

হ্যারি ব্রুকের কাছে সবই ছিল। শুধু ছিলনা কপালের কিছুটা ইতিবাচকতা। সেকারণেই বোধহয় জায়গা হয়নি বিশ্বকাপের ১৫ সদস্যের প্রাথমিক দলে। গতকাল (২২ আগস্ট) দ্য হান্ড্রেডের ম্যাচে নর্দান সুপারচার্জারসের পক্ষে ৪২ বলে ১০৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। টপ অর্ডারের ব্যর্থতা ব্রুককে দমায়নি। বরং শতক হাঁকিয়ে দলের কাণ্ডারি হিসেবে ভরসা রেখে গেছেন। ইংল্যান্ড দলের নির্বাচকদের কিছুটা চোখ রাঙানি দিলেন সম্ভবত এই অবিস্মরণীয় ইনিংস খেলে।
ওয়েলশ ফায়ারের বিপক্ষে ম্যাচটা জেতা হয়নি ব্রুকদের। কিন্তু উপরের ব্যাটারদের ব্যর্থতা কাটিয়ে যেভাবে ব্যাট চালিয়ে গেলেন, বয়সে চব্বিশ মনে হচ্ছিল না তখন। ব্রুকের রান যখন ৮৩, তখন ইনিংস শেষ হতে বাকি ছিল মাত্র ৫ বল। সেই ৫ বলে ৩ টি চার ও ১ টি ছয় হাঁকিয়ে নিজের শতক পূর্ণ করেন তিনি। সবমিলিয়ে ১১ টি চার ও ৭ টি ছয়ের মার ছিল ব্রুকের ইনিংসে।
এমন ছন্দে থাকা খেলোয়াড় কেন বিশ্বকাপের স্কোয়াডে নেই? প্রশ্নটা তাই স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে। উত্তর যদিও কিছুটা জটিল। সদুত্তর দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও খুব আরামদায়কভাবে দিতে পারবে কি না, একটা সন্দেহ থেকে যায়।
এ মাসের শুরুতে ইংল্যান্ড তাঁদের বিশ্বকাপের জন্য প্রাথমিক স্কোয়াড ঘোষণা করে। অবসর থেকে ফেরা বেন স্টোকস সুযোগ পেয়েছেন সেই দলে। স্টোকসের ফিরে আসার ব্যাপারে অবশ্য চাওয়া ছিল অধিনায়ক ও কোচের। পরবর্তীতে নিজ সিদ্ধান্তেই ওডিআইতে ফিরেছেন। খেলবেন এবারের বিশ্বকাপ। বলা হচ্ছে, স্টোকসের ফেরাতেই জায়গা হয়নি ব্রুকের।
ব্রুক বলেন,
“সে (স্টোকস) একজন সেরা খেলোয়াড় যে ক্রিকেট খেলছে। তো আমি কোনো অভিযোগ করতে পারিনা। পারি কী?” তিনি আরো বলেন, “অবশ্যই এটা হতাশাজনক। কিন্তু আমি এটা নিয়ে আপাতত কিছু করতে পারিনা। এটা শুধু চলে যেতে দিতে হবে। আমার সাথে কোচ বা অধিনায়কের খুব বেশি কথা হয়নি। তাঁরা বলেছিল, স্টোকসিই ফিরছে, আমি সম্ভবত এবারে বাদ পড়তে পারি।”
হ্যারি ব্রুক তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটের জন্য বেশ আদর্শ পছন্দ হওয়ার কথা। কিছুদিন আগে শেষ হওয়া অ্যাশেজ সিরিজে ৫ ম্যাচে ৩৬৩ রান সংগ্রহ করেন। খুব বেশি ওডিআই’তে সুযোগ না পাওয়া হয়তো একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্রুকের জন্য। মাত্র ৩ টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে এই ব্যাটারের। যেখানে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৮০ রান করেন, যখন টপ-অর্ডার খারাপ করেছিল।
ব্রুকের আন্তর্জাতিক অভিষেক ঘটে ২০২২ সালে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে তাঁর যাত্রা শুরু হয়। একটা বিষয় বলা হয়ে থাকে, যখন তাঁর ফর্মের দিক থেকে কিছুটা কমতি দেখা দেয়, তখন তাঁকে দলে ডাকা হয়েছে। এবং সেসময় দলের হয়ে ভালো পারফর্ম না করতে পারলে আবারও বাদ দেওয়া হয়েছে। খেলেছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ইংল্যান্ড দলের হয়ে বিশ্বকাপ মেডেল গ্রহণের অভিজ্ঞতা ইতিমধ্যে হয়ে গেছে ব্রুকের।
ইংল্যান্ডের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপেও দারুণ ছন্দে ছিলেন ব্রুক। জুন পর্যন্ত ডিভিশনে ওয়ানে ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ৩ টি সেঞ্চুরি ও গড় ছিল ১০০ এর উপরে। এরপর নিউজিল্যান্ড সিরিজে তাঁকে টেস্টের জন্য বিবেচনা করা হয়। সেখানে কোনো ম্যাচে সুযোগ মেলে না। এভাবেই ব্রুকের সময়গুলো খুব অদ্ভুতভাবে কেটেছে। একটা দ্বিধা; কখনো ভুল সময়ে দলে ডাক পেয়েছেন, আবার কখনো ডাক পেয়ে ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি।
এরপরেও টেস্টে এখন নিয়মিত মুখ ব্রুক। টেস্টের পরিসংখ্যান বেশ উজ্জ্বল। খেলেছেন ১২ টি টেস্ট। ইতিমধ্যে ১১৮১ রান সংগ্রহ করেছেন। যেখানে গড় ৬২.১৫। আছে ৭ টি অর্ধ শতক ও ৪ টি শতক। ওডিআই খেলেছেন ৩ টি, টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ২০ টি। এবারের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে হয়তো সুযোগ পাননি। তবে ৩ ফরম্যাটের জন্য নিজেকে উপযুক্ত প্রমাণে ব্রুকের আর তেমন কিছু বাকি নেই।