

ঝিঁঝি পোকা কড়া নাড়ছে দরজায়। এশিয়া কাপের উদ্বেলিত ধ্বনিতে মুখরিত ক্রিকেট-পাড়া। পাকিস্তান বনাম নেপাল ম্যাচ দিয়ে এবারের এশিয়া কাপের পর্দা উঠছে। পাকিস্তান তো অভিজ্ঞ। নেপাল একেবারেই নব্য। প্রথমবারের মত এশিয়া কাপ খেলতে এসেছে দলটি। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী দিনে, নিজেদের এশিয়া কাপ উদ্বোধনের কাজটাও হয়ে যাবে নেপালের। পাকিস্তানের মুলতান অপেক্ষায় আছে দুই দলকে স্বাগত জানাতে। পরখ করে নেওয়া যাক দুই দলের অবস্থা ও সম্ভাবনা।
নেপালের জন্য বড় আয়োজন
এশিয়া কাপে অভিষেক হচ্ছে দলটির। চাপের প্রসঙ্গ আসলে, তা নেপালের দিকেই যাবে। পাকিস্তানকে মোকাবিলা করবে প্রথমবারের মতো। মাঠের খেলায় যাইহোক না কেন, দিনটা নেপালের জন্য উদ্যাপনের। জেনে থাকবেন যে, নেপালে ক্রিকেট-পাগল মানুষের অভাব নেই। নেপালীয় দর্শকেরা অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে নিজেদের দেশে। তাঁদের দেশ কখন মাঠে নামবে, এশিয়া কাপের মত মঞ্চে পারফর্ম করবে। এই অনুভূতি অনেক বেশি তাজা ও সিক্ত।
এবারের এশিয়া কাপে নেপালের উপস্থিতি জানান দেয় যে, ক্রিকেটীয় শক্তিমত্তায় দেশটি বেশ এগিয়েছে। এপ্রিল-মে মাসের দিকে হওয়া ১০ দলের এসিসি প্রিমিয়ার কাপ জিতে এশিয়া কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে দলটি। সেখানে আরব আমিরাত ছিল, হংকং ছিল; যারা কিনা অতীতের এশিয়া কাপ আয়োজনে অংশ নিয়েছে। নেপালের উত্থান বোঝা যায়, তাঁদের ওডিআই ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফায়ারে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে এবং এখানে অসাধারণ পারফর্ম করার মাধ্যমে। দেশটি জানান দিচ্ছে, ২০২৭ ক্রিকেট বিশ্বকাপে তাঁরা অংশ নিতে চায় মনে-প্রাণে। ২০১৮ সালে ওডিআই স্ট্যাটাস পাওয়া দলটি ইতিমধ্যে ওয়ানডেতে ১৫ নম্বর দল হিসেবে অবস্থান করছে।
পাকিস্তান আছে নির্ভার
নির্ভার থাকাটাই স্বাভাবিক। নিজেদের ঘরের মাঠে খেলা। মুলতান ক্রিকেট স্টেডিয়াম। সদ্য প্রস্তুতি সাড়া হয়েছে আফগানিস্তানকে হারিয়ে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে ৩-০ তে জিতেছে পাকিস্তান। বোলাররা আছেন দারুণ ছন্দে। বিশেষ করে দলের পেস অ্যাটাক তো প্রশংসা কুড়িয়ে যাচ্ছে জনে জনে। এছাড়াও ব্যাটিং লাইন-আপ নিয়েও সন্তুষ্টি আছে দলটির। টপ-অর্ডার ও মিডল-অর্ডার পাকিস্তানের ব্যাটিংকে স্বস্তি দিবে বলেই দলটির সমর্থকেরা আশা করবে। তাছাড়া টুর্নামেন্টের শুরু হচ্ছে নেপালের বিপক্ষে। নেপাল নতুন দল হিসেবে পাকিস্তানের সাথে চাপে থাকবে বলেই ধরে নেওয়া যায়। পাকিস্তান সেই ফায়দা লুটবে। পরের ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হওয়ার আগে নিজেদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিতে এই ম্যাচকে কাজে লাগাবে পাকিস্তান, এমনটি ধারণা করা যায়।
নজরে থাকবেন যারা
পাকিস্তানের টপ-অর্ডারে উন্নতি আশাব্যঞ্জক। পাশাপাশি আপনি তাঁদের মিডল-অর্ডারকে গুরুত্ব দিতে ভুল করবেন না। এর অন্যতম কারিগর হিসেবে আগা সালমানকে স্বীকার করতে হবে। এই ব্যাটার মাত্র ১৪ টি ওয়ানডে খেলেছেন পাকিস্তানের হয়ে। গড় ৪০ এর উপরে, স্ট্রাইক রেট ১০০ এর উপরে। তাঁর সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায়, ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের সাথে দারুণ পারফর্ম করেছিলেন। শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে টেস্টে আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলে ৮৩ বলে অপরাজিত ১৩২ রান করেন। সদ্য আফগানিস্তান সিরিজে একটি অপরাজিত ৩৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন।
