয়া কাপ ফাইনালে। লিটন দাসের সাথে সেবার ১২০ রানের জুটিও গড়েন মিরাজ। তাঁর নিজের ব্যাট থেকে আসে ৫৯ বলে ৩২ রান।

ইনিংসের প্রথম ওভারেই ১৪ রান আসে। বাংলাদেশের জন্য দারুণ শুরু ছিল। এই শুরু দেখেই মনে হচ্ছিল, বড় স্কোর হতে যাচ্ছে। ফজল হক ফারুকী ও মুজিব-উর-রহমান; এই দুই বোলারকে মিরাজ-নাঈম মিলে ভালোই সামাল দিচ্ছিলেন। ফলে ৫ ওভারে বিনা উইকেটে ৩৩ রান ওঠে। নাঈমের ব্যাটে এদিন আত্মবিশ্বাস স্পষ্ট টের পাওয়া যায়। হোক লাহোরের ফ্লাট পিচ, তবুও মুজিবের বল যেভাবে মোকাবিলা করছিলেন, পূর্বের চেয়ে বাংলাদেশি দর্শকদের দেখতে ভাল বোধ করার কথা। দুজনের ওপেনিং জুটি অর্ধশতক ছাড়িয়ে যায়। বাংলাদেশ দল ৭ ম্যাচ পর ওপেনিংয়ে পঞ্চাশ রানের জুটি পেল।

আর মাত্র ১০ রান যোগ হয়। পাওয়ারপ্লে-র শেষ ওভার, দশম ওভারের পঞ্চম বলে মুজিবের ডেলিভারিতে লাইন মিস করেন নাঈম। ভাল শুরু করা নাঈমের ইনিংস শেষ হয় এখানেই। ওডিআই ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ৩২ বলে ২৮ রান করে থামেন নাঈম। তিন নম্বরে তাওহিদ হৃদয়? হ্যাঁ তাই। এদিন নাজমুল হোসেন শান্ত’র পরিবর্তে তিনে দেখা গেল হৃদয়কে।

কিন্তু হৃদয় এই জায়গায় ব্যর্থ হলেন। মাত্র দুই বলের ব্যবধানে ফিরতে হলো তাঁকে। কিছুটা ড্রাইভ, কিছুটা ডিফেন্সের মধ্যবর্তী জায়গায় পড়ে এজ হলেন। গুলবাদিন নাইবের ডেলিভারিতে অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদির দারুণ ক্যাচে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নিতে হয় এই ব্যাটারকে। সেসময় মনে হচ্ছিল, শুরুতে যে চাপ এড়ানো গেছে, সেই চাপ বোধহয় এখন এসে পড়ল। ২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ দলের রান তখন ৬৩।

চারে নামলেন শান্ত। আগের ম্যাচেই ৮৯ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। লড়েছিলেন একাই। সেই শান্ত আফগানদের বিপক্ষেও শুরু থেকেই ভাল করার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। মিরাজের সাথে ধীরে ধীরে দ্রুত দুই উইকেট পতনের সমস্যাটুকু কাটিয়ে উঠতে চাচ্ছিলেন। দুই ব্যাটার মিলে বাউন্ডারি বের করতে থাকেন সুযোগ বুঝে। ১০০ রানের জুটি পেরিয়ে যান। এর আগে মিরাজের ফিফটি এসেছে, এরপর আসল শান্তর ফিফটিও। এরমধ্যে ৩৫তম ওভারেই ২০০ পেরোয় বাংলাদেশ।

মিরাজ-শান্ত জুটি ১৫০ রানও ছাড়িয়ে যায়। দীর্ঘ হতে থাকে দুজনের ইনিংস। পঞ্চমবারের মতো তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৫০ রানের বেশি জুটি দেখল বাংলাদেশ। দুজনের মধ্যে প্রথম সেঞ্চুরি তোলেন ওপেনিংয়ে আসা মিরাজ। নিজের ওডিআই ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি ছিল গতবছর ডিসেম্বরে, মিরপুরে। প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। ১১৫ বলেই দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুললেন। আঙ্গুলে ক্র্যাম্পের কারণে ১১৯ বলে ১১২ রান করে মাথ থেকে উঠে যান মিরাজ। এই ইনিংসে ছিল ৭ টি চার ও ৩ টি ছক্কার মার।

মিরাজের বদলি হিসেবে নতুন ব্যাটার হিসেবে আসেন মুশফিকুর রহিম। মুশফিক ক্রিজে থাকা অবস্থায় শান্ত পেয়ে যান নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ১০১ বল খরচা হয় তাঁর এই সেঞ্চুরি পেতে। এই ক্রিকেটার বাবা হয়েছেন এশিয়া কাপ শুরুর আগে আগে। উদযাপনে থাকল তাই সেরকমই নিদর্শন। উৎসর্গ করলেন নিজের ছেলে সন্তানকে।

পঞ্চমবারের মত একই ওডিআইতে দুই বাংলাদেশির সেঞ্চুরি। শান্ত-মিরাজের জুটি ছিল ১৯০ বলে ১৯৪ রানের।

শান্তকে রানআউট হয়ে ফিরতে হয়েছে। রিভার্স সুইপ করেই দৌড় দিয়েছেন। ঘুরে আবার ফিরে আসতে গিয়ে পিছলে যান, ফলে দুর্ভাগ্যজনকভাবেই ফিরতে হয় তাঁকে। তবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে গেলেন দলের জন্য। করলেন ১০৫ বলে ১০৪ রান। এই ইনিংসে ৯ টি চার ও ২ টি ছক্কার মার ছিল।

মুশফিককেও ফিরতে হয়েছে রানআউট হয়ে। তখন তাঁর সাথে ছিলেন সাকিব আল হাসান। মুশফিক ফেরেন ১৫ বলে ২৫ রানে। শামীম হোসেন ক্রিজে এসে নিজের খেলা প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে দেন। ডিপ ফাইন লেগে তাঁর সেই ‘ট্রেড মার্ক’ শটে। বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে আসে কাঙ্ক্ষিত ৩০০ রান। পরবর্তীতে সাকিব-শামীম মিলে আরও ২৯ রান যোগ করেন দলের খাতায়। শামীমও ৬ বলে ১১ রান করে রানআউট হয়ে ফিরলে, আফিফ হোসেন সাকিবকে শেষ পর্যন্ত সঙ্গ দেন। অধিনায়ক সাকিবের ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ১৮ বলে ৩২ রান।

আফগান বোলাররা এদিন দারুণ খরুচে ছিল। বিশেষ করে, রশিদ খান ও মুজিব-উর-রহমান ১০ ওভার বল করে যথাক্রমে; ৬৬ ও ৬২ রান দিয়েছেন। মুজিব ও গুলবাদিন নাইব ১ টি করে উইকেট লাভ করেছেন।

৯৭ ডেস্ক

Read Previous

শান্তর শান্ত সেলিব্রেশন, উৎসর্গ করলেন ছেলেকে

Read Next

মিরাজের যে রেকর্ড চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে

Total
0
Share