এছাড়াও ইমাম-উল-হক, পাকিস্তানের ওপেনিং ব্যাটার। যিনি আফগানিস্তানের সাথে খেলা সিরিজে ছিলেন দারুণ ছন্দে। প্রায় ৭০ গড়ে সিরিজ শেষ করেছেন। মোট ৬২ ওয়ানডে খেলা এই ব্যাটার সংগ্রহ করেছেন ২৮৮৪ রান, যেখানে ৯ টি সেঞ্চুরি এবং ১৮ টি হাফ-সেঞ্চুরি রয়েছে। নজরে থাকবেন, বোলার শাহীন শাহ আফ্রিদি ও নাসিম শাহ। নাসিম শাহকে আলাদা কৃতিত্ব দেওয়া যায়, যেখানে তিনি ব্যাট হাতেও রান করে যাচ্ছেন সাম্প্রতিক সময়গুলোতে।
নেপালের দিপেন্দ্র সিং আইরি। ৫০ ওডিআই খেলার পর এই খেলোয়াড়ের গড় খুব একটা আকর্ষণীয় নয়, বিশের কাছাকাছি। তবে আপনাকে শুধু সেই গড় দেখলে হবে না। দিপেন্দ্র একজন আত্মবিশ্বাসী খেলোয়াড়। এশিয়া কাপে এসেছেন সেই আত্মবিশ্বাস অর্জন করেই। জুলাইতে জিম্বাবুয়ের মাটিতে নেপালের সাথে কোয়ালিফায়ার ম্যাচে লড়ছে আরব আমিরাত। সেই ম্যাচে অপরাজিত ৭৯ রানের ইনিংস খেলেন এই মিডল-অর্ডার ব্যাটার। এছাড়াও কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টিতে সাকিব আল হাসান, আন্দ্রে রাসেল, ক্রিস লিনদের সাথে একই দলে খেলেছেন দিপেন্দ্র। মন্ট্রিল টাইগার্সের শিরোপা জেতার ম্যাচে ২০ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসও ছিল এই ব্যাটারের।
স্বন্দীপ লামিচানে। নেপালের এই স্পিনার মূল দলের সাথে আসেননি। শঙ্কা ছিল এশিয়া কাপে অংশ না নেওয়ার। তবে শেষ পর্যন্ত দলের সাথে যুক্ত হয়েছেন লামিচানে। ক্রিকেট ইতিহাসে ওডিআইতে সবচেয়ে দ্রুত ১০০ উইকেট নেওয়ার অর্জন রয়েছে তাঁর। ভেঙ্গেছেন আফগান লেগি রশিদ খানের রেকর্ড। বর্তমানে ৪৯ ওয়ানডেতে ১১১ উইকেটের মালিক তিনি। ছিলেন নেপালের অধিনায়কের দায়িত্বেও। বিতর্ক ও অভিযোগ তাঁর উপর রয়েছে, লড়ছেন আদালতে। তবে এখন পর্যন্ত নেপালের ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় তারকা লামিচানে।
দলের খবর
পাকিস্তান উদ্বোধনী ম্যাচের আগের দিনই জানিয়ে দিল সেরা একাদশ। ইমার্জিং এশিয়া কাপে পাকিস্তান-এ দলের হয়ে নেপালের বিপক্ষে ৪ উইকেট পেয়েছিলেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। তবে ওয়াসিমকেই একাদশে রাখা হয়নি।
সুযোগ পেয়েছেন অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নওয়াজ। আফগানদের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে ক্যামিও ইনিংসের তাজা স্মৃতি রয়েছে তাঁর। এছাড়া তিন পেসার রয়েছে দলে। টপ-অর্ডার, মিডল-অর্ডারে তেমন পরিবর্তন রাখেনি পাকিস্তান।
পাকিস্তান একাদশ:
ফখর জামান, ইমাম-উল-হক, বাবর আজম (অধিনায়ক), মোহাম্মদ রিজওয়ান (উইকেটরক্ষক), আঘা সালমান, ইফতিখার আহমেদ, শাদাব খান (সহ-অধিনায়ক), মোহাম্মদ নওয়াজ, শাহীন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ, হারিস রউফ।
নেপালের পেসার সোমপাল কামি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে হাতের ইনজুরিতে পড়ে। সে অবশ্য চোট কাটিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে পেস অ্যাটাকে যুক্ত হচ্ছে বলে জানা যায়।
নেপালের সম্ভাব্য একাদশ:
কুশাল ভর্তেল, আসিফ শেখ (উইকেটরক্ষক), ভীম শর্কি, রোহিত পুড়েল (অধিনায়ক), কুশাল মাল্লা, দিপেন্দ্র সিং আইরি, গুলশান ঝা, সোমপাল কামি, কারান কেসি, স্বন্দীপ লামিচানে, ললিত রাজবানশী
পিচ ও কন্ডিশন
গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল পাকিস্তান সফর করেছিল। সেবার সিরিজের ৩ টি ওডিআই মুলতানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিন ম্যাচেই ২৫০+ স্কোর হয়েছিল। প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তান দল ৩০৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ম্যাচ জেতে। সেই সিরিজের শীর্ষ ৩ উইকেট-শিকারি ছিলেন মোহাম্মদ নেওয়াজ, শাদাব খান ও আকিল হোসেন। যদি একইরকম কন্ডিশন থাকে তবে এশিয়া কাপের ম্যাচেও স্পিনাররা দারুণ কিছু করবে।
মুলতানের আবহাওয়া বেশ গরম ও শুষ্ক থাকবে। প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকবে তাপমাত্রা। জানা যায়, সবসময় ৩০ ডিগ্রির উপরেই থাকবে মুলতানের তাপমাত্রা।